বহুল প্রচলিত কিছু জাল হাদীছ
আবু উসাইদ
হাদিসও জাল হয় তা যখন প্রথম শুনেছিলাম খুব অবাক হয়েছিলাম ও একই সাথে কষ্ট পেয়েছিলাম। আল্লাহ্, তাঁর রাসুল, ইসলাম এমন সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে কেউ অবলীলায় এমন মিথ্যা রচনা করতে পারে, সত্যিই তা আমাদের ধারণার বাইরে। এক সময় অবাক হয়ে দেখলাম ছোটবেলা থেকে ‘আল হাদিস’ নামে যা কিছু শুনেছি, তার একটা বড় অংশই আসলে ‘জাল হাদিস’।
একটি জাল হাদিস মেনে চলা মানে মিথ্যা প্রচার করা বা মিথ্যা অনুসরণ করে নিজেকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে ফেলা। এর পরিণাম ভালো না হয়ে খারাপ হবার সম্ভাবনাই বেশী। সুতরাং যে কোন হাদিস জানার আগে তার সূত্র এবং এটি সহিহ বা বিশুদ্ধ কিনা তা জেনে নেয়া খুব জরুরী। এর জন্য খুব কষ্ট করার দরকার নেই। কম্পিউটার থাকলে এক সার্চেই এর আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসবে। আর তা না থাকলে একজন ভালো আলিমের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। আসুন দেখে নেয়া যাক কিছু প্রচলিত জাল হাদিস এবং মিলিয়ে দেখে নিন আপনার জানা হাদিসগুলো এর ভেতর পড়ে কিনা।
প্রতিটি বিশুদ্ধ হাদিসের শুরুতে যেমন ‘রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন’ কথাটি উল্লেখ করা থাকে, তেমনি জাল হাদিসগুলোর শুরুতেও এরকম থাকে। তবে এগুলো প্রকৃতপক্ষে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কথা না হওয়ায় জাল হাদিসের সংকলিত গ্রন্থগুলোতে সাধারণত ‘ক্বালা রাসুলাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম’ বা ‘রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন’ উল্লেখ করা হয় না এবং এখানেও তা উল্লেখ করা হলো না। কেবল উদ্ধৃত অংশটিরই উল্লেখ করা হলো।
১। “জ্ঞানার্জনের জন্য সুদূর চীনে হলেও যাও”। (ইবন আদী ২/২০৭। ইবন জাওজী ও ইবন হিব্বান এটিকে জাল প্রমাণ করেছেন)
বহুল ব্যবহৃত ও বহুল প্রচারিত একটি জাল হাদিস। একটু খতিয়ে দেখলে সাধরণ চোখেই এই হাদিসটির জালিয়াতি চোখে পড়ে। রাসুলুল্লাহ সাঃ যদি সত্যিই এ কথা বলতেন তাহলে অত্যন্ত কষ্টকর হলেও চীনে অগণিত সাহাবাদের যাতায়াত থাকতো। তাছাড়া সে সময় চীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের জন্য এমন কোন যায়গা ছিলোনা যে জ্ঞানার্জনের জন্য কাছাকাছি অনেক যায়গা ছেড়ে সেখানে যেতে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলবেন।
২। “বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র”। (বাগদাদের ইতিহাস লিপিবদ্ধকালে খাতিব হাদিসটি লিপিবদ্ধ করেছেন, তবে তিনি নিজেই একে জাল বলেছেন)
শহীদদের মর্যাদা আর সকলের চেয়ে বেশী তা আল্লাহ্ নিজে কুরআনে বলেছেন। বহুল প্রচলিত এই জাল হাদিসটি দিয়ে মানুষকে শাহাদাতের বন্ধুর পথ থেকে অতি সূক্ষ্মভাবে দূরে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। একথা সত্য বলে মানার পর এমন কি কোন লোক থাকবে, যে বিদ্বান না হয়ে শহীদ হতে চাইবে?
৩। “মসজিদে অপ্রয়োজনীয় কথা বললে তা সৎকাজগুলিকে ধ্বংস করে, যেভাবে প্রাণী ঘাস সাবাড় করে”। (তাবাকাত আশ শাফি’ইয়া, চতুর্থ খন্ড, ১৪৫ পৃঃ)
মসজিদ হলো ইসলামের প্রাণকেন্দ্রের মতো। অন্যায় ও অশ্লীল কথা ছাড়া সকল ভালো কথা, কাজ, পরিকল্পনার যায়গা হিসাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সময় থেকেই ছিলো মসজিদ।
৪। “আরবদের তিন কারণে ভালোবেসো। প্রথমতঃ আমি একজন আরব, দ্বিতীয়তঃ কুরআন নাজিল হয়েছে আরবী ভাষায়, তৃতীয়তঃ জান্নাতের ভাষা হবে আরবী”। (মুসতাদরাক আল হাকিমঃ চথুর্থ খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৮৭। রিজাল শাস্ত্রের অন্যতম সেরা স্কলার আবু হাতিম একে জাল প্রমাণ করেছেন)।
এই হাদিসটিও ইসলামের ভেতর জাতীয়তাবাদের বিষবাষ্প ঢুকাবার জন্য ব্যবহার করা হয়। আরব-অনারব কোন পার্থক্য ইসলামে নেই বরং এমন করার অপচেষ্টা কবিরা গুনাহ।
৫। “মুসলিমদের ভেতর এমন একজন ব্যক্তিও নেই, যার গুনাহগুলো জুম্মার দিনে ক্ষমা করে দেয়া হয় না”। (তাবরানি বর্ণিত। এটি জাল প্রমাণ করেছেন ইবন নাজর আল আসকালানী ও আজ জাহাবী)
সামান্য আমলের অবিশ্বাস্য ফজিলতের বর্ণনা করে মানুষকে পথভ্রষ্ট বানাবার অপচেষ্টার অংশ হিসাবে এমন অনেক জাল হাদিস তৈরী করা হয়েছে। “আখেরী যুগে একটি সুন্নত পালন করলে সাতশ শহীদের সম্না সওয়াব পাওয়া যাবে” এটিও হলো বহুল প্রচারিত এমন আরেকটি জাল হাদিস।
৬। “আমি হলাম জ্ঞানের শহর আর আলী তার দরজা”। (লিপিবদ্ধ করেছেন আল হাকিম ৩/১২৬। ইমাম বুখারী এটিকে জাল প্রমাণ করেছেন)
আলী রাঃ এর প্রতি বাড়াবাড়ি দেখাতে গিয়ে শিয়াদের দ্বারা অগণিত জাল হাদিস ব্যবহৃত হয়, যার ভেতর এটি হলো বহুল ব্যবহৃত একটি জাল হাদিস। যদিও আলী রাঃ এর মর্যাদা সম্পর্কে বিশুদ্ধ হাদিস আছে।
৭। “আমার সাহাবাগণ হলো আকাশের তারার মতো। তাদের একজনকে অনুসরণ করলেই তোমরা সৎপথের উপর থাকবে”। (ইবন হাজাম ৬/৮২ আল ইহকাম গ্রন্থে এটিকে জাল প্রমাণ করেছেন)
শিয়াদের ভেতর অধিকাংশই আবু বকর, উমার, উসমান রাঃ সহ অধিকাংশ সাহাবাদের প্রকাশ্যে বা গোপনে কাফির বলে ঘোষণা দেয় ও এর স্বপক্ষে জাল হাদিস প্রচার করে। সাহাবাদের মর্যাদাহানী করে তৈরী করা শিয়াদের জাল হাদিসের বিপরীতে অতি উৎসাহী কিছু সুন্নী ব্যক্তি সাহাবাদের অযাচিত মর্যাদা দেখিয়ে পাল্টা জাল হাদিস তৈরী করে, যার ভেতর এটি একটি।
৮। “আমার উম্মাতের মধ্যে মতপার্থক্য হলো আল্লাহর একটি করুণা”। (ইবন হাজাম ৫/৬৪ আল ইহকাম গ্রন্থে এটিকে জাল প্রমাণ করেছেন)
মাজহাব বা আলিমদের অন্যান্য অনেক মতপার্থক্যকে হালকা করে দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এমন কিছু জাল হাদিস তৈরী করা হয়েছে।
৯। “নারীর উপদেশ গ্রহণ করলে তা অনুতাপের কারণ হবে”। আরেকটি হাদিসে এসেছে, “নারীর কাছ থেকে আগে উপদেশ শুনো, তারপর তার বিপরীত করো” (ইবন আসাকির ২/২০০; আবু হাতিম ২/১৮৪ এটিকে জাল প্রমাণ করেছেন)
নারীদের ব্যাপারে রাসুল সাঃ এর এমন মনোভাব মানুষের কাছে প্রচার করার ঘৃণ্য কৌশল হিসাবে এমন কিছু জাল হাদিস বানানো হয়েছে।
১০। “আমার উম্মাতের আলিম হলো বনি ইসরাইলের নবীদের মতো”। (প্রায় সকল রিজাল শাস্ত্রবিদ মুহাদ্দিস এটিকে জাল প্রমাণ করেছেন)
অলি নামধারী বা পথভ্রষ্ট আলিমদের নিয়ে বাড়াবাড়ি বা ধর্মব্যবসার উদ্দেশ্যে তৈরী করা অগণিত জাল হাদিসের ভেতর এটি একটি।
১১। “যে ব্যক্তি ইতিকাফ করবে সে দুটি হজ্জ্ব ও দুটি উমরাহর সওয়াব লাভ করবে”। (বায়হাকী হাদিসটি লিপিবদ্ধ করেছেন এবং ইমাম জাহাবী একে জাল প্রমাণ করেছেন)
বানোয়াট ফজিলতের দিকে মানুষকে ডেকে গোমরাহ করার অপচেষ্টা।
১২। “যে ব্যক্তির একটি পুত্র হয় এবং সে বরকতের আশায় তার সন্তানের নাম মুহাম্মাদ রাখে, সে ও তার সন্তান উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (ইমাম জাওজী একে জাল প্রমাণ করেছেন)
আমাদের দেশে অসংখ্য পুরুষের নামের আগে মুহাম্মাদ রাখা হয় এই বানোয়াট হাদিসের ভিত্তিতে। এমন কোন কথা রাসুলুল্লাহ সাঃ বলে যাননি। এর স্বপক্ষে উৎকৃষ্ট প্রমাণ হতে পারে এই যে, সাহাবা-তাবেয়ী-তাবে তাবেয়ী যাঁরা রাসুলের হাদিস পালনে আর সকলের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন তাঁদের পুত্রদের নাম মুহাম্মাদ ছিলো খুব কম সংখ্যকের। খলিফা থাকা অবস্থায় উমার রাঃ একবার মুহাম্মাদ নামের সকল লোককে ডাকিয়ে একত্র করেন এবং তাদের মুহাম্মাদ নাম বাতিল করে অন্য নাম রাখার আদেশ দেন। তিনি বলেন, “তোমাদের নাম হবে মুহাম্মাদ কিন্তু কাজ হবে মুহাম্মাদের বিপরীত তা আমি হতে দেব না”।
১৩। “দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ”। (সকল রিজাল শাস্ত্রবিদ মুহাদ্দিস এটিকে জাল প্রমাণ করেছেন)।
আপাতদৃষ্টিতে সুন্দর এই কথাটি রাসুলের নামে চালিয়ে দেয়া হয়। মূলতঃ ইসলামের ভেতর জাতীয়তাবাদের বিষবাষ্প প্রবেশ করানোই এর উদ্দেশ্য।
১৪। “জ্ঞানসহ অল্প আমল জ্ঞানহীন অনেক আমল থেকে উত্তম”। (দাইলামী লিপিবদ্ধ করেছেন ও ইমাম সুয়ুতী জাল প্রমাণ করেছেন)
১৫। “যে ব্যক্তি মক্কায় হজ্জ্ব করলো কিন্তু (মদীনায়) আমার রওজা জিয়ারত করলো না, সে নিশ্চিতভাবে আমাকে অসম্মান করলো”। (তাবরানী লিপিবদ্ধ করেছেন ও ইবন মাঈন জাল প্রমাণ করেছেন)
মজার ব্যাপার হলো এ কথাটি সত্য হলে অগণিত সাহাবা এই অপরাধে অপরাধী হবে, কেননা রাসুল সাঃ এর মৃত্যুর পর তাঁরা হজ্জ্বের অংশ হিসাবে কখনোই রাসুল সাঃ এর রওজা জিয়ারত করেননি। এটি মূলতঃ কবর পূজারীদের পক্ষে তৈরী করা অন্যতম একটি ইমোশনাল জাল হাদিস। অথচ রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “পূণ্য লাভের আশায় তিনটি স্থান ছাড়া অন্য কোন যায়গায় ওই নিয়তে যাওয়া যাবে না। তিনটি স্থান হলো-মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী (রাসুলের রওজা নয়, রাসুলের মসজিদ), মসজিদুল আকসা”। (মুসলিম)
১৬। “কিয়ামাতের দিন সকলকে মায়ের নাম ধরে ডাকা হবে”। (ইবন আদী লিপিবদ্ধ করেছেন ও ইবন জাওজী জাল প্রমাণ করেছেন)
বাংলাদেশে প্রচলিত একটি জাল হাদিস।
১৭। “সবকিছুর একটি হৃদয় আছে, আর কুরআনের হৃদয় হলো সুরা ইয়াসিন। যে এ সুরাটি একবার পড়বে, সে পুরো কুরআন দশবার পড়ার সওয়াব পাবে”। (দারিমি লিপিবদ্ধ করেছেন ও ইবন আবি হাতিম জাল প্রমাণ করেছেন)
কুরআনের অর্থ ও শিক্ষা থেকে মানুষকে দূরে সরাবার জন্য অনেক জাল হাদিস তৈরী হয়েছে। এর ভিতর আছে অর্থ না বুঝে কুরআন পড়ার প্রতি উৎসাহিতকরণ, না বুঝে পড়ে নেকীর পাল্লা ভারী করার দিকে মানুষকে ডাকা, দু-তিনটি সুরার ভিতর মানুষের আমলকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা ইত্যাদি। শেষোক্ত ভাগে আছে অনেক জাল ফজিলতের হাদিস, যার ভিতর এটি একটি।
১৮। “অজুর উপর আবার অজু যেন আলোর উপর আরেকটি আলো”। (ইমাম গাজ্জালি লিপিবদ্ধ করেছেন ও মানযারি জাল প্রমাণ করেছেন)
অনর্থক কাজে আকৃষ্ট করে ব্যস্ত করার অপচেষ্টার অংশ হিসাবে এই হাদিস বানানো হয়েছে।
১৯। “আরবদের হেয় করা মানে হলো ইসলামকে হেয় করা”। (আবু নাইম লিপিবদ্ধ করেছেন ও ইবন আবু হাতিম জাল বলেছেন)
জাতীয়তাবাদের বিষ ইসলামে ঢুকিয়ে দেবার জন্য তৈরী করা অনেক হাদিসের ভেতর এটি একটি।
২০। “জুম্মার দিন ইমাম মিম্বরে দাঁড়াবার পর আর কোন (সুন্নত/নফল) সালাত ও কথাবার্তা নেই”। (তাবারানি বর্ণনা করেছেন ও ইমাম জাহাবী জাল প্রমাণ করেছেন)।
সহীহ হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ স্বয়ং মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দেয়ার সময় একজন সাহাবীকে ‘দখালালুল মাসাজিদ’ নামের দু’রাকাত সালাত আদায়ের আদেশ দিয়েছেন।
২১। “রাসুলুল্লাহ সাঃ একবার সাহাবাদের সাথে নিয়ে এক যুদ্ধ থেকে ফিরছিলেন। এক সময় তিনি তাদের দিকে ফিরে বললেন, আমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদ বা জিহাদ আন নফসে ফিরে এসেছি”। (বায়হাকী বর্ণনা করেছেন ও ইবন হাজার এটা জাল প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেছেন এ কথা রাসুলের নয় বরং তা ইবরাহীম ইবন আবি আবলাহ নামক এক লোকের। বিখ্যাত স্কলার ইবন তাইমিয়াহ একে বিধ্বংসী জাল হাদিস হিসাবে বলেছেন)
জিহাদ থেকে মানুষকে দূরে সরাবার জন্য এ হাদিস তৈরী করা হয়েছে। নফসের সাথে জিহাদ বলতে যা এখানে বড় করে দেখানো হয়েছে, তা মূলতঃ সকল মুসলিমের জন্য সার্বক্ষণিক প্রযোজ্য। কুরআনে আগণিত আয়াতে জিহাদের কথা আল্লাহ্ বলেছেন, অথচ তা একবারের জন্যও ‘নফসের জিহাদের’ কথা নয়।
২২। “মুমিনের কলব হলো আল্লাহর আরশ”। (আজ জারকাশি ও ইমাম ইবন তাইমিয়াহ একে জাল বলেছেন)
ভিন্ন বর্ণনায় একই রকম একটি জাল হাদিস আছে, যা হলো- “সকল আসমান আর সকল জন্মি আমাকে ধারণ করতে অক্ষম, কিন্তু মুমিনের অন্তর আমাকে ধারণ করতে পারে”। ইমাম ইবন তাইমিয়া একে জাল বলেছেন।
পীর-কবর-মাজার পূজারীদের খুব পছন্দের জাল হাদিস এটি, যা মানুষকে শির্কের মতো ভয়াবহ অপরাধের দিকে ধাবিত করে।
২৩। “যে নিজেকে জানে, সে তার প্রতিপালককে জানে”। (ইমাম সুয়ুতি একে জাল বলেছেন)
বিভ্রান্তিকর কথা দিয়ে মানুষকে বোকা বানাবার চেষ্টা। নিজেকে জানা হলো এমন এক ধোকাবাজি, যা যাদুকরীভাবে মানুষের চিন্তাকে গ্রাস করে নিজেকে বড় ভাবতে বাধ্য করে, যা এমনকি শির্কের দিকে নিয়ে যেতে পারে। দেখুন আল্লাহর কথা ও ভাবুন কোনটা সত্য। আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন, “বস্তুতঃ মানুষ নিজের সম্পর্কে সম্মক অবগত, যদিও সে নানা টাল-বাহানার অবতারণা করে”।
২৪। “প্রয়োজনের জন্য কোন আইন নেই” (ওজরের কোন মাসলাহ নাই)। ইমাম জাহাবী একে জাল বলেছেন।
মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচলিত একটি জাল হাদিস। প্রয়োজন বা ওজর মানুষ থেকে মানুষে বিভিন্ন হয়। কেউ সামান্য ব্যথা হলেও মুষড়ে পড়ে, কেউ অসহ্য ব্যথাও হাসিমুখে চেপে যেতে পারে। বিপদাপন্ন বা বিশেষ অবস্থায় অনেক কিছুতে আল্লাহ্ ছাড় দিয়েছেন বান্দাদের, তবে তা এই কথার মতো হাল্কা নয়।
২৫। “পাগড়ি পরে এক রাকাত সালাত পাগড়ি না পরে পনের রাকাত সালাতের সমান। পাগড়ি পরে একটি জুম্মা পাগড়ি না পরে দশটি জুম্মার নামাজের সমান”। (ইবন নাজ্জার এটি বর্ণনা করেছেন ও ইবন হাজার আসকালানি এটি জাল প্রমাণ করেছেন)।
এদেশে ব্যাপক প্রচলিত একটি জাল হাদিস। সামান্য কাজের অবিশ্বাস্য ফজিলত বলে মানুষকে ভুল আমলে জড়িয়ে ফেলে তৃপ্তি পাইয়ে আসল আমল থেকে দূরে রাখার অপপরিকল্পনার অংশ হতে পারে এটি।
আল্লাহ্ আমাদের জাল হাদিস অনুসরণ করে কষ্ট করে করা নিজের সৎকাজ ধ্বংস হওয়া থেকে হিফাজত করুন। যটুকু আমরা জানবো বা করবো তা যেন সঠিক হয় সে ভাগ্য আল্লাহ্ আমাদের দান করুন। আমিন।
আচ্ছা আমাদের আমল নামা কি গননা করা হবে? নাকি পরিমাপ করা হবে