জুম’আর গুরুত্ব, ফযীলত ও মাসায়েল
يٰأَيُّهَا الَّذينَ ءامَنوا إِذا نودِىَ لِلصَّلوٰةِ مِن يَومِ الجُمُعَةِ فَاسعَوا إِلىٰ ذِكرِ اللَّهِ وَذَرُوا البَيعَ ۚ ذٰلِكُم خَيرٌ لَكُم إِن كُنتُم تَعلَمونَ
“হে মু’মিনগণ! জুম’আর দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরনে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর।” (সূরা জুম’আঃ৯)
উল্লেখ্য যে, فَاسعَوا ‘ফাস’আউ’ শব্দের অর্থ এখানে দৌড়ানো উদ্দেশ্য নয়। অর্থাৎ আযান হওয়া মাত্র সকল কাজ বাদ দিয়ে সালাত আদায়কে সবকিছুর উপর গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিতে হবে। এখানে এই অর্থই বোঝানো হয়েছে। সালাতে দৌড়ে আসতে হবে- এটা বুঝান হয়নি। কারণ দৌড়ে এসে সালাতে শরীক হওয়ার ব্যপারে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা আছে। সালাতে আসতে হয় খুশু-খুযু, ভয়-ভীতি ও বিনয়ের সঙ্গে।
জুম’আর নামকরণ:
মুসুল্লীদের জমায়েত হওয়ার কারণে এ দিনের নাম জুম’আর দিন অর্থাৎ জমা হওয়ার দিন। ‘জুম’আ’ অর্থ সমাবেশ বা সম্মেলন।
সর্বপ্রথম জুম’আ:
প্রথম হিজরীতে হিজরতের পরপর নবী করিম (সাঃ)এর মদীনা আগমনের সাথে সাথে জুম’আ ফরয হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সর্বপ্রথম জুম’আ পড়েছিলেন মদীনার কুবা মসজিদে ও মসজিদে নববীর মধ্যবর্তী ‘বনু সালেম ইবনে আউস’ গোত্রে (ইবনু শাইবা, তারীখুল মদীনাঃ ১/৬৮)। বর্তমানে এ জায়গায় নির্মিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদে জুম’আ’। এরপর তিনি (সাঃ) মসজিদে নববীতে জুম’আ আদায় শুরু করেন। বর্তমান সৌদি আরবের পূর্ব এলাকা বাহরাইনের একটি গ্রামের নাম ‘জুওয়াসা’ (বুখারীঃ ৮৯২, ইফা ৮৪৮, আধুনিক ৮৪১)। এ এলাকায় আবদে কাইস গোত্রের বসতি ছিল। অতঃপর এখানে জুম’আ পড়া শুরু হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, এই বাহরাইন বর্তমান রাষ্ট্র বাহরাইন নয়।
জুম’আ ও যোহরের মধ্যে পার্থক্য:
জুম’আ ও যোহরের মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য আছে-
(১) যোহর সকল বিবেক সম্পন্ন মুমিন নর-নারীর উপর ফরজ, আর জুম’আ সকলের উপর ফরজ নয়;
(২) যোহর হল মূল সালাত, আর জুম’আ হল যোহরের পরিবর্তে;
(৩) জুম’আর কিরা’আত প্রকাশ্যে আর যোহরের কিরা’আত চুপে চুপে;
(৪) জুম’আর ফরজ দুই রাকা’আত, আর যোহরের ফরজ চার রাকা’আত;
(৫) জুম’আয় খুৎবা আছে কিন্তু যোহরে কোন খুৎবা নেই।
জুম’আর সালাতের ওয়াক্ত:
অধিকাংশ আলেমের মতে, জুম’আ ও যোহরের সময় একই। যখন যোহরের শুরু হয় জুম’আও তখনই শুরু হয়। অর্থাৎ ঠিক দুপুরে সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে কিছুটা ঢলে পড়লে জুম’আর সময় শুরু হয় (বুখারীঃ ৪১৬৮)।
জুম’আর সালাতে মুসুল্লীর সংখ্যা:
কমপক্ষে কতজন মুসুল্লী হলে জুম’আর সালাত আদায় করা যায় এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখপূর্বক কোন হাদীস পাওয়া যায় না। তবে বিজ্ঞ আলেমদের মতে, ইমাম ব্যতীত কমপক্ষে ৩ জন হলেই যথেষ্ট। একজন খুৎবা দেবে, বাকী তিনজন শুনবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রাঃ) এ অভিমতটি গ্রহন করেছেন। আর এটাই সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য মত।
জুম’আ আদায়ের নুন্যতম এলাকা:
যত ছোট গ্রামই হোক সেখানে জুম’আ পড়া জায়েয আছে। খলীফা উমর (রাঃ) বাহরাইনের অধিবাসীদের লিখেছেন, তোমরা যেখানেই থাক জুম’আ পড় (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; বুখারী ৮৯৩, ইঃফাঃ ৮৯৩, আধুনিক ৮৪২)।
ইবনে উমর (রাঃ) মক্কা মুকাররামা ও মদীনা মুনাওারার মধ্যবর্তী পথে ছোট ছোট জনপদগুলোতে মানুষকে জুম’আ পড়তে দেখেছেন। তিনি তাতে কোন আপত্তি করতেন না (মুসান্নাফে আঃ রাজ্জাক)।
অপরদিকে পাড়াগ্রামে জুম’আ হবে না মর্মে খলীফা আলী (রাঃ) এর উদ্ধৃতি দিয়ে একটি হাদিস বর্ণনার প্রচলন এ দেশে আছে। আসলে এটি সহীহ হাদীস নয় (মাজাল্লাতুল বুহসিল ইসলামিয়া ১৬/৩৫২-৩৫৪, ২২/৭৫)।
উল্লেখ্য যে, কোন অমুসলিম দেশে পড়াশোনা বা চাকরীরত অবস্থায় সেখানে মসজিদ না থাকলে কোন একটি রুমে ৩ জন মিলে জুম’আ পড়লেও তা আদায় হয়ে যাবে (মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিকঃ ১৫/৮৫)।
জুম’আ যার উপর ফরজ:
হুঁশ-জ্ঞান সম্পন্ন ও স্বাধীন প্রত্যেক বালেগ মুসলমান পুরুষদের উপর জুম’আ ফরজ। এ বিষয়ে সারকথা হচ্ছে, যার মধ্যে নিম্নে বর্ণিত শর্তগুলো একযোগে পাওয়া যায় তার উপর জুম’আ ফরজ।
১. মুসলমান হওয়া (কারণ ইসলাম গ্রহন ছাড়া কোন ইবাদতই কবুল হয় না)।
২. বালেগ হওয়া (তবে নাবালেগ শিশু জুম’আ পড়লে সওয়াব পাবে)।
৩. হুঁশ জ্ঞান থাকা (কারণ বেহুঁশ বা পাগলের কোন ইবাদত নেই)।
৪. পুরুষ হওয়া (মেয়েদের উপর জুম’আ ফরজ নয়, তবে পড়লে আদায় হবে)।
৫. স্বাধীন হওয়া (গোলাম বা ক্রীতদাস হলে জুম’আ ফরয হয় না)।
৬. মুকীম হওয়া (মুসাফির অবস্থায় জুম’আ ফরজ হয় না)।
৭. শরয়ী উযর না থাকা (অসুস্থ, ভয়ভীতি বা নিরাপত্তাহীনতায় না থাকা)।
● যাদের উপর জুম’আ ফরয নয় তারা যদি জুম’আ পড়ে তবে তা আদায় হয়ে যাবে। যেমন শিশু, মহিলা, রোগী বা উযর আছে এমন যে কেউ জুম’আ পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে এবং এর সওয়াব ও পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে তাদের আর যোহর পড়তে হবে না। তবে মেয়েরা ইমাম হতে পারবে না, খুৎবা দিতে পারবে না।
● রাস্তায় কাদা থাকা, পথ পিচ্ছিল হওয়া ইত্যাদি কারণে কেউ জুম’আয় যেতে না পারলে এমতবস্থায় তার গুনাহ হবে না। তবে বাসায় যোহর পড়ে নেবে। (বুখারীঃ৯০১, ইঃফাঃ৮৫৫, আধুনিকঃ৮৪৮; মুসলিমঃ৬৯৯)
● যারা লোকালয়ের বাইরে বা সমুদ্রে এতটুকু দূরে কাজ করে যে, সেখান থেকে আযান শুনতে পায় না, তাদের উপর জুম’আ ফরজ নয়, তবে এসে জুম’আয় শরীক হতে পারলে সওয়াব পাবে। (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীনঃ১/৩৯৯)
● মুসাফির ব্যক্তি জুম’আর খুৎবা দিতে ও ইমামতি করতে পারবে। (ফাতাওয়া ইবনে উসাইমীনঃ৫/২৩)
● জুম’আ ফরজ ‘এমন’ ব্যক্তির জুম’আর দিনে সফরে বের হলে, পথিমধ্যে কোথাও জুম’আ পড়তে পারে- এমন নিশ্চয়তা থাকলে একদল আলেমের মতে, এ দিন সফর করা জায়েয আছে। আর যদি কোথাও জুম’আ না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে এ দিন সফর করা উচিত নয়। তবে জুম’আর সালাত শেষ হওয়ার পর সফর করতে কোন নিষেধ নেই।
উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য জুম’আর দিনের ফযীলত সমূহ:
১) সূর্য উদিত হয় এমন দিনগুলোর মধ্যে জুম’আর দিন হল সর্বোত্তম দিন। এ দিনে যা কিছু ঘটেছিল তা হলঃ
(ক) এই দিনে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল,
(খ) এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল,
(গ) একই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল [মুসলিমঃ৮৫৪],
(ঘ) একই দিনে তাঁকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল,
(ঙ) এই দিনেই তাঁর তওবা কবুল করা হয়েছিল,
(চ) এই দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিল [আবু দাউদঃ১০৪৬],
(ছ) এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে,
(জ) এই দিনেই কিয়ামত হবে,
(ঝ) এই দিনেই সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে [আবু দাউদঃ১০৪৭],
(ঞ) প্রত্যেক নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, আকাশ, পৃথিবী, বাতাস, পর্বত ও সমুদ্র এই দিনটিকে ভয় করে। [ইবনে মাজাহঃ১০৮৪, ১০৮৫; মুয়াত্তাঃ৩৬৪]।
২) উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এটি একটি মহান দিন। এ জুম’আর দিনটিকে সম্মান করার জন্য ইহুদী-নাসারাদের উপর ফরজ করা হয়েছিল; কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এই দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অতঃপর ইহুদীরা শনিবারকে আর খ্রিষ্টানরা রবিবারকে তাদের ইবাদতের দিন বানিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের জন্য শুক্রবারকে মহান দিবস ও ফযীলতের দিন হিসেবে দান করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদী তা গ্রহন করে নিল। [বুখারী ৮৭৬, ইফা ৮৩২, আধুনিক ৮২৫; মুসলিমঃ ৮৫৫]
৩) জুম’আর দিন হল সাপ্তাহিক ঈদের দিন। [ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮]
৪) জুম’আর দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদা সম্পন্ন। (মুসনাদে আহমদঃ৩/৪৩০; ইবনে মাজাহঃ১০৮৪)
৫) জুম’আর দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই তাকে দেওয়া হয়। আর এ সময়টি হল জুম’আর দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। [বুখারীঃ৯৩৫, ইফা ৮৮৮, আধুনিক ৮৮২; মুসলিমঃ৮৫২]
৬) জুম’আর রাতে বা দিনে যে ব্যক্তি মারা যায় আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। [তিরমিযীঃ১০৭৮]
৭) জান্নাতে প্রতি জুম’আর দিনে জান্নাতীদের হাট বসবে। জান্নাতী লোকেরা সেখানে প্রতি সপ্তাহে একত্রিত হবেন। তখন সেখানে এমন মনমুগ্ধকর হাওয়া বইবে, যে হাওয়ায় জান্নাতীদের সৌন্দর্য অনেক গুণে বেড়ে যাবে এবং তাদের স্ত্রীরা তা দেখে অভিভূত হবে। অনুরূপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি স্ত্রীদের বেলায়ও হবে। [মুসলিমঃ২৮৩৩, ৭১/৭৫৩]
৮) যে ব্যক্তি জুম’আর দিনে সুরা কাহফ পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেবেন। [জামেউস সাগীরঃ৬৪৭০]
৯) যে ব্যক্তি জুম’আর দিনে সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে। [মুসলিম]
১০) প্রত্যেক সপ্তাহে জুম’আর দিন আল্লাহ তায়ালা বেহেশতী বান্দাদের দর্শন দেবেন। [সহীহুত তারগীব]
১১) এই দিনে দান খয়রাত করার সওয়াব অন্য দিনের চেয়ে বেশী হয়। ইবনুল কায়্যিম বলেছেন, অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের দানের সওয়াব যেমন বেশী তেমনি শুক্রবারের দান খয়রাত অন্য দিনের তুলনায় বেশী। [যাদুল মা’আদ]
১২) ইবনুল কায়্যিম আরও বলেছেন যে, অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের মর্যাদা যেমন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুম’আ বারের মর্যাদা ঠিক তেমন। তাছাড়া রমজানের কদরের রাতে যেমন ভাবে দোয়া কবুল হয়, ঠিক তেমনি শুক্রবারের সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণেও দোয়া কবুল হয়। [যাদুল মা’আদঃ১/৩৯৮]
জুম’আর নামাজের ফযীলত:
জুম’আর নামাজের ফযীলত ও তা আদায়কারীদের জন্য ঘোষিত পুরষ্কার-
১। কুরবানী করার সমান সওয়াব অর্জিত হয়ঃ
দিনে আগে ভাগে মসজিদে গেলে দান-খয়রাত বা পশু কুরবানী করার সমতুল্য সওয়াব পাওয়া যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যাক্তি জু’আর দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানী করল, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানী করল, তৃতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানী করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।” (বুখারীঃ ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)
২। মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে ফেরেশতারা অগ্রগামীদের নাম তালিকাভুক্ত করেনঃ
জুম’আর সালাতে কারা অগ্রগামী, ফেরেশতারা এর তালিকা তৈরি করে থাকেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“জুম’আর দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতা এসে হাজির হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা সর্বাগ্রে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকে। প্রথম ভাগে যারা মসজিদে ঢুকেন তাদের জন্য উট, দ্বিতীয়বারে যারা আসেন তাদের জন্য গরু, তৃতীয়বারে যারা আসেন তাদের জন্য ছাগল, চতুর্থবারে যারা আসেন তাদের জন্য মুরগী, ও সর্বশেষ পঞ্চমবারে যারা আগমন করেন তাদের জন্য ডিম কুরবানী বা দান করার সমান সওাব্ব লিখে থাকেন। আর যখন ইমাম খুৎবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে উঠে পড়েন ফেরেশতারা তাদের এ খাতা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যান।” (বুখারী ৯২৯, ইফা ৮৮২, আধুনিক ৮৭৬)
৩। দশ দিনের গুনাহ মাফ হয়ঃ
জুম’আর দিনের আদব যারা রক্ষা করে তাদের দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
‘যে ব্যাক্তি ভালভাবে পবিত্র হল অতঃপর মসজিদে এলো, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনতে চুপচাপ বসে রইল, তার জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী এ সাত দিনের সাথে আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে খুৎবার সময় যে ব্যক্তি পাথর, নুড়িকণা বা অন্য কিছু নাড়াচাড়া করল সে যেন অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিমঃ ৮৫৭)
৪। জুম’আর আদব রক্ষাকারীর দশ দিনের গুনাহ মুছে যায়ঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“জুম’আর সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়। (ক) এক ধরনের লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না। (খ) দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুম’আয় হাজির হয় সেখানে দু’আ মুনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না। (গ) তৃতীয় প্রকার লোক হল যারা জুম’আয় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুম’আর মধ্যবর্তী ৭ দিন সহ আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ খাতা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদঃ ১১১৩)
৫। প্রতি পদক্ষেপে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব অর্জিত হয়ঃ
যে ব্যাক্তি আদব রক্ষা করে জুম’আর সালাত আদায় করে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব লিখা হয়।
আউস বিন আউস আস সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“জুমা’আর দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, পূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।” (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৯৫৪, ১৬২১৮)
৬। দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারাঃ
জুম’আর সালাত জুম’আ আদায়কারীদের জন্য দুই জুম’আর মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুম’আ থেকে পরবর্তী জুম’আ, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সকল (সগীরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবীরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।” (মুসলিমঃ ২৩৩)
জুম’আর আদব:
১। জুম’আর দিন গোসল করা। যাদের উপর জুম’আ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন(বুখারীঃ ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ।
২। জুম’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)
৩। মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭, ইঃফাঃ৮৪৩)
৪। গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ৮৮৩)
৫। উত্তম পোশাক পরিধান করে জুম’আ আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)
৬। মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)
৭। মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩, আহমাদঃ১/২৩০)
৮। আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১, মুসলিমঃ৮৫০)
৯। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
১০। জুম’আর দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’আতে সূরা সাজদা (সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান(দাহর)(সূরা নং-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)
১১। সূরা জুম’আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুম’আর সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুম’আ আদায় করা। (মুসলিমঃ৮৭৭, ৮৭৮)
১২। জুম’আর দিন ও জুম’আর রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ। (আবু দাউদঃ ১০৪৭)
১৩। এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৪। মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। (বুখারীঃ৯১০, ৮৮৩)
১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে আগানোর চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬। কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা। (বুখারীঃ৯১১, মুসলিমঃ২১৭৭, ২১৭৮)
১৭। খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দু’রাকা’আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)
১৮। জুম’আর দিন জুম’আর পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোন শিক্ষামুলক হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। (আবু দাউদঃ ১০৮৯)
১৯। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)
২০। মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)
২১। ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
২২। ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। (আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)
২৩। খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদঃ ১১০৮)
২৪। জুম’আর দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুম’আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
২৫। জুম’আর আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর যে আযান দেওয়া হয় তা।(বুখারীঃ ৯১২)
২৬।জুম’আর ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)
২৭। উযর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুম’আ চালু না করা। আর উযর হল এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোন ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (মুগনি লিবনি কুদামাঃ ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহঃ ২৪/২০৮)
২৮। ওজু ভেঙ্গে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু দাউদঃ ১১১৪)
২৯। একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় সালাত আদায় না করা। (হাকেমঃ ১/১২৮)
৩০। সালাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই সালাত আদায় করা (আবু দাউদঃ৮৬২)। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।
৩১। কোন নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারীঃ৫১০)
৩২। এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদঃ ১৩৩২)
৩৩। পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফযীলত অন্তরে জাগরূক রাখা।
৩৪। হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।
৩৫। খুৎবার সময় খতীবের কোন কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)
৩৬। হানাফী আলেমগন বলেছেন যে, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসুল্লীর পিঠের উপর সিজদা দেওয়া জায়েজ (আহমাদঃ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের উপর ও দিতে পারে (আর রাউদুল মুরবী)
৩৭। যেখানে জুম’আর ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (মুসলিমঃ ৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)
৩৮। ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা- ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রত থাকা।
জুম’আর বিবিধ মাসায়েল:
প্রশ্নঃজুম’আর ফরজের আগে ও পরে কত রাকআত সালাত আদায় করব?
উত্তর- আমরা সকলেই জানি যে, জুম’আর ফরজ হল ২ রাকআত। আর সুন্নাত হল- ফরজের আগে দুই রাকআত (তাহিয়্যাতুল মাসজিদ) এবং পরে চার রাকআত বা দুই রাকআত। আর বাইরে ফরজের আগে অতিরিক্ত নির্দিষ্ট সংখ্যক কোন সালাত নেই। তএ দুই দুই রাকআত করে যে যত রাকআত ইচ্ছা নফল হিসেবে আদায় করতে পারে। উল্লেখ্য যে, প্রচলিত কাবলাল জুম’আ শিরোনামে চার রাকআত বিশিষ্ট কোন সালাত সহীহ হাদিসে পাওয়া যায় না। খুৎবার আগে এক সালামে চার রাকআত আদায়ের পক্ষে দলীল হিসাবে আনীত হাদিসটির সনদ খুবই দুর্বল যা গ্রহণযোগ্য নয়। তবে কমপক্ষে দুই রাকআত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত পড়তেই হবে। এমনকি ইমাম সাহেবের খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলেও। তবে যারা আগে থেকেই দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সালাত আদায় করে বসে আছেন, তারা খুৎবার সময় কোন নামাজ পড়বে না।
অতঃপর জুম’আর ফরজের পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) চার রাকআত সালাত আদায় করতে বলেছেন (মুসলিমঃ ১৯১৩ ইফা)।
তবে আব্দুল্লাহ(রাঃ) বর্ণিত এক হাদিসে পাওয়া যায় যে, নবী (সাঃ) জুম’আর নামাজ পড়ে ফিরে এসে নিজ বাড়িতে দুই রাকআত নামাজ পড়তেন (মুসলিমঃ ১৯১৬ ইফা)।
আরেকটি হাদীসে সুহাইল (রাঃ) বলেন, তোমরা তাড়াহুড়া থাকলে মসজিদে দুই রাকআত এবং (বাড়িতে) ফিরে গিয়ে দুই রাকআত পড়ো (মুসলিমঃ ১৯১৪ ইফা)।
এ থেকে ইজতিহাদ করে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রাঃ) বলেছেন যে, ফরজের পর মসজিদে হলে চার রাকআত আর বাড়িতে হলে দুই রাকআত সুন্নাত নামাজ পড়বে।
প্রশ্নঃ জুম’আর সালাত পড়া অবস্থায় যদি কোন মুক্তাদির ওযু ছুটে যায় তখন কি করবে?
উত্তর- মসজিদ থেকে বের হয়ে যাবে (এমন ভঙ্গীতে যেন নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে)। নতুন ভাবে ওযু করে ফিরে এসে যদি দ্বিতীয় রাকআতের রুকু পাওয়া যায় তাহলে এক রাকআত পাওয়া গেল বলে গন্য হবে। অতঃপর ইমামের সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে আরেক রাকআত নিজে নিজে পড়ে নেবে। আর যদি দ্বিতীয় রাকাআতের রুকু না পায়, সিজদা বা তাশাহুদের বৈঠকে শরীক হয় তাহলে জুম’আ পেল না। সেক্ষেত্রে সে যোহরের নিয়ত করে (“নিয়ত পড়ে না”) চার রাকআত আদায় করবে।
প্রশ্নঃ নামাজরত অবস্থায় যদি ইমামের ওযু ছুটে যায় তাহলে তিনি কি করবেন?
উত্তর- পেছন থেকে একজনকে টেনে এনে ইমামের জায়গায় দাঁড় করিয়ে ওযু করতে চলে যাবেন। ওযু শেষে পূর্বের নিয়মে বাকি নামাজ আদায় করবেন।
প্রশ্নঃ ইমাম যদি বিনা অযুতে সালাত আদায়ের পর মনে হয় যে, তার ওযু ছিল না া ওজু ছুটে গিয়েছিল তখন কি হবে?
উত্তর- মুক্তাদীদের সালাত আদায় হয়ে যাবে। তবে ইমাম সাহেব যোহরের ফরজের নিয়তে একা চার রাকআত পড়ে নেবেন।
প্রশ্নঃ ঈদ ও জুম’আ একই দিনে হলে জুম’আ পড়ার হুকুম কি?
উত্তর- এমন হলে যার ইচ্ছা সেদিন জুম’আ পড়বে। আর না পড়লে গুনাহ হবে না। তবে জুম’আ না পড়লে যোহরের সালাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, জুম’আর দিন ঈদ হলে ইমামের জন্য জুম’আর সালাত আদায় করা বাধ্যতামূলক।
প্রশ্নঃ মহিলাদের জুম’আয় শরীক হওয়া কি যায়েজ আছে?
উত্তর- জুম’আয় অংশ গ্রহন মেয়েদের জন্য ফরজ নয়। তবে কোন নিষেধ ও নেই। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জামানায় মুহাজির মহিলাগণ নবীজি (সাঃ) এর পেছনে জুম’আর সালাত আদায় করতেন।
জুম’আয় শরীক হওয়ার মধ্যে মেয়েদের জন্য কল্যানের ভাগই বেশী। কারণ দ্বীন শিক্ষার সুযোগ সুবিধা মেয়েদের জন্য ততটুকু নেই যতটুকু পুরুষদের আছে। কলেজ ইউনিভার্সিটি শিক্ষায় তারা অগ্রসর হলেও কুরআন ও হাদীসের শিক্ষায় তারা অনেক পেছনে। কমপক্ষে সাপ্তাহিক একটি খুৎবায় তারা ধর্মীও নিরক্ষরতা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারে। দ্বীনী ইলমের আলো তারা পেলে পারিবারিক জীবন আরও সুন্দর এবং ছেলে মেয়েদেরকে দ্বীনী পথে মানুষ করার কাজ সহজ হবে। সে লক্ষ্যে নারীদের মসজিদে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া ও মসজিদে তাদের আলাদা জায়গা রাখা কর্তৃপক্ষের জন্য একটি মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এ হিসাবে তারা সওয়াবও পাদেন, ইনশাআল্লাহ। শুধু একটা শর্ত যে, মহিলারা পূর্ণ পর্দার সাথে ও সর্বাঙ্গীণ শালীনতা বজায় রেখে মসজিদে গমনাগমন করবেন।
উৎস: প্রশ্নোত্তরে জুমু’আ ও খুৎবা
হেল্লা বিবাহ কি হারাম?