সংবাদ

ইন্টারনেটে আয়ের নামে প্রতারণা

ইন্টারনেটভিত্তিক আউটসোর্সিং কাজ এখন এমএলএম ব্যবসায় রূপান্তর করেছে অসাধু একটি চক্র। কমপক্ষে ৭-৮টি কোম্পানী এই ব্যবসায় প্রতারণার ফাঁদ পেতে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সারা দেশে প্রায় অর্ধকোটি মানুষকে ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে তারা সর্বনাশ করছে। বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাসহ বেকাররা এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

‘পেইড টু ক্লিক’ করেই ডলার আয়ের লোভনীয় ফাঁদ পেতে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে যেসব কোম্পানী সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- স্কাইল্যান্সার, ডোল্যান্সার, অনলাইন অ্যাড ক্লিক, বিডিএস ক্লিক সেন্টার, অনলাইন নেট টু ওয়ার্ক, বিডি অ্যাডক্লিক, শেরাটন বিডি, ইপেল্যান্সার। এরা মূলত এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে এন্ট্রি ফি বাবদ সাড়ে সাত হাযার টাকা সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে প্রতি মাসে ২১৫০ টাকা হারে আয় করা যায়। আর প্রতিষ্ঠান ভেদে নিয়ম অনুযায়ী একজন সদস্য আরেকজন সদস্য ভর্তি করাতে পারলে তাকে সদস্য প্রতি নিবন্ধন ফির কমবেশি ১০ শতাংশ টাকা দেওয়া হয়। অতি সম্প্রতি ডোল্যান্সার নামক কোম্পানীটি উধাও হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে তারা সাড়ে তিন লক্ষ গ্রাহকের নিকট থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

কেইস স্টাডি :

(১) প্রতারণার শিকার ঢাকার ইয়াসমীন আঁখি ২০১১-এর নভেম্বরে ডোল্যান্সারের সদস্য হন। দেড় শতাধিক আইডি কেনেন সাড়ে তিন লাখ টাকায় এবং ইনভেস্টর সদস্য হন পাঁচ লাখ টাকায়। প্রথম দুই মাসে পান প্রায় এক লাখ টাকা। কিন্তু পরের সাত মাসে একটি টাকাও পাননি।

(২) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র সুমন ঘোষ বলেন, ‘আমার ঢাকায় থাকার জায়গা হারিয়েছি, গ্রামেও যেতে পারছি না। গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়স্বজনদের দুই শতাধিক আইডি কিনে দিয়েছি। আমার কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঁচশর বেশি আইডি কিনেছে। কোথাও এখন মুখ দেখানোর জায়গা পাচ্ছি না’।

(৩) উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের মুহাম্মাদ শাওন ডোল্যান্সারের স্টার সদস্য। চাকরি করতেন টঙ্গীর বেলা টেক্সটাইলের ডায়িং এক্সিকিউটিভ হিসাবে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেশি উপার্জনের আশায় গত জানুয়ারী মাসে সাড়ে আট লাখ টাকায় ডোল্যান্সারের ইনভেস্টর সদস্য হন। তাঁর আইডি আছে ২৪টি। কিন্তু প্রথম মাসে টাকা পেলেও আজ পর্যন্ত আর কোনো টাকা পাননি তিনি। শাওন বলেন, ‘ডোল্যান্সার আমাকে রাস্তার ফকির বানিয়েছে। এখন আমার মরা ছাড়া কোনো গতি নাই’।

(৪) প্রতারিত আবু সাঈদ মাহিন ডোল্যান্সারের স্টার সদস্য। তিনি বলেন, ‘ক্লিক করে ডলার উপার্জনের জন্য এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায় ১৬টি আইডি কিনেছিলাম। আমার কথামতো বাবা ও বড় বোনও ছয় লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ করে আইডি কেনেন এবং লিজ ইনভেস্টর সদস্য হন। এখন আমাদের পুরো পরিবার টাকা হারিয়ে পাগলের মতো। বাবার পেনশনের পুরো টাকাটাই শেষ হয়ে গেছে।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button