ইহকাল-পরকাল

জান্নাত

জান্নাত নেককারদের ঘর
এরশাদ হচ্ছে :

কেউ জানে না তাদের জন্য কি কি নয়নাভিরাম গোপন রাখা হয়েছে। তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ। [সূরা সাজদাহ ১৭]
হে মুসলমানগণ! এসো শান্তির রাজ্য-জান্নাতের আলোচনার মাধ্যমে আমাদের অন্তর উর্বর ও আন্দোলিত করি। হতে পারে তার আলোচনা ও স্মৃতিচারণ আমাদের অন্তরে জান্নাতের আগ্রহ সৃষ্টি করবে। যার ফলে আমরা সে সকল ভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবযারা আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হলে ঘোষণা আসবে :

এতে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে প্রবেশ কর। [সূরা হিজর ৪৬]
জান্নাত একমাত্র অভিষ্ঠ লক্ষ্য,কাঙ্খিত বস্তু। এর জন্য-ই আমাদের পূর্ব পুরুষগণ সব কিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের সর্বশেষ নমুনা পেশ করতেন। তার দীনের জন্য উৎসর্গ হতেন,তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শাহাদাত বরণ করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জান্নাতের মাধ্যমেই বদরের ময়দানে মুসলিম সৈন্যদের ভেতর প্রেরণার সৃষ্টি করে ছিলেন,তিরস্কার করে ছিলেন তাদের মন্থরতাকে। লক্ষ্য করুন তার উদাত্ব আহ্বান :

সে জান্নাতের জন্য প্রস্তুত হওযার ব্যপ্তি আসামান-জমীন সমতুল্য।[মুসলিম]

তিনি কোন পদমর্যাদা কিংবা সম্পদের ওয়াদা করেননিশুধু জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। সে ওয়াদাই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। তাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তার ফলে জান্নাত চাক্ষুষ দেখার ন্যায় সামানে বিদ্যমান ছিলতাদের সামনে দুনিয়া বিদ্যমান থাকা সত্বেও অর্থহীন ছিল। এমনও হয়েছেকেউ কেউ হাতে রাখা খেজুর পর্যন্ত ফেলে দিয়ে বলে ছিলএ গুলো খাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাও অনাকাঙ্খিত দীর্ঘ হায়াত নিয়ে বেচে থাকা বৈ কি। আবার কেউ কেউ বর্শা বিদ্ধ হয়েও আনন্দের আতিশয্যে বলেছিল, কাবার রবের কসমআমি সফল হয়েছি। আর জাফর ইবনে আবিতালিবের বিষয়টি আরো আশ্চর্য। জান্নাত তার জীবন সঙ্গীর ন্যায় ছিল। লক্ষ্য করুন তার কবিতাযা তিনি আবৃতি করেছিলেন মুতার যুদ্ধেজায়েদ বিন হারেছের শাহাদাতের পর তিন হাজার মুসলিম সৈন্যের নেতৃত্ব দানকালে,যারা দুই লক্ষ খৃষ্টান সৈন্যের মোকাবেলায় অবতীর্ন হয়েছিল।

স্বাগতম হে জান্নাত! যার আগমন- সুভলক্ষণযার পানীয় শীতল।
রোম তো রোম-ই যার শস্তি ঘনিয়েছে। কাফেরছিন্ন-বিচ্ছিন্ন তাদের বংশ।
যদি তাদের সাক্ষাত পাই।

এ কবিতা আবৃতি করেই তিনি শহিদ হন। আর দুডানায় ভর করে জান্নাতে উড়ে বেড়ান। তার পর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ইসলামের ঝান্ডা তুলে নেন। তিনিও কম যাননি। মৃতু্য অবধারিত দেখেও তিনি আবৃতি করেছিলেন।

শপথ হে নফসঅবশ্যই সেথায় অবতরণ করবে-
ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।
মানুষ জড়ো হয়েছেক্রন্দনের প্রস্তুতি নিয়েছে,
আমি কেন লক্ষ্য করছিতুমি জান্নাত অপছন্দ করছ।
নিরাপদ কাটিয়েছতুমি দীর্ঘ সময়,
অথচ তুমি সংকীর্ন জায়গার বীর্য মাত্র।


এ কবিতা আবৃতি করে তিনিও পূর্বের ন্যায় পরপারে পারি চলে যান। আল্লাহ তাদের সকলের উপর সস্তুষ্ট হোন।

জান্নাতুল ফেরদাউসের মর্যাদা :
ফেরদাউস সে জান্নাতের নামযেখানে প্রত্যেক মানুষ তার কাঙ্খিত বস্তু লাভ করে ধন্য হবে। যার ভেতর প্রাসাদের উপর প্রাসাদ নির্মিত। যার কক্ষসমূহ নূরে শোভিত। তিনি পবিত্র যে এর এর পরিকল্পনা করেছেনতিনি করুনাময় যে তা স্বহস্তে তৈরি করেছে। এটা রহমতের স্থানসফলতার স্থানএর রাজত্ব মহানএর নেয়ামত স্থায়ী। এরশাদ হচ্ছে :

যাকে দোযখ থেকে দুরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবেসে-ই সফল।[সূরা আলে ইমরান ১৮৫] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

তোমাদের কারো চাবুক পরিমাণ জান্নাতের জায়গা দুনিয়া এবং তার ভেতর যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। [বুখারী] জান্নাতের নেয়ামতের মোকাবেলায় দুনিয়ার নেয়ামাতের কোন তুলনা হয় না। তবেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে তুলনা করেছেনসেভাবে তুলনা করতে দোষ নেই। এরশাদ হচ্ছে :

যেমনতোমাদের কারো আঙ্গুল সমুদ্রে রাখার মতইঅতঃপর দেখ কি পরিমাণ পানি আঙ্গুলে উঠে এসেছে।[মুসলিম] এবার চিন্তা কারুনযে পরিমাণ পানি সমুদ্র থেকে আঙ্গুলের সাথে ওপরে উঠে এসেছেসে পরিমাণ হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার নেয়ামত। আর যে পরিমাণ পানি মহাসমুদ্রে অবশিষ্ট আছেতা হচ্ছে জান্নাতের নেয়ামত।
জান্নাতের আলোচনা প্রকৃত পক্ষে আমাদের রেখে আসার বাড়ীর আলোচনা। এখান থেকেই ইবলিস আদম-হাওয়াকে বের করে দিয়েছে। হয়তো তার আলোচনা পুনারায় জান্নাতে ফিরে যাওয়ার পথ সুগম করবে।

অতএবআসো তুমি জনবসতির উদ্যানেকারণ ইহা
তোমার প্রথম গৃহএবং এতেই রয়েছে তাবু।
কিন্তু আমরা শত্রুর বন্ধীআছে কি কোন পথ?
আমাদের বাড়িতে ফিরে যাবআর নিরাপদ হয়ে যাব।


জান্নাতের বর্ণনা ব্যাপক ভাষাশৈলী ও ভাবগাম্ভির্যতাসহ কুরআন-সুন্নায় বিধৃত হয়েছে। যার রহস্য উদঘাটন করাযার প্রকৃত অবস্থা উপলব্দি করা প্রায় অসম্ভব। হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহ তাআলা বলেছেন :

আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরী করে রেখেছিযা কোন চোখ দর্শন করেনিকোন কর্ণ শ্রবন করেনিএবং মানুষের অন্তরে যার কল্পনা পর্যন্ত হয়নি। দলিল স্বরূপ তোমরা তেলাওয়াত করতে পার। কেউ জানে নাতাদের জন্য নয়নাভিরাম কি কি উহ্য রাখা হয়েছেতাদেরই কর্মের প্রতিদান স্বরূপ। [সাজদাহ ১৭] জান্নাতের ময়দান খুব প্রসস্ততার প্রাসাদ খুব বড় ও বহুতল বিশিষ্ট। এর সৃষ্টিকারী স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলছেন :

তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা এবং জান্নাতের পানে ছুটে যাওযার সীমানা হচ্ছে আসমান-যমীনযা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।[আলে ইমরান ১৩৩]রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

জান্নাতে একটি গাছ আছেএক জন আশ্বারোহী সবল-দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে একশত বৎসর ভ্রমন করেও তা অতিক্রম করতে পারবে না।[বুখারী-মুসলিম] জান্নাতের বড় বড় আটটি দরজা রয়েছেযার দুই খুঁটির মাঝখানে দূরত্বের পরিমাণ চলি্লশ বৎসর ভ্রমনের পথ। [আহমাদ]
জান্নাতের ভেতর প্রাসাদের উপর প্রাসাদ নির্মিত। তার প্রসাদ সমূহ বিভিন্ন ধরনের মানিক্য খচিতএকসাথে ভেতর-বাহির দৃশ্যমান।[সহীহ আল জামে] তার দেয়াল স্বর্ণ ও রূপার দ্বারা নির্মিত। তার প্লাষ্টার উন্নত মৃগনাভীতার পাথর-কুচি প্রবাল ও মোতি এবং তার মাটি জাফরান।
তাতে রয়েছে মোতির অনেক তাবু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

মোমেনের জন্য জান্নাতের ভেতর পাথরের তৈরি বড় একটি তাবু রয়েছেযার দৈর্ঘ আসমানের ভেতর ষাট মাইল। মোমেনের জন্য সেখানে পরিবার পরিজন থাকবে। মুমিন বান্দা তাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করবেতবে কেউ কাউকে দেখবে না। [বুখারী-মুসলিম]এরশাদ হচ্ছে :

যখন তুমি তা দেখবেআবার যখন দেখবেসেখানে নেয়ামতরাজী ও বিশাল রাজ্য লক্ষ্য করবে। এরশাদ হচ্ছে :

তাতে রয়েছে দুর্ঘন্ধহীন পানির নহরসুস্বাদু দুধের নহরসুপেয় শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। সেখানে তাদের জন্য আরো রয়েছে,রকমারী ফল-মূল এবং তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা।[মুহাম্মদ ১৫] তার কুটির সমূহ বন্ধু-বান্ধবদের মিলন মেলা। তার বাগান পর্যটকদের প্রমোদ স্থান। তার ছাদ আল্লাহর আরশ।
তার প্রসাদসমূহ সুদৃঢ়তার প্রদীপসমূহ আলোকোজ্জলতার ভেতর রয়েছে চিকন-মোটা সব ধরনের রেশন আর আছে প্রচুর ফল-মূলযা কোন দিন শেষ হবে নাযা ক্ষেতে কোন দিন নিষেধও করাও হবে না। এরশাদ হচ্ছে :

সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ ও মুতি দ্বারা তৈরি চুরি দিয়ে সজ্জিত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোষাক হবে রেশমের।[সূরা হাজ্জ ২৩]
সেখানে তারা নিজ নিজ আসনে হেলান দিয়ে বসবেএকে অপরের পালং মুখোমুখি থাকবে। পরস্পর আলাপ-আলোচনায় নিরত থাকবে। এরশাদ হচেছ :

তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ ও খবরাখবর নেয়ার জন্য একে অপরের মুখোমুখি হবে। তারা বলবেইতোপূর্বে আমরা নিজ পরিবারের মাঝে খুব শংকিত ছিলাম। আল্লাহ আমাদের দয়া করেছেনতিনি আমাদেরকে বিষাক্ত আযাব থেকে নাজাত প্রদান করেছেন। এর আগেও আমরা তাকে আহ্বান করতাম। তিনি হিতাকাঙ্খি-দয়ালু। [সূরা তুর ২৫-২৮]


তার ভেতর আরো আছে সুদীর্ঘ ছায়াঅনেক নেয়ামতরুচিশীল ফল-ফলাদিসুস্বাদু পাখির গোস্ততার পানাহার সব সময়ের জন্য উম্মুক্তকখনো শেষ হবে না। তার ছায়া কখনো নিঃশেষ হবে না। দীর্ঘ সময় তাতে আমোদ-প্রমোদ আয়োজন চলবেতাতে ঘুম আসবে নাঘুমের প্রয়োজনও হবে না। তার ফল মাখনের চেয়ে নরমমধুর চেয়ে বেশী মিষ্টি। তার ফল হাতের নাগালে থাকবেতার পানীয় সুস্বাদ্যবৃক্ষরাজি অবনতআনুগত্যশীল।এরশাদ হচ্ছে :

  • তার ফলসমূহ খুব নাগালের করে দেয়া হয়েছে।[দাহর ১৪] আশা করার সাথে সাথেই ফলসমূহ সম্মুখে ঝুঁকে যাবে। এরশাদ হচ্ছে :
  • রেশমের আস্তর বিশিষ্ট বিছানায় হেলান অবস্থায় থাকবে। উভয় উদ্যানের ফল অবনত থাকবে। [রাহমান ৪৫]
  • পানাহার ও সহবাসের ক্ষেত্রে প্রত্যেককে একশত ব্যক্তির শক্তি প্রদান করা হবে। [তিরমিযি]পানাহার ক্ষুদা নিবারণ কিংবা তৃষ্ণা মিটানোর জন্য নয়বরং স্বাদ আস্বাদন আর মস্তি করার জন্য। এরশাদ হচ্ছে :
  • তোমার জন্যতুমি এতে ক্ষুদার্ধ হবে না এবং বস্ত্রহীনও হবে না। এবং তুমি এতে পিপাসার্থ হবে নারৌদ্র কষ্টও পাবে না। [সূরা ত্বহা ১১৮-১১৯] মুদ্দা কথা জান্নাতে কষ্টদায়ক কোন বস্তু বিদ্যমান থাকবে না।
  • তারা থুতু ফালাবে নানাকের শ্লেশা ফালাবে না এবং পায়খানাও করবে না।[বুখারী-মুসলিম]
  • তাদের কারো প্রয়োজন হবে শুধু ঢেকুর তোলারমৃগ নাভী ছিটানোর ন্যায়।[মুসলিম]


আল্লাহ মুত্তাকিদের আহ্বান করবেনসম্মানিত মেহমানদের ন্যায় তারা সামনে অগ্রসর হবে এবং আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। এরশাদ হচ্ছে :

হে আমার বান্দাগণআজ তোমাদের কোন ভয় নাই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না। [যুখরুফ ৬৮]
তারা দুনিয়ার ন্যায় সেখানেও তাদের নিজ নিজ বাড়ি-ঘর চিনবে। এরশাদ হচ্ছে :

অতঃপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেনযার পরিচয় তিনি তাদেরকে ইতোপূর্বে দিয়েছেন। [মুহাম্মদ ৬] সম্মানিত ফেরেশতাগণ তাদেরকে নিরাপদ আগমন ও উত্তম গৃহের সুসংবাদ দিয়ে অভর্্যথনা জানাবে। এরশাদ হচ্ছে :

যারা তাদের রবকে ভয় করেছেতাদেরকে দলে দলে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর যখন তারা তাতে আগমন করবে ও দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবেতখন তাদেরকে জান্নাতের রক্ষীরা বলবে : তোমাদের প্রতি সালামতোমরা সুখিঅতএব তোমরা এতে স্থায়ীভাবে প্রবেশ কর। [জুমার ৭৩] আর জান্নাতিরা বলবে :
;
তারা বলবে : সমস্ত প্রসংশা সে আল্লাহরযিনি আমাদেরকে এর জন্য পথ দেখিয়েছেন। যদি আল্লাহ আমাদের পথ না দেখাতেনতবে আমরা পথ পেতাম না। আমাদের নিকট আমাদের রবের রাসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছেন। এরশাদ হচ্ছে :

এবং ঘোষণা দেয়া হবেএটাই তোমাদের জান্নাততোমরা এর মালিক হয়েছতোমরা যে আমল করতেতার বিনিময়ে। [আরাফ ৪৩] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

জান্নাতে তাদের প্রথম দলটি প্রবেশ করবেপূণিমর্ার রাতের চাদের ন্যায়। অতঃপর তাদের দ্বিতীয় দলটি যাবে উজ্জল নক্ষত্রের ন্যায়।[বুখারী-মুসলিম]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম এর আকৃতিতে। তাদের প্রত্যেকের উচ্চতা হবে ষাট হাত।[বুখারী-মুসলিম] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তাদের মাঝে পরস্পর কোন বিদ্বেষ থাকবে না,তাদের সবার অন্তর একটি অন্তরের ন্যায় থাকবে। [বুখারী] এরশাদ হচ্ছে :তাদের অন্তরে যে ব্যধি রয়েছেআমি তা দূর করে দিবতারা মুখোমুখি চেয়ারে উপবিষ্টসকলে ভাই-ভাই।[হিজর ৪৭]

· এরশাদ হচ্ছে :সেখানে তাদের প্রার্থনা হল হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আর তাদের শুভেচ্ছা হচ্ছে সালাম।[সূরা ইউনুস ১০] একজন ঘোষণাকারী তাদের আহ্বান করে বলবে : তোমরা এখানে চিরঞ্জিব কখনো মুতু্য বরণ করবে না। তোমরা এখানে চির সুস্থকখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা এখানে চির যুবককখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমরা এখানে আনন্দ-ফূর্তি করকখনো দুঃখিত হবে না।[মুসলিম]

· এরশাদ হচ্ছে :স্বর্ণের প্লেট ও গ্লাসসহ তাদের চতুর্পাশে চক্কর দেয়া হবে। এবং তাতে আরো রয়েছেযা মন চায় ও যার দ্বারা চোখ তৃপ্তি অনুভব করেএবং তোমরা সেখানে সর্বদা থাকবে।[যুখরুফ ৭১]

· এরশাদ হচ্ছে :তুমি তাদের চোখে নেয়ামতের প্রতিক্রিয়া চিনতে পারবে।[মুতাফফিফিন ২৪]

· এরশাদ হচ্ছে :কিশোররা তাদের আশ-পাশে চক্কর কাটবে। তারা দেখতে সুরক্ষিত মোতির ন্যায়।[সূরা তূর ২৪] এ হলো সেবকদের অবস্থাআর যাদের সেবা করা হবেতাদের অবস্থা কেমন হবেবর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। তারা জান্নাতের দীর্ঘ ছায়ার নিচে জমা হবেসিল করা পানির বোতল পরস্পর আদান-প্রাদান করবে আর জান্নাতের ভেতর প্রবাহিত সুপেয় মদির পান করবে। তাদের উপর পরপর দয়া-কল্যাণ ও অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। তাদের থেকে চিন্তা-পেরেশানি ও কষ্ট চিরতরে বিদায় নিবে।

· এরশাদ হচ্ছে :এবংতারা বলবে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরযিনি আমাদের দুঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের রব ক্ষমাশীলউত্তম বিনিময় প্রদানকারী। তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের থাকার স্থান দিয়েছেন। যেখানে আমাদের কষ্ট স্পর্শ করবে নাক্লান্তিও আমাদের কাছে ঘেসবে না।[ফাতের ৩৪-৩৫]

· এরশাদ হচ্ছে :তারা সেখানে বাহুল্য ও খারাপ কিছু শুনবে নাশুধু শুনবে সালামসলাম বাক্য।[ওয়াকেয়া ২৫-২৬] প্রশান্তি-স্বস্তি,ভালবাসা ও নিরাপত্তার পরিবেশ তাদের বেষ্টন করে থাকবে। সেখানে তাদের নেককার পিতা-মাতাস্ত্রী-সন্তান সবাইকে জমায়েত করা হবে।

· এরশাদ হচ্ছে : বসবাসের জান্নাতসেখানে তারা এবং তাদের সৎকর্মশীল পিতা-মাতাস্বামীসন্তানগণ প্রবেশ করবে। হে আল্লাহর বান্দা! তুমি এর চেয়ে উত্তম আর কি চাও!? [রাদ ২৩]
হঁ্যাএতো কিছুর পরও একটি নেয়ামত অবশিষ্ট আছেযা মাজীদের দিন প্রদান করা হবে। যে দিন ঘোষণা দেয়া হবে :

· হে জান্নাতবাসীগন! তোমাদের রব তোমাদের সাক্ষাত দিবেতোমরা সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত হওঅতঃপর তারা প্রতিযোগিতামূলক সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত হবে। তারা দেখতে পাবেতাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্রুতগামী ভাল জাতের উট প্রস্তুত রয়েছে। তারা ময়দানে পেঁৗছলে নূর-মুতি ও মনি-মোক্তা দিয়ে নির্মিত মিম্ভার ও মৃগনাভির তৈরী ফোম প্রদান করা হবে। তারা নিজ নিজ পদ মোতাবেক আল্লাহর নিকট উপবিষ্ট হবে। এরশাদ হচ্ছে :আল্লাহর নিকট তারা পদ-মর্যাদা অনুপাতে অবস্থান করবে। [আলে ইমরান ১৬৩]

কবি বলেন : যারা নামাজে অগ্রগামীইহসানের কারণে তারাই সে প্রতিযোগিতায় ধন্য হয়েছে।

এমতাবস্থায় একটি নূর প্রজ্বলিত হয়ে সমগ্র জান্নাত আলোকিত করে দিবে। তখন তারা মাথা উঁচু করে দেখতে পাবেপবিত্র নামের অধিকারীমহান আল্লাহ তাআলা ওপর থেকে আগমন করেছেন। তিনি বলবেনহে জান্নাতবাসীগণ! করুনাময় রবের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি সালাম।[ইয়াসিন৫৮] তাদের পক্ষ থেকে এ সালামের একমাত্র যথাযথ উত্তর হচ্ছে :হে আল্লাহ! তুমি-ই সালামশান্তি তোমার পক্ষ থেকে-ইতুমি-ই মর্যাদার অধিপতিহে সম্মান ও ইজ্জতের মালিক।


অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য বিকশিত হবেন ও তাদের উদ্দেশ্যে হাসবেন এবং বলবেনহে জান্নাতীগণএর পর তারা সর্বপ্রথম শ্রবন করবে : আমার ঐ বান্দারা কোথায়যারা আমাকে না দেখে আমার অনুকরণ করেছেএটা হচ্ছে ইয়াওমুল মাজীদতারা আমার কাছে প্রার্থনা করুক
তখন তারা একবাক্যে বলবে : আমরা আপনার ওপর সন্তুষ্টআপনিও আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। তিনি বলবেন : হে জান্নাতবাসীগণযদি আমি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট না হতামআমার জান্নাতে তোমাদের স্থান দিতাম না। তোমরা আমার কাছে চাও। তখন তারা একবাক্যে বলবে : আপনার চেহারার দর্শন দিনআমরা তাতে দৃষ্টি দিব। অতঃপর আল্লাহ তাআলা পর্দাসমূহ উত্তোলন করবেন এবং তাদের জন্য বিকশিত হবেন। যার ফলে নূরের ঝলকে সকলে বেহুশ হয়ে যাবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি এ সিদ্ধান্ত না থাকত যেতারা জ্বলবে নাতবে অবশ্যই তারা জ্বলে যেত। তাদের মধ্যে এমন কেউ থাকবে না যার মুখোমুখি আল্লাহ হবেন না। এমনকি তাদের কাউকে লক্ষ্য করে বলবেন : হে অমুকতোমার কি স্মরণে পরে অমুকঅমুক দিনের কথা?এভাবে তার দুনিয়ার বিচু্যতি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ সম্পর্কে অবহিত করবেন। আর সে বলবে : হে আমার রবতুমি কি আমাকে মাফ করনিতিনি বলবেন : অবশ্যই। আমার ক্ষমার কারণে-ই তুমি তোমার এ মঞ্জিলে পেঁৗছতে সক্ষম হয়েছ। আহ! কত মধুর হবে সে দিন কর্ণসমূহের স্বাদ! কত চমৎকার হবে সে দিন চক্ষু্যসমূহের শীতলতা! এরশাদ হচ্ছে : সে দিন চেহারাসমূহ হবে উজ্জল। তার রবের দিকে চেয়ে থাকবে। [ক্বিয়ামাহ ২২-২৩]

  • হে মুমিনগণ! এমন সাফল্যের জন্য-ইআমালকারীদের আমল করা উচিত।[সাফফাত ৬১]
  • এতেই প্রতিযোগিদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। [মুতাফফিফিন ২৬]
  • জেনে রেখ! আল্লাহর পণ্য খুব দাবি। জেনে রেখ! আল্লাহর পণ্য জান্নাত। [তিরমিযি-হাকেম]

হে রহমানের পণ্য তুমি সস্তা নও। বরংতুমি অলসদের জন্য অসাধ্য।
হে রহমানের পণ্যতোমাকে পাবেহাজারে একজনদুই জনও নয়।
হে রহমানের পণ্যতোমার বিনিময় কিমৃতু্যর আগে মুত্তাকী ব্যতীত।
তবেতা আবৃত সবত্যাগ দিয়েযাতে অলস-অকর্মরা তা থেকে দূরে থাকে।
তার নাগাল পাবে অদম্য স্পৃহাযা মহান আল্লাহ মুখিআল্লাহর ইচ্ছায়।
জান্নাত ইমান ও তাকওয়া হিসেবে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত।

এরশাদ হচেছ: দেখ কিভাবে আমি তাদের কতেককে কতেকের ওপর শ্রেষ্টত্ব দিয়েছি। তবে মর্তবা ও ফযীলতের দিক থেকে আখেরাত-ই শ্রেষ্ট।[ইসরা ২১]

সর্ব শেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেতার ঘটনাটি নিম্নরূপ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

সর্ব শেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেসে একজন পুরুষ। কখনো সে হাটবেকখনো উপুড় হয়ে চলবেকখনো আগুন তাকে ঝলসে দিবে। যখন এ পথ অতিক্রম করে সামনে চলে যাবেতখন সে তার দিকে ফিরে বলবে : বরকতময় সে আল্লাহযিনি আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দিয়েছে। আল্লাহ আমাকে এমন জিনিস দান করেছেনযা আগে-পরের কাউকে তিনি দান করেননি। অতঃপর তার জন্য একটি বৃক্ষ উম্মুক্ত করা হবে। সে বলবেহে আল্লাহ! এ বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাওযাতে এর ছায়াতলে আশ্রয় নিতে পারিএর পানি পান করতে পারি। আল্লাহ বলবেন : হে বনি আদমআমি যদি তোমাকে এটা প্রদান করিতুমি নিশ্চয় আরেকটি প্রার্থনা করবে। সে বলবে : নাহে আমার রব। সে এর জন্য ওয়াদাও করবে। আল্লাহ বার বার তার অপরাগতা গ্রহণ করবেন। কারণসে এমন জিনিস দেখবে যার উপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না। অতঃপর আল্লাহ তার কাছে নিয়ে যাবেনসে তার ছায়ায় আশ্রয় নিবেতার পানি পান করবে। অতঃপর আগের চেয়ে উত্তম আরেকটি বৃক্ষ তার জন্য উম্মুক্ত করা হবে। তখন সে বলবে: হে আমার রব! এ বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাওএর ছায়াতলে আশ্রয় নিবএর পানি পান করব। এ ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করব না। তখন আল্লাহ তাকে মনে করিয়ে দিবেন : হে বনি আদমতুমি কি আমার সাথে ওয়াদা করনি যেআর কিছু প্রার্থনা করবে নাএর কাছে যেতে দিলে তুমি আরো অন্য কিছু প্রার্থনা করবে। অতঃপর সে প্রার্থনা না করার ওয়াদা করবে। আল্লাহ তার অপরাগতা কবুল করবেনকারণ সে এমন জিনিস দেখবেযার ওপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না। অতঃপর তাকে সে গাছের নিকটবর্তী করা হবে। সে তার ছায়াতলে আশ্রয় নিবেতার পানি পান করবে। অতঃপর জান্নাতের দরজার নিকট আরেকটি বৃক্ষ উম্মুক্ত করা করা হবেযা আগের দুবৃক্ষ থেকেও উত্তম। সে বলবে : হে আল্লাহ! এ বৃক্ষের নিকটবর্তী করআমি তার ছায়াতলে আশ্রয় নিবতার পানি পান করবআর কিছু প্রার্থনা করব না। তিনি বলবেন : হে বনি আদমতুমি আর কিছু প্রার্থনা না করার ওয়াদা করনিসে বলবে,হঁ্যাতবেএটাই শেষআর কিছু চাইব না। আল্লাহ তার অপরাগতা কবুল করবেন। কারণসে এমন জিনিস দেখবেযার ওপর ধৈর্যধারণ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। আল্লাহ তার নিকটবর্তী করবেন। যখন তার নিকটবর্তী হবেতখন সে জান্নাতবাসীদের আওয়াজ শুনতে পাবে। সে বলবে : হে আমার রব! আমাকে এতে প্রবেশ করাও। আল্লাহ বলবেন : হে বনি আদমতোমার চাওয়া আর শেষ হবে না। তোমাকে দুনিয়া এবং এর সাথে দুনিয়ার সমতুল্য আরো প্রদান করবএতে কি তুমি সন্তুষ্ট হবেসে বলবে : হে আল্লাহতুমি দুজাহানের রবতা সত্বেও তুমি আমার সাথে উপহাস করছ!রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গঠনা বলতে বলতে হেসে দিলেন। সাহাবারা তাকে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! কেন হাসছেনতিনি বললেন : আল্লাহর হাসি থেকে আমার হাসি চলে এসেছে। যখন সে বলবে : আপনি দুজাহানের মালিক হওয়া সত্বেও আমার সাথে উপহাস করছেনতখন আল্লাহ বলবেন : আমি তোমার সাথে উপহাস করছি নাতবে কিআমি যা-চাই তা-ই করতে পারি। আরো প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ তাকে বললেন : এটা চাওওটা চাও। যখন তার সব চাওয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন : এ সব তোমাকে দেয়া হল এবং এর সাথে আরো দশগুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : অতঃপর সে তার ঘরে প্রবেশ করবে এবং সাথে সাথে তার স্ত্রী হিসেবে দুজন হুরও প্রবেশ করবে। তারা তাকে বলবে : সমস্ত প্রসংশা সে আল্লাহরযিনি আপনাকে আমাদের জন্য জিবীত করেছেন এবং আমাদেরকে আপনার জন্য জিবীত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সে বলবে : আমাকে যা দেয়া হয়েছেতার মত কাউকে দেয়া হয়নি[মুসলিম]


হে মুসলিম ভাই! আল্লাহর আনুগত্যের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকহে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি! আল্লাহর কালাম থেকে সুসংবাদ নাও।

এরশাদ হচ্ছে :পক্ষান্তারে যে ব্যক্তি তার রবের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছেতার ঠিকানা হবে জান্নাত।[সূরা নাজিয়াত ৪০-৪১] নেশা ও মস্তিস্ক বিকৃতকারী হারাম বস্তু থেকে নিজকে হেফাজতকারী হে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। তুমি আল্লাহর কালাম থেকে সুসংবাদ নাও।এরশাদ হচ্ছে : সেখানে তারা গ্লাস নিয়ে টানা-টানি করবে। সেখানে কোন বাহুল্য এবং গোনাহ নেই। [সূরা তুর ২৩]

নিজ লজ্জাস্থান হেফাজতকারীবাজারের বিষিদ্ধ বস্তুটেলিভিশন ও কুরুচিপূর্ণ ম্যাগাজিন থেকে দৃষ্টি অবনতকারীহে আল্লাহর বান্দা! তোমার জন্য সুসংবাদ সুভসংবাদ জান্নাতের : সেখানে হুর তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা সৎ চরিত্রের অধিকারীবাহ্যিক-আভ্যন্তরিণ রূপে মণ্ডিত সুন্দরী নারী,তারা স্বামী ব্যতীত অন্য কারো দিকে তাকায় না। তারা শুধু স্বামীর অপেক্ষায় তাবুতে অবস্থান করছে। আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে তাদের সৃষ্টি করেছেন। তারা সমবয়সীতাদের যৌবন নষ্ট হবে নাতাদের সৌন্দর্যে ভাটা পড়বে না। তারা চিরকুমারী। ইতোপূর্বে তাদের কেউ স্পর্শ করেনি। তারা মাসিক ঋতু ও ঘৃণীত বিষয় থেকে চির পবিত্র। তারা প্রবাল ও পদ্মারাগ সাদৃশ্য নারীঝিনুকের অভ্যন্তরে বিদ্যমান মুক্তার মত পরিস্কার। তারা আবৃত মুতির মত।

তাদের মহব্বতে বাধা সৃষ্টিকারী নারীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ কর;
তবেতুমি অন্যদের বিপরীতে তাদের নিয়ে ভাগ্যবান ও নেয়ামত প্রাপ্ত হতে পারবে।
তাদের কেউ যদি দুনিয়াতে উঁকি দিততবে মহাশুন্য নূরে ভরে যেততাদের ঘ্রাণে মৌ মৌ করত সারা পৃথিবী।

তাদের মাথার উড়না দুনিয়া ও তার ভেতর বিদ্যমান সমস্ত জিনিস থেকে উত্তম। [বুখারী]

হে সুন্দরী নারীদের প্রত্যাশীযদি তোমার আগ্রহ থাকেতবে এটা হচ্ছে মহর আদায় করার সময়এবং এটা অগ্রিম প্রদান করতে হয়।

গান বাদ্য থেকে বিরত থাকহে ভাগ্যবান! তোমার জন্য সুসংবাদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :জান্নাতবাসীদের স্ত্রীগণ এত সুন্দর আওয়াজে গান পরিবেশন করবে যা কেউ শুনেনি।[তাবারানী] তাদের গান :আমরা সুন্দরীকল্যাণ আর কল্যাণ। সম্মানীত ব্যক্তিদের স্ত্রী। তারা বড় বড় চোখ দিয়ে আনন্দ ভরে তাকাবে। আমরা চিরস্থায়ীকখনো মৃতু্য বরণ করব না। আমরা নিরাপদকখনো ভীত হব নাআমরা চিরস্থায়ীধ্বংস হব না। আমরা কল্যাণআমরা সুন্দরী। [জামে সাগির]

হে সুন্দরী হুরদের প্রস্তাবকারী ও অন্বেষণকারীতাদের মিলন হবে স্থায়ী জান্নাতে।
যাদের প্রস্তাব করছযাদের অন্বেষণ করছতাদের যদি জানতেতবে তোমার মালিকানাধীন সব ব্যয় করে দেবে।
তুমি কি তাদের আওয়াজ শোননিতাতে রয়েছে হুরদের গানআয়াজ ও তরঙ্গ।
যদি তুমি তা শোনতে চাওতবে এ সমস্ত গান থেকে তোমার কান পবিত্র কর।
উত্তমের ওপর অধমকে প্রাধান্য দিও নাতবে এ-থেকে ও-থেকে বঞ্চিত হবে। ছি! বঞ্চিত হওয়ার অপমান।
কুরআনের মহব্বত আর এ দুনিয়ার গানের মহব্বত এক অন্তরে জমা হতে পারে না।
বাজারী নিষিদ্ধ পণ্য থেকে নিজকে ও নিজ পরিবারকে বিরত রাখহে ভাগ্যবান ব্যক্তিতোমার জন্য সুসংবাদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

জান্নাতের ভেতর একটি বাজার আছেযেখানে জান্নাতিরা প্রতি জুমায় উপস্থিত হয়। সেখানে রয়েছে সুগন্ধির স্তুপ। উত্তরের বাতাস তাদের কাপড় আর চেহারায় পরশ দিয়ে বয়ে যাবেযার ফলে তাদের সৌন্দর্য ও শ্রীর বৃদ্ধি ঘটবে। তাদের স্ত্রীগণ বলবে : আল্লাহর শপথ! আমাদের চোখের আড়ালে তোমাদের সৌন্র্দয ও শ্রীর বৃদ্ধি ঘটেছে। [মুসলিম]

  • হে আল্লাহর বান্দাগণ! জান্নাত অন্বেষণকারীগণ অন্যদের থেকে আলাদা।
    রাতে মানুষ যখন ঘুমায়তারা তখন নামাজ পড়ে।
    মানুষ যখন দিনে পানাহার করেতারা তখন রোযা রাখে।
    মানুষ যখন জমা করেতারা তখন সদকা করে।
    মানুষ যখন ভীরুতা প্রদর্শন করেতারা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। তারা-ই আল্লাহর প্রকৃত বান্দা!

তারা আল্লাহর হুকুম যথাযথ পালন করছেতার অঙ্গিকার রক্ষা করছে। তারা আল্লাহর ওপর ইমান রাখেতার সাথে শিরক করে না। তারা আল্লাহর ভয়ে ভীত। আল্লাহর হুকুম মোতাবেক নামাজ কায়েম করেযাকাত প্রদান করেপ্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সদকা করে। তারা সাধ্যমত এবাদত ও সৎ কর্ম সম্পাদন করে।

  • তারা আল্লাহর ভয়ে কম্পিত থাকে।
    তারা কবীরা গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকে।
    আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে।
    কুরআনের তেলাওয়াত শোনে তাদের ইমান বৃদ্ধি পায়।

তারা নিজ রবআল্লাহর ওপর ভরসা করেএকান্তভাবে নামাজ আদায় করেবেহুদা কথাবাতর্া থেকে বিরত থাকেযাকাত প্রদান করে। তারা নিজদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। তারা আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ত্যাগ করে ও জাগ্রত থাকে। তারা আখেরাতের সফরের জন্য পণ্য সংগ্রহ করেআল্লাহর ভয়ে তাদের অশ্রু ঝড়ে। তাদের নির্জনতা উপদেশ স্বরূপ। অধিক তাওবার ফলেতাদের গুনাহমিটে গেছে। পবিত্র সে আল্লাহ যিনি তাদের মনোনিত করেছেন। তারা-ই সতি্বকারার্থে আল্লাহর বান্দা।

তাদের ভেতর রয়েছে ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী বাদশাহসংযমী যুবকনিষ্ঠাবান শহীদধনাঢ্য দানবীরধৈর্যশীল পরহেযগারছিন্নবস্ত্র পরিহিত সাধক,যাদেরকে সাধারণ মানুষ গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। তারা যা শপথ করেআল্লাহ তা পূরণ করেন। তাদের ভেতর রয়েছে একমাত্র আল্লাহর জন্য মহব্বতকারীযে মহব্বত বংশগত আত্মীয়তার জন্য নয়পার্থিব কোন স্বার্থের জন্যও নয়। তাদের ভেতর আছে হাফেজে কুরআন। তারা সত্যের পথে থেকেও ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে অবস্থান করে। তারা হাসি-ঠাট্টার ছলে মিথ্যা বলে না। তারা উত্তম চরিত্রের অধিকারীগোস্বা হজম করেমানুষদের ক্ষমা করে। এরশাদ হচ্ছে :

আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভাল বাসেন। [আলে ইমরান ১২৮]
তাদের ভেতর রয়েছে সে সব নারীযারা আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পন করেপরকালে বিশ্বাস রাখেনেক কাজআনুগত্যতওবা ও এবাদত করে;আল্লাহ যা হেফাজত করতে বলেছেনলোকচক্ষুর অন্তরালেও তারা তা হেফাজত করেতাদের ভেতর রয়েছে সে নারীওযে অন্নহীনদের অন্ন দেয়,সালামের প্রসার করেআত্মীযতার সম্পর্ক অটুট রাখে এবং রাতে নামাজ পড়েযখন মানুষ ঘুমায়তাদের ভেতর আরো আছে সে নারীযে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেনিজকে কুপ্রবৃত্ত থেকে বিরত রাখে। তারা সকলেই আল্লাহর আনুগত্য ও তাকে অধিক স্মরণকারী নারী। এরশাদ হচ্ছে :

যে না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করেছে ও বিনীত অন্তর নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। [কাফ ৩৩] আরো আছে সে চক্ষুধারীযে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছেআল্লাহর রাস্তায় পাহারারত নিন্দ্রহীন রাত যাপন করেছে। তাদের ভেতর আরো আছে যেউত্তম পদ্ধতিতে আল্লাহর দিকে আহবান করেছেসৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করেছেসব সময় মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করে এবং আল্লাহর জন্য মানুষদের ভালোবাসে। তারাই জান্নাতীইমানদারধৈর্যশীলসৎ কর্মশীল ও সংযমী।


অতএবযে ব্যক্তি এ বিশাল জান্নাত কামনা করেসে কি তার বিনিময়ে জানমালসহায়-সম্পদকিংবা সামান্য সময়কে বেশী মনে করতে পারে?কখনও না। বরং কারো যদি হাজার প্রাণ থাকেআর সে হাজার যুগ পায়যার প্রতিটি যুগ দুনিয়ার সমানতা সব কিছু যদি সে এ উদ্দেশ্যে ব্যয় করে দেয়তাও কম হবে। কম না হওয়ার কারণ কিযেখানে সমগ্র দুনিয়া-ই সামান্য। আর আমরা এ সামান্য থেকে সামান্যের মালিক। আল্লাহর রাসূল বলেন:
যদি কোন ব্যক্তি জন্ম থেকে বার্ধক্য অবস্থায় মৃতু্য পর্যন্ত আল্লাহর সেজদায় অতিবাহিত করেকিয়ামতের দিন তাও সে খুব সামান্য জ্ঞান করবে।[আহমাদ]


লক্ষ্য কর! কেউ প্রস্তুত আছ কিতবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাদের ন্যায় সমস্বরে উত্তর দাও :
ইনশা-আল্লাহ আমরা প্রস্তুত আছি। আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে আহ্বানকারী আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবেতবে যে অস্বীকার করেছে। তারা বলল : কে অস্বীকার করবেহে আল্লাহর রাসূলবললেন : যে আমার অনুসরণ করবেসে জান্নাতে প্রবেশ করবেযে আমার অবাধ্য হবেসে-ই অস্বীকার করল।[বুখারী]


হলো জান্নাত। এ হলো তা অর্জন করার পদ্ধতি। এ জান্নাতকে যে স্বপ্নের মত দুনিয়ার জীবনের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়তার ন্যায় ধোকায় পতিত আর কে হতে পারেআশ্চর্য! জান্নাতুল ফেরদাউস বিক্রি করেঘৃনীত দুনিয়ার বিনিময়ে!

  • যে দুনিয়া সামান্য হাসালেপ্রচুর কাঁদায়। ক্ষণিকের আনন্দের বিনিময়ে দীর্ঘকাল দুঃখে ভোগায়। জান্নাতের বাড়ি-ঘরের বিনিময়ে সংকীর্ণ ওক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ক্রয় করার চেয়ে কঠিন বোকামী আর কি হতে পারে?
  • শত আফসোস! যে দিন তুমি আল্লাহর নেককার বান্দাদের মর্যাদা প্রত্যক্ষ্য করবেচক্ষূশীতলকারী হাজার হাজার নেয়ামত প্রত্যক্ষ করবেসে দিন তোমার কি হবেসে দিন তুমি বুঝতে পারবেকি হারিয়েছআর কি কামিয়েছ।

তুমি সিরাতাল মুস্তাকীমে বিচরণ করঅর্থাৎ সত্যইখলাসকল্যাণ ও তাকওয়ার পথে।
খবরদার! ধোকার বস্তু দুনিয়া দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ো নাএটা খুব সামান্যযার নেই স্থায়ীত্ব।
সে তোমাকে স্থায়ী জান্নাত থেকে গাফেল করে দেবেযার নেয়ামত স্থায়ীপরিশুদ্ধকি চমৎকার! সে মিলন স্থান।
সেখানে সর্বদা আল্লাহর সন্তুষ্টি আর তার নৈকট্য বিদ্যমান থাকবেতবে তার দর্শন-ই সব চেয়ে বেশী সম্মানের।
হায় আফসোস! আমরা ক্ষণস্থায়ী জীবন নিয়ে এতো ব্যস্তদুনিয়ার প্রতি এতো ধাবিতযা দৃষ্টে মনে হয়আমরা এখানের-ই স্থায়ী বাসিন্দাকখনো শোনেনি সে জান্নাতের কথাযা নেককার মুমিনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কারণআমাদের আমল সামান্যচেষ্টায় ত্রুটিদুনিয়ার চাকচিক্যপ্রলাপ আর খেল তামাশায় বিভোর হয়ে আছি। ভুলে গেছি জান্নাতহারিয়ে ফেলেছি তা অর্জনের আগ্রহ।
হে জান্নাত বিক্রিকারীসামান্য বিনিময়েতুমি হয়তো এখনো জান নাতবে অচরইে জেনে যাবে।
যদি তুমি না জান তাও মুসিবতআর যদি জানতবে তা বড় মুসিবত।
আল্লাহকে ভয় করসামনে অগ্রসর হওপরকালের প্রস্তুতি নাওসৎ কাজ করআশা রাখ জান্নাতের। এরশাদ হচ্ছে :

তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে যাও। যার সীমানা ও প্রসস্ততা আসমান-জমিন। যা তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকিনদের জন্য। যারা সুখে-দুঃখে সদকা করেএবং যারা গোস্বা হজম করেমানুষকে ক্ষমা করেবস্তুত আল্লাহ সৎ কর্মশীলদের ভালোবাসেন। তারা যখন মন্দ কাজ করে অথবা নিজদের ওপর জুলুম করেতখন তারা আল্লাকে স্মরণ করেনিজ পাপের জন্য ক্ষমার প্রার্থনা করেআল্লাহ ছাড়া কে তাদের পাপ ক্ষমা করবেতারা জেনে-শোনে নিজের কৃত মন্দ কর্মে স্থীর থাকে না। তাদের প্রতিদানতাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও জান্নাতযার তলদেশ দিয়েপ্রবাহিত হয় নরহসমূহসেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। কত চমৎকার! নেককার লোকদের প্রতিদান।

হে আল্লাহ! আমরা তোমার সন্তুষ্টি আর জান্নাত চাই। তোমার গোস্বা আর জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে জান্নাতজান্নাতি আমল এবং তার কথা ও কর্মের তওফিক চাই। হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে জাহান্নামজাহান্নামী আমল এবং তার কথা ও কর্মে থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! চিরস্থায়ী ও চক্ষুশীতলকারী নেয়ামত চাই। হে আল্লাহ! তোমার চেহারায় দৃষ্টি দেয়ার স্বাদ আস্বাদন করতে চাইতোমার সাক্ষাতের প্রেরণা চাই। হে আল্লাহ! তুমি কবুল কর। আমীন।

সমাপ্ত

লেখক : রাশেদ বিন আব্দুর রহমান আয-যাহরানী
অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

ইসলাম প্রচার বু্যরোরাবওয়াহরিয়াদ

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button