নারী অঙ্গন

বহুবিবাহ ও নারীর ক্যারিয়ার: সমাজের ব‍র্তমান চিত্র

ইসলামের প্রতিটা বিধান মানার জন্য সমাজে তিন ধরণের লোক পাওয়া যায়।

এক, সেই সব লোক যাদের জন্য এই বিধানটা আসলেই দরকার। এই হুকুমটা আছে বলে, তাদের জীবনটা সহজ হয়, অনেক রকমের জটিলতা দূর হয়।

যেমন ধরুন, প্রয়োজনে নারীদেরও চাকরি বা ব্যবসা করার বিধান। কিছু নারী আছে, যাদের বাবা/ভাই তার দেখাশোনা করে না। কিংবা স্বামী/বাবা যে টাকা উপার্জন করে, তা সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট হয় না। এইসব নারীদের জন্য ঘরের বাইরে গিয়ে উপার্জন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। বাইরে কাজ করার ব্যাপারে শরীয়াহর বৈধতা তার জীবনকে সহজ করে। (অবশ্যই সেক্ষেত্রেও কিছু শর্ত প্রযোজ্য, যেমন – কাজটা হালাল হতে হবে, পূর্ণ পর্দার সাথে ঘরের বাইরে যেতে হবে ইত্যাদি।)

আরেকটা উদাহরণ দিই, বহুবিবাহ। অনেক নারী আছেন, যারা বিধবা কিংবা ডিভোর্সড। বয়স হয়ে গেছে, দেখাশোনা করার কেউ নেই অথবা সন্তানসহ একজন সিংগেল মাদার। চেষ্টা করেও ভালো, যোগ্য, দ্বীনের বুঝসম্পন্ন পাত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে করার অপশন হাতে আছে। এক্ষেত্রে একাকী একটা কষ্টকর জীবন কাটানোর চাইতে কারো দ্বিতীয় স্ত্রী হওয়া তার জীবনটাকে অনেক সহজ ও উপভোগ্য করে তুলতে পারে।

আবার ভাইদের ক্ষেত্রেও অনেকে আছেন, যাদের স্ত্রীর হয়তো লং টার্ম কোনো অসুস্থতা কিংবা স্ত্রী চাইলেও স্বামীর চাহিদা মেটাতে সক্ষম নন, কিন্তু স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে খুব সুন্দর সুসম্পর্ক আছে, ডিভোর্স দেয়ার কোনো নিয়ত নেই। কিংবা তাদের বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেছে, কাজেই স্বামী-স্ত্রী আলাদা হওয়ার মতো কারণ থাকা সত্ত্বেও একটা পরিবার ভেঙে ফেলা কোনো ওয়াইজ ডিসিশন হতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ে করার মাধ্যমে একজন পুরুষ দিনের পর দিন বঞ্চিত হওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারে। সাংসারিক তিক্ততা, মানসিক চাপ ও নানাবিধ জটিলতা দূর হয়।

এবার আসি, দ্বিতীয় ক্যাটেগরিতে।

দুই নম্বর দলে আছে সেই সব লোক, যারা শরীয়াহর বিধানগুলোর সুযোগ নেয়। খাহেশাত মেটানোর জন্য ইউজ করে৷ নিজের স্বার্থ মেটাতে অসৎ ভাবে কাজে লাগায়।

যেমন – কোনো ভাই প্রথম সংসারই ঠিকমত চালাতে পারছে না, কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে করতে উদগ্রীব! কেউ হয়তো মেয়েদের সাথে লাগামছাড়া কথা বলতে গিয়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাই একের পর এক বিয়ে করতে চায়। কেউ কেউ আছে, যে প্রথম স্ত্রীর হক্বও রক্ষা করতে পারে নাই, স্ত্রীর সাথে ভালো সম্পর্ক, দেখাশোনা করা – এসবে মারাত্মক রকম ব্যর্থ, দ্বিতীয় স্ত্রী ভরণপোষণের ব্যবস্থা নাই; তবু সুন্দরী নারীর লোভ বা নিজের হ্যাডম দেখাতে আরেক বিয়ে করে ফেলে। ওদিকে বড় গলায় বলবে বহুবিবাহ করা সুন্নাহ।

কিংবা সেইসব বোন, যার স্বামীর টাকার অভাব নাই। স্ত্রী কে রাণীর মতো রেখেছে। কিন্তু ক্যারিয়ার বানাতে গিয়ে সেই নারী ব্যবসা বা চাকরিতে লেগে গিয়েছে। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার বাইরের কাজ করতে চলে যায়। টাকা উপার্জন করতে গিয়ে সংসারের দিকে তার মন দেয়ার মতো সময়ই নাই। অথচ কেউ প্রশ্ন করলে বলবে, মেয়েদের ব্যবসা করা জায়েজ। বা মা খাদিজাও ব্যবসায়ী ছিলেন (রাদিআল্লাহু আনহা)।

এরা হলো সেই সুযোগসন্ধানী গ্রুপ। এরা আসলে ইসলামের তোয়াক্কা করে না। নিজের নফসের পূজা করে। কিন্তু যেহেতু ইসলামের দলিল দিয়ে কথা বলে, তাই মানুষ ভাবে এরাই হল হুজুর– প্র‍্যাকটিসিং মুসলম। এদের থেকে মানুষ কখনও ইসলামের সঠিক রিপ্রেজেন্টেশন পায় না। হুজুর মুসলিমদের ব্যাপারে তাদের একটা ভুল ধারণা তৈরি হয়। শরীয়াহর বিভিন্ন বিধানের প্রতি ক্ষোভ জন্ম নেয়।

তো এবার আসি তিন নম্বর ক্যাটেগরিতে।

এরা কারা?

যারা শরীয়াহর বিধানকে সমাজে এস্টাবলিশ করবে। যারা দ্বীন কায়েমের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। কীভাবে?

তারা হবে সৎ। ব্যক্তিগত স্বার্থ, লোভ বা খাহেশ মেটানোর জন্য কোনো বিধানকে নিজের কাজে লাগাবে না। ইসলাম যেভাবে একটা বিধানকে পালন করতে বলেছে, ঠিক সেভাবেই কাজটা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। এবং অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই সুন্নাহ মেনে চলার ব্যাপারে সাবধান থাকবে। তারা হবে অন্য সবার আদর্শ।

যেমন – যে বোনদের ওয়ালি (স্বামী/বাবা) ধনী, তারা প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করবে না। দরকার ছাড়া ব্যবসা করতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনলাইন পেইজে ব্যয় করবে না। যারা সুন্দর করে ঘর সংসার এবং সন্তান বড় করার কাজটা করবে, অন্যদেরকে সে ব্যাপারে উৎসাহিত করবে। মূল দায়িত্ব পালন করার পর সময় এবং সুযোগ পেলে ভালো ও জরুরি কাজে যুক্ত হবে। দ্বীনের দাওয়াহ ও খেদমতে সময় দেবে। ইলম অর্জন ও ইলম প্রচারে ভূমিকা রাখবে। তারা হবে সব নারীর আদর্শ।

আবার বিবাহিত ভাইদের ক্ষেত্রে, যারা ভালো অবস্থানে আছেন (দ্বীন, টাকাপয়সা, সামাজিক স্ট্যাটাস) তারা বহুবিবাহ করবেন। নিজের প্রয়োজন নেই, তবুও করবেন। এবং করার ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন ডিভোর্সড, বিধবা, বয়সে বড় কিংবা সন্তানসহ কাউকে বিয়ে করার। (সুন্দরি, কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু এক্ষেত্রে একটা বিগার পারপাসেই তারা পূর্বে উল্লিখিত নারীদের প্রায়োরিটি দেবেন) কারণ তাদের নিয়ত হবে — সমাজ থেকে বহুবিবাহের ট্যাবু দূর করা। সে জন্য এমন পুরুষদেরকেই দরকার, যাদের আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে তাদের প্রথম স্ত্রীরা ইতোমধ্যে ভালো স্বামী হবার সার্টিফিকেট দিয়েছেন। যারা স্ত্রী ও মায়ের মধ্যে বুদ্ধিমত্তার সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছেন। যারা নিজেদের সংসারে সময় দেন, শ্রম দেন, ইহসান করেন।

এই তিন নম্বর ক্যাটেগরিই আসল। এরা যখন বাড়বে, আমাদের সমাজেও তখন একটু একটু করে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জাহেল লোকজন ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে। ইসলামের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হবে। মুসলিমদের দিকে আঙ্গুল তোলার সুযোগ পাবে না।

আমাদের কাজ হলো, তিন নম্বর ক্যাটেগরিতে ঢোকার চেষ্টা করা। যেকোনো বিধানের আদর্শ অবস্থানটা আমল করার চেষ্টা করা, যতদূর সম্ভব ইনশাআল্লাহ৷ ফলাফল আল্লাহর হাতে।

– আনিকা তুবা

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button