সচেতনতা
আলিমের মর্যাদা
কোনো এক অজানা কারণে আমরা সমাজের আলিমদেরকে কিছুটা নিজেদের সেবাদাসের মতো ভাবি। কোনো ডাক্তারের কাছে ফি ছাড়া পরামর্শের জন্য যাওয়ার কথা কল্পনাতে না আসলেও আলিমদের কাছে পরামর্শের জন্য ফি লাগার কথা আমরা ভাবতেও পারি না। শুধু তাই নয়, কোনো আলিম যদি আমাদের চাহিদামতো সময় দিয়ে আমাদেরকে প্রশ্নের উত্তর না দেন তাহলে আমরা তার উপর শারি‘আহ্র কোড়া মাড়তে মোটেও কুণ্ঠাবোধ করি না। বলেই ফেলি, তিনি ইল্ম গোপন করার দোষে দুষ্ট।
প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের এই আবেগ ও আব্দারের পরিমাণ আকাশ ছুঁয়েছে। শুধু নাম্বার থাকলেই হলো, যখন তখন ফোন করে বায়ু নিঃসরণ সংক্রান্ত মাসআলা জিজ্ঞাসিতেও আমাদের জুড়ি নেই। কিন্তু যদি কোনো ‘আলিম কথা বলার জন্য প্রতি মিনিট পঞ্চাশ টাকা করে ফি রাখার কথা বলতেন তাহলে তাকে দুনিয়ালোভী আখ্যা দিতে আমরা বিন্দুমাত্র অলসতা দেখাতাম না।
কিন্তু আমরা কখনোই প্রয়োজন বোধ করিনি সেসব আলিমদের আর্থিক জীবন কিভাবে চলে তার খোঁজ নেওয়ার। তবে ইমামতি করে বেতন নেওয়া যে হানাফি মাযহাব অনুযায়ি জায়েয নেই সে ফাতওয়া আমরা বেশ জানি।
আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ (রা.) সাহাবিদের বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন “তাদের অন্তর ছিল পরিচ্ছন্ন, জ্ঞান ছিল গভীর, আর ভনিতা ছিল কম”। আল্লাহ চাহে তো আমরা জাতি হিসেবে এসব গুণের ক্ষেত্রে উল্টো দিক দিয়ে প্রথম স্থানে আছি। আমাদের অন্তরগুলো নোংরা হয়ে গেছে, জ্ঞান কচুপাতার পানির মতো, আর ভনিতায় আমাদের জুরি মেলা ভার।
আবু বাক্র (রা.) খলীফার দায়িত্ব নেওয়ার পর কাপড় নিয়ে বাজারে চলছেন। উমার বলছেন, ‘আপনি বাজারে গেলে শাসন কিভাবে চলবে?’ আবু বাক্র বলছেন, ‘তাহলে আমার সংসার কিভাবে চলবে?’ সামান্য ভাতা নির্ধারণ করে দেওয়া হলো। কিছু দিন পর আবার চলছেন বাজারে। উমার হাজির, ‘বাজারে গেলে শাসন কিভাবে চলবে?’
‘তোমাদের শাসন তোমরা চালাও, আমার সংসার চলছে না।’
ভাতা বৃদ্ধি করে দেওয়া হলো।
আবু বাক্র (রা.) এর এই ঘটনা শুনে আমাদের কিছু দীনী ভাইয়েরা বেশ কষ্ট পেয়েছেন। তারা বললেন আমরা নাকি সাহাবীদের মানহানী ঘটাচ্ছি। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।
আমাদের দাবী হলো, হুজুরকে ইমাম নিয়োগ দেওয়া হয়েছ, হুজুর আবার বেতন নিয়ে দর কষাকষি করে, সুতরাং এ হুজুরের তাকওয়া নেই। আমরা চাই এমন হুজুর যিনি এসব নিয়ে কথা বলবেন না। মিলাদ খতম, দোয়া, জানাযা, পানি পড়া এসব করে চলবেন আর আমাদের দেখলে হাত কচলাবেন। এ জাতির ভাগ্যে তাই জুটেছে অনেক সংখ্যক আত্মমর্যাদাহীন হুজুর; বদৌলতে আত্মমর্যাদাহীন জীবন।
আমরা যদি সত্যিই দীনের প্রসার চাই, দুনিয়াতে মুসলিম জাতির সম্মানজনক অবস্থান চাই, তাহলে দীনের ধারক বাহকদেরকে সম্মান জানানো শিখতে হবে—আবেগী বিবেচনায় নয়; বস্তুনিষ্ঠভাবে।