শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা ভয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন না
শ্রীলঙ্কায় মুসলিম সংগঠনগুলোর জোট ‘মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কা’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইলমি আহমেদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের তোয়াক্কা না করে মুসলমানদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তা “এক কথায় বর্ণবাদ।“
তিনি বলেন, “২০ দিনের একটি বাচ্চার মরদেহ জোর করে দাহ করা সমস্ত অসভ্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।“
মি. আহমেদ বলেন, কোভিড হয়ে মরলে দাহ হতে হবে এই ভয়ে শ্রীলঙ্কার মুসলমানেরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। “শুধু এই ভয়ে অনেক মুসলমান কোভিডের উপসর্গ দেখা দিলেও হাসপাতালে যাচ্ছে না। গোপন রাখছে। আর গোপনে পরিচিত ডাক্তারদের কাছে যাচ্ছে।“
তিনি বলেন, প্রতিদিন তাদের সংগঠনের কাছে শত শত ফোন আসছে সাহায্য চেয়ে। “তারা বুঝতে পারছেন না কি করবে। সাহায্য চাইছেন,“ যোগ করেন তিনি।
এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাসে মৃতদের জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে দাহ করার সিদ্ধান্ত জারীর পর থেকেই দেশটির মুসলিম সংগঠন গুলো এবং মুসলিম রাজনীতিকরা সরকারের সাথে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য দেন-দরবার করছেন। বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে মৃতদেহ দাহ করা ইসলামের অনুশাসন বিরোধী এবং মুসলিমদের কাছে এটি কত স্পর্শকাতর একটি বিষয়।
কিন্তু সরকার এতে কানে দিচ্ছে না। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের কবর দেওয়া পুরোপুরি নিরাপদ বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন এবং ১৯০টি দেশে কবর দেয়া এবং দাহ করা সমান্তরালে এই দুটোই করা হচ্ছে – এসব যুক্তিও সরকার মানছে না।
ইলমি আহমেদ বলেন, “সরকার বারবার দোহাই দিচ্ছে টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি, যিনি ওই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি একজন জুডিশিয়াল মেডিকেল অফিসার, তিনি কোনো ভাইরোলজিস্ট নন।
আমরা সত্যিকারের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই টেকনিক্যাল কমিটির পুনর্গঠন চেয়েছি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নৈতিকতারও একটি বিষয় রয়েছে, কমিউনিটির কথা রয়েছে। কোন কথাই কানে তোলা হচ্ছে না।“
মি. আহমেদ আরও বলেন, তারা সরকারকে এমন প্রস্তাবও দিয়েছেন যে কংক্রিটের কাসকেট বানিয়ে মৃতদের কবর দেওয়া হোক, যাতে ভূগর্ভস্থ পানিতে কোন সংক্রমণ না ছড়াতে পারে। “কিন্তু তাও তারা শোনেননি।“
সরকার যুক্তি দিচ্ছে, বিশেষজ্ঞ কমিটি সরকারকে বলেছে যে শ্রীলঙ্কায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভূপৃষ্ঠের অনেক গভীরে নয়। ফলে, কোভিড রোগী কবর দিলে ভূগর্ভস্থ পানি দুষিত হয়ে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।
মুসলিমরা এখন পর্যন্ত আদালতে এ নিয়ে যত আবেদন করেছে, দেশটির সুপ্রিম কোর্ট তার সবগুলো খারিজ করে দিয়েছে।
বিবিসি