আইমান সাদিক ও তার সাম্প্রতিক কার্যক্রম
বর্তমানে আইমান সাদিক , তার প্রতিষ্ঠান ও সহকর্মীদের কার্যক্রম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তপ্ত। ব্রিটেনের রাণীর সাথে তার একটি ছবি ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছবিটি ব্রিটিশ রাণীর হস্তহতে ‘কুইন্স ইয়াং লিডার এওয়ার্ড’ প্রাপ্তির। আচ্ছা, ইংরেজ রাজপরিবার এ এওয়ার্ড কাদের দেয়? কেন দেয় ? এটা শুধুই কী এওয়ার্ড নাকি এর পেছনে আরো উদ্দেশ্য আছে? আজ আমরা এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।
‘কুইন্স ইয়াং লিডার এওয়ার্ড’ দেয়া হয় শুধুমাত্র কমনওয়েলথ ভুক্তদেশের ১৮-২৯ বছর বয়সী সীমিত কিছু বাছাইকৃত যুবক-যুবতিদের। এখন প্রশ্ন আসে তাহলে কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশ কারা? এটাই আমাদের আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
কমনওয়েলথ অব নেশন্স হচ্ছে(ইংরেজি: Commonwealth of Nations) অতীতে ইংরেজ সাম্রাজ্যভুক্ত ছিলো এমন কথিত স্বাধীন জাতিসমূহ নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা। সাবেক ব্রিটিশ শোষিত উপনিবেশের ৫৪টি রাষ্ট্র নিয়ে এ সংস্থাটি গঠিত। এই সংস্থার সচিবালয় লন্ডনে। সর্বদা ব্রিটেনই এর নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। এর প্রতিষ্ঠাতাও ব্রিটেন।[1]
কমনওয়েলথের প্রধান থাকেন পদাধিকারবলে ব্রিটিশ রাণী এবং দপ্তরের নির্বাহী থাকেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। আর সম্মেলনের নামে সাবেক গোলাম রাষ্ট্রসমূহের প্রধান’রা রাণীকে হাজিরা দিয়ে আসে এবং ইংরেজদের থেকে সবক(নির্দেশনা) নিয়ে আসে। সহজে বললে সাবেক কলোনিগুলোর উপর ব্রিটিশদের দাদাগিরি করার জন্য কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠিত।
আর এটি জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। ইঙ্গো-মার্কিন এজেন্ডা বা কমনওয়েলথের বিশেষ কিছু গোল রয়েছে। তা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখার জন্য রাণীর মাধ্যমে বিশেষ কিছু এওয়ার্ড দেয়া হয়। যেমন নাইট উপাধি; যা ব্রিটিশ রাণী ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ কে দিয়েছিলো। আইমান সাদিককে দেয়া ‘কুইন্স ইয়াং লিডার এওয়ার্ড’ টি দেয়ার পেছনেও তাদের বৃহৎ স্বার্থ আছে।[2] সহজ ভাষায় বললে, বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে তাদের(পশ্চিমা) গোল বা চিন্তাগুলো সম্প্রসারণ, ও আধিপত্য সুসংহতকরণ।
২০১৮ সালে এ পুরষ্কার বাংলাদেশের দুইজনকে দেয়া হয়। তারা হলেন আইমান সাদিক ও জায়বা তাহিয়া। তাহিয়া ‘Female Empowerment Movement’ FEMএর সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। এ সংস্থাটি নারী ক্ষমতায়নের নামে নারীদেরকে ধর্মের সীমা থেকে বের করতে চেষ্টা করে। এবং নারী পুরুষের সহযোগিতার সম্পর্কে নিয়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্পর্কের দিকে। এই দৃষ্টিভঙ্গি নানা সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া সংগঠনটি নারীদের যৌননিপীড়নবোধে মারামারি ও ছুরি চালানোর প্রশিক্ষণ থাকে।[3]
আইমান সাদিকদের সরাসরি এ এওয়ার্ড দেয়া হয়নি। এর আগে পরে তাদের বেশ কিছু কোর্স ও ওয়ার্কশপে অংশ নিতে হয়। কয়েক মাসব্যাপী কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লিডারশিপের উপর বিশেষ কোর্স করানো হয়। এছাড়া কমনওয়েলথ এর মহাসচিব এর সাথে আলাপ করানো হয়। বিসিবি ও ফেসবুক হেডকোয়ার্টারেও ওয়ার্কশপে অংশ নিতে হয়। কানেক্ট করা হয় বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনারের সাথে এবং আইমানকে কমনওয়েলথের সাথে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়। এর মাধ্যমে বলা যায় আইমান সাদিকে তাদের কর্মী বানিয়ে ফেলা হয়। [4]
আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি আইমান সাদিককে কমনওয়েলথের সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে। বর্তমানে কমনওয়েলথের অন্যতম এজেন্ডা হলো কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহে সমকামীতার মতো ঘৃণ্য পাপ বৈধকরণ।[5] এরি মাঝেই আইমান সাদিকের সহকর্মীদের দেখা যাচ্ছে সমকামিতার অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিতে। যাতে তরুণ সমাজ বিষয়টি স্বাভাবিক ট্রেন্ড হিসেবে নিতে পারে। তরুণ প্রজন্ম সমকামিতাকে অধিকার হিসেবে দেখলে, বাংলাদেশেও সংবিধান পরিবর্তন করে সমকামিতা বৈধকরণ সহজ হবে।
এছাড়া আইমান সাদিক ও তার ১০ মিনিট স্কুল চ্যানেলে ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে পশ্চিমা অপচিন্তার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। প্রমোট দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গদের । বিতর্কিত অশ্লীল নাট্যকর্মী মিথিলা ও সমকামী সমর্থক সাকিব বিন রশিদকে দিয়ে টেন মিনিট স্কুলের কন্টেন্টের নামে আসছে নানা অনৈতিক বয়ান। মিথিলা ও সাকিবের কিছু বক্তব্য হচ্ছে ,
//বিয়ে করা বউ মানে সে আপনার সম্পত্তি না তার মতামতের বাইরে শারীরিক সম্পর্কটাও ধর্ষণ।// [6] বিয়ে করা স্ত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্কও ধর্ষণ ! আর কত কী দেখতে হবে। আচ্ছা বিয়ের সম্মতি কী অনুমতি নয় ? বৈবাহিক ধর্ষণ বলে আসলে কি বুঝাতে চায় ? আবার একই ভিডিওতে বিয়ে বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ককে পরোক্ষভাবে সমর্থন করা হয়েছে।
//নাচ গান শিখান ও ললিত কলায় নিয়ে আসুন । দশম শ্রেণীতে উঠলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে এসব এক্টিভিটি বন্ধ করবেন না।//[7]
//মেয়েদের রাতে বাইরে সময় কাটাতে না দেয়া, বন্ধুদের (ছেলেমেয়ে উভয়) সাথে লং টুরে যেতে না দেয়া নাকি পিতা মাতার অপরাধ।//[8]
আসলে টেন মিনিট স্কুল একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে এসকল কনটেন্টের মাধ্যমে আসলে কী বিস্তার করতে চাচ্ছে তা আর সচেতন মানুষদের খুলে বলার প্রয়োজন বলে মনে হয় না। কয়েক বছর যাবত টেন মিনিট স্কুলে উপদেশ(!) দিতে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন প্রথমআলোর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান লিবারেল মাসিক জার্নাল কিশোরআলোর সম্পাদক আনিসুল হক, লেখক জাফর ইকবাল। উনাদের পরিচয় তো আর দেয়ার প্রয়োজন নেই।
এছাড়া আয়মান সাদিক নিয়মিত প্রোমোট দিয়ে যাচ্ছেন কিছু ভালগার বিতর্কিত ইউটিউবারদের। যারা সাধারণ তরুণদের কাছেও চরমমাত্রায় বিতর্কিত অত্যাধিক অশ্লীলতা ও নগ্নতা ছড়ানোর জন্য । বিশেষভাবে সালমান মুক্তাদির , যাকে অশ্লীলতা ছড়ানোর জন্য গতবছর পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারপূর্বে সে গানটি ডিলিট করে এবং পরবর্তীতে ছাড়া পায়। সৌভিক, যে অশ্লীল গানের সুটিং করতে যেয়ে গরুর হাটে গনধোলায় খায়।[9] রাবা খানের মতো বিতর্কিত নির্লজ্জ নারী ইউটিউবার, অশ্লীল পোশাকের নর্তকী রিদি শেখ ও ভালগার গানের মডেল সৌমিক। এরকম নগন্য সংখ্যক বখে যাওয়া বেহায়া যুবক-যুবতীরাই এখন আইমান সাদিকের কাছে তরুণ প্রজন্মের আইডল। এদেরকে নিজের চ্যানেলে আনা হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য।
এছাড়া নারী-পুরুষের ফ্রিমিক্সিং, ছেলে ও মেয়ে টিচারদের হাতধরাধরি, বেহায়াপনা ও লিবারেলিজমের পাঠ তো এখন ১০ মিনিট স্কুলের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আইমান সাদিক ক্লাসের বাইরে ছাত্রদের ব্রেনওয়াশ করাচ্ছে সাকিব বিন রশিদ ও নানা অসভ্য কর্মে লিপ্ত মানুষদেরকে প্রমোট করে। যা সচেতন অভিভাবকদের শঙ্কিত করছে।
সর্বশেষ বলবো আইমান সাদিকের ভালো কথা ও ভালো কাজসমূহ আমরা অস্বীকার করছি না, তবে সে কিছু ভালো কাজ করেছে বলে, খারাপ কাজের বৈধতা পেয়ে যাবে তা কিন্তু নয়!
আইমান সাদিকের ফ্যানদের প্রতি বলবো, আমাদের বিরোধিতা করে লাভ নেই, বরং সমকামিতা ও বেহায়াপনার বিরোধীতা করুন কাজে লাগবে। আইমান ভাইকে মন্দ কাজ পরিহার করতে উদ্বুদ্ধ করুন এতে তার উপহার হবে দুনিয়া ও আখিরাতে। ভিনজাতির যারা আজ আইমান সাদিকে প্রমোট করছে তারাই পূর্বে আমাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে আজকে অর্থ ও সম্পদের জৌলুশ দেখাচ্ছে। এওয়ার্ড দেয়ার নামে ভালো মন্দ নির্ণয়কের আসনে সমাসীন হয়েছেন। মনে রাখবেন তারা আমাদের বন্ধু অতীতেও ছিলো না ,এখনোও নয়।
.
তথ্যসূত্র:
1) is.gd/48Mpsz
2) is.gd/8nG42R
3) https://twitter.com/zaiba_t/status/1040074011516882947?s=20
4) https://www.thedailystar.net/country/ayman-sadiq-zaiba-tahyya-among-the-queens-young-leaders-2018-1500586?amp
5) https://www.hrw.org/news/2018/04/16/commonwealth-should-address-lgbt-rights
6) https://youtu.be/JSVEp3ZnWbk
7) https://youtu.be/cGLlENJuQXA
8) https://youtu.be/c7OLE-NefYg
9) https://youtu.be/xL_o3AZKdZM
.
© Monir Ahmed Monir