তসলিমা নাসরিনের আপন ভাতিজা ডা. সাফায়েতের দ্বীনের পথে প্রত্যাবর্তন
ময়মনসিংহ শহরের ব্যস্ততম এলাকা যেলা স্কুল মোড়। এখানে সম্প্রতি মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘আল-হিদায়াহ শপ’ নামের একটি দৃষ্টিনন্দন লাইব্রেরী। লাইব্রেরীটিতে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন প্রকাশনীর ইসলামী বই। পাশাপাশি ভালো মানের সুগন্ধি, খেজুর, মধু, যয়তুন ও তীন ফল ইত্যাদি। দোকানটির মালিক ডা. সাফায়েতুল কবীর একজন চিকিৎসক। দ্বীনের প্রতি প্রবল ভালোবাসা থেকে গত অক্টোবরে’১৯ প্রতিষ্ঠানটির সূচনা করেছেন তিনি। তার আরেক পরিচয় তিনি বিতর্কিত নাস্তিক লেখিকা তসলিমা নাসরিনের আপন ভাতিজা। যে তসলিমা একজন চিহ্নিত নাস্তিক, সেই তসলিমার পরিবার থেকেই একজন আস্তিক দাঈ ইলাল্লাহর আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু কিভাবে এই পরিবর্তন?
ডা. সাফায়েত বলেন, ২০১৮ সালে পিতার মৃত্যু আমার মনকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। আগে মাঝে মাঝে জুম‘আর ছালাত পড়তাম। পিতৃবিয়োগের পর নিয়মিত ছালাত শুরু করলাম। দাড়ি রেখে ইসলামের সব হুকুম-আহকাম মানতে শুরু করলাম। ধর্মীয় বইপত্রও পড়তে লাগলাম। আম্মাকে নিয়ে ওমরাহ পালন করলাম। ওমরাহ থেকে ফিরে ডাক্তারী ছেড়ে দিয়ে বুকশপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সহজেই যেন মানুষের কাছে ইসলামী বইগুলো পৌঁছে দেওয়া যায়। এ চিন্তা থেকেই মূলত আল-হিদায়াহ শপের যাত্রা শুরু।
ডা. সাফায়েত মনে করেন, আদর্শ জীবন গঠনে বই পাঠের বিকল্প নেই। তবে বই যেমন মানুষকে আলোকিত করে, তেমনি অন্ধকারেও নিমজ্জিত করে। তাই আমরা প্রত্যেক মানুষের হাতে এমন বই তুলে দিতে চাই, যা সত্য ও সুন্দরের পক্ষে কথা বলে।
তবে তার এ পরিবর্তনে দারুণভাবে আহত হয়েছেন তার ফুফু তসলিমা নাসরিন। এক পোস্টে তিনি বলেন, আমি যখন বড় হচ্ছিলাম, আমাদের বাড়ি ছিল প্রচন্ড ধর্মনিরপেক্ষ বাড়ি। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের বাড়ি। …বাবা নাস্তিক ছিলেন। ভাই-বোনেরাও নাস্তিক ছিল। …বাড়িতে মা ছাড়া কেউ নামাজ পড়তো না। মার নামাজ নিয়ে বাবা আর আমরা ভাই-বোনেরা হাসি-ঠাট্টা করতাম। বাবা জানতোই না নামাজ কিভাবে পড়তে হয়। ..বাড়িতে সারা বছর রবীন্দ্রসংগীত বাজতো। এই ছিল আমাদের ৭০, ৮০ আর ৯০ দশকের অবকাশ।
আমাদের সেই অবকাশ আর আমাদের নেই। সেই অবকাশ এখন কোরান হাদিস হিজাব বোরখা তসবিহ আর জায়নামাজের অবকাশ। …শুনেছি অবকাশের বোরখা হিজাব আলখাল্লা পরা, মুখে ধর্মের দাড়ি রাখা লোকগুলো শহরে একটি দোকান খুলেছে, সেই দোকানে বিক্রি হয় কোরান হাদিসের বই, জায়নামাজ, হিজাব, বোরখা…। আমাদের সেই শিল্প সাহিত্যের, সেই গান- বাজনার, সেই ধর্মনিরপেক্ষ অবকাশ নষ্ট হয়ে গেছে।