সংবাদ

নব্য ধনীদের বিলাসিতায় টাকা যেন ‘গাছের পাতা’

হাতে অঢেল টাকা। সামান্য অনুষ্ঠানে চলে মহা আয়োজন। টাকা ওড়ানো হয় গাছের পাতার মতো। ব্যয়বহুল জীবন যাপনে অভ্যস্ত হচ্ছেন তারা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্দোনেশিয়ায় এমন একটি ধনী শ্রেণির উত্থান হয়েছে। দেশটিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি অতি ধনী একটি শ্রেণীরও উত্থান হচ্ছে।

এই অতি ধনী শ্রেণির টাকা ওড়ানো নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিবিসির সাংবাদিক রেবেকা হেন্স। তিনি এক প্রতিবেদনে নিজের দেখা অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।

রেবেকা হেন্স লিখেছেন, আমি গিয়েছিলাম এক পার্টিতে। একটি ৬ বছরের মেয়ের জন্মদিনের পার্টি। ওই পার্টির থিম হচ্ছে কুকুর। কিন্তু কুকুরকে ‘থিম’ বানানো ছাড়া আরও বিস্ময় ছিল ওই পার্টিতে।

রেবেকা বলেন, নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদেরকে প্রধান সড়ক থেকে যেখানে নিয়ে গেলেন তা যেন একটা অন্য জগৎ। দেখলাম, জাকার্তার সবচেয়ে দামী ও অভিজাত জায়গা মেনটেং’র একটা খালি জায়গাকে পার্কে পরিণত করা হয়েছে।

‘ওই জায়গাটিতে ঘাস এবং বড় বড় গাছ এনে বিছানো হয়েছে। বসানো হয়েছে কুকুরের জন্য নানা-রকম বাধা পার হবার একটি খেলার কোর্স। একটা কোণায় এ অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় আনা কুকুরদের রাখা হয়েছে। কুকুরের যত্ন নিচ্ছেন যে লোকটি, তিনি তাদের স্নান করাচ্ছেন, কুকুরের শরীর মালিশ করছেন।

রেবেকা লিখেছেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে শিশুটির অভিভাবকরা বরফ-দেয়া কফিতে চুমুক দিচ্ছেন। পরে পরিবেশন করা হলো ওয়াইন।

কিন্তু যখন এই পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল তার মাত্র কয়েকদিন আগে দেশটির পালু শহরে সুনামি হয়। সুনামিতে গোটা এলাকা ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। মানুষজন তাঁবুতে বা আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে।

রেবেকা হেন্স সুনামির নিউজ কভার করে ফিরেছিলেন মাত্র। তখনই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। তিনি বলেন, আমরা মেয়েটির জন্য যে উপহার নিয়ে গিয়েছিলাম তার চেয়ে তিনগুণ বড় উপহার ভর্তি পার্টি ব্যাগ দেয়া হলো আমাদের।

এতো গেল জন্মদিনের আয়োজন। ইন্দোনেশিয়ার এই ধনী শ্রেণি এতটাই বিলাসী তারা হলিউডের ছবিতে নিজেদের সন্তানদের দেখতে চায়। তাই হলিউডের ব্লকবাস্টার ছবি নতুন করে সম্পাদনার ফিল্ম কোম্পানি ভাড়া করে। ওই সিনেমার বিশেষ বিশেষ দৃশ্যে তাদের ছেলে-মেয়েকে দেখানো হয়।

দেশটিতে এখন প্রতি পাঁচজনের একজন হচ্ছেন উচ্চ মধ্যবিত্ত। বিশেষ করে দেশের পশ্চিমাংশেই এদের বসবাস। তারা মাত্র এক প্রজন্মের মধ্যে এমন অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে – যা তাদের বাবা-মায়েরা কল্পনাও করতে পারতেন না।

তাই হয়তো তারা মনে করেন, সেই অর্থ দেখিয়ে বেড়ানোটা খুবই স্বাভাবিক এবং এমনকি ‘প্রয়োজনীয়’।

বলাবাহুল্য ইন্দোনেশিয়ায় সবার জীবনকাহিনী এমন নয়। যারা গরিব – তাদের বেলায় বলা কঠিন যে তাদের পরের প্রজন্ম কীভাবে বেড়ে উঠবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button