সমাজ/সংস্কৃতি/সভ্যতা

সন্তানের কাছে লেখা একজন পর্নস্টারের চিঠি

যখন আমি এই চিঠিটা লেখা শুরু করি তখনো তোমার জন্ম হয়নি। কিন্তু চিঠিটা যখন তোমার হাতে পৌছবে তখন তুমি হয়তো মেয়েদের পছন্দ কর বা নেট ব্রাউজ করতে পার। আমি অনেকদিন ধরে এই সময়টার ভয়ে আছি। কখনোই চাইনা তুমি নেট ব্রাউজ করতে করতে হঠাৎ আমার এমন কোন ছবি বা ভিডিও তোমার চোখে পড়ুক, যে অবস্থায় কোনো ছেলে তার মাকে দেখতে চায় না। বরং সেই দিনটি তোমার জীবনে আসার আগেই আমি চাই আমার এই লেখাগুলো তুমি পড়।

আমি অনেক দারিদ্রতার মধ্যে বড় হই। ২০০০ সালে, আমি ইউ সি আর্ভাইন স্কুলে ভর্তি হই, যদিও আমি প্রথম সারির ছাত্রীদের একজন ছিলাম, সবসময় পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেতাম, তারপরও নতুন ক্লাসে ভর্তির সময় আমার হাতে টাকা থাকতো না। হাইস্কুলে পড়ার স্বপ্নটা যেন ভেঙ্গে যেতে লাগল। কিছুদিন পর আমি পেপারে একটি অ্যাড দেখতে পাই। অ্যাডে মোটা অক্ষরে লিখা ছিল,-“নুড(nude) মডেলিং, দিনে $২০০০ আয় করুন”। টাকার জন্য আমি লজ্জা কি জিনিস ভুলে গেলাম। তখন একবারও ভাবিনি যে, একদিন নিজের একটা সংসার হবে।

সেই সময় এখনকার মতো সবকিছু নেট এ অ্যাভেইলেবল ছিল না। ভেবেছিলাম, সব আমার মা, বাবা ও ভাইয়ের কাছ থেকে লুকাতে পারবো। কি আর আছে আমার হারানোর মতো? সেখানে এক বছর কাজ করবো বলে পরিকল্পনা করেছিলাম। স্কুলের টাকাগুলো পরিশোধ করা হলেই বেরিয়ে যাব। আর কখনো ঘুরেও তাকাবো না।

অথচ আমি সেদিন আর বের হতে পারিনি।

মানুষের মনোযোগ আমাকে আনন্দ দিত। টাকাও ভালো ছিল। কিন্তু এতো মানুষের নজর থাকার পরো আমার নিজেকে কখনো সুন্দর মনে হতো না। ভাবতাম, কোনো একটা সময় তাদের মনে হবে যে তারা ভুল করে আমাকে এখানে এনেছে এবং আমাকে বাসায় চলে যেতে বলবে। তারপর, হয়তো আমার চেয়েও সুন্দরী কোনো মেয়েকে নিয়ে কাজ করবে। কিন্তু এমনটা হয়নি। বরং এই নিউড মডেলিং এর রেশ ধরেই কেউ একজন আমাকে আরও বেশী টাকার বিনিময়ে ক্যামেরার সামনে সেক্স করার প্রস্তাব দিল। টাকার লোভ সামলাতে না পেরে আমি পর্নোগ্রাফির মতো জঘন্য ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করি।

তারা আমাকে একটার পর একটা মুভির প্রস্তাব দিতে থাকল। শীঘ্রই বক্স কভার, পোস্টার, এমনকি মেইনস্ট্রিম টিভি শো পর্যন্ত আমি চলে এলাম। তোমার বড় মা সর্বপ্রথম আমার এই গোপন পেশা (তার এক বন্ধুর বাসায় একটা ভিএইচএস টেপ এর কভারে আমার ছবি দেখে) সম্পর্কে জানতে পারে এবং সাথে সাথে তোমার নানী ও মামাদের জানিয়ে দেয়। আমার এই অধঃপতন সম্পর্কে জেনেও তারা কখনো আমাকে ভালোবাসা বন্ধ করেনি। বরং এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছে।

তোমার নানী সবসময় আমাকে ভালো কিছু করার পরামর্শ দিতো। বলতো, নিজের শরীর না, মন দিয়ে কিছু কর। আমাকে নিয়ে সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতো। মামারা ব্যাপারটা জানলেও কখনো তাদের সাথে সরাসরি এ বিষয়ে কথা হতো না, তবে এ কারণে ঘরের মধ্যে প্রতিনিয়ত অশান্তি বিরাজমান ছিল। তোমার নানা অন্য এক স্টেট এ থাকতো। একদিন আমাকে হাওয়ার্ড স্টার্ন টিভি শো তে দেখে সেও বুঝতে পারে আমি কি করছি।

তোমাকে ছোটবেলা থেকে আমি সততা অবলম্বন করা শিখিয়েছি। তাই আজ আমিও তোমার কাছে আর কোনো সত্য গোপন রাখলাম না। পর্নোগ্রাফির ক্যারিয়ারে যা করা যায় তার সবই আমি করেছি। যেহেতু এই কাজটাকে আমি পেশা হিসেবে নিয়েছিলাম, তাই টাকার জন্য অনেক নীচ পর্যন্ত আমি নেমেছি। আমি আশা করি তুমি এই ধরনের জিনিশ কখনোই দেখবে না।

২০শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ এর একটি ঘটনা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। সেদিন তোমার কিথ আংকেল একটা মারাত্মক মোটর সাইকেল অ্যাকসিডেন্ট করে এবং তার ঘাড় ভেঙ্গে যায়। তার ছেলে দুটো তখন ছোট ছিল। ফলে আমাকে তাদের দেখাশোনা করতে হতো। প্রথম প্রথম আমি জানতাম না কিভাবে বাচ্চাদের পালতে হয়। কিন্তু ওদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেওয়ায় আমি আস্তে আস্তে শিখে গেলাম। তোমার অংকেল সুস্থ হতে যে দুই বছর লেগেছিল সেই সময়টা তারা আমার কাছে ছিল। এই সময়টায় কিছু একটা পরিবর্তন আমার মধ্যে ঘটেছিল। একদিন তোমার সেই কাজিনদের একজন আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল মনে হচ্ছিল সে এই দুনিয়ায় আমাকেই সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস করে এবং ভালোবাসে। আমার নিজেকে তখন তাদের মা মনে হতে লাগল। হঠাৎ আমি নিজের পরিবার গড়ার স্বপ্ন দেখতে থাকলাম।

আমি কখনো ভালোবাসায় বিশ্বাস করতাম না এবং মৃত্যুকে ভয় পেতাম। আমি ছিলাম একটা স্বাধীন আত্মা যে যা খুশি তা করে বেড়াতো। কিন্তু যখনই আমি পরিবার গড়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম তখনই আগের সেই অস্বাভাবিক চিন্তাগুলো বিলীন হয়ে যেতে থাকল।

আমার চিন্তা, চেতনা মুহূর্তেই পরিবর্তিত হয়ে গেল। আমার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। নিজের একটা পরিবার চাইতাম। তাই সংসার করার জন্য একটা মানুষ খুঁজে বের করতে হবে। এটা মোটেও সহজ কোনো কাজ না। কিছুদিন পর আমার এক বান্ধবী একটি মিডওয়েস্টার্ন ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সে নিজেও এন্টারটেইনমেন্ট জগতের বাসিন্দা ছিল। প্রথম পরিচয়েই তাকে আমার ভালো লেগে যায়।

অনেকদিন ধরে আমি পর্নোগ্রাফির নোংরা জগতে বসবাস করায় প্রথমে সেখান থেকে বেরিয়ে আসাটা আমার জন্য কঠিন ছিল। তবে তোমার বাবার অনুপ্রেরণায় আমি সহজেই এই অন্ধকার জগত থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হই।

আমি জানি তোমার এই লেখাগুলো পড়ে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলাম এ কথা জানার পর নেটে কোথাও আমার নামের লিংক দেখতে পেলে ভুলেও ক্লিক করবে না। সাথে পর্নোগ্রাফিক কোনো ওয়েবসাইটও ব্রাউজ করবে না।

আমরা আবেগের তাড়নায় ভুলবশত জীবনে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই যার জন্য সারা জীবন আমাদের হতাশার গ্লানি নিয়ে থাকতে হয়। সত্যিই আগে যদি বুঝতাম আমার একটা সংসার হবে, আমার ছেলেও একদিন নেট ব্রাউজ করতে শিখবে তাহলে হয়তো কখনো সে পথে পা বাড়াতাম না। এই চিঠিটা আমি অনলাইনে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছি যাতে অন্য ছেলেমেয়েরা আমার জীবন থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারে। যেন একটা ছেলে অনলাইনে কোনো মেয়ের নোংরা ভিডিওতে ক্লিক করার আগে একটা বার ভাবে যে এ মেয়েটাই কারো মা বা বোন। জীবনে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বা কোনোভাবে পাচার হয়ে সে এ পথে এসেছে। তবে যে পথেই এই জগতে আসুক না কেন, এখানে কোনো শান্তি নেই। আছে শুধু হতাশা।

Fight Against Dehumanization

মন্তব্য করুন

Back to top button