পৃথিবীর একেক দেশ থেকে কেন ভিন্ন সময়ে দেখা যায় চাঁদ
চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ হলেও সব দেশের অধিবাসীরা একই সময়ে চাঁদ দেখতে পায় না। কোনও দেশ থেকে আগে, কোনও দেশ থেকে পরে দেখা যায়। জ্যোতির্বিদদের মতে, পশ্চিমে যে চাঁদ আগে দেখা যায়, পূর্বে দেখা তা পরে যায়। ফলে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল যেসব অনুষ্ঠান বা উৎসব (রোজা, ঈদ ইত্যাদি) তা কোথাও আগে বা কোথাও পরে শুরু হয়।
সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার আকাশে বুধবার (১৬ মে) চাঁদ দেখতে পাওয়ার এসব দেশে বৃহস্পতিবার (১৭ মে) রোজা শুরু হচ্ছে। আজ বাংলাদেশের আকাশে কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। একারণে আগামী শুক্রবার (১৮ মে) থেকে এখানে রোজা শুরু হবে। সৌদি আরবের অবস্থান বাংলাদেশের পশ্চিমে, আর মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান পূর্বে। স্বভাবতই অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ভৌগলিকভাবে পূর্ব–পশ্চিমে অবস্থান হওয়ায় ওইসব দেশে চাঁদ দেখা গেলে, মধ্যবর্তী অবস্থানে থেকেও বাংলাদেশে একই দিনে চাঁদ দেখা যাচ্ছে না কেন? এই হেরফেরের কারণইবা কী?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সহ-সভাপতি এফ আর সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দূরত্বের কারণে সব দেশ থেকে একই সময়ে চাঁদ দেখা যায় না।’ তিনি বলেন,‘যত পশ্চিমে যাওয়া যাবে, তত তাড়াতাড়ি চাঁদ দেখা যাবে। আর যত পূর্ব দিকে যাওয়া যাবে, তত দেরিতে চাঁদ দেখা যাবে।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘এই কারণে নতুন চাঁদ উঠলেও পশ্চিম দিকে হওয়ায় সৌদি আরবে বাংলাদেশের আগে চাঁদ দেখা যাবে।’
এফ আর সরকার বলেন, ‘গতকাল (১৫ মে) বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নতুন চাঁদের জন্ম হয়েছে। ফলে আজ (বুধবার, ১৬ মে) আমাদের চাঁদ দেখার সম্ভাবনা আছে। ওই চাঁদের দৈর্ঘ হবে দুই ডিগ্রির মতো। যেহেতু আকাশজুড়ে মেঘ বিরাজ করছে, তাই নতুন চাঁদ দেখার সম্ভাবনা খুবই কম। আজকের চাঁদ দিগন্ত রেখার ১১ ডিগ্রিতে মাত্র ১০ মিনিটের জন্য দেখা যাওয়ার কথা। এত অল্প সময় চাঁদের উপস্থিতি থাকলে দেখার সম্ভাবনা কমে যায়।’
তিনি আরও জানান, প্রতি ২৯ দশমিক ৫ দিনে চাঁদের জন্মের (অমাবশ্যার পরে) ১৯-২০ ঘণ্টার মধ্যে চাঁদ দেখা যায়।
জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ কৌশল বিভাগের অধ্যাপাক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পৃথিবী গোলক আকার। সে কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদ দেখা যাবে দূরত্বের অনুপাতে। চাঁদের কক্ষপথ পৃথিবীর নিরক্ষ রেখার সঙ্গে সোয়া ৫ ডিগ্রিতে হেলানো থাকে। ফলে একই সময়ে পৃথিবীর কোথাও একই সময়ে চাঁদ দেখা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন গাণিতিক গণনায় বের করে ফেলা যায় কোথায়, কখন কোন অক্ষাংশে চাঁদ যাবে বা অবস্থান করবে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘চাঁদ কখনও স্থির হয়ে থাকে না। ফলে এটা সহজেই বোঝা যায়, চাঁদের অবস্থান কোথায়।’
অধ্যাপাক ফারসীম মান্নান জানান, রোজা রাখা বা ঈদের ক্ষেত্রে ইসলামি মতে, চাঁদ দেখতে হবে। চাঁদ একেক দেশ বা এলাকায় একেক সময়ে দেখার কারণে রোজা, ঈদসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিনে হয়ে থাকে।’
উইকিপিডিয়া বলছে, চাঁদের আবর্তনের পর্যায়কাল ও তার কক্ষপথের পর্যায়কাল একই হওয়ায় আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ঠ সবসময় দেখতে পাই। চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ২৭ দিন ৭ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ১১ সেকেন্ডে। কিন্তু সমসাময়িক আবর্তনের ফলে পৃথিবীর পর্যবেক্ষকরা প্রায় ২৯ দশমিক ৫ দিন হিসেবে গণনা করে। একটি ঘণ্টা আবর্তনের পর্যায়কাল অর্ধেক ডিগ্রি দূরত্ব অতিক্রম করে। চাঁদ পৃথিবীকে যে অক্ষরেখায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে, সে অক্ষরেখায় চাঁদের সময় লাগে একদিন বা ২৪ ঘণ্টা। পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের শতকরা প্রায় ৫৯ ভাগ দেখতে পেয়ে থাকি। চাঁদ সবসময় আকাশের যে অঞ্চল থাকে, তাকে জোডিয়াক (রাশিচক্র) বলে। যা ক্রান্তিবৃত্তের প্রায় ৮ ডিগ্রি নিচে এবং গ্রহণরেখা ওপরে অবস্থান করে।