সমাজ/সংস্কৃতি/সভ্যতা

কাছে আসার গল্পের পিছনের গল্প

কাজের খাতিরে নানারকম ওয়ার্কশপে মাঝে মাঝেই যাওয়া হয়। তেমনি একটা মার্কেটিং ওয়ার্কশপে একবার স্বনামধন্য এক অ্যাড ফার্মের প্রধান কিছুক্ষণ বক্তৃতা রাখল। (নাম বলতে চাইছি না, তবে যারা আমাকে কাছ থেকে জানেন তারা হয়ত ঐ লোককেও চিনে যাবেন।)
.
সেখানে নানারকম অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে করতে বললেন Close up টুথপেস্টের একটা বিজ্ঞাপন বা টিভিসির কথা, যেটার দায়িত্ব পড়েছিল ওই অ্যাড ফার্মের ওপর। আর সেখানে সরাসরি কাজ করেছিলেন তিনি। সেই টিভিসিতে কী ছিল সেটা এখনও গুরুত্বপূর্ণ হয় নি। বরং সেই টিভিসির জন্য Close up এর পক্ষ থেকে কী নির্দেশনা ছিল সেটা এখনও চমকদার।
.
টিভিসির কাজটি বুঝিয়ে দেওয়ার সময় নাকি Close up থেকে বলা হয়েছিল – এমন ‘bold’ আর ‘close’ টিভিসি করতে হবে যা কিনা এই দেশে এখনও আসে নাই; আবার একইসাথে এখানকার মানুষজনও ক্ষেপে গিয়ে একেবারে উল্টোপাল্টা কিছু করে বসবে না। Close up থেকে বিশেষ করে জোর দেওয়া হয় সরাসরি ‘Kiss scene’ দেখানোর জন্য। ব্যাপারটা এখনও বাংলাদেশে আসে নাই, তাই।
.
ওয়ার্কশপে বসে আমি অবাক হয়ে গেলেও দেখলাম আশেপাশের ছেলেমেয়েদের তেমন ভাবাবেগ হচ্ছে না। অবশ্য হবেই বা কেন… তারা তো হলিউড আর বলিউডের আশীর্বাদে এর চেয়েও ফালতু দৃশ্য দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যেই। একটা ‘Kiss scene’ কি আবার কোনও ব্যাপার নাকি!? আমার মত মান্ধাতা আমলের মানুষ এখনও সভ্যতার (!) সাথে খাপ খাওয়াতে পারল না তো কী হয়েছে, বাকি সবাই মডার্ণ মানুষ বৈকি!
.
যাই হোক, যিনি বক্তৃতা রাখছিলেন তিনি বললেন সেই নির্দেশনা পেয়ে তিনি কিছুটা চিন্তিত হয়ে যান। বাংলাদেশের মানুষ কি মেনে নিবে? এক শ্রেণী আন্দোলন শুরু করে দিলেও তো সমস্যা। ব্র্যান্ড ভ্যালুতে দারুণ আঘাত হয়ে যাবে ব্যাপারটা। অবশেষে সিনিয়র কয়েকজনের সাথে আলাপ আলোচনা করে তিনি নাকি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ‘এখনও’ এমন দৃশ্য একটা টিভিসির এদেশে জন্য সুইটেবল না। কিন্তু তিনি নাকি আরও ‘bold’ আরও ‘close’ TVC করে দেওয়ার প্রত্যয় দিয়েছিলেন।
.
মজার ব্যাপার হল তিনি বললেন, “বাংলাদেশের মানুষের এই ধরনের ‘Openness’ আসতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। অল্প কয়েকবছর বাদেই তাদের আর TVC করতে সমস্যা হবে না।” অবশ্য তার বক্তব্য কিন্তু অসার নয়। বাংলাদেশের প্রথম যে সিনেমায় ‘Live Together’ অর্থাৎ বিয়ের আগে যিনা দেখানো হয়েছে সেটা নাকি ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’। বলা হয় মোস্তফা ফারুকি নাকি অনেক সাহসী একটা পথ তৈরি করে দিয়েছেন! হিট সব গান আর কোরিওগ্রাফির কেরামতিতে রক্ষণশীল বাঙ্গালী সমাজ তা নাকি ধরতেই পারে নাই। আর ফলস্বরূপ, এখন দেশীয় নাটকগুলোতে সহজেই এই বিষয় দেখানো যায়।
.
আর কয়েক বছর পর ২০১৬ তে অমিতাভ রেজা নাকি আরও এক ধাপ নিতে সক্ষম হয়েছেন তার ‘আয়নাবাজি’ সিনামায় ‘Kiss scene’ অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে তথা পরোক্ষোভাবে দেখানোর মাধ্যমে। তাই সরাসরি অভিনেতা আর অভিনেত্রীর মধ্যে প্রোফেশনাল ‘Kiss scene’ নাকি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। Unilever এর Close up চায় তারাই এখানে প্রথম হোক। তাহলে তাদের কাছে আসার সাহসী গল্পগুলোর থিমে আরও অনেক বেশি নষ্টামি দেখাতে পারবে তারা। একইসাথে অন্যান্য প্রতিভাবান ডিরেক্টর, অভিনেতা, অভিনেত্রীদেরও প্রয়োজনের খাতিরে আরও ক্লোজদৃশ্যে প্রফেশনাল (আপনার আমার মত খারাপ চিন্তা তাদের আসেই না!) কাজ করতে আর কোনও বাধা থাকবে না। বাধা থাকবে না তাদের প্রতিভার পূর্ণ রূপ দেখাতে।
.
.
আসছে ফেব্রুয়ারি মাসে টানা এক সপ্তাহ ধরে যিনাসপ্তাহ পালন করবে ইয়ো জেনারেশন। শেষ হবে ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিয়ে। সেজন্য প্রতিবছরের মত ‘কাছে আসার’ সেরা তিন ‘দুর্দান্ত’ গল্পের জন্য সাধারণের কাছে আবেদন ছড়িয়ে দিয়েছে Close up. ছবিটি ৭ই জানুয়ারি, ২০১৮ এর প্রথম আলো থেকে নেওয়া হয়েছে। দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিকে নির্লজ্জের মত বিশাল করে এক ছেলে আর এক মেয়ের অশ্লীল ভঙ্গিমা তুলে ধরে যারা তারা আসলে সমাজে কী প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই পুরনো প্রশ্নই রাখলাম। প্রথম আলো, কালের কণ্ঠের মত সেক্যুলার প্লাটফর্মগুলো যে বেহায়ার মত এসব একেবারে প্রথম পেজে ছাপিয়ে যায় সেকথা নাহয় নাই বললাম। ইয়ো জেনারেশন ‘জিনা’ এর জন্য নতুন শব্দ এনেছে Make out. আবার কয়েকদিন আগে তো জাতি কলাভবনের যৌথ গবেষণার ‘দুর্দান্ত’ গল্পও দেখল। এই যে Close up, প্রথম আলোর এতসব জিনার ‘দুর্দান্ত’ গল্পের আয়োজন; Lux, চ্যানেল আই, প্রথম আলোর (আবার!) নারীদের অদেখাকে দেখার আয়োজন এগুলোই তো আধুনিক সভ্যতা! মানুষের শরীরের টানে তারা যা খুশি সব করতেই পারে… কিন্তু বিয়ে! সেটা তো হালাল! আল্লাহর আনুগত্য হয়ে যাবে যে!

“নিশ্চয়ই যারা যারা পছন্দ করে যে ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা/ বেহায়াপনা/ ব্যভিচার/ অনৈতিকতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” [সূরা আন-নূর, ১৯]


Courtesy : Tanvir Ahmed

মন্তব্য করুন

Back to top button