সচেতনতা

কুরবানী না লোকাচার?

উদহিয়া বা কুরবানি একটা ইবাদাত। সলাত পড়া যেমন ইবাদাত, সিয়াম থাকা যেমন, হাজ্ব করা যেমন – তেমন কুরবানিও একটা ইবাদাত।

প্রতিটি জাতির জন্য কুরবানির ইবাদাতটা ছিল। প্রথমে ইবাদাত ছিল শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যে, পরে অন্য শরীকরা ঢুকে পড়ে।

এখন গো-মাতার জন্য ভারতে নরবলি হয়, আগে কালীর জন্য হতো। কালী এখন পাঠা পায়, এক কোপে মুন্ডু আলাদা করতে হয় কাপালিকদের।
শয়তানের পূজারীরা কালো মোরগ উৎসর্গ করে শয়তানকে খুশি করতে।
কদিন আগে পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর আগে চায়নিজ কোম্পানি কালো ষাঁড়ের মাথা কেটে রক্ত নদীতে ঢেলে কাজ শুরু করেছিল।

প্রাণ উৎসর্গ করা একটা ইবাদাত। আল্লাহ সূরা কাওসারে বলেছেন, তোমার রবের জন্য সলাত আর নহর। নহর/উদহিয়া মানে কুরবানি।

আপনি তাড়াহুড়া করে সলাত পড়ার সময় সূরা কাওসার পড়েন। অর্থ বুঝলে বুঝতেন ইবাদাত আর মাংস খাওয়া এক জিনিস না।

আপনি খাশি খাওয়ার জন্য, গরুর মাংস বিক্রি করার জন্য সারা বছর পশু জবেহ করতে পারেন। এটা ইবাদাত না। তবে মাংসটাকে হালাল করতে হলে বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলে জবাই করতে হবে।

আর ইবাদাত হচ্ছে ঈদুল আদহার দিনে ঈদের জামাতের পর থেকে তিন দিন “বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার, হে আল্লাহ আপনি এই পশু আমার এবং আমার পরিবারের তরফ থেকে কবুল করুন” – এ কথা বলে ধারাল ছুরি চালিয়ে শ্বাসনালী আর গ্রীবা ধমনী কেটে ফেলা।

সলাত নামের ইবাদাতে আপনি আল্লাহু আকবার বলে শুরু করেন, সানা-কিরআত পড়েন, রুকু-সিজদাহ করেন, তাসবিহ-তাসলিম পড়েন।

কুরবানি নামের ইবাদাতে আপনি আল্লাহকে খুশি করার জন্য হালাল টাকা দিয়ে কেনা পশুর গলায় ছুরি চালাবেন, রক্ত প্রবাহিত করবেন।

উদহিয়া মানে আত্মত্যাগ নয়।

ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন তার সন্তানকে কুরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন সেটা আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য, আত্মত্যাগের জন্য না।

আত্মত্যাগ একটা ধোঁয়াশা কথা। আত্মত্যাগ মানে কী?

কেউ যদি বলে মনের পশু কুরবানি করলাম – এটাই বড় আত্মত্যাগ। কেউ বলবে, কুরবানি না করে বন্যার্তদের ত্রাণ দিলাম – এটাই আত্মত্যাগ।

এসব আত্মকল্পিত আত্মত্যাগ গ্রহণযোগ্য না।

আমরা মুসলিম – ইসলাম মানে আত্মসমর্পণ। আল্লাহ যা হুকুম করেছেন তা করতে হবে। যেভাবে বলেছেন সেভাবে করতে হবে। এটাই ইবাদাত। ইবাদাতের একটা অংশ আত্মত্যাগ।

আল্লাহ মিথ্যা দেব-দেবীদের মতো রক্ত বা মাংসের মুখাপেক্ষী নন। তিনি সেজন্য স্পেসিফিকালি এ দুটোর কথা উল্লেখ করে বলেছেন -এগুলো তার কাছে পৌঁছায় না। পৌঁছায় আমরা আল্লাহকে কতটা ভয় পাই। তাকে কতটা সমঝে চলি।
যে ঘুষের টাকায় গরু কিনেছে সে আল্লাহকে কতটুকু হিসাব করে চলে? সে কেন বড় গরু কিনছে সেটা কী আল্লাহ জানেন না?

কুরবানি – জবেহ করা তো শেষ। এবার গোশতের কী হবে? আগের দিন হলে যার ইবাদাত কবুল হতো তার পশু আকাশ থেকে আগুন এসে জ্বালিয়ে দিত।

এ জমানার মানুষদের আল্লাহ দয়া করেছেন।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুরবানি গোশত খাও এবং খাওয়াও।

আমরা যে গোশত স্বাদ করে খাই, খাওয়াই – এটাও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করার জন্য।

ভাইয়েরা, খাওয়াটা সেকেন্ডারি। গরু কিনে জেতাটা আরো পরের ব্যাপার। এগুলো নিয়ে মত্ত হবেন না।

না হয় ঠকলেন আপনি – একটা কৃষক দুটো হাজার টাকা বেশি পেল। কী সমস্যা বলেন? আপনি কী এই টাকাটার এতই মুখাপেক্ষী?

না হয় আপনার প্রতিবেশী জিতেই গেল। আপনার সমান গরু তিনি কিনে এনেছেন অর্ধেক দামে। তাকে অভিবাদন জানান। অনুরোধ করেন বাজেট থেকে যে টাকাটা বাঁচিয়ে ফেলেছেন সেটা দান করে দিতে।

রাস্তায়, ফেসবুকে আপনি যা দেখেন তা লোকাচার। তাকওয়া তো বুকের ভেতর থাকে।

সেইখানে আপনি ঠিক আছেন তো?

 

– শরীফ আবু হায়াত অপু

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button