সংবাদ

তেহারিতে গো-মাংস, চারুকলার ক্যান্টিন মালিককে মারধর

পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংসের তেহারি খাওয়ানোর পর সেখানকার ক্যান্টিন মালিককে মারধর করেছে বিক্ষুব্ধরা।

শুক্রবার সকালে এ ঘটনায় চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রার আগে আগে উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, ভাংচুর করা হয় ক্যান্টিন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির কর্মচারী জাকির হোসেন গত দুই বছর ধরে চারুকলার ওই ক্যান্টিন পরিচালনা করে আসছেন। তাকে আর ওই দায়িত্বে রাখা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রক্টর আমজাদ আলী।

চারুকলার স্বেচ্ছাসেবীদের একজন জানান, মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য যারা রাতভর কাজ করেছেন, তাদের সকালের নাস্তা হিসেবে জাকিরের কাছ থেকে ‘তেহারি’ নেওয়া হয়েছিল।

“আমাদের ক্যান্টিনে কখনও গরুর মাংস আসে না। কেউ জানত না যে তেহারি গরুর মাংস দিয়ে রান্না করেছে। খাওয়ার পর সন্দেহ হলে জাকিরকে জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন সে গরুর মাংস দেওয়ার কথা স্বীকার করে।”

তাতে ক্ষিপ্ত হয়েই কিছু শিক্ষার্থী ক্যান্টিন ভাংচুর করে বলে জানান ওই স্বেচ্ছাসেবী।

এ অনুষদের সাবেক একজন শিক্ষার্থী জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে চারুকলার ক্যান্টিনে কখনোই গোমাংস দেওয়া হত না।

মঙ্গল শোভাযাত্রা ঘিরে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টায় পরিকল্পিতভাবে জাকির এ কাজ করেছেন কি না- সে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

একই সন্দেহ এসেছে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের কথায়।

তিনি বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক। চারুকলার ক্যান্টিনে কখনো গরুর মাংস পরিবেশন করা হয় না। সে এটা কেন করল- তা তদন্ত করে দেখতে হবে। এর মধ্যে একটা দুরভিসন্ধি আছে বলে মনে হচ্ছে।”

এ বিষয়ে ক্যান্টিন মালিক জাকির বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে গরুর তেহারিও রান্না করা হয়।

“চারুকলার ছাত্র সোহাগ, সবুজ, মিঠুন সকালে ওই তেহারি খেয়ে কয়েক প্যাকেট নিয়ে যায়।”

তিনি বলেন, বৈশাখ উদযাপন প্রস্তুতির সময় সোহাগ, সবুজ, মিঠুনসহ উদযাপন কমিটির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন তার দোকানে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বাকি খায়।

“ওই বকেয়া টাকা পরিশোধ করবে না বলেই গরুর মাংসের তেহারি বাইরে গিয়ে কয়েকজন হিন্দু ছাত্রকে খাইয়ে আমার বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছে।”

তার এই অভিযোগ নাকচ করে চারুকলার ছাত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সম্পাদক সোহাগ বলছেন, বাকি খাওয়ার সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।

নিজেরা খাওয়ার পর গরুর তেহারি কেন হিন্দু সহপাঠীদের দিলেন জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, “আমরা সারা রাত কাজ করার পর সকালে ওই তেহারি খেয়েছিলাম। তাই সেখানে গরুর মাংস রয়েছে কি না সেটি ওইভাবে খেয়াল করা হয়নি।”

জাকিরের আগে চারুকলার ক্যান্টিন চালাতেন মিজানুর রহমান নামে একজন। তিনিও বিভিন্ন সময়ে বকেয়া টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে না পাওয়ার অভিযোগ করেন।

মিজানুর শুক্রবার বলেন, “গত বছর বৈশাখ প্রস্তুতির সময় আমার কাছেও তারা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বাকি খায়। পরবর্তীতে টাকা চাওয়ায় আমাকে ক্যান্টিন থেকে বের করে দিয়ে জাকিরকে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়।”

ক্যান্টিনে গরুর তেহারি কেন রান্না করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান প্রক্টর আমজাদ আলী।

তিনি বলেন, “সে (জাকির) জানত না বলে এটা করেছে, না বেশি লাভের জন্য খাশির বদলে গরু দিয়েছে, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল- তা আমরা দেখব। তবে তাকে আর ক্যান্টিন পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না।”

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button