সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণের ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে স্মারকলিপি
৯৫% মুসলমানের মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তি/ভাস্কর্যের নগরীতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র কোন ভাবেই বাস্তবায়িত হতে দেওয়া হবে না। এই স্মারকলিপিকে মূল্যায়ন করা না হলে জনসমুদ্রের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এর রায় এবং পাঠ্যপুস্তকের মত প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে কারো তোয়াক্কা করবেন না।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০.৩০মি: বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে মূতি অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান পূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মহানগর সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এ কথা বলেন। আরো বক্তব্য রাখেন মাও. আবূল কালাম, আহমদ আব্দুল কাদের, মাও. মাহফুজুল হক, মাও. ফজলুল করীম কাসেমী, মাও. লোকমান মাজহারী, মাও. হাবীবুল্লাহ মিয়াজী প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগরীর সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল হেফাজতের কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার অফিস সহকারীর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে যা বলা হয়,
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই ব্রাহ্মণ্যবাদের আজ্ঞাবাহী একশ্রেণির পেইড প্রোপাগিস্ট মিডিয়া ও ইসলামবিদ্বেষী সেকুলার অপশক্তি এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৃহত্তর তৌহিদি জনতার ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ঈমান-আক্বিদার বিরুদ্ধে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পন্থায় অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল, পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী প্রবন্ধ-নিবন্ধ সংযোজনের দাবিও করছে। সুতরাং আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপনও সেই ধারাবাহিকতারই একটি অংশ। মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরী বানানোর নতুন ষড়যন্ত্র। এটা কৌশলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে হেয় ও অপমান করা, কোটি কোটি মুসলমানকে ঈমানহারা করা এবং বাংলাদেশের মুসলিম ঐতিহ্য ও পরিচিতি মুছে ফেলার সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এরা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন কর্মকা-ের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে আদর্শিক সংঘাত সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরী করছে। বাংলাদেশে কোন অবস্থাতেই গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটা সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। অবিলম্বে এটা অপসারণ করা একান্ত জরুরি।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, গ্রিকদের কল্পিত দেবী থেমিস-এর মূর্তিকে ন্যায়ের প্রতীক মনে করা সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী অযৌক্তিক এবং অগণতান্ত্রিক। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে কথিত ন্যায়ের প্রতীক গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন হচ্ছে মুসলমানদের সাথে চরম ধৃষ্টতা এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের অবমাননা। এদেশের সংবিধানের সাথেও এটি সাংঘর্ষিকÑ অর্থাৎ সংবিধানের ২ (ক), ১২ এবং ২৩ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণবিরোধী। এটি দেশের তৌহিদি জনতার ঈমানী চেতনা, ধর্মীয় ভাবধারা ও মূল্যবোধের বিরোধী এবং সেই সাথে এটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদাবোধেরও সম্পূর্ণ বিপরীত। অথচ মুসলমানদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতীক হলো মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন। মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামে মূর্তি স্থাপন হারাম। মূর্তিকে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে বিশ্বাস করলে বা এমন ভাবনা অন্তরে পোষণ করলে, কোনো মুসলমানের ঈমান থাকবে না। হাদিস শরিফে রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক আযাবপ্রাপ্ত লোক হবে মূর্তি প্রস্ততকারীগণ। ইসলামে মূর্তি স্থাপন, মূর্তিকে সম্মান জানানো এবং ন্যায়ের প্রতীক মনে করা র্শিক। কোনো প্রণীর-মূর্তি নির্মাণ করা ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরা গুনাহ। মূর্তি সংগ্রহ, মূর্তি সংরক্ষণ এবং মূর্তি কেনা-বেচা ইত্যাদি সকল বিষয় শক্তভাবে নিষিদ্ধ। মূর্তিপূজার কথাতো বলাই বাহুল্য।
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এই বাংলাদেশের নাগরিকদের ধর্ম, কৃষ্টি, সংস্কৃতির সাথে রোমানদের সংস্কৃতির কোনো মিল নেই, সম্পূর্ণ আলাদা। রোমানদের কাছে ন্যায়ের প্রতীক কল্পিত গ্রিক দেবীর সাথে এই দেশের ঐতিহ্য, ইতিহাস ও ভাব-সম্পদের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও কীভাবে এবং কাকে খুশি করতে হাইকোর্টের সামনে এরকম অগ্রহণযোগ্য ও বিজাতীয় মূর্তি স্থাপন করা হলো? কারা কী উদ্দেশ্যে এটি করার সুযোগ পেলো? কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দেশের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সম্প্রতি গুটিকয়েক গণবিচ্ছিন্ন বাম ও সেকুলারপন্থী বুদ্ধিজীবিরা মিডিয়ার মারফতে গ্রিক দেবীর মূর্তিকে ‘ভাস্কর্য’ বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিগত ৬ ফেব্রুয়ারি বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘রোমান আইন থেকেই আমাদের বিচারের বিষয়ের উৎপত্তি। সেজন্যই অন্যান্য দেশের মতো এই ভাস্কর্য করা হয়েছে।’ একটি স্বাধীন ঐতিহ্যবাহী জাতির অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে তার এহেন বক্তব্য অসমীচীন, অজ্ঞতা। স্মারকলিপিতে বলা হয় সর্বশ্রেষ্ট আইনের ধারক পবিত্র কুরআন। পবিত্র কোরআনের আলোকেই আইন বিষয়কে ঢেলে সাজানো জরুরি এবং তা করা না হলে, এদেশের গণমানুষ প্রকৃত ইনসাফ ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে থাকবেই।
আপনি বহুবার বলেছেন যে, কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোন আইন পাস করা হবে না এবং মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাবেন। সুতরাং এ বিষয়ে আপনি দায়িত্বশীল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন, আমরা এটাই আশা করি।
প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি
এদিকে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্যকে ‘গ্রিক দেবীর মূর্তি’ আখ্যায়িত করে তা অপসারণের দাবিতে প্রধান বিচারপতিকে স্মারকলিপি দিয়েছে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণের হেফাজতের ইসলামী সংগঠনটির একটি প্রতিনিধি দল সুপ্রিমকোর্টে গিয়ে স্মারকলিপিটি দিয়ে আসে। তা গ্রহণ করেন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের একান্ত সচিব আতিকুস সামাদ।
পরে আতিকুস সামাদ ইনকিলাবকে বলেন, হেফাজতের ইসলামী ৭-৮ জনের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল স্মারকলিপি দিতে। মাজার গেইট থেকে এ স্মারকলিপি আমি গ্রহণ করেছি। স্মারকলিপিতে হেফাজত ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী ও নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী স্বাক্ষর করেছেন। এর আগেও এ ধরনের দু-একটি সংগঠন একই দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে বলে জানান আতিকুস সামাদ।
রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’র আদলের এই ভাস্কর্য সুপ্রিমকোর্টের মূল ভবনের সামনে ‘লিলি ফোয়ারা’য় গত বছরের ডিসেম্বরে স্থাপন করা হয়।
বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত আইন শাস্ত্রের গোড়াপত্তন হয় রোমান যুগে। বাংলাদেশেও আইন শাস্ত্রে রোমান আইন পড়ানো হয়ে থাকে। রোমানদের লেডি জাস্টিস গ্রিকদের কাছে পরিচিত ছিল দেবী থেমিস হিসেবে। এটি ‘অনৈসলামিক’ দাবি করে হেফাজতের স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকেই ব্রাহ্মণ্যবাদের আজ্ঞাবাহী এক শ্রেণির পেইড ও প্রপাগান্ডিস্ট মিডিয়া ও ইসলামবিদ্বেষী সেকুলার অপশক্তি এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৃহত্তর তৌহিদি জনতার ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ঈমান-আক্বিদার বিরুদ্ধে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পন্থায় অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল, পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেয়া নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী প্রবন্ধ-নিবন্ধ সংযোজনের দাবিও করছে। সুতরাং আমরা মনে করি, সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপনও সেই ধারাবাহিকতারই একটি অংশ।
ভাস্কর্য স্থাপন সংবিধানের ২ (ক), ১২ ও ২৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী বলেও দাবি করেছে হেফাজত।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৯৪৮ইং সালে এই কোর্ট স্থাপিত হয়। ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে ছিল ‘দাঁড়িপাল্লা’। বিগত ৬৮ বছর ধরে কেউ এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করেনি। ৬৮ বছর পর হঠাৎ করে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লার জায়গায় গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন করে কী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে, সেটা জনগণের কাছে বোধগম্য নয়। তাহলে কী বিগত ৬৮ বছর সুপ্রিম কোর্টে ন্যায়বিচার হয়নি?