সংবাদ

প্রথম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ওড়না-বিতর্ক

এ বছর প্রথম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে অক্ষরজ্ঞান সূচিতে নিয়ে আসা হয়েছে ওড়না। বইটির পাঠ ১২-তে ‘ও’ অক্ষর চেনানোর উপকরণ হিসেবে ‘ওড়না’কে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে অভিভাবক মহলে আপত্তি উঠেছে।

শুনি ও বলি পাঠে ‘ও’ অক্ষর চেনাতে ওড়না পরা একটি কন্যাশিশুর ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে- ‘ওড়না চাই’। আর ‘ঔ’ চেনাতে ব্যবহার করা হয়েছে ওষুধের বোতল ও ট্যাবলেটের ছবি। লেখা হয়েছে ‘ঔষধ খাই’।

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছড়ার মাধ্যমে অক্ষর চেনানো নতুন কিছু নয়। যেমন, অ –তে ঐ অজগর আসছে তেড়ে, আ –তে আমটি আমি খাবো পেড়ে। এনিয়ে কোনও কথা না উঠলেও ও-তে ‘ওড়না চাই’ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

এ বিষয়ে অভিভাবক ডা. জিনাত রাহী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির শিশুকে ‘ও’ অক্ষর চেনাতে আর কিছু না পেয়ে সংকীর্ণ চিন্তা থেকে ওড়না ব্যবহার করা হয়েছে। নারীর নির্দিষ্ট এই পোশাক ব্যবহার করে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবকও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। ‘সাম্প্রদায়িক মানসিকতা’ থেকে এটি করা হয়েছে উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

অভিভাবকদের আপত্তির বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও ভুল পাওয়া গেলে যাচাই করা হবে। সমালোচনা হলেও কমিটিতে বিষয়টি উত্থাপন করব। কোনও সুপারিশ থাকলে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রয়োজন হলে আগামী বছর এটা সংশোধন করা হবে বলেও জানান এনসিটিবি চেয়ারম্যান।

অনেক অভিভাবকের মতো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমেদও এ বিষয়ে আপত্তি জানান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশুদের জন্য এটা ঠিক হয়নি। শিশুরা যখন জানতে চাইবে ওড়না কেন ব্যবহার করা হয়, তখন কী উত্তর দেবেন শিক্ষকরা? শিশুদের অক্ষর শেখানোর জন্য এটা ঠিক হয়নি।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরীও এ ব্যাপারে একমত। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক হয়নি। ক্লাস ওয়ানের শিশু ওড়না দিয়ে কিভাবে ‘ও’ অক্ষর সহজে চিনবে। এটা ঠিক নয়। ছোট শিশুদের মনে এখনই নারী-পুরুষ বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে। ‘ওড়না’ ব্যবহার না করে ‘ওলকপি’ ব্যবহার করা যেত।’

নাটোর পিটিআইয়ের সহকারী সুপারিনটেন্ডেন্ট আহমাদ সবিহা আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওলকপি, ওজন, ওলি, ওজু, ওরাং-ওটাংসহ নানা শব্দ রয়েছে। একটি পরিচিত বা সহজে পরিচয় করানো যায় এমন শব্দ ব্যবহার করলে ভালো হতো। তাহলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠত না।’ শিশুদের কাছে ওড়না পরিচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।

এদিকে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও ‘ঔ’ অক্ষর চেনাতে গিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে ঔষধ। এটি আগেও ব্যবহার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তবে সচেতন অভিভাবকদের মতামত, ‘ঔ’ চেনাতে গিয়ে সাধু রীতির শব্দ ‘ঔষধ’ পড়ানো হচ্ছে শিশুদের। পরে ব্যাকরণ পড়ানোর সময় ওষুধ শব্দটি এলে বিভ্রান্ত হতে পারে তারা।

এ বিষয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ওষুধ না শিখিয়ে ঔষধ শেখানো হচ্ছে শিশুদের। কিন্তু পরে ব্যাকরণ পড়ার সময় তাদের শেখাতে হবে কোনটা সাধু আর কোনটা চলিত। যেকোনও একটি শেখানো উচিত।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রাথমিকে শিশুদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়ার জন্য বাক্যানুক্রমিক পদ্ধতিতে পাঠদান দেওয়া হয়। এতে প্রথমে শেখানো হয় বাক্য, এরপর শব্দ এবং সবশেষে অক্ষর। উপকরণ ব্যবহার করার কথা তিন ধাপেই। ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রথম শ্রেণির প্রথম পাঠে সে অনুযায়ী প্রথম ধাপে ‘আমি বই পড়ি’ বা ‘বই পড়ি’ এবং দ্বিতীয় ধাপে ‘আমি’, ‘বই’ ও ‘পড়া’ শব্দ তিনটিকে আলাদা করে শেখানো হচ্ছে।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button