দুর্বল ঈমানের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাকো। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ কোরো না।” (সূরা আলে ইমরান ৩:১০২)
ঈমানের দুর্বলতা হলো বর্তমানে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া একটি রোগ। যার কারণে প্রায়ই মানুষকে নালিশ করতে শোনা যায় ‘আমার অন্তর কঠিন হয়ে গেছে,’ ‘আমি ইবাদতে কোনো প্রশান্তি পাই না,’ ‘আমার ঈমান যেন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে,’ ‘কুরআন তিলাওয়াত আমার অন্তর বিগলিত করে না,’, ‘আমি সহজেই গুনাহে জড়িয়ে পড়ি’ ইত্যাদি।
অন্তর বা হৃদয়কে আরবিতে বলা হয় ক্বল্ব্। তাক্বাল্লুব অর্থ হলো পরিবর্তন, বৈচিত্র্য, ওঠানামা। তাক্বাল্লুব থেকেই কলব নামটি এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কলব হলো গাছের গোড়ায় পড়ে থাকা পাতার মতো, যা বাতাসে বারবার ওলটপালট হয়।” (আহমাদ ৪/৪০৮)
আনাস বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যাপ্ত পরিমাণে বলতেন : “হে আল্লাহ্! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো।” এক ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের ব্যাপারে আশংকা করেন? আমরা তো আপনার উপর ঈমান এনেছি এবং আপনি যা নিয়ে এসেছেন সেই বিষয়ে আমরা আপনাকে সত্যবাদী বলে স্বীকার করে নিয়েছি। তিনি বলেন, “অন্তরসমূহ মহামহিমান্বিত করুণাময়ের দু’ আঙ্গুলের মাঝে অবস্থিত। তিনি সেগুলোকে ওলট-পালট করেন।” (ইবনে মাজাহ, ৩৮৩৪)
আল্লাহ আমাদের জানাচ্ছেন
“…মানুষের ও তার অন্তরের মাঝে আল্লাহ অন্তরায় হয়ে যান..” (সূরা আনফাল ৮:২৪)
বিচার দিবসে কেউই রক্ষা পাবে না “সে ব্যতীত যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে।” (সূরা শুআরা ২৬:৮৯)
“…যারা পাষাণহৃদয়…” (সূরা হাজ্জ ২২:৫৩) তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।
তাই মুমিনকে অবশ্যই তার অন্তরকে যাচাই করতে হবে। সমস্যা চিহ্নিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিষয়টা সিরিয়াস। কারণ আল্লাহ আমাদেরকে কঠিন, তালাবন্ধ অন্তরের ব্যাপারে সাবধান করেছেন।
দুর্বল ঈমানের লক্ষণ
একটি লক্ষণ হলো গুনাহ ও হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া। কেউ একটা গুনাহ লাগাতার করতে থাকে, কেউ হরেক রকমের গুনাহ করে। গুনাহ করতে করতে একসময় তার অন্তর থেকে গুনাহের প্রতি ঘৃণা গায়েব হয়ে যায়। তখন সে প্রকাশ্যে গুনাহ করতে থাকে। মুনাফিক তার ভণ্ডামির কারণে গোপনে কুফরি বিশ্বাস লালন করে। কিন্তু মুমিন তার গুনাহের ব্যাপারে লজ্জিত বলে গুনাহের কথা গোপন রাখে। এ ধরণের গুনাহগারদের গুনাহ আল্লাহ গোপন রাখেন এবং মাফ করে দেন। কিন্তু যারা গুনাহের কথা প্রচার করে, প্রকাশ্যে গুনাহ করে, আল্লাহ তাদেরকে এভাবে মাফ করেন না।
দুর্বল ঈমানদার তার অন্তরের কাঠিন্যের বিষয়টা অনুভব করতে পারে। আল্লাহ বলেন, “অতঃপর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মত অথবা তদপেক্ষাও কঠিন…” (সূরা বাক্বারাহ ২:৭৪) কঠিন অন্তরের ব্যক্তিকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিলে বা সে কোনো মৃত ব্যক্তি দেখলে তার কোনো ভাবান্তর হয় না। এমনকি নিজে লাশ কাঁধে বহন করে নিয়ে তাতে মাটি দিলেও নির্লিপ্ত থাকে। কবরস্থানের নিকটে হাঁটার সময় তার কাছে মনে হয় সাধারণ কিছু পাথরের পাশ দিয়ে যাচ্ছে।
ঈমান দুর্বল হলে ইবাদাতে মনোযোগ থাকে না। সালাত, তিলাওয়াত, দু’আ যদি নিয়মিত করেও, সেগুলো একঘেয়ে রুটিনের মত করে। কী আওড়াচ্ছে তার অর্থের দিকে কোনো খেয়াল থাকে না। আল্লাহ “সে ব্যক্তির দুআ কবুল করেন না যার অন্তর তাঁর প্রতি গাফেল।” (তিরমিযি, ৩৪৭৯)
ঈমান দুর্বল হলে ইবাদাতে অলসতা ও অবহেলা আসে। মুনাফিকদের সালাতের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, “…তারা সালাতে দাঁড়ায় একান্ত শিথিলভাবে…” (সূরা নিসা ৪:১৪২) দুর্বল ঈমানদার বিশেষ বিশেষ ইবাদাতের মুহূর্তগুলো বা দুআ কবুলের সময়গুলো ধরার চেষ্টা করে না। তার মানে তার আসলে সওয়াব অর্জনের ইচ্ছা নেই। সে হজ্জে যেতে দেরী করে, শক্তি থাকলেও জিহাদে যায় না, সালাতের জামাত ধরতে পারে না। কোনো সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ছুটে গেলে তার ক্ষতিপূরণ করে নেওয়ার তাগিদ অনুভব করে না। ফরযে কিফায়াগুলো পালন করে না (জানাযার সালাত, সূর্য-চন্দ্রগ্রহণের সময়ের সালাত)। অথচ আল্লাহ তাঁর নেক বান্দাদের ব্যাপারে বলেন, “তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়তো, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকতো এবং তারা ছিলো আমার কাছে বিনীত।” (সূরা আম্বিয়া ২১:৯০)
এমন অলসতা করলে আগে আগে সালাতে যাওয়া, নফল সালাত পড়া, ইস্তিখারা ও তাওবাহর সালাত পড়া হয়ে ওঠে না কখনো। ঈমান দুর্বল হলে মানুষ অভিযোগপ্রবণ হয়ে ওঠে। আশপাশের মানুষের প্রতি ঘৃণা বেড়ে যায় আর সহনশীলতা কমে যায়।
কুরআনে বর্ণিত জান্নাতের ওয়াদা, জাহান্নামের হুমকি, আখিরাতের বর্ণনা দুর্বল ঈমানদারের মনে দোলা দেয় না। সে কুরআন শুনতে বিরক্ত বোধ করে। নিজে তিলাওয়াত করলে বেশিক্ষণ চালাতে পারে না।
লম্বা সময় যিকির ও দুআ করতে না পারা দুর্বল ঈমানের বহিঃপ্রকাশ।
আল্লাহপ্রদত্ত সীমাসমূহ লঙ্ঘিত হতে দেখলে রাগান্বিত না হওয়া, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলা দুর্বল ঈমানের লক্ষণ।
খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার মোহ দুর্বল ঈমানের অন্তরে বাসা বাঁধে। এর ফলে কেউ নেতৃত্ব পেতে উদগ্রীব হয়ে ওঠে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা নেতা হতে খুবই উদগ্রীব হবে কিন্তু আখিরাতে তোমরা এর জন্য আফসোস করবে…।” (বুখারি, ৬২৭৯) কারণ নেতৃত্ব শুরু হয় খ্যাতি আরর সম্পদ দিয়ে। কিন্তু পরে এতে অনেক ঝুঁকি জড়িত হয়ে যায় আর আখিরাতের জবাবদিহিতা তো আছেই। ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) নেতৃত্ব চেয়ে নিয়েছিলেন কারণ তাঁর চেয়ে যোগ্যতর কেউ ছিলো না এবং তিনি সৎ নেতৃত্বের ব্যাপারে বদ্ধ পরিকর ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়া জায়েয। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব চাওয়ার উদ্দেশ্য থাকে ক্ষমতার অপব্যবহার। এরা চায় মানুষ তাদের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকুক, মজলিসে কিছু বিতরণ করা হলে তাদের দিয়ে শুরু করা হোক। অথচ কোনো মানুষের সম্মানার্থে দাঁড়ানো জায়েয নেই। আর বিতরণ শুরু করতে হয় ডানদিক হতে।
কৃপণতা হলো ঈমানী দুর্বলতার লক্ষণ। বঞ্চিত ও প্রার্থীর জন্য, উম্মাহর কল্যাণের জন্য, তাদের বিপদে সাহায্য করার জন্য দুর্বল ঈমানদারেরা কোনো আগ্রহ বোধ করে না। কারণ কৃপণতা ও ঈমান একসাথে অবস্থান করে না। আনসারগণ নিজেদের প্রয়োজনের উপর মুহাজিরদের প্রাধান্য দিতেন। আল্লাহ বলেন, “শুনো, তোমরাই তো তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে, অতঃপর তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্থ। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবে না।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৩৮)
দুর্বল ঈমানদার যা প্রচার করে তা নিজে আমল করে না। এটা মুনাফিকির লক্ষণ। জাহান্নামে এ ধরণের মানুষের বিশেষ শাস্তির ধরণ দেখে তাকে সবাই চিনবে। আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা করো না তা বলো কেন? তোমরা যা করো না তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই গর্হিত।” (সূরা সফ ৬১:২-৩)
অন্যের ক্ষতিতে খুশি হওয়া ঈমানী দুর্বলতার ফল।
মাকরুহ কাজগুলোকে হালকাভাবে নেওয়া। সন্দেহপূর্ণ বিষয়গুলো থেকে দূরে না থাকা। এদের উপমা দিতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এক রাখালের কথা বলেছেন যে তার বকরিগুলো নিষিদ্ধ এলাকার কাছেই চরায়। ফলে একসময় নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করে ফেলে। (বুখারি, মুসলিম) এমন মানুষেরা একসময় গুনাহর ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ইতস্তত করে গুনাহ করা ব্যক্তির চেয়ে এরা বেশি বিপদে আছে। ইবনে মাস’উদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, “মুমিনের কাছে তার গুনাহকে মনে হয় পাহাড়েরর মত যা এক্ষুণি তার মাথায় ভেঙে পড়বে। আর মুনাফিকের কাছে তার গুনাহকে মনে হয় নাকের কাছে ওড়া মাছির মত যাকে সে হাতের এক ঝটকায় তাড়িয়ে দিবে।” (ফাতহুল বারি, ১১/১০২)
ছোটখাটো ভালো কাজগুলোকে গুরুত্ব না দেওয়া। হোক তা কাউকে পানি পান করানো, হাসিমুখে ভাইয়ের সাথে কথা বলা বা মাসজিদ থেকে ময়লা পরিষ্কার করা। এক ব্যক্তি রাস্তায় একটি গাছের ডাল পড়ে থাকতে দেখে বললো, “আল্লাহর কসম, আমি এটা সরিয়ে দেবো যাতে মুসলিমদের চলাফেরায় অসুবিধা না হয়।” সে সেটা সরিয়ে দিলো। এর ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। (মুসলিম, ১৯১৪)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “মুসলিমদের পথ থেকে একটি কষ্টদায়ক বস্তু যে সরিয়ে দিবে তার জন্য একটি হাসানাহ (পুণ্য) লেখা হবে। যার একটি হাসানাহ কবুল হয়ে যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (আদাবুল মুফরাদ, ৫৯৩) তাই যারা ছোট ছোট ভালো কাজগুলোকে অবহেলা করে, তাদের নিশ্চয় কোনো সমস্যা আছে। মুসলিম উম্মাহর বিষয় আশয়ের ব্যাপারে উদাসীনতা। দুআ হোক, আর্থিক সাহায্য হোক কিছু দিয়েই সাহায্য না করা। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন মুসলিম উম্মাহ হলো একই দেহের মত।
দ্বীনি ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন করে ফেলা।
ইসলামের দাওয়াতি কাজ করতে কোনো আগ্রহ বোধ না করা। সাহাবি তুফায়ল ইবনে আমর (রাঃ) মুসলিম হওয়ার পরপরই দাওয়াতি কাজে লেগে যান। অথচ আমরা একে গুরুত্বই দেই না।
কুফফারদের সাথে শত্রুতা না রাখা। রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরাম কাফিরদের সাথে স্পষ্ট পার্থক্য বজায় রাখতেন। সামামাহ ইবনে আসাল (রাঃ) ছিলেন ইয়ামামা অঞ্চলের নেতা। তিনি একবার মুসলিমদের হাতে বন্দী হন। রাসূলুল্লাহর দাওয়াতে তিনি মুসলিম হন। তিনি যখন মক্কায় উমরাহ করতে যান তখন কুরায়শ মুশরিকদের বলেন, “রাসূলুল্লাহর অনুমতি ছাড়া ইয়ামামা থেকে তোমাদের কাছে একটা গমের দানাও পৌঁছবে না।” (ফাতহুল বারি, ৮/৭৮) এই হলো দৃঢ় ঈমান।
বিপদাপদ আসলে আতঙ্কে উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়া। এটা দুর্বল ঈমানের ফলাফল। কারণ আল্লাহর উপর তার তাওয়াক্কুল নেই।
অতিরিক্ত বাহাস ও তর্কবাজি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “হিদায়াত পাওয়ার পর তর্কবাজ হয়ে ওঠা ছাড়া আর কিছুই তাকে বিপথগামী করতে পারে না।” (আহমাদ, ৫/২৫২) তিনি আরো বলেন, “যে হকের উপর থাকার পরও বিতর্ক পরিহার করে, তার জন্য জান্নাতের সীমানায় আমি একটি ঘরের জিম্মাদার।” (আবু দাউদ, ৫/১৫০)
অত্যাধিক দুনিয়াদার হওয়া। টাকা, জমি, খ্যাতি, বিলাসী জীবনের জন্য লোভ করা। এ ধরণের লোক দুনিয়াবি কমতির কারণে নিজেকে বঞ্চিত ভাবে আর মুসলিম ভাইদের প্রতি হিংসা পোষণ করে।
কুরআন সুন্নাহর উপর ঈমানের চেয়ে যুক্তির উপর বেশি নির্ভর করা।
দুর্বল ঈমানের কারণ
লক্ষণগুলোই কারণ হিসেবেও কাজ করে। যেমন- গুনাহ করা, দুনিয়াদারিতা।
দ্বীনি পরিবেশ থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকলে ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, “যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।” (সূরা হাদীদ ৫৭:১৬) হাসান আল বাসরি (রহ.) বলেন, “আমাদের দ্বীনি ভাইরা আমাদের কাছে পরিবারের চেয়ে বেশি প্রিয়। কারণ পরিবার আমাদের দুনিয়ার কথা মনে করায়, আর ভাইয়েরা আখিরাতের কথা স্মরণ করায়।”
নেককার আমীর বা নেতার সাহচর্যে না থাকা। আজ মুসলিমরা এ জিনিস থেকে বঞ্চিত। রাসূলুল্লাকে কবরে রাখার পর সাহাবাগণ এমন একটি শূন্যতা অনুভব করেন, কারণ তাঁদের নেককার নেতাকে তাঁরা হারালেন। যদিও পেছনে রেখে গেছেন এমন অনেক শক্তিমান ব্যক্তি যারা হাল ধরবেন।
ইলমের থেকে দূরে সরে গেলে ঈমান দুর্বল হয়। কুরআন হাদীস ও সালাফদের লেখা বই থেকে উপকৃত হওয়ার ইচ্ছা থাকা উচিত। দর্শন, প্রেমকাহিনী, গল্প ইত্যাদি নিয়ে পড়ে থাকলে ঈমান দুর্বল হয়।
গুনাহের পরিবেশ, যেখানে মানুষ তার গুনাহ নিয়ে গর্ব করে, কেউ মাদক নিচ্ছে, কেউ পর্ন দেখছে, কেউ গালি দিচ্ছে, গীবত করছে, এসব পরিবেশ ঈমান দুর্বল করে দেয়। এছাড়া যেসব পরিবেশ শুধু দুনিয়া, চাকরি, ব্যবসা, টাকার কথা মনে করায় সেগুলোও ক্ষতিকর। আর মুসলিম ঘরগুলোর তো আজ অবস্থা খারাপ। চলছে অশ্লীল গান, সিরিয়াল, সিনেমা। মানুষ টাকার পেছনে পাগলের মত ছুটে। অথচ রাসূল (সাঃ) বলেন, “দিনার দিরহামের গোলামেরা ধ্বংস হোক।” (বুখারি) আদমসন্তানকে একটা সোনার পাহাড় দিলে সে আরেকটা চায়। কবরের মাটি ছাড়া কিছু দিয়েই তার পেট ভর্তি হয় না।
পরিবার-সন্তানের প্রতি শরিয়ার সীমার বাইরের ভালোবাসা ঈমান দুর্বল করে দেয়। আল্লাহ বলেন, “মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়।” (সূরা আলে ইমরান ৩:১৪) সন্তান না খেয়ে মরবে এই ভয়ে মানুষ দান সদকা করে না। তারা এতিম হয়ে যাবে বলে জিহাদে যায় না। সন্তানের অসুবিধা হবে ভেবে ইলম অর্জন করে না। এর অর্থ এই না যে কেউ বিয়েশাদী করবে না। তবে এগুলো নিয়ে বুঁদ হয়ে যাওয়া ঠিক না।
লম্বা জীবনের আশা মানুষের ঈমান দুর্বল করে দেয়। এছাড়া অতিরিক্ত খাওয়া, অতিরিক্ত ঘুম, অকাজে রাত্রি জাগরণ, অতিরিক্ত হাসাহাসি ঈমান দুর্বল করে দেয়।
ঈমান দুর্বল হওয়ার কারণ অসংখ্য। এখানে কয়েকটিমাত্র উল্লেখ করা হয়েছে যাতে এর সূত্র ধরে বাকিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
দুর্বল ঈমানের চিকিৎসা
কাপড় যেভাবে পুরনো হয়ে যায়, আমাদের অন্তরে ঈমানও সেভাবে পুরনো হয়। আলোকোজ্জ্বল পূর্ণিমাকে যেমন হঠাৎ মেঘে ঢেকে ফেলে, আমাদের ঈমানও গুনাহ দিয়ে ঢেকে যায়। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহর আকিদা হলো ঈমান বাড়ে কমে। আল্লাহ বলেন, “…যাতে তাদের ঈমানের সাথে আরও ঈমান বেড়ে যায়।” (সূরা ফাতহ ৪৮:৪) “…এটি তোমাদের মধ্যকার ঈমান কতটা বৃদ্ধি করলো?…” (সূরা তাওবাহ ৯:১২৪) এছাড়া গুনাহ হাত দ্বারা ঠেকানো, মুখে প্রতিবাদ করা, অন্তরে ঘৃণা রাখার হাদীসটিও ঈমান বাড়া কমার দলীল। বিশ্বাস, কথা আর কাজ মিলে ঈমান পূর্ণ হয়।
নেককাজের দ্বারা ঈমান বাড়ে, পাপকাজের দ্বারা কমে। কেউ যদি শপিং মলে গিয়ে হারাম দৃশ্য দেখা আর অসার কথা শোনার পর কবরস্থানের নীরবতায় গিয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এ পার্থক্য স্পষ্ট ধরতে পারবে। ঈমানের কমতির ফলে যদি ফরয ছুটে যায়, হারামে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে সমস্যা গুরুতর। তা না হয়ে যদি কেবল নফল ইবাদাত ছুটে যায়, তাও গুরুত্ব সহকারে আগের জযবা ফিরিয়ে আনতে মন দিতে হবে। একটা কথা মনে রাখা উচিত তা হলো ঈমান হলো বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার ব্যাপার। তাই ঈমানী দুর্বলতা কাটাতে নিজ গরজেই এগোতে হবে। অন্য কেউ মুখে তুলে খাইয়ে দিবে না।
ঈমান মজবুত করার একটি উপায় হলো কুরআনের আয়াতের অর্থ জেনে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। আল্লাহ বলেন, “আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত…” (সূরা বনী ইসরাইল ১৭:৮২) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের আয়াত নিয়ে প্রচুর চিন্তা করতেন। রাতে সালাত পড়তে দাঁড়ালে কখনো কখনো এক আয়াত বারবার পড়েই সারারাত কাটিয়ে দিতেন। একবার এরকম সালাতে কাঁদতে কাঁদতে তার কোল ভিজে গেলো, নিচের মাটি ভিজে গেলো। পরে তিনি বিলাল (রাঃ)কে বলেছিলেন, “আজ আমার ওপর কিছু আয়াত নাযিল হয়েছে। দুর্ভাগ্য তার যে এগুলো পড়ে এগুলো নিয়ে চিন্তাফিকির করে না। আয়াতগুলোর মাঝে আছে ‘নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে…’ (সূরা আলে ইমরান ৩:১৯০-১৯১)।”
কুরআনে নানারকম বিষয়ে কথা আছে। কিছু সূরায় ঈমানের বাস্তবতা ও দায়দায়িত্ব সম্পর্কে এমন আলাপ আছে যার প্রভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর চুল ও শরীরে বার্ধক্যের ছাপ চলে আসে। যেমন সূরা হুদ, ওয়াক্বিয়া, মুরসালাত, নাবা, তাকভীর। সাহাবা (রাঃ) ও সালাফগণের জীবনেও কুরআনের আয়াত পড়তে পড়তে ভীত হওয়ার ও কান্না করার অসাধারণ সব উদাহরণ আছে।
কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আল্লাহর দেওয়া উপমা রূপকগুলো। আল্লাহ বলেন, “…আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।” (সূরা হাশর ৫৯:২১) উপমা দৃষ্টান্তের এমন বহু আয়াতের উদাহরণ দেওয়া যায়। আল্লাহকে ছেড়ে মুশরিকরা যেসব উপাস্যকে ডাকে, তারা সবাই মিলে একটা মাছি তৈরি করতে পারে না। মন্দ কথাকে নোংরা গাছের সাথে আর পবিত্র কথাকে মজবুত শিকড়ের আকাশছোঁয়া গাছের সাথে তুলনা করা হয়েছে। মুশরিকদেরকে বহু মালিকের অধীন ক্রীতদাসের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যে কোন মালিকের কথা শুনবে ভেবে পায় না। আল্লাহর বাণী যারা মেনে নেয় আর যারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদেরকে দৃষ্টিবান ও অন্ধের সাথে তুলনা করা হয়েছে। বৃষ্টির পর মৃত ভূমি থেকে তৃণের উত্থান দিয়ে আখিরাতের পুনরুত্থান বোঝানো হয়েছে। ইত্যাদি। এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে ঈমান বৃদ্ধির অসাধারণ অনুভুতি পাওয়া যায়। আল্লাহর পবিত্র নামসমূহ ও গুণাবলী জানা ও অন্তরে এর প্রভাব তৈরি করা। আল্লাহ স্বয়ং নিজের এসব নাম বলেছেন। মুমিন যখন নামগুলো জানতে পারে, আল্লাহর মহাপরাক্রমের সামনে সে বিনীত হয়। আল্লাহ সবকিছু দেখেন, শোনেন, জানেন। একটার সাথে আরেকটা গুলিয়ে ফেলেন না। তিনি মহান, সমুন্নত, উচ্চ। তিনি কঠোর হিসাবগ্রহণকারী, বাধ্যকারী। মৃত্যু, ঘুম, তন্দ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না। গায়েবের চাবিগুলো তাঁরই কাছে। ভূগর্ভে, সমুদ্রে যা আছে সব জানেন। একটা পাতা পড়লেও তা জানেন (সূরা আন’আম ৬:৫৯)। পুনরুত্থান দিবসে পৃথিবী থাকবে তাঁর মুঠোতে। আসমান থাকবে তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা (সূরা যুমার ৩৯:৬৭)। {আল্লাহর হাত তাঁর শান অনুযায়ী যেমন, তেমনই। আমরা ব্যাখ্যা ছাড়াই তা বিশ্বাস করি।} তিনি আসমান জমিনকে এভাবে কব্জা করে ঘোষণা করবেন, “আমিই মালিক। কোথায় পৃথিবীর রাজা বাদশাহরা?” (বুখারি, ৬৯৪৭)
মূসা (আলাইহিসসালাম) আল্লাহকে দেখতে চাইলে পাহাড় কীভাবে ঝলসে গেলো তার কাহিনী আমরা জানি। সকল জীব জড় মানুষ জিন মিলে তাঁর ইবাদাত করলে তাঁর শান বৃদ্ধি পায় না। সকলে মিলে বিদ্রোহ করলে তাঁর শান একটুও কমে না। আল্লাহর এসব আসমা ওয়াস সিফাত নিয়ে চিন্তাভাবনা ঈমান বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক।
ইসলামী জ্ঞান আহরণ করলে ঈমান বাড়ে। “…বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে…” (সূরা ফাতির ৩৫:২৮) যারা আল্লাহর বড়ত্বের কথা, কালিমার শর্ত ও প্রয়োগ, সীরাহর বিস্তারিত, হালাল হারামের বিধান, জান্নাতের নাজ নেয়ামত, জাহান্নামের ভয়াবহতার কথা জানে, তাদের ঈমান কী করে অজ্ঞদের সমান হতে পারে?
যিকিরের মজলিসগুলোতে বেশি বেশি যোগ দিতে হবে। আল্লাহর স্মরণ করা হয় এমন মজলিসকে ফেরেশতারা ঘিরে রাখে, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রশান্তি নাযিল হয়। যিকিরকারীদের কথা আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের সামনে বলেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করে দেন। ফলে বান্দার ঈমান বেড়ে যায়। হানযালা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) একবার বলছিলেন, “হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে।” তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বসলে জান্নাত জাহান্নামের কথা মনে পড়ে। অথচ পরিবারের সাথে গিয়ে মিশলে এর অনেক কিছুই ভুলে গিয়ে দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া লাগে। রাসূল (সাঃ) বললেন, “সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, আমার সাথে থাকা অবস্থায় তোমাদের মনের অবস্থা যেমন থাকে, তোমরা যদি সর্বাবস্থায় এভাবে থাকতে আর যিকির করতে, তাহলে ফেরেশতারা তোমাদের বিছানায়, রাস্তায় সবখানে তোমাদের সাথে মোসাফাহা করতো। হে হানযালা! এটার জন্য একটা সময় আছে, ওটার জন্যও একটা সময় আছে।”- এভাবে তিনবার বললেন। (মুসলিম, ২৭৫০) প্রচুর নেক আমল করা আর নেক আমল দিয়ে সময়কে ভরে ফেলার মাধ্যমে ঈমান তরতাজা হয়। এর এক জ্বলন্ত প্রমাণ আবু বাকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের মধ্যে কে আজকে রোজা রেখেছো?” আবু বাকর বললেন, “আমি।” রাসূলুল্লাহ বললেন, “কে আজকে জানাযার সালাত পড়েছো?” আবু বাকর বললেন, “আমি।” রাসূলুল্লাহ বললেন, “কে আজকে কোনো অভাবীকে খাবার দিয়েছো?” আবু বাকর বললেন, “আমি।” রাসূলুল্লাহ বললেন, “কে অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়েছো?” আবু বাকর বললেন, “আমি।” রাসূলুল্লাহ বললেন, “এই সবগুলো কাজ যে করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সহীহ মুসলিম, ফাযায়েলে সাহাবা খণ্ড)
এ থেকে বোঝা যায় আবু বাকর (রাঃ) তাঁর সারা দিনটাকে নেক আমল দিয়ে ঠেসে ফেলেছিলেন। সাহাবাদের পরবর্তী প্রজন্মরাও এমনই ছিলেন। হাম্মাদ বিন সালামাহ নামক জনৈক সালাফ সম্পর্কে বলা হয়, “হাম্মাদকে যদি বলা হয় ‘কালকে আপনি মারা যাবেন’, তাহলে তিনি অন্যান্য দিন যা নেক আমল করেন তার চেয়ে একটুও বেশি নেক আমল করতে পারবেন না।”
নেক আমল করার ক্ষেত্রে একজন মুসলিমকে এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:
১। নেক আমল করতে গড়িমসি ও দেরী করা যাবে না। সুযোগ পেলেই যথাসম্ভব দ্রুত করে ফেলতে হবে। আল্লাহ বলেন, “তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মত প্রশস্ত…” (সূরা হাদীদ ৫৭:২১)। সহীহ মুসলিমে আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর এক বর্ণনায় আছে, বদর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জান্নাতের প্রশস্ততার কথা বলে সাহাবাদের উদ্বুদ্ধ করেন। উমায়র বিন হিমাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) শক্তি অর্জন করতে কয়েকটি খেজুর খাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, “আমি যদি এসব খেজুর শেষ করা পর্যন্ত বেঁচে থাকি তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।” তিনি সেগুলো সরিয়ে রেখে জিহাদে লিপ্ত হয়ে যান এবং শহীদ হন।
২। নেক আমল নিয়মিত করা। নেক আমল পুনঃপুনঃ করলে ঈমান তাজা হয়। অনিয়মিত বড় কোনো আমলের চেয়ে ছোট ছোট আমল নিয়মিত করার ফায়দা বেশি। রাসূ্ল(সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হলো কোন আমল আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। তিনি বললেন, “যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা অল্প হয়।” (ফাতহুল বারি, ১১/১৯৪)
৩। নেক আমল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। ঈমান মজবুত করা কোনো এককালীন কাজ নয়। এটি করেই যেতে হয়, করেই যেতে হয়। আল্লাহ বলেন, “তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেতো, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করতো এবং তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিলো।” (সূরা যারিয়াত ৫১:১৭-১৯) বুজুর্গগণ সাতদিনে একবার কুরআন খতম দিতেন, জিহাদে থাকলেও কিয়ামুল লাইল পড়তেন, কারাগারে থাকলেও তাহাজ্জুদ পড়তেন। স্ত্রীর হক আদায় আর তাহাজ্জুদ পড়া- দুটোর জন্য তারা রাতের সময় রুটিন করে নিতেন। রোজা, পড়াশোনা, শিক্ষকতা, অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, জানাযা পড়া ইত্যাদির জন্য রুটিন থাকতো। তাঁদের অনেকে বছরের পর বছর তাকবিরে তাহরিমা মিস না করে জামাতে সালাত পড়েছেন।
৪। নেক আমল বেশি করতে গিয়ে নিজের উপর কঠোরতা আরোপ করা যাবে না। আমরা বুজুর্গ আওলিয়াদের আমল দেখে উৎসাহিত হবো, নেক আমলে ফাঁকি দিবো না। কিন্তু নিজের উপর এত বোঝা চাপাবো না যাতে ইবাদাতে বিরক্তি চলে আসে। মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই পিলারের মাঝে রশি বাঁধা দেখে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। বলা হলো এটা যায়নাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)র। তিনি নফল নামাজ পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে সেটা ধরে উঠাবসা করেন।
রাসূলুল্লাহ রশিটি খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়ে বলেন যতক্ষণ সতেজতা থাকে ততক্ষণ নফল নামাজ পড়তে। (বুখারি, ১০৯৯) বুখারির একটি অধ্যায়ই আছে ‘ইবাদাতে কঠোরতা আরোপ অপছন্দনীয় হওয়া’ নামে।
৫। রুটিনে থাকা ইবাদাত মিস হয়ে গেলে তা ফিল আপ করে নেওয়া। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘুম বা ব্যথার জন্য রাতে নফল নামাজ পড়তে না পারলে দিনে বার রাকাত নফল পড়ে নিতেন।” (আহমাদ, ৬/৯৫) একবার তিনি আসরের পর দুই রাকাত পড়লেন দেখে উম্ম সালামাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) অবাক হন। রাসূলুল্লাহ বললেন বনু আব্দুল কায়েস গোত্রের একটি ডেলিগেট আসায় তাঁর যুহরের পরের দুই রাকাত পড়া হয়নি। তিনি এখন সেটি পড়ে নিলেন। (ফাতহুল বারী, ৩/১০৫)
৬। নেক আমল কবুল হওয়ার আশা আর কবুল না হওয়ার ভয় অন্তরে রাখা। সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও নিজের কমতির কথা ভেবে ভীত হবে। আর আল্লাহর দয়ার কথা ভেবে আশান্বিত হবে। “এবং যারা যা দান করবার, তা ভীত কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে” (সূরা মুমিনুন ২৩:৬০) এ আয়াতের ব্যাপারে আয়শা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কি তাদের ব্যাপারে বলা হলো যারা মদ খায় আর চুরি করে?” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “না রে সিদ্দীকের বেটি! এর নামাজি রোজাদার কিন্তু দান কবুল না হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে। “তারাই কল্যাণ দ্রুত অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী।(আয়াত ৬১)” (তিরমিযি, ৩১৭৫)
৭। বিভিন্ন রকমের নেক আমল করা। কিছহ ইবাদাত শারীরিক, কিছু আর্থিক, কিছু উভয়। নফল ইবাদাতে যারা আগ্রহী, তারা বিভিন্ন রকম সংখ্যা, সময়, পদ্ধতি, ধরণ ও বিধান খুঁজে পাবে। যেমন চার রাকাত সুন্নাত একসাথে মিলিয়ে বা দু রাকাত আলাদা আলাদা পড়া, বিতর সালাত ৫/৭/৯ রাকাত পড়া ইত্যাদি। হয়তো এর পেছনে আল্লাহর হিকমাত হলো বান্দার একঘেয়েমি দূর করা। কিয়ামাতের দিন একেক ইবাদাতকারীকে জান্নাতের একেক দরজা থেকে ডাকা হবে। মুসল্লিকে নামাজের দরজা থেকে, মুজাহিদকে জিহাদের দরজা থেকে, রোজাদারকে রাইয়্যান দরজা থেকে, দানশীলকে দানের দরজা থেকে ডাকা হবে। (বুখারি, ১৭৯৮) অশুভ সমাপ্তির ভয় করা। জীবনে আমল যেভাবে করা হয়, জীবনের শেষটাও সেভাবে হয়। আল্লাহর নাফরমানিতে কাটালে হয়তো মৃত্যু হতে পারে আত্মহত্যার মাধ্যমে। ধারালো জিনিস দিয়ে আত্মহননকারী জাহান্নামে অনন্তকাল নিজেকে ধারালো বস্তু দিয়ে আঘাত করতে থাকবে। তেমনি বিষপানকারী, উঁচু জায়গা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যাকারী অনুরূপ শাস্তি পেতে থাকবে। (মুসলিম, ১০৯) ইবনুল কাইয়্যিম তাঁর দা’ওয়া ওয়াদ্দাওয়া’ গ্রন্থে এমন কিছু কাহিনী বলেছেন যেখানে মৃত্যুশয্যায় শায়িত মানুষ অদ্ভুত অদ্ভুত কারণে কালিমা বলতে পারেনি। এক ব্যক্তি খালি গান শুনতো, তাই গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে মারা যায়। এক ব্যবসায়ীকে কালিমার তালকিন দেওয়া হলে সে বলে, “এই কাপড়টা নিন, আপনাকে মানাবে ভালো।” বাদশাহ নাসিরের এক সৈন্য বলতে থাকে “নাসির আমার রব, নাসির আমার রব।” এক সুদের ব্যাপারী বলতে থাকে, “এগারোয় দশ। এগারোয় দশ।” একজন মৃত্যুশয্যায় বলে বসে “আল্লাহ আমাকে (এই অসুস্থতা দিয়ে) ন্যায়বিচার করলেন না।” লাশের চেহারা কালো হয়ে যাওয়া বা কিবলা থেকে মাথা ঘুরে যাওয়ারও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।
বেশি করে মৃত্যুকে স্মরণ করা। তিরমিযির এক হাদীসে এসেছে স্বাদবিনষ্টকারী (মৃত্যু)কে বেশি করে স্মরণ করতে। মৃত্যুকে স্মরণ করার তিনটি লাভ আছে: দ্রুত তাওবাহ করা যায়, পার্থিব উপকরণ যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা যায় আর ইবাদাতে আগ্রহ পাওয়া যায়। সুন্নাহ ও আদব ঠিক রেখে বেশি বেশি কবর যিয়ারত করা উচিত। শির্কের ভয়ে ইসলামের প্রথম যুগে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ ছিলো। পরে এর অনুমতি দেওয়া হয়। এতে দিল নরম হয়। এমনকি মন নরম করতে কাফিরদের কবর যিয়ারত করাও জায়েয। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মায়ের জন্য দুআ করার অনুমতি চাইলে আল্লাহ অনুমতি দেননি। পরে তিনি তাঁর কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে আল্লাহ অনুমতি দেন, কারণ এতে মৃত্যু স্মরণ হয়। (মুসলিম, ৩/৬৫) কবর যিয়ারত করলে জীবিত যেমন তার ঈমান তাজা করে উপকৃত হয়, মৃতও তেমনি জীবিতের দুআ পেয়ে উপকৃত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এভাবে দুআ করেন, “তোমাদের প্রতি সালাম, হে এখানকার মুমিন মুসলিম অধিবাসীরা। আল্লাহ তাদের রহম করুন যারা আমাদের আগে গেছেন আর যারা পরে যাবে। ইনশাআল্লাহ আমরা শীঘ্রই তোমাদের সাথে মিলিত হবো।” (মুসলিম, ৯৭৪) মৃত্যুকে স্মরণ করার ভালো পদ্ধতি হলো অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, মৃতের জানাযার সালাতে যাওয়া, লাশ বহন করা, কবরে মাটি দেওয়া।
আখিরাতের দৃশ্যপট চোখের সামনে রাখা। অন্তর পরিষ্কার থাকলে অন্তর্চক্ষু দিয়ে মানুষ দেখবে কীভাবে কেয়ামত হচ্ছে, আসমান খুলে যাচ্ছে, মানুষ কবর থেকে উঠে আসছে, মীযান স্থাপিত হচ্ছে, বিচার হচ্ছে, আমলনামা হাতে পাচ্ছে সবাই, (পুল)সীরাত স্থাপিত হচ্ছে, মুমিন তার নূর দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে, নিচে জাহান্নাম দাউ দাউ করে জ্বলছে, তার এক অংশ অপর অংশকে গ্রাস করছে, কত মানুষ হাত পা কেটে সেখানে পড়ে যাচ্ছে। আল্লাহর কিতাব অনেক সূরায় আখিরাতের স্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছে, যেমন- নাবা, ওয়াকিয়া, তাকভীর। হাদীসের গ্রন্থগুলোতেও কিয়ামাহ, রিকাক (হৃদয় বিগলন), জান্নাহ, নার (আগুন) ইত্যাদি অধ্যায় আছে। সালাফগণ শেষ জামানার ব্যাপারে অনেক কিতাব লিখে গেছেন যেমন ইবনে কাসিরের আন-নিহায়া ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম।
প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। আকাশে মেঘ দেখলে আরবরা খুশি হতো। কিন্তু রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর।চেহারা মলিন হয়ে যেতো আযাবের ভয়ে। কারণ সামূদ জাতি আযাব বহনকারী মেঘ দেখে রহমতের বৃষ্টি ভেবে ফূর্তিতে মেতে ছিলো। (মুসলিম, ৮৯৯) বুখারির বর্ণনায় আছে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ ঘটানো হয় মানুষকে ভয় দেখাতে। গ্রহণের সময় রাসূল (সাঃ) দীর্ঘ সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। আযাবপ্রাপ্ত জাতিগুলোর স্থানসমূহ দেখে ভীত হওয়া উচিত। এমন একটি জায়গা দেখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন, “ক্রন্দনরত না হয়ে এ জায়গায় প্রবেশ কোরো না। আর কান্না না আসলে প্রবেশ কোরো না, পাছে তোমরাও আযাবে পাকড়াও হয়ে পড়ো।” (বুখারি, ৪২৩) অথচ এসব জায়গায় আজকাল ট্যুরিস্ট হিসেবে মানুষ যায় আর মজা করে। যিকিরের মাধ্যমে ঈমান তাজা হয়। আল্লাহ বলেন, “মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর (উযকুরুল্লাহা যিকরান কাসিরা)।” (সূরা আহযাব ৩৩:৪১) এক ব্যক্তির কাছে ইসলামের দায়িত্বগুলো খুব ভারী মনে হওয়ায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উপদেশ দেন যিকিরের মাধ্যমে জিহ্বা সিক্ত রাখতে। যিকিরের ফলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, শয়তান দূরীভূত হয়, রিযিকের পথ খুলে যায়, জান্নাতে একেকটা বীজ বপন হয়। গরীব লোকের জন্য দান সদকার সাওয়াব পাওয়ার পদ্ধতি হলো যিকির। দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহ বলেন, “জেনে রাখো, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।” (সূরা রা’দ ১৩:২৮) তাহাজ্জুদ বা কিয়ামুল লাইলের মত ইবাদাতগুলো দুর্বল ঈমানদারদের জন্য খুব কঠিন। যিকির হলো সেসব ইবাদাতের দিকে পথ চলা শুরু করার একটি সহজ সমাধান। দৈনন্দিন যিকিরের একটি app
আল্লাহর প্রতি নিজের মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা। আল্লাহ বলেন, “…এবং সেজদা কর আর নিকটবর্তী হও।” (সূরা আলাক ৯৬:১৯) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “সেজদারর সময় বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। অতএব সে সময় বেশি করে দুআ করো।” (মুসলিম, ৪৮২) {সেজদায় দুআ করার নিয়ম আলেমদের থেকে জেনে নিন} সালাফগণ দুআ করতেন অত্যন্ত সুন্দর ভাষায়। উঁচু পদের মানুষের সাথে বা প্রিয়জনের সাথে কথা বলতে যেভাবে কথা বলেন, তার চেয়ে হৃদয়গ্রাহী শব্দচয়ন করে আল্লাহর কাছে দুআ করুন।
দীর্ঘ জীবনের আশা না করা। আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সামান্যতার কথা চিন্তা করা। “…আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ নয়।” (সূরা আলে ইমরান ৩:১৮৫) দুনিয়ার খাবারকে যত লবণ মশলা দিয়ে সুস্বাদু করা হোক না কেন, বর্জ্য হিসেবেই তা বের হয়। ভালোবাসার মানুষটা তার শরীরও পরিষ্কার না করলে ময়লা হয়ে দুর্গন্ধ হয়। অথচ জান্নাতের নেয়ামত এসব সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত।
আল্লাহর দেওয়া সীমা ও চিহ্নসমূহকে সম্মান করা। “…আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্যে উত্তম…” (সূরা হাজ্জ ২২:৩০) সম্মান প্রদর্শন ব্যক্তি, স্থান বা সময়ের প্রতি হতে পারে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন, কাবার পবিত্রতা রক্ষা, রমাদ্বানের মর্যাদার প্রতি খেয়াল রাখা। আবার সগীরা গুনাহগুলোকে তুচ্ছ না করাও এর অন্তর্গত। সহপাঠীর কলম ধার করে ফেরত না দেওয়ার মত অনেক ছোটখাটো বিষয়ই আমরা এড়িয়ে যাই।
আল-ওয়ালা ওয়াল-বারাআ ঠিক রাখা। অর্থাৎ আল্লাহ, তাঁর রাসূল, দ্বীন ইসলাম ও মুমিনদের সাথে সম্পর্ক ও বন্ধুতা রাখা। আর কাফিরদের সাথে শত্রুতা রাখা ও সম্পর্কচ্ছেদ করা। দ্বীনের শত্রুদের সাথে সম্পর্ক রাখলে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। ঈমানী দুর্বলতার চিকিৎসায় বিনয় ও লজ্জাশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ এটি আল্লাহভীতির সূচক। লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। সাধ্য থাকার পরও অহংকার ও নির্লজ্জতার পোশাক না পরলে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে ঈমানের পোশাক পরাবেন বলে তিরমিযির একটি হাদীসে এসেছে। আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে তাঁর গোলামের থেকে আলাদা করে চেনা যেতো না সাদাসিধা পোশাকের কারণে।
হৃদয়ের কিছু কাজ ঈমানকে মজবুত করে। যেমন- আল্লাহকে ভালোবাসা, ভয় করা, তাঁর উপর আস্থা রাখা, তাঁর দেওয়া তাকদিরে বিশ্বাস রাখা, তওবা করা, শুকরিয়া জানানো ইত্যাদি।
ঈমানের চিকিৎসা পূর্ণতা পাবে কিছু ধাপ অনুসরণ করলে। যেমন- সৎ থাকা, তওবা করা, যিকির করা, কুরআন সুন্নাহ আঁকড়ে থাকা, বিনয়ী হওয়া, অনাড়ম্বর জীবনযাপন করা (যুহ্দ), আল্লাহকে ভয় করা, তিনি সব দেখছেন বলে ইয়াকিন করা। মাদারিজুস সালিকীন গ্রন্থে এই সব ধাপের সুন্দর বর্ণনা আছে।
আত্মসমালোচনা করা। আল্লাহ বলেন, “মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা…” (সূরা হাশর ৫৯:১৮) উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন, “আল্লাহ তোমার হিসাব নেওয়ার আগেই নিজের হিসাব নাও।” তাই একাকী সময় বের করে ভাবুন নিজের আমল নিয়ে।
সর্বোপরি দু’আ। দুনিয়াবি জিনিস যেভাবে আমরা আল্লাহর কাছে চাই, তার চেয়ে গুরুত্ব দিয়ে নিজের ঈমানের পরিশুদ্ধি চাওয়া।
হে আল্লাহ, আপনার আসমা ওয়াস সিফাতের উসিলায় আমাদের অন্তরে ঈমানকে তাজা করে দিন, ঈমানকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দিন। কুফর আর গুনাহকে ঘৃণিত করে দিন।
সহায়ক গ্রন্থ: ঈমানী দুর্বলতা (শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ)
#HujurHoye
জাযাকাল্লাহ