সংবাদ

বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান সিরিয়ায় মানবতার পতাকা সমুন্নত রেখেছে হোয়াইট হেলমেট

প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম পাদপীঠ সিরিয়ায় পাঁচ বছর ধরে চলছে গৃহযুদ্ধ। আগুনে পুড়ছে সভ্যতা, রক্তে ভাসছে লাখো বনু আদম। এই ধ্বংসযজ্ঞের মাঝখানে মানবিকতার পতাকা তুলে ধরেছেন অল্প কিছু মানুষ। যাদের নিয়ে গঠিত দলটির নাম ‘হোয়াইট হেলমেট’ বা সাদা শিরস্ত্রাণ। ব্রিটেন, ডেনমার্ক ও জাপানের আর্থিক সহযোগিতায় ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য গড়ে উঠেছে এই দলটি। একদল সিরিয়ান ও কিছু বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী সবমিলিয়ে দু’হাযার আটশ’ মানুষ এতে কাজ করে। বিদেশী সাহায্য মূলতঃ উদ্ধার সরঞ্জাম ক্রয়েই ব্যবহার হয়। উদ্ধার কার্যক্রমে এ পর্যন্ত দলটির ১১০ জন সদস্য মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচশ’র মতো। তবে এর প্রতিষ্ঠাতা রায়েদ আল-ছালেহ-এর তথ্য অনুযায়ী দলের স্বেচ্ছাসেবীরা এ পর্যন্ত ৪০ হাযারেরও বেশী মানুষকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন।

উদ্ধার কার্যক্রমে তারা কোনভাবেই পক্ষ-বিপক্ষ বিবেচনা করে না। কারণ তাদের নীতিই হ’ল সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াত। যেখানে বলা হয়েছে ‘একটা মানুষকে বাঁচানোর অর্থ গোটা মানবজাতিকে বাঁচানো’। তাই তো ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে তারা যেমন উদ্ধার করে প্রেসিডেন্ট বাশারের পক্ষে লড়তে আসা ইরানী যোদ্ধাকে, তেমনি উদ্ধার করে সরকারবিরোধী ফ্রি সিরিয়ান আর্মির গেরিলাদেরও। তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তারা উদ্ধার করে বেসামরিক মানুষজনকে।

দলে ঢোকার পর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয় স্বেচ্ছাসেবীদের। এরপর তারা দলের আচরণবিধি মানার শপথ নেয়। শপথ হ’ল, ‘কখনোই অস্ত্র হাতে নিব না, নিরপেক্ষতার নীতি কঠোরভাবে মেনে চলব এবং কোন গোত্রপ্রীতি করব না’। এরপর সাদা ইউনিফর্ম ও হেলমেট দেয়া হয় স্বেচ্ছাসেবীদের এবং প্রথম মিশনে পাঠানো হয়। ইদলিব থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবী আবদুল কাফী বলেন, উদ্ধার তৎপরতার সবচেয়ে কঠিন বিষয়টি শারীরিক নয়, বরং মানসিক। এত লাশ ও এত আহত মানুষ এবং তাদের আর্তচিৎকারে নিজেকে ঠিক রাখাই মুশকিল হয়ে পড়ে। আসলে কাউকে খুন করা সহজ, কিন্তু কঠিন হ’ল বাঁচানো।

হোসাম নামের এক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, উদ্ধার অভিযানের অভিজ্ঞতা যে কত করুণ, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। একবার ধ্বংসস্তূপের ভেতরে তিনি একটি মাথা দেখতে পেয়ে ভাবেন, ওটা বুঝি পুতুল। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখেন, ওটা একটা শিশুর মাথা। এ সময় ঐ সন্তানহারা মায়ের বুক ফাঁটা রোদনধ্বনি তার হৃদয় বিদীর্ণ করে দেয়। সব সন্তানকে হারিয়ে ঐ মা বিলাপ করছিলেন, ‘আমার সোনামানিকরা কোথায়?…

উল্লেখ্য, সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলমান গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা চার লাখ ৩০ হাযারের কাছাকাছি।

রক্ত-আগুন ও অশ্রুতে ভেসে যাওয়া প্রাচীন সভ্যতার এক দেশ সিরিয়া। এদেশে কি কখনো শান্তি ফিরবে? স্বেচ্ছাসেবী হোসাম বলেন, আমি জানি না। তবে একটা কথা জানি, যদি কখনো শান্তি ফিরে আসে, তবে আমাদের আবার শুরু করতে হবে শূন্য থেকেই।

মন্তব্য করুন

Back to top button