মোহরানা হিসেবে বই নিয়ে প্রশংসা কুড়াল ভারতীয় মুসলিম তরুণী
ভারতে এক মুসলিম তরুণী নিজের বিয়েতে ব্যতিক্রমী ধরনের মোহরানা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। কেরালার এই তরুণীর নাম সাহলা নেচিলি। তিনি হায়দারবাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। গত ১১ আগস্ট বিয়ে করেছেন তরুণ আনিস নাদুদীকে। বিয়ের কথাবার্তা চুড়ান্ত হওয়ার পর সাহলা শর্ত দেন যে, মোহারানা হিসেবে তিনি প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী স্বর্ণ বা অর্থ নেবেন না। বরং তার পছন্দের একগুচ্ছ বই কিনে দিতে হবে হবু বরকে! কিন্তু বেঁকে বসলেন সাহলা এবং আনিসের দুই পরিবারের সদস্যরাই। সাহলার বাবা-মা প্রথমে গররাজি হলেও এক সময় রাজি হলেন। কিন্তু আত্মীয় স্বজন সবচেয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন।
কিন্তু সাহলা সহজে দমবার পাত্রী নন। তিনি বললেন ধর্ম তাকে যে পছন্দের স্বাধীনতা দিয়েছে তা সমাজ বা আত্মীয় স্বজনরা কেড়ে নিতে পারে না। হাদিস থেকে উদাহরণ দিলেন কিভাবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) তার সময়ে আরবের নারীদেরকে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী মোহরানা ঠিক করার অধিকারের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। নাহলার ইচ্ছা টাকাকড়ি নেবেন না, জ্ঞানের উৎস বই নেবেনে। ফলে কেউ বাধা দেয়ার অধিকার রাখে না।
কনের এমন দৃঢ়তা এবং যুক্তিতে বাকি সবাই হার মানেন। এবং হবু বর বেঙ্গালুরের বহু বইয়ের দোকান খুঁজে কয়েকদিনে যোগাড় করেন সাহলার দেয়া বিরল ও মূল্যবান ৫০টি বই। এরপর বিয়ের সাথে সাথে সেগুলো তুলে দেন নববধুর হাতে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সাহলা বলেন, ‘আমি দুটি কারণে বই চেয়েছি। প্রথমত, এটা আমার শখ। আর মোহরানার ক্ষেত্রে মেয়েদের শখ বা ইচ্ছাতে পুরুষের গররাজি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই সেটি প্রমাণ করতে। আর দ্বিতীয়ত, আমার এলাকা মালাপুরামের অধিবাসীদেরকে, একটা বার্তা দিতে চেয়েছি যে, কাড়িকাড়ি স্বণ বা টাকা লেনদেনের বাইরেও মুসলিমদের একটি সুন্দর বিয়ে হতে পারে।
সাহলার ভাষায়: “ধর্ম আমাদেরকে (নারীদেরকে) আমাদের ইচ্ছানুযায়ী (এই ক্ষেত্রে) সিদাদ্ধ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে। অথচ মেয়েরা ভয়ে তাদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে না বা নিজেরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আনিকে (হবু বর) আমার চাওয়া বইগুলো খুঁজে বের করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। অবশ্য মোহরানার ধারণাটাই হচ্ছে হবু বরকে একটু খাটাখাটনি করিয়ে নেয়া!”