পতিতাবৃত্তি বন্ধ করুন
নির্যাতিত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত নারী সমাজের অধিকার নিশ্চিত করেছে ইসলাম। কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে মেরে ফেলার মত জাহেলী প্রথার মূলোৎপাটন করেছে ইসলাম। ইসলামই দিয়েছে তাদের উত্তরাধিকারের সুমহান মর্যাদা। দিয়েছে মাতৃত্বের চির গৌরব। অথচ সে নারী আজ প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে তাদের অধিকার থেকে। পরিণত হয়েছে পণ্য সামগ্রীতে। আবার এক শ্রেণীর নারী প্রগতির দোহাই দিয়ে নিজেরাই অশালীনতায় মত্ত রয়েছেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন অন্য যেকোন সময়ের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। পত্রিকার পাতা উল্টালেই এরূপ অসংখ্য চিত্র ভেসে উঠে। প্রতিনিয়ত বিদেশে পাচার হচ্ছে অসংখ্য নারী ও শিশু। চাকুরীর লোভ দেখিয়ে ঘর থেকে বের করা হয় এসব নারীদের। কেউবা আবার দারিদ্রে্যর দুঃসহ যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে স্বেচ্ছায় বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসে কাজের সন্ধানে। অথচ এক শ্রেণীর প্রতারকের খপ্পরে পড়ে পাচার হয়ে জীবনের সকল আশা-আকাঙ্খা, চাওয়া-পাওয়া, সুখ-শান্তি নিমেষেই মলান হয়ে যায় তাদের। অবশেষে ঠাঁই হয় দেশ বা বিদেশের কোন পতিতালয়ে। নিজেদের পরিচয় ঘটে পতিতা হিসাবে। আবার অনেকে দাম্পত্য জীবনের সোনালী অধ্যায় থেকে অকস্মাৎ ছিটকে পড়ে হতাশার শিকার হয়ে বাকী জীবনের জন্য বেছে নেয় এ পথকে। কেউবা আবার দারিদ্রে্যর কষাঘাতে হোঁচট খেয়ে স্বেচ্ছায় লিপ্ত হয় এ পেশায়। সরকার অনুমোদিত এ পেশাটি এখন প্রধান শহরগুলোতে জমজমাট রূপ পরিগ্রহ করেছে। এক শ্রেণীর পাচারকারী অধিক মুনাফার লক্ষ্যে কিশোরীদেরও বাধ্য করছে এ পেশায়। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, সরকারী হিসাব অনুযায়ী দেশের ১৮টি অনুমোদিত পতিতালয়ে বর্তমানে ৮০ হাযারের অধিক শিশু পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত রয়েছে। যাদের বয়স ১১ থেকে ১৪ বছর। অবশ্য বেসরকারী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী পাঁচ লাখ। অন্য এক জরীপে প্রকাশ, বাংলাদেশ থেকে প্রতিমাসে বিদেশে পাচার হয় ৫০০ নারী। বিশ্বের বিভিন্ন পতিতালয়ে ঠাঁই হয় এদের অধিকাংশের। দুর্বিসহ এ জীবন থেকে উদ্ধার পেয়ে আর কখনো স্বদেশের মাটিতে পা রাখার সৌভাগ্য হয় না তাদের। এভাবেই জীবন প্রদীপ নিভে যায় একদিন। রিপোর্টে প্রকাশ, কেবল পাকিস্তানেই গত ১০ বছরে পাচার হয়েছে প্রায় দু’লাখ নারী।
যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগঠিত হবার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ‘কোয়ালিশন এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন উইমেন’ (সিএটিডব্লিউ) বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ঢাকার হোটেল শেরাটনে গত ২৭ থেকে ২৯ জানুয়ারী যৌন নিপীড়ন বিরোধী বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশের ৫৬ জন প্রতিনিধি এ সম্মেলনে যোগদান করেন। সম্মেলনে বক্তাগণ পতিতাবৃত্তি সিদ্ধকরণকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করে এ পেশা বন্ধের দাবী জানান। তারা সুইডেন ও ভেনেজুয়েলার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘দেশ দু’টি রাষ্ট্রীয়ভাবে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ করেছে এবং এর জন্য শাস্তি ও জরিমানাও নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি পতিতাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। কাজেই তাদের নিকট থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে’। তাদের এ দাবী ও বক্তব্যকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং অবিলম্বে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ করা ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তা কার্যকর করার জোর দাবী জানাই। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে শেরাটন ছেড়ে নিষিদ্ধ পল্লীতে সিএটিডব্লিউ প্রবেশ করবে- এ প্রত্যাশা আমাদের।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। আড়াই বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধাও এ দেশে নিরাপদ নয়। খুন-খারাবী-সন্ত্রাস মামুলী ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। মানুষের মাথা কেটে জনসমক্ষে ফুটবল খেলার মত লোমহর্ষক ঘটনাও ঘটল কিছুদিন আগে কুমিল্লায়। মুসলিম দেশের মুসলিম শাসকগণ পতিতাবৃত্তির মত একটি ঘৃণ্য ও জঘন্য পেশাকেও রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। ডিশ এন্টেনার অনুমোদনের মাধ্যমে যুব চরিত্র ধ্বংসের সুযোগ করে দিয়েছেন। অশ্লীল পত্র-পত্রিকা, দেয়ালে দেয়ালে অশ্লীল পোষ্টারিং ও প্রেক্ষাগৃহে নীল ছবি প্রদর্শন ইত্যাদি চরিত্র বিধ্বংসী কার্যনম বন্ধেও সরকারের কোন তৎপরতা নেই। নেই সামাজিক তাগিদও। মানুষকে নিয়েই সমাজ, আর সেই মানুষ বিশেষ করে তরুণ শ্রেণী যদি এভাবে ধ্বংস হয়ে যায় তাহ’লে সুন্দর সমাজ গড়ার আশা করা কেবল বৃথা রাজনৈতিক শ্লোগান নয় কি?
ক্রমাবনতিশীল এ সমাজকে বাঁচাতে হ’লে এবং স্বচ্ছ, সুস্থ ও সুশৃঙ্খল সমাজ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হ’লে সর্বাগ্রে বেহায়াপনা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। পতিতাবৃত্তি সরকারীভাবে নিষিদ্ধ করে এসব পতিতাদের পুনর্বাসন করতে হবে এবং সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর এজন্য বিত্তবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন!
ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯।