সংবাদ

পিস টিভি বন্ধ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া

প্রখ্যাত ধর্মপ্রচারক জাকির নায়েকের পিস টিভির কার্যক্রম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর পিস টিভির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। গত ৪ জুলাই ডেইলি স্টার মিলিট্যান্ট ফলোয়ড আইএস রিক্রুটার, কন্ট্রোভার্সিয়াল পিচার শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নেয়া নিবরাস ইসলাম টুইটারে জাকির নায়েককে অনুসরণ করতেন। নিবরাস ইসলাম ভারতের নায়িকা শ্রদ্ধা কাপুরকেও অনুসরণ করতেন এবং তার সাথে একটি নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সে ছবি তার ফেসবুক পাতায় ছিল। 

জাকির নায়েককে অনুসরণ করার খবর বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশের পর তা ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এরপর ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো সন্ত্রাসবাদের উসকানির অভিযোগ এনে দুবাইভিত্তিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল পিস টিভি বন্ধের দাবি তোলে। বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয় ভারত সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয় ভারত সরকার। ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তা কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছে। 

এ দিকে সৌদি আরবে ওমরাহ ও একটি ধর্মীয় আলোচনায় অংশ নিতে যাওয়া জাকির নায়েক এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন তিনি সন্ত্রাসের নিন্দা করেন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে উসকানি দেয়ার কোনো অভিযোগ প্রমাণ করা যাবে না। তিনি বাংলাদেশের ডেইলি স্টার তার বিরুদ্ধে ভুয়া খবর প্রকাশ করছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, বলা হয়েছে আমি মালয়েশিয়ায় নিষিদ্ধ। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকারের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক পদক তিনি পেয়েছেন। তিনি মালয়েশিয়ার কমপক্ষে ১৩ জন মন্ত্রীর সাথে তিনি বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া ব্রিটেনে তৎকালীন রক্ষণশীল সরকার তাকে ভিসা দেয়নি। এটা একান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। 
এ দিকে বাংলাদেশে বিভিন্ন মহল থেকে পিস টিভি বন্ধের দাবি জানানো হচ্ছে। জাকির নায়েক বলেন, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ তাকে চিনে এবং ৫০ শতাংশ মানুষ তার ভক্ত। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও গতকাল বলেছেন, জাকির নায়েক ও পিস টিভি বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়, তদন্ত করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

ভারতের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এম ভেনকাইয়া নাইড়– ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘আমি তার (নায়েক) বক্তৃতা ও টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখেছি। আমার কর্মকর্তাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করেছি। এটি আমাদের দেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্প্রীতির জন্য উদ্বেগজনক’।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, অনুমতিহীন চ্যানেল প্রচারকারী ক্যাবল অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পিস টিভিতে প্রচারিত জাকির নায়েকের বক্তব্যগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর পর দেশটির সম্প্রচার নীতিমালার বিভিন্ন ফাঁকফোকর বেরিয়ে এসেছে। দেখা গেছে, ভারতে পিস টিভি সম্প্রচারের লাইসেন্স না থাকলেও ক্যাবল অপারেটরদের সহায়তায় চ্যানেলটি নির্বিঘ্নে সম্প্রচারিত হচ্ছে।

এ দিকে পূর্ব সতর্কতার অংশ হিসেবে জাকির নায়েক প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অফিসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, এ ব্যাপারে রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার কেউ-ই তাদের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই তারা পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ দিকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাড়নাবিস পিস টিভি ও অনলাইনে জাকির নায়েকের বক্তৃতা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিজেপি এমপি মহেশ গিরি জাকির নায়েকের সংস্থা ও টেলিভিশন চ্যানেলের আর্থিক বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখেছেন।

মন্তব্য করুন

Back to top button