ঢেউয়ের মিনার
হযরত আবদুল্লাহ।
এক মহান সৈনিক।
তার চোখে থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসতো সত্যের দ্যুতি। সু্ন্দরের ঔজ্জ্বল্য। আবদুল্লাহর ইসলামেরজন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন।
উৎসর্গ করেছিলেণ আল্লাহ এবং রাসূলের (সা) মহব্বতে। তাদের ভালোবাসায়।
আবদুল্লাহর সেই ভালবাসায় কোনো খাঁদ ছিল না। ছিল না কোনো কৃত্রিমতা।
কী এক গভীর ভালোবাসায় পিতার দশ বছর আগেই হযরত আবদুল্লাহ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করলেন।
আবদুল্লাহর পিতার নাম আমর।
আমরও পুত্রের ইসলাম গ্রহণের দশ বছর পর ইসলাম কবুল করলেন।
পিতা এবং পুত্র- দু’জনই এখন ইসলামের খাদেম।
আল্লাহ েএবং রাসূলের (সা) জন্য, ইসলামের জন্য নিজেদের জানমালকে উৎসর্গ করলেন।
দু’জনই মক্কা বিজয়ের পূর্বে মদিনায় হিজরত করলেন।
ইসলাম গ্রহণের পর আবদুল্লাহ তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় রাসূলের (সা) সাহচর্যে ব্যয় করেন।
তিনি লেখাপড়া জানতেন।
এজন্য রাসূলের কাছে থাকা অবস্থায় দয়ার নবীজী যখনই বলতেন, তিনি সাথে সাথেই তা লিখে রাখতেন। হোক না তা রাসূলের (সা) রাগান্বিত কিংবা শান্ত অবস্থায়।
কোনো কোনো সাহাবী আবদুল্লাহকে বলতেন, রাসূল (সা) স্বাভাবিক বা শান্ত অবস্থায় যা বলেন সেটা লেখ। কিন্তু তাঁর রাগান্বত অবস্থার কথাগুলো কি লিখে রাখা ঠিক এমনটি না করাই ভাল।
বিষয়টি রাসূল (সা) জানার পর তিনি বললেন, কেন লিখবে না? অবশ্যই লিখবে। আমার সকল কথাই তুমি হুবহু লিখতে পার। কারণ, সত্য ছাড়া আমি আর কিছুই বলিনে, বলতে পারিনে।
এই হলো আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলের (সা) চরিত্র।
কী অপরিসীম জোছনার পেলব!
কী তার রূপ-বৈচিত্র্য!
যিনি, যে মহান সেনাপতি এমন হন, সঙ্গত কারণে তাঁর সৈনিক বা সাথীদের চরিত্রও কলুষমুক্ত, ভয়হীন, স্বপ্ন জাগানিয়া হওয়াই স্বাভাবিক।
আবদুল্লাহও ছিলেন এমনি এক সাহসী সৈনিক।
তিনি সত্য ছাড়া আর কিছুই বুঝতেন না।
আবদুল্লাহ রাসূলের (সা) সান্নিধ্যে এমনভাবে ছিলেন, যেন মৌচাকে বসে আছে এমন মৌমাছি।
দয়ার নবীজীও (সা) আবদুল্লাহকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন। তাকে গুরুত্বও দিতেন সমান।
আব্দুল্লাহ তার পিতার চেয়েও বেশি ভালবাসা পেয়েছেন রাসূলের (সা)।কেন পাবেন না।
আবদুল্লাহ প্ররয় সারাক্ষণই রাসূলের (সা) সান্নিধ্যে থাকতেন। এরপরও যদি একটু সময় পেতেন, সেটুকু তিনি ব্যয় করতেন দিনে রোজা রেখে এবং রাতে নামায আদায়ের মাধ্যমে।
তিনি আল্লাহর ইবাদাতে এত বেশি মগ্ন হয়ে যেতেন যে, নিজের দুনিয়াবী সকল চাওয়া-পাওয়া, আহার-নিদ্রা, এমনকি স্ত্রী, সন্তানস, পরিবারও তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যেত।
তিনি অন্য কোনো দিকে খেয়াল করার ফুরসতটুকু পেতনে না।
ছেলের এমন অবস্থা দেখে আবদুল্লাহর পিতা একবার রাসূলের (সা) কাছে জানালেন সকল কিছু। জানালেন পুত্র আবদুল্লাহর এমনি নির্মোহ ও নিরাসক্তির কথা।
রাসূল (সা) সবকিছু শুনে আবদুল্লাহকে ডেকে বললেন,
‘আবদুল্লাহ! রোজা রাখো, ইফতার করো, নামাজ পড়, বিশ্রাম নাও এবং স্ত্রী-পরিজনের হকও আদায় করো। এটাই হলো আমার তরীকা। যে আমার তরীকা প্রত্যাখ্যান করবে সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য হবে না।’
রাসূলের (সা) নির্দেশ বলে কথা!
আবদুল্লাহ রাসূলের (সা) নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন।
হযরত আবদুল্লাহ স্বভাবে অত্যন্ত সাহসী।
রাসূলের (সা) যুগে যতগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, প্রত্যেকটিতে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন।
যুদ্ধের জন্য তার ওপর অর্পিত হতো সোয়ারী পশুর ব্যবস্থা ও জিনিসপত্র পরিবহনের দায়িত্ব।
তিনি এ দায়িত্ব অত্যন্ত যত্ন ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইয়ারমুকের যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে হযরত ওমর ইবনুল আস তার নেতৃত্বের ঝান্ডা তুলে দেন আবদুল্লাহর হাতে। আবদুল্লাহ এই নেতৃত্বের ঝান্ডার মর্যাদা রক্ষা করেন।
এই দুঃসাহসী সৈনিক, জ্ঞানের দিক দিয়ে আবার ছিলেন শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। মাতৃভাষা আরবি ছাড়াও তিনি জানতেন হিব্রু ভাষা। হিব্রু ভাষায় তিনি ছিলেন সুপন্ডিত।
জিহাদের ময়দানে সকল সময় আবদুল্লাহকে প্রথম সারিতে দেখা যেত।
আবার জিহাদ শেষ হলেই দেখা যেত আবদুল্লাহকে মসজিদের নামাজে প্রথম কাতারে।
এভাবেই আল্লাহ, রাসূল (সা) এবং ইসলামের ভালোবাসায় সারাটি জীবন অতিবাহিত করেছেন আবদুল্লাহ।
আবার জিহাদ এবং ইবাদত সকল ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অগ্রগামী।
মহান রাব্বুল আলামীন এমনই জীবনই তো চান।
অধিক পছন্দ করেন তিনি এমন সমর্পিত বান্দাকে।
হযরত আবদুল্লাহ!
কী এক অসামান্য সফল জীবন!
যেন আলোকিত এক ঢেউয়ের মিনার!
– মোশাররফ হোসেন খান