সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

গাদ্দাফী, সাম্রাজ্যবাদ ও লিবিয়ার রক্তাক্ত জনগণ


ফাহমিদ-উর-রহমান

কর্নেল মুআম্মার আল-গাদ্দাফীকে নিয়ে এক সময় তৃতীয় বিশ্বসহ আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বিশেষ উৎসাহ ও আবেগ লক্ষ্য করেছি। গাদ্দাফী তাঁবুতে রাত কাটান, দেশের সব মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করে তিনি তার জন্য বরাদ্দকৃত সরকারী বাসায় উঠবেন না এরকম কথা বহুবার শুনেছি। তার চিন্তা-ভাবনার আকরগ্রন্থ ‘গ্রিনবুক’, তার বহুকথিত ইসলামিক সোস্যালিজম, তার আধা সমাজতন্ত্র ও আধা ইসলামের মিশেল দেয়া জাতীয়তাবাদী দর্শন, ফিলিস্তীনসহ তাবৎ মযলূম মানুষের প্রতি তার অকুণ্ঠ সমর্থন তাকে এক সময় তৃতীয় বিশ্বের মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে। ১৯৭৪ সালে লাহোরে ওআইসির সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের আণবিক প্রযুক্তি অর্জনের পক্ষে দৃঢ় মতামত দেন, যা দেখে কৃতজ্ঞ লাহোরের মানুষ গাদ্দাফীর সম্মানে সেখানকার ক্রিকেট ভেন্যুর নাম ‘গাদ্দাফী স্টেডিয়াম’ রাখেন। শোনা যায় পাকিস্তানের আণবিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য তিনি তখন প্রচুর টাকা-পয়সা দিয়েও সাহায্য করেন।
খুব তরুণ বয়সে ১৯৬৯ সালে গাদ্দাফী লিবিয়ার ক্ষমতায় আসেন। এর আগে তিনি ছিলেন সেখানকার সামরিক বাহিনীর অফিসার। সামরিক বাহিনীতে থাকাকালীন তিনি মিসরের জামাল আবদুন নাছেরের আরব জাতীয়তাবাদের ভক্ত হয়ে পড়েন এবং নাছেরের সমর্থনপুষ্ট ফ্রি অফিসারদের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। ইসরাঈলের কাছে আরবদের মর্মান্তিক পরাজয় এসব অফিসারদের মনোগঠনে সেই সময় বড় ভূমিকা রেখেছিল এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এক ভাবাদর্শে তারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এভাবে গাদ্দাফী নাছেরের সহযোগিতায় এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ার রাজা ইদরীসকে উৎখাত করেন এবং লিবিয়াকে জ্যামহূরিয়া (Republic) ঘোষণা করেন। তিনি নিজের অভ্যুত্থানকে বলেন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং সবার কাছে নিজেকে প্রেসিডেন্টের বদলে ‘ব্রাদার গাদ্দাফী’ হিসাবে পরিচয় দিতে আগ্রহ দেখান।
রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করলেও গাদ্দাফী কিন্তু কোন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা লিবিয়ায় বিকশিত হ’তে দেননি এবং সেখানে কোন বিরোধী দলের অস্তিত্বও রাখেননি। অনেকটা কমিউনিস্ট দেশের অনুকরণে বিপ্লবী কাউন্সিল গঠন করে তিনি দেশ চালান। যেখানে গাদ্দাফী ও তার গুটিকয়েক পরিষদের কথাই চূড়ান্ত। বিপ্লবী কাউন্সিলের আড়ালে কার্যত গাদ্দাফী নতুন এক ধরনের একনায়কতন্ত্রই প্রতিষ্ঠা করেন। গাদ্দাফী একবার বলেছিলেন, কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করলে মৃত্যুই হবে তার পুরস্কার।
কিন্তু বাইরে ইসরাঈল বিরোধিতা, ফিলিস্তীন ইস্যুর প্রতি জোরালো সমর্থন, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান অব্যাহত থাকে। গাদ্দাফী এ সময় দেশে-দেশে বিভিন্ন স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন জোগান। কিন্তু পশ্চিমারা একে বলে নাশকতামূলক কাজ। কারণ এতে তাদের স্বার্থে বিঘ্ন ঘটে। গাদ্দাফীর সঙ্গে পশ্চিমের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার এটা একটা অন্যতম কারণ। সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম দিকে তিনি পশ্চিমা তেল কোম্পানীগুলোকে তাদের ইচ্ছামত সুবিধা দিতে সম্মত হননি।
নাছেরের মৃত্যুর পর গাদ্দাফী আরব জাতীয়তাবাদের শ্লোগান তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন আরব দেশকে একসঙ্গে জুড়ে ‘ফেডারেশন অব আরব রিপাবলিক’ গঠন করার চেষ্টাও করেন। কিন্তু আরব নেতাদের কোন্দল, পারস্পরিক প্রতিহিংসা তার সে চেষ্টা সফল হ’তে দেয়নি। ১৯৮০-৯০-এর দশকে গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে পশ্চিমারা ক্ষেপে যায়, লকারবি বিমান দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে দুই কথিত লিবীয়কে তাদের কাছে হস্তান্তরে অস্বীকার করায়। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা লিবিয়ায় অবরোধ আরোপ করে, বিমান আক্রমণ চালায় এবং সেই আক্রমণে গাদ্দাফীর পালিত পুত্র মারা যায়।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, গাদ্দাফী তার পশ্চিম বিরোধী ভাবমূর্তি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি। অন্যদিকে ক্ষমতা গ্রহণের প্রাথমিক অবস্থায় তৃতীয় বিশ্বে তার যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ছিল শেষ পর্যন্ত দল ও পরিবারতন্ত্রের কারণে তাও অনেকখানি ম্লান হয়ে যায়। তৃতীয় বিশ্বের অনেক জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকের ভাগ্যে এরকমই ঘটেছে এবং তারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা থেকে সাম্রাজ্যবাদের স্রেফ মোসাহেবে পরিণত হয়েছেন। ইতিহাসের রঞ্জিত দেয়ালে গাদ্দাফীকে হয়ত আমরা এভাবেই পাঠ করব।
উপসাগরীয় যুদ্ধে মার্কিন বিরোধীদের পরিণতি এবং নিজের দেশের ওপর পশ্চিমা অবরোধের মুখে সম্ভবত গাদ্দাফী তার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা ত্যাগ করেন। নেলসন ম্যান্ডেলার দূতিয়ালি মেনে নিয়ে লকারবি বিমান দুর্ঘটনায় অভিযুক্তদের ব্রিটেনের কাছে ফেরত ও দুর্ঘটনায় স্বজনহারাদের কিছু সংখ্যককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে তিনি পশ্চিমাদের সঙ্গে আপোষ করেন। শুধু তাই নয়, লিবিয়ার তেলের ব্যাপারে পশ্চিমাদের সুবিধা দিতেও তিনি অবলীলায় সম্মত হয়ে যান। অন্যদিকে পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খান নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তর কোরিয়া ও ইরানের পাশাপাশি লিবিয়াকেও পারমাণবিক প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। আপোষকামিতার জোয়ারে গাদ্দাফী সেটিও পশ্চিমাদের হাতে তুলে দেন। এজন্য আবদুল কাদির খানকে পশ্চিমাদের হাতে কি রকম হেনস্তা হ’তে হয়েছিল তা অনেকের জানা থাকার কথা।
ক্ষমতা মানুষকে দুর্বিনীত, দুর্নীতিগ্রস্ত, শেষ পর্যন্ত ক্ষমতান্ধ করে দেয়। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষ তার বিশ্বাসকে শেষ পর্যন্ত কিভাবে কুরবাণী করতে পারে গাদ্দাফী হয়তবা তার একটা বড় উদাহরণ হ’তে পারেন। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এভাবে ‘বিপ্লবী’ গাদ্দাফীর নৈতিক মৃত্যু ঘটে। আজ যে গাদ্দাফীকে আমরা দেখছি, তা কিন্তু ১৯৭০-এর দশকের বিপ্লবী গাদ্দাফী নন, একুশ শতকের নৈতিকভাবে অবক্ষয়িত এক গাদ্দাফী। গাদ্দাফীর মোসাহেবি এতদূর পৌঁছেছিল যে পশ্চিমারা কিছুদিন আগে তাকে UN Commission on the Human Rights-এর চেয়ারম্যান পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল এবং ধীরে ধীরে তিনি পশ্চিমাদের কাছে ‘সুশীল’, ‘আধুনিক’ ও ‘গুডবয়’ নেতা হয়ে উঠবার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
আজকে গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। সেই অপরাধের শাস্তি বিধান করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা দল বেঁধে আকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে লিবিয়ার জনগণকে রক্তাক্ত করে চলেছে। যে মানুষটি পশ্চিমের অনুমোদনে ক’দিন আগেও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন, তার বিরুদ্ধেই আজ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। পশ্চিমাদের ভন্ডামি, প্রতারণা, মিথ্যাচার কতদূর পৌঁছেছে এটা তার বড় প্রমাণ।
বিপ্লবী থেকে অনুগত গুডবয়ে পরিণত গাদ্দাফীর বিরুদ্ধে তাহ’লে পশ্চিমারা উঠে পড়ে লাগল কেন? এর উত্তর গাদ্দাফী নিজেই। ক্ষমতারোহণের প্রথম দিকে দেশের মানুষের কল্যাণে তিনি অনেক কিছু করেছেন এবং সাম্রাজ্যবাদের ওপর নির্ভরতা এড়িয়ে চলার চেষ্টাও তার ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে গিয়ে তিনি একজন গোত্রীয় শাসকে পরিণত হন। তার পরিবার ও নিজের লোকজনের যথেচ্ছাচার, দুর্নীতি, অহমিকা এখন বহুল আলোচিত বিষয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গাদ্দাফীর জনপ্রিয়তা এখন নীচে নেমে এসেছে। অন্যদিকে লিবিয়ার জনগণের মধ্যে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করার সামর্থ্য গাদ্দাফীর আদৌ নেই। পশ্চিমের সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো এ সুযোগটিই পুরোপুরি গ্রহণ করেছে। আরব বিশ্বে আজ যে গণঅভ্যুত্থান ঘটছে, তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লিবিয়ার জনগণ মাঠে নেমেছে। কিন্তু পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা লিবিয়ার জনগণের এ আকাঙ্ক্ষাকে পুঁজি করে ক্ষয়িষ্ণু গাদ্দাফীকে সরিয়ে দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নামে নতুন একজন গুডবয়কে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। যে কিনা সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ ষোলআনা পূরণ করবে এবং কিছুদিন তথাকথিত ক্লিন ইমেজের আড়ালে এই শাসক সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থাকে নির্বিঘ্ন হ’তে সাহায্য করবে। এই ‘গণতান্ত্রিক’ শাসকের সহায়তায় সাম্রাজ্যবাদীরা লিবিয়াকে একটি লুণ্ঠন ক্ষেত্রে পরিণত করবে এবং দেশটির তেল সম্পদ পুরোপুরি সাম্রাজ্যবাদীদের করায়ত্ত হবে। আজকে লিবিয়ায় যে বা যারা স্বৈরাচারী গাদ্দাফীকে সরানোর জন্য সাম্রাজ্যবাদকে আহবান করছে, তারা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খাল কেটে কুমিরই ডেকে আনছে।
আর এ কারণেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আফগানিস্তান ও ইরাকের পরে লিবিয়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং নির্বিচারে গণহত্যায় মেতে উঠেছে। অথচ সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়া এমনভাবে প্রপাগান্ডা শুরু করেছে, যাতে মনে হ’তে পারে যাবতীয় গণহত্যা কেবল গাদ্দাফী ও তার লোকজনের দ্বারাই হচ্ছে এবং গাদ্দাফীর মত নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক দুনিয়ার বুকে আর একটিও  নেই।

লিবিয়ার তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এই যুদ্ধের আর একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বর্তমান অফিসিয়াল পলিসি ‘সভ্যতার সংঘাত’ তত্ত্ব কার্যকর করা। কমিউনিজমের পতনের পর থেকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এক এক করে ইসলামপ্রধান দেশগুলোর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে এবং জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি আকথা, কুকথা বলে মুসলিম দেশগুলোকে কারবালায় পরিণত করছে। এর একটাই কারণ, পশ্চিমা পুঁজিবাদী আদর্শের বিপরীতে ইসলামকে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং একটি সুগঠিত মতাদর্শ হিসাবে ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের বিকল্প হিসাবে ইসলামের অভ্যুত্থানকে ঠেকানো। সাম্রাজ্যবাদ এ সময় শুধু অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যই বিস্তার করছে না, বরং এটি রীতিমত সাংস্কৃতিক রূপ পরিগ্রহ করেছে। এ কারণে ইসলামকে ‘সভ্যতার দুশমন’ বানিয়ে হাঁকডাক দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ দাবী করছে তারা নাকি ইসলামী জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ইসলামী দুশমনদের হাত থেকে সভ্যতাকে রক্ষার জন্য সাম্রাজ্যবাদের এই তথাকথিত যুদ্ধ আসলে একটা বর্ণবাদী যুদ্ধও বটে। মুসলিম বিশ্বের শাসক যারা তাদের অধিকাংশই আজ সাম্রাজ্যবাদের পো-ধরা, দুর্নীতিগ্রস্ত, অযোগ্য, একই সঙ্গে স্বৈরাচারী। দেশের জনগণের ও ধর্মের জন্য এদের আদৌ কোন দরদ ও প্রতিশ্রুতি নেই। এ কারণে সাম্রাজ্যবাদকে মোকাবিলা করা এবং নিজ নিজ দেশকে সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবমুক্ত রাখা এদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। কেবল এসব দেশের জনগণের মধ্যে এক বৈপ্লবিক মৈত্রী ও জনগণকে নিয়ে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এক মতাদর্শিক লড়াই ছাড়া বিদ্যমান সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা রূপান্তর সম্ভব নয়। এসব দেশের জনগণের মধ্যে এক গণঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমেই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতি বিকাশের পথ সুগম করা সম্ভব। কারণ জনগণের অনৈক্যই সাম্রাজ্যবাদের বড় হাতিয়ার। গণঐক্য প্রতিষ্ঠাই এ মুহূর্তে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর রণকৌশল।


মন্তব্য করুন

Back to top button