মনীষী চরিত

ইবনু মাজাহ (রহঃ) – ১

হিজরী তৃতীয় শতক ছিল হাদীছ সংকলনের স্বর্ণযুগ। কুতুবুস সিত্তার সবগুলো গ্রন্থই এ শতকে সংকলিত হয়েছে। আর এ কুতুবুস সিত্তার অন্যতম একটি গ্রন্থ হ’ল ‘সুনানু ইবনি মাজাহ’। শুধু ইবনু মাজাহ নয়, বরং তিনি মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ تفسير القرآن الكريم এবং তত্ত্ব ও তথ্যনির্ভর ইতিহাসগ্রন্থ تاريخ مليح প্রণয়ন করে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন। আলোচ্য নিবন্ধে ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং ইলমে হাদীছে তাঁর অনন্য সংকলন সুনানে ইবনু মাজাহ সম্পর্কে আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

নাম ও পরিচিতি :

ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর প্রকৃত নাম মুহাম্মাদ।[1] পিতার নাম ইয়াযীদ,[2] উপনাম আবু আব্দুল্লাহ,[3] উপাধি الحافظ الكبير (আল-হাফিযুল কাবীর),[4] নিসবতী নাম আর-রাবঈ,[5] আল-কাযভীনী।[6] তিনি ইবনু মাজাহ নামেই সমধিক পরিচিত।[7] তাঁর পুরো বংশপরিক্রমা হ’ল-

الحافظ الكبير المفسر أبو عبد الله محمد بن يزيد بن عبد الله بن ماجه الربعي القزويني

‘আল-হাফিযুল কাবীর আল-মুফাসসির আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাজাহ আর-রাবঈ আল-কাযভীনী’।[8]

ইবনু মাজাহ-এর ‘মাজাহ’ নামটি কার উপাধি, এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মাজাহ তাঁর পিতার উপাধি, আবার কেউ বলেন, তাঁর দাদার উপাধি।[9]

এ মতবিরোধ নিরসনকল্পে ‘তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত ফিল কামূস’ গ্রন্থের প্রণেতা বলেন,لقب والده لا جده والصحيح هو الأول ‘মাজাহ তাঁর পিতার উপাধি, দাদার নয়। আর বিশুদ্ধ অভিমত হ’ল প্রথমটি’।[10]

শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) ‘বুসতানুল মুহাদ্দিছীন’ গ্রন্থে লিখেছেন, মাজাহ ছিল তাঁর মায়ের নাম। তিনি আরো বলেন, ইবনু মাজাহ মুহাম্মাদের ছিফাত, আব্দুল্লাহর নয়।[11]

তিনি ২০৯ হিজরী মোতাবেক ৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের প্রসিদ্ধ শহর কাযভীনে জন্মগ্রহণ করেন।[12] মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলীফা ওছমান বিন আফফান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে এ শহরটি বিজিত হয়।[13] এ শহরের প্রথম গভর্ণর বা প্রশাসক ছিলেন বিশিষ্ট ছাহাবী বারা ইবনু আযেব (রাঃ)।[14]

শিক্ষাজীবন :

ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) নিজ দেশেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন করেন। এরপর তিনি কুরআনুল কারীম হিফয সম্পন্ন করেন।[15] অতঃপর উচ্চশিক্ষা অর্জন এবং হাদীছ সংগ্রহের জন্য তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ ও জনপদের যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছদের দ্বারস্থ হয়েছেন। ইমাম ইবনু মাজাহ ২৩০ হিজরী মোতাবেক ৮৪৪ খ্রীষ্টাব্দে ২২ বছর বয়সে হাদীছ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শহরের মুহাদ্দিছগণের নিকটে গমন করেন।[16]

আল্লামা আবু যাহু ‘হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন’ গ্রন্থে লিখেছেন,

وارتحل لكتابة الحديث وتحصيله إلى الري، والبصرة، والكوفة وبغداد، والى الشام ومصر والحجاز، وأخذ الحديث عن كثير من شيوخ الأمصار-

‘ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) হাদীছ লিপিবদ্ধকরণ এবং শিক্ষার্জনের জন্য রায়, বছরা, কূফা, বাগদাদ, সিরিয়া, মিসর, হেজায প্রভৃতি দেশ ও জনপদে ভ্রমণ করেন এবং বহু মনীষীর নিকট থেকে হাদীছ সংগ্রহ করেন।[17]

আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ও নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী তাদের গ্রন্থে লিখেছেন,

ارتحل إلى العراق والبصرة والكوفة وبغداد ومكة والشام ومصر والري لكتابة الحديث،

অর্থাৎ ‘হাদীছ সংগ্রহের জন্য ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) ইরাক, বছরা, কূফা, বাগদাদ, মক্কা, সিরিয়া, মিসর, রায় প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন’।[18]

ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,سمع بخراسان والعراق والحجاز ومصر والشام وغيرهما من البلاد ‘তিনি খোরাসান, ইরাক, হেজায, মিসর, সিরিয়া প্রভৃতি দেশের মনীষীদের নিকট থেকে হাদীছ শুনেছেন’।[19] হাদীছ সংগ্রহের জন্য কষ্টকর দেশ ভ্রমণের পরে তিনি ১৫ বছরের অধিক সময় ইলম চর্চায় নিমগ্ন থাকেন।[20]

শিক্ষকমন্ডলী :

ইবনু মাজাহ (রহঃ) দেশ-বিদেশের অনেক মনীষীর নিকট শিক্ষাগ্রহণ ও হাদীছ সংগ্রহ করেছেন। তাঁর অসংখ্য উস্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’লেন- হাফেয আলী ইবনু মুহাম্মাদ আত-তানাফিসী, জুরারাহ ইবনুল মুগাল্লিস, মুসয়াব ইবনু আব্দুল্লাহ আয-যুবাইরী, সুয়াইদ ইবনে সাঈদ, আব্দুল্লাহ ইবনু মু‘আবিয়া আল-জুমাহী, মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ, ইবরাহীম ইবনুল মুনযির আল-হিফমী, মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনে নুমাইর, আবু বকর ইবনু আবু শায়বা, হিশাম ইবনু আম্মার, ইয়াযীদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইয়ামামী, আবু মুছ‘আব আয-যুহরী, বিশর ইবনু মু‘আয আল-আকাদী, হুমাইদ ইবনু মাসয়াদা, আবু হুযাফা আস-সাহমী, দাঊদ ইবনু রুশাইদ, আবু খায়ছামা, আব্দুল্লাহ ইবনু যাকওয়ান আল-মুকবেরী, আব্দুল্লাহ ইবনু আমের ইবনে বাররাদ, আবু সাঈদ, আল-আমাযা, আব্দুর রহমান ইবনু ইবরাহীম দুহাইম, আব্দুস সালাম ইবনু আছেম আল-হিসিনজানী, ওছমান ইবনু আবু শায়বা প্রমুখ।[21]

বহু মুহাদ্দিছের নিকট থেকে হাদীছ শিক্ষাগ্রহণ ও সংগ্রহ করলেও ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) তাঁর সবচেয়ে প্রিয়তম উস্তাদ আবু বকর ইবনু আবু শায়বার নিকট থেকে সবচেয়ে বেশী উপকৃত হয়েছেন।[22]

ছাত্রবৃন্দ :

ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর অসংখ্য ছাত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’লেন ইবরাহীম ইবনু দীনার আল-হাওশাবী, আহমাদ ইবনু ইবরাহীম আল-কাযভীনী (তিনি হাফেয আবু ইয়া‘লা আল-খলীলীর দাদা), আবুত তাইয়্যেব আহমাদ ইবনু রাওহিন আল-বাগদাদী আশ-শা‘রানী, আবু আমর আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনে হাকীম আল-মাদীনী আল-ইস্পাহানী, ইসহাক ইবনু মুহাম্মাদ আল-কাযভীনী, জা‘ফর ইবনু ইদরীস, হোসাইন ইবনু আলী ইবনে ইয়াযদানিয়ার, সোলায়মান ইবনু ইয়াযীদ আল-কাযভীনী, আবুল হাসান আলী ইবনু ইবরাহীম ইবনে সালামা আল-কাযভীনী, আলী ইবনু সাঈদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল-আসকারী, মুহাম্মাদ ইবনু ঈসা আছ-ছাফফার প্রমুখ।[23]

ইবনু মাজাহ (রহঃ) রচিত গ্রন্থাবলী :

ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) বহু সংখ্যক গ্রন্থ রচনা না করলেও যে তিনটি গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন তা খুবই মূল্যবান, কল্যাণকামী ও সুপ্রসিদ্ধ।

১. السنن ابن ماجة (সুনানু ইবনি মাজাহ) : এটি কুতুবুস সিত্তার অন্যতম একটি গ্রন্থ। মূলতঃ এ গ্রন্থ সংকলনের মাধ্যমেই তিনি মুসলিম জাতির হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।[24]

২. تفسير القرآن الكريم (তাফসীরুল কুরআনিল কারীম) : হাদীছের ভিত্তিতে রচিত এটি তাঁর একটি মূল্যবান তাফসীর গ্রন্থ।[25]

৩. تاريخ مليح (তারীখু মালীহ) : কোন কোন মনীষী এ গ্রন্থটিকে تاريخ كامل (তারীখু কামিল) বলে উল্লেখ করেছেন। এটি নির্ভরযোগ্য তথ্য ও তত্ত্বে ভরপুর একটি প্রামাণ্য ইতিহাসগ্রন্থ। আল্লামা ইবনু কাছীর (রহঃ) البداية والنهاية গ্রন্থে লিখেছেন,ولابن ماجة تفسير حافل وتاريخ كامل من لدن الصحابة إلى عصره، ‘ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ তাফসীর এবং পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসগ্রন্থ, যাতে ছাহাবায়ে কেরামের যুগ হ’তে তাঁর সময় পর্যন্ত বিস্তারিত ইতিহাস আলোচিত হয়েছে’।[26]

এতদ্ব্যতীত تاريخ قزوين (তারীখু কাযভীন) গ্রন্থটিকে আল্লামা ইসমাঈল পাশা আল-বাগদাদী স্বীয় هدية العارفين নামক গ্রন্থে ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর গ্রন্থ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।[27] কিন্তু কোন কোন মনীষী এ গ্রন্থটিকে আবুল কাসেম রাফেঈর বলে অভিমত পোষণ করেন।[28]

অনুসরণীয় মাযহাব :

ইবনু মাজাহ (রহঃ) নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন কি-না এবং থাকলেও কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বলেন, তিনি শাফেঈ মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।[29] শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) বলেন, তিনি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ)-এর মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।[30] আল্লামা তাহির জাযায়েরী বলেন, তিনি কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন না। তবে তাঁর ফিকহী মাসআলায় ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ), ইসহাক, আবু ওবায়দা প্রমুখ মনীষীর সাথে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।[31]

আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,

كما أن البخاري رحمه الله تعالى كان متبعا للسنة عاملا بها مجتهدا غير مقلد لأحد من الأئمة الأربعة وغيرهم كذلك مسلم والترمذي وأبو داود والنسائي وابن ماجة كلهم كانوا متبعين للسنة عاملين بها مجتهدين غير مقلدين لأحد-

‘ইমাম বুখারী (রহঃ) যেমন সুন্নাতের অনুসারী ও তদনুযায়ী আমলকারী এবং মুজতাহিদ ছিলেন, ইমাম চতুষ্টয়ের বা অন্য কোন ইমামের কোন একজনের অনুসারী ছিলেন না। অনুরূপভাবে ইমাম মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাঊদ, নাসাঈ এবং ইবনু মাজাহ (রহঃ), তাঁরা প্রত্যেকেই সুন্নাতের অনুসারী ও তদনুযায়ী আমলকারী এবং মুজতাহিদ ছিলেন। তাঁরা কেউ কোন ইমামের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না।[32]

আল্লামা শাবিবর আহমাদ ওছমানী লিখেছেন,

وامام مسلم والترمذي والنسائي وابن ماجة فهم على مذهب أهل الحديث، ليسوا مقلدين لواحد بعينه من العلماء .

‘ইমাম মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ (রহঃ) প্রমুখ মুহাদ্দিছগণ আহলেহাদীছ ছিলেন, তাঁরা কোন ইমামের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না’।[33] মূলতঃ তিনি কোন ব্যক্তি বিশেষকে অনুসরণ করতেন না; বরং তিনি নিজেই মুজতাহিদ ছিলেন।[34]

মৃত্যু :

ইবনু মাজাহ (রহঃ)-এর মৃত্যু তারিখ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। ইবনু কাছীর ও জামালুদ্দীন ইউসুফ আল-মিযযী তাঁর মৃত্যু তারিখ, জানাযা ও দাফনকার্য সম্পাদন সম্পর্কে বলেন,

كانت وفاة ابن ماجة يَوْمَ الْإِثْنَيْنِ وَدُفِنَ يَوْمَ الثُّلَاثَاءِ لِثَمَانٍ بَقِيْنَ مِنْ رَمَضَانَ سَنَةَ ثَلَاثٍ وَسَبْعِيْنَ وَمِائَتَيْنِ عَنْ أَرْبَعٍ وَسِتِّيْنَ سَنَةً،

‘ইবনু মাজাহ (রহঃ) ২৭৩ হিজরী ২২ রামাযান মোতাবেক ২০ নভেম্বর ৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে সোমবার মৃত্যুবরণ করেন। পরের দিন মঙ্গলবার তাঁকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।[35]

কেউ কেউ বলেন, তিনি ২৭৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।[36]

ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি ২৭৩ হিজরী রামাযান মাসে মৃত্যুবরণ করেন।[37] তবে প্রথম অভিমতটিই অধিক বিশুদ্ধ।

তাঁকে গোসল করান মুহাম্মাদ ইবনে আলী কেহেরমান এবং ইবরাহীম ইবনে দীনার।[38] জানাযায় ইমামতি করেন স্বীয় ভাই আবু বকর এবং কবরে লাশ নামান তার ভাই আবু বকর ও আবু আব্দুল্লাহ এবং স্বীয় পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াযীদ।[39]

মনীষীদের দৃষ্টিতে ইবনু মাজাহ :

হাদীছ, তাফসীর, ইতিহাস শাস্ত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রাখার কারণে সমকালীন ও পরবর্তী মনীষীগণ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

১. হাফেয আবু ইয়া‘লা আল-খলীল ইবনে আব্দুল্লাহ আল-খলীল আল-কাযভীনী বলেন,

ثقة كبير متفق عليه محتج به له معرفة بالحديث وحفظ وله مصنفات في السنن والتفسير والتاريخ

‘ইবনু মাজাহ (রহঃ) খুবই নির্ভরযোগ্য সর্বসম্মত হাদীছবেত্তা ছিলেন। যাঁর হাদীছগুলো প্রামাণ্য দলীল হিসাবে পেশ করা যায়। হাদীছ সংকলক এবং সংরক্ষক হিসাবে তাঁর রয়েছে বিশেষ পরিচিতি। তিনি সুনান, তাফসীর ও ইতিহাস প্রণেতাও বটে।[40]

২. আল্লামা ইবনু কাছীর (রহঃ) البداية والنهاية গ্রন্থে লিখেছেন,

وَهُوَصَاحِبُ كِتَابِ السُّنَنِ الْمَشْهُورَةِ، وَهِيَ دَالَّةٌ عَلَى عمله وعلمه وتبحره واطلاعه واتباعه للسنة في الأصول والفروع،

‘তিনি ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ সুনান গ্রন্থপ্রণেতা, যা তাঁর ইলম, আমল এবং সুন্নাতের অনুসরণ এবং এর প্রতিটি মূল ও শাখায় অগাধ পান্ডিত্যের সাক্ষ্য বহন করে।[41]

৩. ইমাম যাহাবী বলেন, قد كان ابن ماجة حافظا ناقدا صادقا، واسع العلم،  ‘ইবনু মাজাহ (রহঃ) ছিলেন হাদীছের হাফেয, রাবী সমালোচক, সত্যবাদী এবং অগাধ জ্ঞানের অধিকারী’।[42]

৪. আল্লামা জালালুদ্দীন ইউসুফ আল-মিযযী বলেন, أبو عبد الله بن ماجة القزويني الحافظ صاحب كتاب السنن ذو التصانيف النافعة والرحلة الواسعة  ‘হাফেয আবু আব্দুল্লাহ ইবনু মাজাহ আল-কাযভীনী ছিলেন কিতাবুস সুনানের সংকলক, কল্যাণকামী গ্রন্থপ্রণেতা এবং গভীর পান্ডিত্যের অধিকারী’।[43]

তিনি আরো বলেন, وكان عارفا بهذا الشان ‘তিনি এ জ্ঞানে অভিজ্ঞ ছিলেন’।[44]

৫. ইবনে খাল্লিকান বলেন, وكان إماما في الحديث عارفا بعلومه وجميع ما يتعلق به  ‘তিনি  হাদীছের  ইমাম  এবং  এ

সম্পর্কিত সকল বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন’।[45]

৬. ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেন, أبو عبد الله ابن ماجة، القزويني، مصنف السنن، والتاريخ و التفسير، وحافظ قزوين في عصره. ‘আবু আব্দুল্লাহ ইবনু মাজাহ সুনান, তারীখ ও তাফসীর প্রণেতা এবং সমকালীন যুগে কাযভীনের হাফেযুল হাদীছ ছিলেন’।[46]

৭. আল্লামা ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, أبو عبد الله بن ماجة صاحب السنن أحد الأئمة حافظ  ‘আবু আব্দুল্লাহ ইবনু মাজাহ সুনানগ্রন্থ সংকলক এবং একজন বিশিষ্ট হাদীছ সংরক্ষক ইমাম ছিলেন।[47]

৮. আল্লামা ইবনুল আছীর (রহঃ) বলেন, كان عاقلا اماما عالما ‘তিনি একজন বুদ্ধিদীপ্ত আলেম ও ইমাম ছিলেন’।[48]

 

পরবর্তী অংশ পড়ুন: ইবনু মাজাহ (রহঃ) – ২


[1]. তারীখুত তাশরীঈল ইসলামী, পৃঃ ৯৫।

[2]. কাশফুয যুনূন আন-আসামিল কুতুবি ওয়াল ফুনূন, ১/১০০৪ পৃঃ।

[3]. হাদিয়াতুল আরেফীন, ২/১৮ পৃঃ; মিফতাহুল উলূম ওয়াল ফুনূন, পৃঃ ৬৮।

[4]. তাযকিরাতুল হুফফায, ২/৬৩৬ পৃঃ।

[5]. তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৩৯ পৃঃ।

[6]. তারীখুত তাশরীঈল ইসলামী, ৯৫ পৃঃ; কাশফুয যুনূন, ১/১০০৪ পৃঃ; হাদিয়াতুল আরেফীন, ২/১৮ পৃঃ।

[7]. তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল, ২৭/৪১ পৃঃ।

[8]. তাযকিরাতুল হুফফায, ২/৬৩৬ পৃঃ; বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন, পৃঃ ২৪৬; মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/১০৯ পৃঃ।

[9]. আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ সিত্তাহ, পৃঃ ২৫৫; মিফতাহুল উলূম ওয়াল ফুনূন, পৃঃ ৬৮।

[10]. মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/১১০ পৃঃ।

[11]. বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন, পৃঃ ২৪৬; আত-তুহফাতু লিতালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৫৭।

[12]. হাদিয়াতুল আরেফীন, ২/১৮ পৃঃ; আত তুহফাতু লিতালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৫৬।

[13]. হাদীস সংকলনের ইতিহাস, পৃঃ ৩৭৭।

[14]. ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) ওয়া কিতাবুহুস সুনান : দিরাসাতুন তাতবিকিয়াহ, (সঊদী আরব : প্রিন্সেস নূরা বিনতে আব্দুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪৩৩-৩৪ হিঃ), পৃঃ ৩।

[15]. ঐ, পৃঃ ৪।

[16]. ঐ, পৃঃ ৪।

[17]. আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন, ৩৬১ পৃঃ।

[18]. মুকাদ্দামাহ তুহফাতুল আহওয়াযী, ১/১০৯ পৃঃ; আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ আস-সিত্তাহ, পৃঃ ২৫৬।

[19]. তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৩৯ পৃঃ; তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল, ২৭/৪০ পৃঃ।

[20]. ইমাম ইবনু মাজাহ (রহঃ) ওয়া কিতাবুহুস সুনান : দিরাসাতুন তাতবিকিয়াহ, পৃঃ ৪।

[21]. সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৩/২৭৭-৭৮ পৃঃ।

[22]. বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন, পৃঃ ২৪৬; আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ সিত্তাহ, পৃঃ ২৫৫।

[23]. তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল, ২৭/৪০-৪১ পৃঃ; তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৩৯ পৃঃ।

[24]. শাযারাতুয যাহাব ফী আখবারি মান যাহাব, ২/১৬৪ পৃঃ।

[25]. আল-হিত্তাহ ফী যিকরিছ ছিহাহ সিত্তাহ, পৃঃ ২৫৬।

[26]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১১/৬১ পৃঃ; তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল, ২৭/৪০ পৃঃ।

[27]. হাদিয়াতুল আরেফীন, ২/১৮ পৃঃ।

[28]. আত-তুহফাতু লিতালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৬০।

[29]. মিফতাহুল উলূম ওয়াল ফুনূন, পৃঃ ৭০।

[30]. আত-তুহফাতু লিতালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৫৭।

[31]. ঐ, পৃঃ ৫৭।

[32]. মুকাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/২৭৯ পৃঃ।

[33]. ঐ, ১/১০১ পৃঃ।

[34]. ঐ, ১/২৭৯ পৃঃ।

[35]. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১১/৬১ পৃঃ।

[36]. তাহযীবুত তাহযীব, ৫/৩৪০ পৃঃ।

[37]. সিয়ারু আলামিন লুবালা, ১৩/২৮৯ পৃঃ।

[38]. আত-তুহফাতু লি তালিবিল হাদীছ, পৃঃ ৬০।

[39]. মুক্কাদ্দামাতু তুহফাতিল আহওয়াযী, ১/১০৯ পৃঃ; শাযারাতুয যাহাব ফী আখবারি মান যাহাব, ২/১৬৪ পৃঃ; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১১/৬১ পৃঃ।

[40]. তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল, ২৭/৪১ পৃঃ; তাযকিরাতুল হুফফায, ২/৬৩৬ পৃঃ।

[41]. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ, ১১/৬১ পৃঃ; মা তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৫।

[42]. সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৩/২৭৮ পৃঃ; আল-হাদীছ ওয়াল মুহাদ্দিছূন, পৃঃ ৪২০।

[43]. তাহযীবুল কামাল ফী আসমাইর রিজাল, ২৭/৪০ পৃঃ।

[44]. ঐ, ২৭/৪১ পৃঃ।

[45]. শাযারাতুয যাহাব ফী আখবারি মান যাহাবা, ২/১৬৪ পৃঃ; মা তামাসসাসু ইলাইহিল হাজা লিমান ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৪।

[46]. সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৩/২৭৭ পৃঃ।

[47]. তাক্বরীবুত তাহযীব, পৃঃ ৪৭৭।

[48]. মা তামাসসু ইলাইহিল হাজা লিমান ইউতালিয়ু সুনানা ইবনে মাজাহ, পৃঃ ৩৪।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button