মনীষী চরিত

ইমাম আদ-দারা কুতনী (রহঃ)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের প্রচার-প্রসার, যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে যুগ যুগ ধরে আলেম সমাজ গবেষণা কর্ম পরিচালনা করে আসছেন। ইলমে হাদিসের সঠিকতা যাচা-বাছাই ও প্রচার-প্রসারে যে ক’জন ইসলামি ব্যক্তি নিরলস পরিশ্রম করে আসছেন তাদের মধ্যে ইমাম আদ-দারা কুতনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি একজন। সংক্ষেপে তাঁর জীবনী তুলে ধরা হলো-

জন্ম ও পরিচয়
শায়খুল ইসলাম ইমাম আলী ইবনে উমার ইবনে আহমাদ ইবনে মাহদি আবুল হাসান আদ-দারা কুতনী আশ শাফেঈ বাগদাদ নগরীর দারুল কুতন নামক স্থানে ৩০৬ হিজরিতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একজন জগৎ বিখ্যাত মুহাদ্দিস ছিলেন। শুধু আদ-দারা কুতনী নামেই গোটা বিশ্বে তিনি পরিচিত।

শিক্ষা
ইমাম আদ-দারা কুতনীর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা না গেলেও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে খ্যাতিমান বিদ্বান ব্যক্তিদের নিকট শিক্ষা লাভ করে গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তাঁর বহুমুখী শিক্ষার বিষয় ছিল- ইলমে হাদিস, আলকুরআনের মূল পাঠ সংক্রান্ত বিদ্যা, ইসলামি আইন (ফিকহ ও সাহিত্য) ইত্যাদি। বহু বিখ্যাত কবিদের মহাকাব্য তাঁর মুখস্ত ছিল।

তাঁর শিক্ষকবৃন্দ
তিনি ইলমে হাদিসের জ্ঞান অন্বেষনে বাগদাদ, কুফা, বসরা, ওয়াসিত-এর বহু শিক্ষকের নিকট গমন করেন এবং হাদিস অধ্যয়ন করেন। এমনকি পরিণত বয়সেও তিনি মিসর এবং সিরিয়া ভ্রমণ করেন। আবুল কাসেম আল-বাগাবি, আবু বকর ইবনে আবু দাউদ আস-সিজিস্তানি, ইয়াহইয়া ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সায়েদ, আবু আলী মুহাম্মাদ ইবনে সুলায়মান আল-মালিকি, আবু উমার আল-কাযি রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম প্রমুখ তার মহামান্য শিক্ষক ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন।

হাদিসের খিদমত
তিনি ছিলেন ইলমে হাদিসের একজন অসামান্য খাদেম। তাঁর নিকট থেকে অনেক ব্যক্তি হাদিস বর্ণনা করেন। তারা হলেন- আল-হাকিম আন-নিশাপুরী, আবু হামেদ আল আসগারাই, ইমাম আর-রাযি, হাফেজ আবদুল গণি আল আযাদিসহ অসংখ্য হাদিস পিপাসু তাঁর নিকট থেকে ইলমে হাদিস বর্ণনা করেন।

রচনা সমগ্র
ইমাম আদ-দারা কুতনী হাদিস শাস্ত্রের পর্যালোচনামূলক অগ্রগতির ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখেন। তাঁর রচনা সমগ্র প্রধানত হাদিস শাস্ত্র বিষয়ক। এ বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রচনা সমগ্র তৈরি করেন। এর মধ্যে ‘কিতাবুস সুনান’ গ্রন্থখানি সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করে। যা ভারতীয় উপমহাদেশে যা ‘আদ-দারা কুতনী’ নামে সমধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তাছাড়া রিজাল শাস্ত্রের উপর রচিত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো ‘কিতাবুয যুআফ’ এবং ‘আল-মুতালাফ ওয়াল মুখতালাফ’ উল্লেখযোগ্য।

হাদিস রচনায় মূল্যায়ন
হাদিস সংকলন করতে গিয়ে হাদিস গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি রাবীগণের বিশ্বস্ততা, অবিশ্বস্ততা, নির্ভরযোগ্যতা, দুর্বলতা, স্মৃতিশক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি ইমাম শাফেঈ’র অনুসারী হলেও অন্যান্য মাজহাবের হাদিসও তিনি গ্রহণ করেছেন। কোনো মাজহাবের ব্যাপারে তিনি বিরূপ মন্তব্য করেননি।

তার ব্যাপারে অভিমত
তার রচিত হাদিস গ্রন্থ অধ্যয়নে এমন অনেক হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যাবে যা সিহাহ সিত্তার মধ্যেও নাই। তাঁর সম্পর্কে অনেক মনীষী মন্তব্য করেন-
আল খতিব আল বাগদাদি বলেন, ‘যিনি ফিকাহশাস্ত্র ও মাজহাবসমূহের পরস্পর বিরোধী মতামত সম্পর্কে অভিহিত, কেবল তার পক্ষেই এরূপ কিতাব সংকলন করা সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি ছিলেন তাঁর যুগের ইমাম।’

আবু তায়্যিব আত তারাবি বলেন, ‘তাঁকে হাদিস শাস্ত্রে আমিরুল মুমিনিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।’

আল-হাকিম আন নিশাপুরী বলেন, ‘ইমাম দারা কুতনি তাঁর যুগে মেধা, জ্ঞান ও তাকওয়ার অধিকারী একক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি কিরাআত ও আরবি ব্যকরণের ইমামও ছিলেন। ৬৭ হিজরিতে বাগদাদে চার মাস অবস্থানকালে তাঁর সম্পর্কে যা শুনেছি, তারচেয়েও বেশি প্রতিভা তাঁর মাঝে পেয়েছি।

রাজা ইবনে মুহাম্মাদ আল-মুগাদ্দিল বলেন, আমি ইমাম দারা কুতনিকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা আত্ম প্রশংসা করো না।’ অগণিত অসংখ্য ইলমে হাদিসের খাদেম তার ব্যাপারে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

ওফাত
যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইমাম আদ-দারা কুতনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ৩৮৫ হিজরি সনের ৮ রজব ৭৯ বছর বয়সে বাগদাদের দারুল কুতন নামক স্থানেই ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহ রাজিউন) তাঁকে বাবুদ দায়ের গোরস্তানে মারুফ আল কারখী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সমাধির পাশে সমাহিত করা হয়।

আল্লাহ তাআলা ইলমে হাদিসের এ খাদেমকে কবুল করুন। তার রচিত গ্রন্থ দ্বারা আমাদের উপকার নেয়ার তাওফিক দান করুন। তাঁর নেক ও ভালো গুণগুলো আমাদের মাঝে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button