অর্থনীতি/ব্যবসা-বাণিজ্য

অর্থনৈতিক উন্নয়নে যাকাত ব্যবস্থাপনার সুফল

মানব সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য সংরক্ষণে যাকাত ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলাম সম্পদের লাগামহীন সঞ্চয়কে নিয়ন্ত্রণ করে পুঁজিবাদের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে সমাজকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আবার হালাল হারামের শর্ত, বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করে যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে এক সুবিচার ও ভারসাম্যমূলক অর্থনীতি উপহার দিয়েছে।[1] ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংযত পদ্ধতি এ নির্দেশ প্রদান করে যে, ধন-সম্পদ জমা ও সঞ্চয় করার জন্য নয়, বরং একে বণ্টন করতে হবে এবং (এক হাত থেকে অপর হাতে) চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে করে মানুষের মধ্যে সম্পদের ভারসাম্য অক্ষুন্ন থাকবে। আর এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন হলো ‘যাকাতের বিধান’। এ জন্য যাকাত প্রদান ফরয করা হয়েছে। ইসলাম সীমিত পর্যায়ে ব্যক্তি মালিকানাকে স্বীকার করে নিলেও এ সুযোগে যাতে অশুভ পুঁজিতন্ত্রের সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। ইসলাম মনে করে, নিত্য দিনের প্রয়োজন পূরণ করার পর এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেওয়ার পর যদি কারো নিকট সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৫৯৫ গ্রাম) পরিমাণ রূপা কিংবা সাড়ে সাত তোলা (৮৫ গ্রাম) স্বর্ণ বা এর সমমূল্যের সম্পদ এক বৎসর কাল পর্যন্ত সঞ্চিত থাকে তাহলে সে ব্যক্তি সম্পদশালী। এ ধরনের সম্পদশালী ব্যক্তিদের থেকে রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য অভাবী মানুষের প্রয়োজন এবং সামাজিক প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ঐ সঞ্চিত সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ রাষ্ট্রীয় বায়তুল মালে জমা করার দাবী জানায়। এর এ দাবী ঐচ্ছিক পর্যায়ের নয়; বরং এ দাবী আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক এবং ধর্মীয়ভাবে অবশ্যই পালনীয় ফরযরূপে অবধারিত করে দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি তা আদায় না করে তার জন্য আইনগতভাবে শাস্তির সাথে সাথে পরকালীন কঠিন আযাবের ব্যাপারেও সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ ٣٤ يَوۡمَ يُحۡمَىٰ عَلَيۡهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكۡوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمۡ وَجُنُوبُهُمۡ وَظُهُورُهُمۡۖ هَٰذَا مَا كَنَزۡتُمۡ لِأَنفُسِكُمۡ فَذُوقُواْ مَا كُنتُمۡ تَكۡنِزُونَ ٣٥﴾ [التوبة: ٣٤، ٣٥]

‘‘আর যারা সোনা রূপা (অর্থ-সম্পদ) জমা করে রাখে এবং সেগুলো আল্লাহর পথে যাকাত হিসেবে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। কিয়ামতের দিন সেগুলো জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং সেগুলো দ্বারা তাদের মুখমণ্ডল, পার্শ্বদেশ এবং পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। আর বলা হবে এগুলোই সেই সম্পদ যা তোমরা (যাকাত না দিয়ে) পুঞ্জিভূত করে রেখেছিলে।’’ [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩৪-৩৫]

২. যাকাতের সংজ্ঞা, পরিমাণ ও শর‘ঈ বিধান:

যাকাত আরবী শব্দ, আভিধানিক অর্থ হলো ‘পরিশুদ্ধকরণ’। ইসলামী দৃষ্টিকোণ হতে যাকাত সম্পদ পরিশুদ্ধ করার জন্যই ব্যবহৃত হয়। যেমন, আল-কুরআনে এসেছে,

﴿خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا ١٠٣﴾ [التوبة: ١٠٣]

‘‘তাদের সম্পদ থেকে যাকাত নিন যা তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।’’ [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৩]

﴿وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥٓۚ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ٣٣﴾ [الاحزاب: ٣٣]

‘‘সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, আল্লাহ তো চান তোমাদের কলুষমুক্ত করে পবিত্র-পরিচ্ছন্ন করতে।’’ [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]

শরী‘আতের দৃষ্টিতে ‘যাকাত’ প্রযোজ্য হয় ধন-সম্পদে আল্লাহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট ও ফরযকৃত অংশ বোঝানোর জন্য।[2] ধন-সম্পদ থেকে এ নির্দিষ্ট অংশ বের করাকে ‘যাকাত’ বলা হয় এ জন্য যে, যে মাল থেকে তা নির্ধারণ করা হলো, যাকাতের কারণে তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ব্যবহারিক অর্থে ‘‘যে কোনো প্রকারের বহন বা স্থানান্তরযোগ্য সম্পদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে (নিসাব) পৌঁছালে তার ওপর দেয় সম্পদকে যাকাত বলে।’’[3] অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যাকাত হলো, ‘‘বিত্তশালীদের উপর আরোপিত এক ধরনের সুনির্দিষ্ট কর।’’[4] বিত্তশালী বলতে যারা সম্পদের নিসাব (অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটা সময়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা সম্পদের মালিক) তাদেরই বোঝায়। নিসাবের পরিমাণ হলো সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা, ব্যবসায়ের পণ্য এবং বাড়ী-ঘরের এর পূর্ণ এক বৎসরের মালিকানায় থাকা। এক্ষেত্রে যাকাতের হার হলো মজুদ বা সঞ্চিত সম্পদের ১/৪০ অংশ বা ২.৫%।[5] ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। ইসলামী অর্থনীতিতে যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। যাকাত একদিকে মানুষের ধন-সম্পত্তির প্রতি লোভ, স্বার্থপরতা ও সম্পদ কুক্ষিগত করার প্রবৃত্তিকে সংযত ও নিয়ন্ত্রিত করে সমাজের অক্ষম ও বিত্তহীনদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে বিত্তবানদের সচেতন করে তোলে। অপরদিকে তা বিলি বণ্টনের মাধ্যমে আনুপাতিক হারে সমাজের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করে এবং নিঃস্ব ও দরিদ্রদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ায়। বলা হয়, যাকাতই বিশ্বের সর্বপ্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।[6] ইসলামী অর্থনীতিতে যাকাত একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে ধনী-গরীবের সমতা বিধানের জন্য যাকাত একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবস্থা। সমাজের বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাও যাকাতের অন্যতম লক্ষ্য। এটি ইসলামী সমাজে বিত্তবানদের দায়িত্ব এবং সাধারণ মানুষের অধিকার। ‘‘তাদের অর্থ-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’’[7] আল-কুরআনে সালাত কায়েমের নির্দেশের পাশাপাশি যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘‘তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত আদায় করবে।’’[8] ‘‘তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা কর ও যাকাত দাও।’’[9] আপনি কি তাদের দেখেন নি, যাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, সালাত কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর।’’[10] তোমরা কুরআন থেকে যা সহজ হবে সে অংশটুকু আবৃত্তি কর, সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও।’’[11] এভাবে কুরআনের বহুসংখ্যক আয়াতে যাকাতের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

২.১ যাকাতের শর‘ঈ বিধান:

যাকাতের শর্ত:

ক. যাকাতের প্রথম শর্ত মুসলিম হওয়া। কেননা এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তাদের অর্থ-সম্পদ থেকে যাকাত আদায় কর যা তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।’’[12] এ আয়াতের নির্দেশ মুসলিমদের জন্য, অমুসলিমদের জন্য নয়।

খ. বালেগ হওয়া। শরী‘আহ্ বিশেষজ্ঞদের অনেকেই যাকাত আদায়ের জন্য বালেগ হওয়া ও সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন হওয়ার শর্তারোপ করেছেন। অবশ্য বিশুদ্ধ মতে শিশুর যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তো তা থেকে যাকাত প্রদান করা তার ওলীর উপর আবশ্যক।

গ. নিসাবের মালিক হওয়া। অর্থ্যাৎ নিসাবের পরিমাণ পূর্ণ করে তার ওপর যাকাত দিতে হবে।

ঘ. নিসাব জীবন যাত্রা অপরিহার্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া।

ঙ. নিসাব পরিমাণ মালের এক বছর পূর্ণ হতে হবে। জীবন যাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের স্থায়ী মালিকানার অধিকারী হওয়া।[13]

যাদেরকে যাকাত প্রদান করা যাবে না:

(ক) মা-বাবা, দাদা, নানা এবং তদুর্দ্ধ

(খ) ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী তদনিম্ন

(গ) স্বামী-স্ত্রী

(ঘ) ধনী

(ঙ) অমুসলিমদেরকেও যাকাত দেওয়া যাবে না। (যাদের ইসলাম গ্রহণের আশা করা যায় না)

অন্যান্য শর্ত:

  • শুধু স্বর্ণ সাড়ে সাত ভরির কম হলে যাকাত ওয়াজিব হবে না।
  • শুধু রৌপ্য সাড়ে বায়ান্ন তোলার কম হলে যাকাত ওয়াজিব হবে না।
  • নিজস্ব বসবাসের উপযোগী বাড়ি-ঘরের ওপর যাকাত ফরয নয়।
  • গৃহের আসবাবপত্র, ফার্নিচার, আলমারি তথা গৃহ সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরয নয়।
  • শিল্প-কারখানার যন্ত্রাদির ওপর যাকাত ফরয নয়। তবে উৎপাদিত সামগ্রীর বিক্রিত আয় হিসেব করে নিসাব পরিমাণ হলে অবশ্যই বৎসরান্তে হিসেব অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে।
  • জমিনে বৃষ্টির পানি, ঝর্ণার পানি, নদ-নদীর প্রবাহিত পানি দ্বারা উৎপাদিত ফসলের শতকরা দশ ভাগের এক ভাগ উশর ফরয। আর সেচ ও বিভিন্ন আধুনিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা উৎপাদিত ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ আদায় করতে হবে।
  • গচ্ছিত সম্পদ ও খনিজ সম্পদের এবং শত্রুর পরিত্যাক্ত যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ যাকাত হিসেবে আদায় করা ফরয।[14]

২.২ যাকাত, সাদাকাহ ও করের মধ্যকার পার্থক্য:

যাকাত ও সাদাকাহ এর মাঝে একটু পার্থক্য আছে। কোনো সম্পদশালী ব্যক্তি তার মালের যাকাত আদায় করে দিলেই ইসলাম তাকে যাবতীয় সামাজিক ও জাতীয় দায়িত্ব থেকে মুক্ত বলে মনে করে না; বরং সম্পদশালীদের জন্য জাতীয় ও সামাজিক প্রয়োজনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কিংবা বাধ্যতামূলকভাবে অর্থ সম্পদ ব্যয়ের অন্য একটি দায়িত্ব মুমিনদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে, যাকে পরিভাষায় সাদাকাহ বলা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব দায়িত্ব পালন ইসলাম ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক বলে সাব্যস্ত করেছে। আবার কোনো কোনো পরিস্থিতিতে এটাকে নফল সাদাকাহ বলেছে। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে সাদাকার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে:

‘‘হে মুমিনগণ! আমি তোমাদের যে সব ধন-সম্পদ প্রদান করেছি, তা থেকে খরচ কর।’’[15]

হে মুসলিমগণ! তোমাদের উপার্জিত পবিত্র বস্তুর মধ্য থেকে তোমরা ব্যয় কর।[16]

যাকাতের সঙ্গে প্রচলিত অন্যান্য সকল ধরনের করের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কারণ ইসলামের এ মৌলিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একাধারে নৈতিক ঈমান ও সামাজিক মূল্যবোধে অন্তর্নিহিত রয়েছে। কিন্তু করের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো নৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সহমর্মিতা ও সৌজন্যবোধের অস্তিত্ব নেই। নিম্নে একটি চার্টের মাধ্যমে যাকাত, সাদাকাহ ও করের মধ্যকার পার্থক্য তুলে ধরা হলো:[17]

ক্র.

নং

যাকাত কর সাদাকাহ
যাকাত আল্লাহর নির্দেশিত বাধ্যতামূলক প্রদেয় অর্থ সরকার আরোপিত বাধ্যতামূলক প্রদেয় অর্থ আল্লাহ নির্দেশিত ঐচ্ছিক প্রদেয় অর্থ
নির্দিষ্ট পরিমাণের উর্ধ্বে সঞ্চিত সম্পদের ওপর আরোপি লেভী আয়ের ওপর লেভী আদৌ সে রকম নয়
প্রদান করতে ২.৫% সম্পদ বা সমপরিমাণ অর্থের প্রয়োজন প্রদান করতে অর্থের প্রয়োজন আবশ্যিকভাবে অর্থের প্রয়োজন নেই। সম্পদ ও আচরণও হতে পারে।
ধর্মীয় বিধান এবং শুধুমাত্র নিসাবের অধিকারী মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য দেশের সকল নাগরিকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ধর্মীয় বিধান এবং কেবলমাত্র মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
আল-কুরআনে নির্দেশিত খাতেই ব্যয় করতে হবে আদায়কৃত অর্থ সরকার যে কোনো কাজে ব্যয় করতে পারে সুনির্দিষ্ট কোনো খাতের উল্লেখ নেই, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ব্যয় করতে হবে
যাকাত শুধু দরিদ্রদের হক কর সকলের জন্য সকলের জন্য
প্রদানকারী ইহকালীন কোনো বিনিময় প্রত্যাশা করতে পারে না, তবে আখেরাতে সাওয়াব প্রত্যাশা করতে পারে প্রদানকারী কোনো রকম ব্যক্তিগত প্রত্যুপকার প্রত্যাশা করতে পারে না প্রদানকারী পরোক্ষভাবে পার্থিব প্রত্যুপকার পেতে পারে এবং আখেরাতে সাওয়াব প্রত্যাশা করতে পারে
সুনির্দিষ্ট নিসাব উল্লেখ রয়েছে যার পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয় না প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে করযোগ্য আয়ের ন্যূনতম সীমা পরিবর্তন হয়। পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে কোনো সীমাই নেই। কোনো রকম সুনির্দিষ্ট সীমা নেই
প্রদেয় হার স্থির ও অপরিবর্তনীয় বলে গণ্য কোনো হারই স্থির নয়; আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে কর বৃদ্ধি ঘটতে পারে কোনো সুনির্দিষ্ট হার নেই
১০ নিয়মিত প্রদেয় নিয়মিত প্রদেয় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই

২.৩ যে সকল সম্পদের যাকাত দিতে হয়:

ইসলামী শরী‘আহ্ যে সমস্ত প্রধান প্রধান বিষয়ের উপর যাকাত ধার্য করেছে সেসবের মধ্যে রয়েছে-

(১) সঞ্চিত জমাকৃত অর্থ

(২) সোনা-রুপা বা এসব হতে তৈরী অলংকার

(৩) ব্যবসায়ের পণ্য সামগ্রী

(৪) কৃষিজাত ফসল

(৫) খনিজ উৎপাদন এবং

(৬) হালাল প্রাণী।

যে সব বস্তুর যাকাত দিতে হবে না (এগুলো ব্যবসায়ের জন্য মজুদ নয়; বরং ব্যবহার লাগে):

(১) কৃষি বহির্ভূত জমি

(২) দালান-কোঠা (যেগুলো কলকারখানা, দোকান বা গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়)

(৩) দোকান-পাট

(৪) বসতবাড়ী

(৫) এক বছর বয়সের নিচে গবাদি পশু

(৬) কাপড়-চোপড়

(৭) বই, পত্র-পত্রিকা

(৮) গৃহস্থালীর তৈজসপত্র নিচে আসবাবপত্র

(৯) পোষা পাখি ও হাঁস মুরগী

(১০) যন্ত্রপাতি ও সাজ সরঞ্জাম

(১১) আরামদায়ক সামগ্রী

(১২) অস্ত্রশস্ত্র ও গোলা বারুদ

(১৩) পচনশীল কৃষিপণ্য

(১৪) সব ধরনের শস্য বীজ

(১৫) হিসাব বছরের মধ্যেই অর্জিত ও ব্যয়িত সম্পদ

(১৬) দাতব্য সংস্থাসমূহের মালিকানায় দাতব্য কাজে ওয়াকফকৃত সম্পত্তি এবং সরকারের হাত ও মালিকানায় নগদ অর্থ ও স্বর্ণ-রৌপ্য।[18]

২.৪ যাকাতের সামগ্রী, নিসাব ও হার:

অধিকাংশ লোক জানে যে, মজুদ বা সঞ্চিত অর্থের ওপরই যাকাতের হার নির্দিষ্ট। এছাড়াও যেসব বিষয়সমূহ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে সেসবেরই একটি নির্দিষ্ট হার আছে। নিম্নে তা চার্টের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো:

ক্র.

নং

সামগ্রী নিসাব যাকাতের হার
কৃষিজাত ফল ফসল পাঁচ ওয়াসাক বা ১৫৬৮ কেজি অথবা ৪০ মন ৩২ সের ক. সেচকৃত জমির ক্ষেত্রে ৫%

খ. সেচ বিহীন জমির ক্ষেত্রে ১০%

গ. সেচ ও সেচবিহীন মিলিত জমির ক্ষেত্রে ৭.৫%

সোনা-রূপা বা এসব হতে তৈরি অলংকার ৭.৫ ভরি সোনা (৮৫ গ্রাম) বা ৫২.৫ ভরি রুপা (৫৯৫ গ্রাম) বিক্রয় মূল্যের ২.৫%
হাতে নগদ বা ব্যাংক মজুদ ৫২.৫ তোলা রুপার মূল্যের সমান (৫৯৫ গ্রাম) নগদ বা মজুদ অর্থের ২.৫%
ব্যবসায়ের পণ্য ৫২.৫ তোলা রুপার মূল্যের সমান (৫৯৫ গ্রাম) পণ্যের মূল্যের ২.৫%
গরু ৩০টি ক. প্রতি ৩০টির জন্য ১বছর বয়সী ১টি

খ. প্রতি ৪০টির জন্য ২বছর বয়সী ১টি

ছাগল ও ভেড়া ৪০টি ক. প্রথম ৪০টির জন্য ১টি

খ. ১২০ টির জন্য ২টি

গ. ৩০০টির জন্য ৩টা পরবর্তী প্রতিটির জন্য ১টি

খনিজের উৎপাদন যে কোনো পরিমাণ উৎপাদনের ২০%

২.৫ যাকাত বিতরণের খাতসমূহ:

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আল-কুরআনে আট শ্রেণীর লোককে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যাদের মধ্যে যাকাতের অর্থ বন্টন করে দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّمَا ٱلصَّدَقَٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡعَٰمِلِينَ عَلَيۡهَا وَٱلۡمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمۡ وَفِي ٱلرِّقَابِ وَٱلۡغَٰرِمِينَ وَفِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِۖ فَرِيضَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٦٠﴾ [التوبة: ٦٠]

“এ সাদাকাগুলো তো আসলে ফকীর-মিসকীনদের জন্য। আর যারা সাদাকা সংক্রান্ত কজে নিযু্ক্ত এবং যাদের মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য। তাছাড়া দাসমুক্ত করার, ঋণগ্রস্তদের সাহায্য করার, আল্লাহর পাথে এবং মুসাফিরদের উপকারে ব্যয় করার জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিধান এবং আল্লাহ সব কিছু জানেন। তিনি বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬০]

এ আয়াতে যাদের সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে নিম্নে তাদের বিবরণ দেওয়া হলো:

১. (আল ফুকারা) দরিদ্র জনগণ: ফকীর এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যে নিজের জীবিকার ব্যাপারে অন্যের মুখাপেক্ষী। কোনো শারীরিক ত্রুটি বা বার্ধক্যজনিত কারণে কেউ স্থায়ীভাবে অন্যের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে অথবা কোনো সাময়িক কারণে কেউ স্থায়ীভাবে অন্যের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে এবং সাহায্য সহায়তা পেলে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, এ পর্যায়ে সব ধরনের অভাবী লোকের জন্য সাধারণভাবে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

২. (আল মাসাকিন) অভাবী: বাংলাদেশে উল্লিখিত ফুকারাউ মাসাকীনকে এক যোগে ফকীর মিসকিন বলা হয়। দরিদ্র ও অভাবী শ্রেণির লোক তারাই যাদের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ হয় না। তাদের নিসাব পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী বা ধন সম্পদ তো দূরে থাক, প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, কাজের সরঞ্জাম, গবাদিপশু ইত্যাদির অভাব প্রকট। এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত সকলেই যাকাত পাওয়ার যোগ্য বা দাবিদার। ইসলামী সাহিত্যে এ শব্দদ্বয়ের অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। কোনো কোনো মুসলিম মনীষী বলেন, তারাই ফকীর যারা দরিদ্র বটে; কিন্তু ভিক্ষা করে না এবং মিসকীন তারা, যারা দরিদ্র এবং শিক্ষা করে। অন্য একদল এর বিপরীত মত পোষণ করেন। তারা বলেন, ফকীর তারাই যারা দরিদ্র ও ভিক্ষা করে আর মিসকীন তারা যারা দরিদ্র কিন্তু ভিক্ষা করে না। এ উভয় শ্রেণিই যাকাতের প্রথম দাবীদার। অবশ্যই এদের মধ্যে তারাও শামিল যারা বেকার বা কর্মহীন, শ্রমিক ও মজুর, যারা অভাবের তাড়নায় নিজের এলাকা এমনকি দেশ ত্যাগ করেছে এবং তারাও যারা শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ বা অসমর্থ এবং বয়সের ভারে অক্ষম।[19]

৩. যাকাত বিভাগে নিযুক্ত কর্মচারী: একাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের এটাই সার্বক্ষণিক দায়িত্ব সুতরাং তাদের বেতন এই উৎস হতেই দেওয়া বাঞ্ছনীয়। উল্লেখ্য যে, রাসূল যাকাতের ও খুলাফায়ে রাশেদা-এর সময়ে যাকাতের অর্থ, দ্রব্যসামগ্রী ও গবাদিপশু সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য আট শ্রেণির লোক নিযুক্ত ছিল। এরা হলো:

ক. সায়ী = গবাদি পশুর যাকাত সংগ্রাহক

খ. কাতিব = করণিক

গ. ক্বাসেম = বণ্টনকারী

ঘ. আশির = যাকাত প্রদানকারী ও যাকাত গ্রহীতাদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপনকারী

ঙ. আরিফ = যাকাত প্রাপকদের অনুসন্ধানকারী

চ. হাসিব = হিসাব রক্ষক

ছ. হাফিয = যাকাতের অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রী সংরক্ষক

জ. কাইয়াল = যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণকারী ও ওজনকারী।

৪. যাদের মন জয় করা প্রয়োজন: মন জয় করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করার জন্য যে বিধান রয়েছে তার উদ্দেশ্য হলো, যারা ইসলামের বিরোধিতায় ব্যাপকভাবে তৎপর এবং অর্থ দিয়ে যাদের শত্রুতার তীব্রতা ও উগ্রতা হ্রাস করা যেতে পারে অথবা যারা কাফেরদের শিবিরে অবস্থান করছে ঠিকই কিন্তু অর্থের সাহায্যে সেখান থেকে ভাগিয়ে এনে মুসলিমদের দলে ভিড়িয়ে দিলে তারা মুসলিমদের সাহায্যকারী হতে পারে কিংবা যারা সবেমাত্র ইসলামে প্রবেশ করেছে এবং তাদের পূর্বকার শত্রুতা বা দুর্বলতাগুলো দেখে আশংকা জাগে যে, অর্থ দিয়ে তাদের বশীভূত না করলে তারা আবার কুফুরীর দিকে ফিরে যাবে, এ ধরনের লোকদেরক স্থায়ীভাবে বৃত্তি দিয়ে বা সাময়িকভাবে এককালীন দানের মাধ্যমে ইসলামের সমর্থক ও সহায্যকারী অথবা বাধ্য ও অনুগত কিংবা কমপক্ষে এমন শত্রুতে পরিণত করা যায়, যারা কোনো প্রকার ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না। এ খাতে গনীমতের মাল ও অন্যান্য উপায়ে অর্জিত অর্থ থেকেও ব্যয় করা যেতে পারে এবং প্রয়োজন হলে যাকাতের তহবিল থেকেও ব্যয় করা যায়।[20]

৫. দাসমুক্ত করার জন্য: এক্ষেত্রে যাকাতের অর্থ দু’ভাবে ব্যয় করা যেতে পারে

(১) যে দাস তার মালিকের সাথে এ মর্মে চুক্তি করেছে যে, সে একটা বিশেষ পরিমাণ অর্থ আদায় করলে মালিক তাকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে দেবে। তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তির এ মূল্য আদায় করতে যাকাত থেকে সাহায্য করা যায়।

(২) যাকাতের অর্থে দাস ক্রয় করে তাকে মুক্ত করে দেওয়া। এছাড়া মিথ্যা মামলার গরীব আসামী মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।[21]

৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ আদায়: ঋণগ্রস্ত তারাই যারা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে ঋণ করে কিন্তু তা পরিশোধ করতে পারে না। এদের ঋণ পরিশোধের জন্যও যাকাতের অর্থ ব্যয়িত হতে পারে। ফকীহরা বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি সামাজিক দায়-দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হন যেমন ইয়াতীমদের প্রতিপালন, মুসলিমদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন, অথবা মসজিদ মাদরাসা মক্তবের সংস্কার সাধন ইত্যাদির জন্য ঋণ করে আর তা শোধ করতে না পারে তাহলে যাকাতের অর্থ হতে এ ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া যাবে। যদি তিনি ধনীও হন তাহলেও এটা বৈধ।

৭. আল্লাহর পথে: যে সব সৎকাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন এমন সমস্ত কাজই এর অন্তর্ভুক্ত। এর অর্থ নিধারণে কয়েকটি মত রয়েছে:

(১) কেউ কেউ মনে করেন যে, যাকাতের অর্থ যে কোনো সৎকাজে ব্যয় করা যেতে পারে। এ মতটি সঠিক নয়। কারণ তা তখন অন্য খাতের সাথে মিশে যেতে বাধ্য।

(২) আবার অনেকে আল্লাহর পথে বলতে আল্লাহর পথে জিহাদ বুঝিয়েছেন। যে সব লোক এ প্রচেষ্টা ও সংগ্রামরত থাকে, তারা যদি রাষ্ট্রীয় বায়তুল মাল হতে বেতন না পায়, ধনীও হয় এবং নিজেদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য তাদেরকে সাহায্য করার প্রয়োজন না থাকলেও তাদের সফর খরচ বাবদ এবং বাহন, অস্ত্রশস্ত্র ও সাজ-সরঞ্জাম ইত্যাদি সংগ্রহ করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় বৈধ।

(৩) আবার আল্লাহর পথে তাঁর অনুগত হয়ে সৎকর্মশীল হলে এবং তাঁরই দীন প্রচারের জন্য ব্রতী হলে তারা যাকাত পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে। যেমন যারা দীনী কাজে জড়িত, যেমন দীনী শিক্ষাগ্রহণকারী ছাত্র, তার ভরণপোষণ, তার দীনী কিতাব ক্রয় ইত্যাদিতে ব্যয় করার অর্থ।

৮. মুসাফিরদের জন্য: যাকাতের অর্থ তাদেরকেও দেওয়া যাবে যারা মুসাফির। এক্ষেত্রে যারা সফরে বিদেশ বিভুঁইয়ে অর্থাভাবে আটকে পড়েছে এবং দেশে ফিরে আসতে পারছে না, যে কাজে গিয়েছে তাও সম্পন্ন হচ্ছে না একই কারণে সে অবস্থায় তাদেরও যাকাতের অর্থ পাওয়ার হক রয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে তাদের সফরে উদ্দেশ্য বৈধ হতে হবে। কেননা এ ব্যাপারে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন, তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সহযোগিতা কর। পাপ ও সীমালংঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহযোগিতা করো না।[22]

কোনো কোনো অর্থনীতিবিদের মতে, এ বিধানের আওতায় যাকাতের অর্থ পথিকদের জন্য রাস্তাঘাট মেরামত, পান্থনিবাস তৈরি ইত্যাদি কাজেও ব্যবহার করা যায়।[23] যদিও এ বিষয়ে মনীষীদের মাঝে মত পার্থক্য রয়েছে।

২.৬ যাকাতের অর্থ-সম্পদ বন্টনের নীতিমালা:

ইসলাম শুধু যাকাত গ্রহীতাদেরই নির্দিষ্ট করে দেন নি; বরং তাদের মাঝে কিভাবে বণ্টন করতে হবে তার নীতিমালাও প্রদান করেছে। নিম্নে সে বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. যাকাতের অর্থ আশু বিতরণ: যাকাতের অর্থ আদায় হওয়ার সাথে সাথেই তা বিতরণ করতে হবে। কারণ যাকাত প্রাপকদের টাকা পয়সার খুবই প্রয়োজন। সুতরাং তাদের অভাব দ্রুত মোচনের চেষ্টা করা আশু কর্তব্য।

২. দেশীয় অর্থ দেশে বিতরণ করা: যে এলাকা বা দেশ হতে যাকাত সংগৃহীত হয় সেখানেই তা খরচ হওয়া কাম্য। এতে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং পারস্পারিক সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।

৩. আর্থিক কল্যাণ সাধন: অর্থ এমনভাবে বিতরণ বা ব্যবহার করতে হবে যেন গ্রহীতা বা গ্রহীতাদের সর্বোচ্চ সামাজিক ও আর্থিক কল্যাণ সাধিত হয়। এটা জীবন যাপনের মান উন্নয়ন করতে সাহায়তা করে। এর মাধ্যমে তারা গ্রহীতা না হয়ে যেন শেষ পর্যন্ত যাকাত দাতা হিসেবেই রূপান্তরিত হতে পারে।[24]

যাকাত নীতির মূল উদ্দেশ্য:

ক. গরীবের প্রয়োজন পূর্ণ করা। অভিশপ্ত পুজিতন্ত্রের মুলোৎপাটন করা, অর্থ সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখার কারণে মানসিকতাকে খতম করা এবং সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করা।

খ. অথনৈতিক কল্যাণের পথ প্রশস্ত করার জন্য নিজের কষ্টোপার্জিত সম্পদকে বিলিয়ে দেওয়ার পবিত্র চেতনাকে অনুপ্রাণিত করা।

গ. যাকাত আদায়ের দ্বারা শ্রমবিমুখতার অবসান ঘটানো, আত্মশক্তি অর্জন করা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।

ঘ. বিত্তশালী মুসলিমদের ধনলিপ্সা দূর করা।

ঙ. কার্যকর চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং

চ. সামাজিক সুবিচার অর্জন।[25]

৩. অর্থনৈতিক উন্নয়নে যাকাত: সঠিকভাবে যাকাতকে ব্যবহার করতে পারলে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিমন্ডলে একটা তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি করা সম্ভব। এ ব্যাপারে অনেক গবেষণা হয়েছে, নিম্নে যাকাতের আর্থ-সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরা হলো:

১. দারিদ্র বিমোচন: দারিদ্র দু’প্রকার:

(১) কর্মহীন দরিদ্র

(২) কর্মরত দরিদ্র।

কর্মহীন দরিদ্র: কর্মহীন দরিদ্র তারাই যারা আসলেই বেকার, তাদের করার মত কিছুই নেই। এদেরকে মজুরী নির্ভরও বলা যেতে পারে। সত্যি বলতে কি এ শ্রেণির লোকদেরই যাকাতের অর্থ দরকার সবচেয়ে বেশি। সঙ্গে সঙ্গে এটাও উপলব্ধি করা দরকার, এ ধরনের সাহায্য সহযোগিতার ফলে তারা সামান্য দ্রব্যসামগ্রী কিনতে সক্ষম হবে যা তাদের শুধু বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে। এদের জন্য অতিরিক্ত কোনো পদক্ষেপ গৃহীত না হলে কোনোভাবেই এরা দারিদ্রসীমার উপর উঠে আসতে পারবে না।

কর্মরত দরিদ্র: অপরপক্ষে কর্মরত দরিদ্র হল তারা যারা কোনো না কোনো কাজে নিযুক্ত রয়েছে। যেমন, কৃষিপণ্য উৎপাদন, ছোট দোকান, ক্ষুদে ব্যবসা পরিচালনা কিংবা হাতের কাজ ইত্যাদি। যে কোনো কারণেই হোক তারা তাদের বর্তমান অবস্থান হতে কোনোক্রমেই আর সামনে এগুতে পারছে না। এসব লোকের জন্য চাই বিশেষ ধরনের সাহায্য সহযোগিতা, যাতে তারা স্ব স্ব পেশায় উৎপাদনের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। এদেরকে প্রয়োজনীয় উকরণ সরবরাহ, উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ে সাহায্য এবং প্রয়োজনীয় মূলধন যোগান দিতে হবে। যাকাতের অর্থের পরিকল্পিত ও যথাযথ ব্যবহার করা হলে উল্লেখিত সমস্যা সমাধানের ইতিবাচক ভূমিকা পড়বেই। কয়েকটি দেশের সমীক্ষা হতে দেখা গেছে সেসব দেশে যাকাতের মাধ্যমে প্রতি বছর মোট দেশীয় আয়ের ৩%-৪% পর্যন্ত ধনীদের কাছ থেকে দরিদ্রদের নিকট হস্তান্তরিত হয়েছে।[26]

২. বণ্টন: যাকাত ধনীদের কাছ থেকে দরিদ্রদের নিকট হস্তান্তরিত আয়। সকল ইসলামী অর্থনীতিবিদগণ একমত পোষণ করেছেন যে, যাকাত যদি যথাযথভাবে আদায় ও বণ্টিত হয় (প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বিনির্মাণসহ) তাহলে তা মুসলিম দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নতির স্তর নির্বিশেষে বিরাজমান মারাত্মক আয় ও ধনবন্টন বৈষম্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে। আল-তাহির দশ বছর মেয়াদের তথ্য ব্যবহার করে ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে আয়ের পার্থক্য যাকাতের প্রভাব নির্ধারণের জন্য একটা সরল তুলনাধর্মী স্থির অবস্থা নির্মাণ করে তার গৃহীত অনুমতির ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, আয়ের পার্থক্য ৯ থেকে ৬.৫ গুণ হ্রাস পায়। যারকা দেখিয়েছেন যে, যাকাত প্রতি বছর সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র ১০% এর আয়কে দ্বিগুণ করে দেয়, কারণ এ অর্থের প্রায় পুরোটাই ধনীদের কাছ থেকে এসেছে এবং দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।[27]

৩. ভোগ: গবেষণালব্ধ সমীক্ষায় দেখা যায়, ধনীদের তুলনায় দরিদ্রদের প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা বেশ উঁচু। আর অধিকাংশ মুসলিম দেশে এদের সংখ্যাটাই বেশি। যাকাত যেহেতু ধনীদের কাছ থেকে দরিদ্রদের কাছে হস্তান্তরিত আয় সেহেতু এ তথ্যের তাৎপর্য হলো অর্থনীতিতে এ ধরনের ব্যয়ের ফলে সামাজিক ভোগব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এসব দেশে ভোগ প্রবণতা নিঃসন্দেহে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে অনুকুল প্রভাব বিস্তার করবে।

৪. সঞ্চয় ও বিনিয়োগ: যাকাত ব্যক্তির সম্পদ অলসভাবে ফেলে রাখার উপর এক ধরনের আর্থিক শাস্তি আরোপ করায় তাকে প্রকৃতপক্ষে সম্পদ উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার বা বিনিয়োগ করতে বাধ্য করে। এর নীট ফল সঞ্চয়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, নেতিবাচক নয়। সুতরাং জোর দিয়েই বলা যায়, ইসলাম কোনো ব্যক্তির সঞ্চয় অলসভাবে ফেলে রাখতে বলে নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এর অনাকাঙ্খিত পরিণতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। সেজন্যই তিনি ইয়াতিমদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণকারীদের তা বিনিয়োগ করতে বলেছেন যেন যাকাত আদায়ের ফলে তা ধীরে ধীরে কমে না আসে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নির্দেশ আমাদেরকে সম্পদ অলসভাবে ফেলে রাখার চেয়ে বরং তা ব্যবহারের ফলে যা আয় হয় তা থেকে যাকাত দেওয়ার শিক্ষা দেয়।[28]

৫. স্থিতিশীলতা: যাকাতের মাধ্যমে যদি পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যায় তাহলে তা মুদ্রাস্ফীতি নিরোধক কৌশল হিসেবে অধিকতর কার্যকর হবে যদি উপযুক্ত বণ্টননীতি গৃহীত হয়। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, মুদ্রাস্ফীতি চাপের সময়ে যাকাতের অর্থের বৃহত্তম অংশ মূলধনী পণ্য আকারে বিতরণ এবং মুদ্রা সংকোচনের সময়ে ভোগ্য দ্রব্য বা নগদ আকারেই তা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ। অবশ্য এটা এক এক বার এক এক কৌশল হিসেবে বিবেচিত হবে।

৬. উৎপাদন মিশ্রণ: সমাজের বিত্তশালী শ্রেণির নিকট হতে দরিদ্র শ্রেণীর কাছে যাকাতের মাধ্যমে স্বল্প হলেও ক্রয় ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটে। যেহেতু দরিদ্রদের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেশি সেহেতু এর ফলে দেশের সার্বিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এর সুপ্রভাব পড়বে বলে আশা করা যায়।[29]

আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন দারিদ্র্য বিমোচন একমাত্র সরকারী ও বিদেশী অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। বস্তুত এদেশে বহু এন.জি.ও বিদেশী অনুদান নিয়ে দরিদ্র জনগণ বিশেষত গ্রামাঞ্চলের অসহায় জনসাধারণের মাঝে কাজ করে যাচ্ছে। তারা প্রধানত সুদের ভিত্তিতে অর্থ ঋণ দিয়ে কর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। একাজে খৃস্টান মিশনারী এনজিওগুলো খুবই তৎপর। অনেক বুদ্ধিজীবি ও সমাজ হিতৈষী ব্যক্তি হতাশা প্রকাশ করে থাকেন, তাদের হাতে নগদ অর্থ নেই বলেই দরিদ্র জনসাধারণের ভাগ্য পরিবর্তন করা যাচ্ছে না। একটু তলিয়ে বিচার করলে দেখা যেত এদেশে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ যাকাতের মাধ্যমে বিতরণ হয় তার সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ব্যবহার হলে লোকদের অবস্থার পরিবর্তন করা খুবই সম্ভব ছিল। যেমন বলা যায়, বহু ধনী ব্যক্তি বিশ-পঁচিশ হাজার টাকার উপর যাকাত দিয়ে থাকেন। কিন্তু তারা সাধারণত এই অর্থের বড় অংশ নগদ পাঁচ/দশ টাকার নোট পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশদিনে বাড়ির গেটে উপস্থিত গরীব নারী-পুরুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন, বাকিটা শাড়ী-লুঙ্গি আকারে বিতরণ করে থাকেন। কখনও কখনও এরা এলাকার মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং বা ইয়াতিমখানাতেও এ অর্থের কিছুটা দান করে থাকেন। এরা কখনও মুসাফির, ঋণগ্রস্ত বা অসুস্থ লোকদের বিবেচনায় আনেন না। এমনকি মুজাহিদদের কথা ভাবেনই না। অথচ এরাই যদি পরিকল্পিতভাবে এলাকার দুস্থ, বিধবা, সহায়-সম্বলহীন পরিবারের মধ্যে বাছাই করে প্রতি বছর অন্ততঃ তিন চারটি পরিবারকে নিজের পায়ে দাড়াবার জন্য রিক্সা, ভ্যান, নৌকা, সেলাইমেশিন কিংবা কয়েকটি ছাগল ইত্যাদি কিনে দিতেন তাহলে দেখা যেত তার একার প্রচেষ্টাতেই পাঁচ বছরে তার এলাকায় অন্ততঃ ১০টি পরিবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে। অপরদিকে ভিক্ষুক ও অভাবী পরিবারের সংখ্যাও কমে আসবে।

সমাজে বিদ্যমান অসহনীয় দারিদ্র্য ও বেকারত্ব নিরসনকল্পে বর্তমান সময়ে যাকাতের অর্থ পরিকল্পিতভাবে সংগ্রহ করে একটি তহবিল গঠন এবং সেই তহবিল হতেই দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কার্যপরিকল্পনা গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলামী ব্যাংকগুলি। ইসলামী ব্যাংকগুলি নিজেদের তহবিলের যাকাত ছাড়াও তাদের গ্রহকদের দেওয়া যাকাত নিয়ে গড়ে তুলেছে যাকাত ফাউন্ডেশন। মুলত তিনটি বৃহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই তহবিলের অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে। যথা:

ক. নগদ সাহায্য

খ. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং

গ. কর্মসংস্থান ও পূনর্বাসন।[30]

অনুরূপভাবে কোনো এলাকার বিত্তবান লোকজন যদি যাকাতে তহবিল গঠন করে দরিদ্র লোকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলেও গ্রাম বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহজতর হবে। নতুবা যাকাত সরকারী যাকাত ফান্ডে জমা দিতে হবে এবং সেখান থেকে জনকল্যাণের প্রয়োজনীয় কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করলে দরিদ্র জনগোষ্টির অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।

৪. উপসংহার:

আমাদের বিশ্বাস, সরকারের বাস্তবমুখী উদ্যোগ, প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন এবং কার্যকর ভূমিকা ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার পাশাপাশি চৌদ্দ কোটি জনতা অধ্যুষিত এই দেশে যারা সাহিবে নিসাব তারা সকলেই যদি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে নিয়মিত যাকাতের অর্থ পরিকল্পিতভাবে আল-কুরআনে উল্লিখিত খাতগুলোতে ব্যয়ের জন্য উদ্যোগী হন তাহলে দেশে গরীব জনগণের ভাগ্যের চাকা যেমন ঘুরবে তেমনি সরকারের রাজস্ব ফান্ড হবে সমৃদ্ধ আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি হবে আরও বিস্তৃত। এ জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছার ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার। তাই রাষ্ট্রের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি আর জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ।

প্রস্তাবনা:

১. শিক্ষা ব্যবস্থার সকল স্তরে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি যাকাত বিষয়ক ইসলামী অর্থনীতির শিক্ষা চালু করা।

২. সর্বস্তরের মানুষের কাছে যাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরা।

৩. সকল মুসলিম দেশে সরকারিভাবে যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪. প্রাক্কলিত ও প্রকৃত আদায়কৃত যাকাতের মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে। যাকাত আদায়ে ফাঁকি দেওয়াই এর মূল কারণ। অতএব, এক্ষেত্রে সরকারের পূর্ণ হস্তক্ষেপ ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন এবং সরকারের উচিত আল-কুরআনের পূর্ণাঙ্গ বিধান প্রতিষ্ঠার বিজ্ঞান ও বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ।

 

লেখক: ড. মুহাম্মাদ আব্দুল কাদের


[1]. মাওলানা হিফজুর রহমান, ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, অনুবাদ, মাওলানা আব্দুল আউয়াল (ঢাকা: ইফাবা, ১৯৯৮), পৃ. ২৯১।

[2]. আল্লামা ইউসুফ কারাদাওয়ী, ইসলামের যাকাত বিধান (১ম খণ্ড), অনুবাদ, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম, (ঢাকা: ইফাবা), পৃ. ৪২।

[3]. এম.এ হামিদ, ইসলামী অর্থনীতি, (রাজশাহী; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৯), পৃ. ২২২।

[4]. ইসলামী অর্থনীতি, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯৬।

[5]. এম.এ সালাম, সমাজ কল্যাণ (ঢাকা: অবিস্মরণীয় প্রকাশনী, বাংলা বাজর, ১৯৯৯), পৃ. ৯৪।

[6]. সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩৫-৩৬।

[7]. সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮৩।

[8]. সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১১০।

[9]. সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৭৭।

[10]. সুরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত: ২০।

[11]. অধ্যাপক মাওলানা এ. কিউ. এম. ছিফাতুল্লাহ, ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং (ঢাকা: প্রফেসর পাবলিকেশন্স, ২০০২), পৃ. ৪৫।

[12]. ইসলামের যাকাত বিধান, (১ম খণ্ড) প্রাগুক্ত, পৃ. ১৯১।

[13]. প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৬৪।

[14]. তালিকাটি A Draft of Zakat Act. Thought on Islamic Economics, (Dhaka, Islamic Economics Research Burea, 1980) থেকে গৃহীত, পৃ. ১১৭।

[15]. প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৫।

[16]. সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩৮।

[17]. সূর আল-বাকারা, আয়াত: ২৬৭।

[18]. ইসলামী অর্থনীতি, প্রাগুক্ত, পৃ. ২২৫।

[19]. অধ্যাপক মাওলানা এ. কিউ এম ছিফাতুল্লাহ, ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং, (ঢাকা: প্রফেসর পাবলিকেশন্স, ২০০২), পৃ. ৫০।

[20]. এ. এ. এম. হাবীবুর রহমান, ইসলামী ব্যাংকিং (ঢাকা: উত্তর যাত্রাবাড়ী, ২০০১), পৃ. ৮১।

[21]. A. M. al- Tayyar, Zakah: Spritual Growth and purification, Al- Jamuah, Vol, 19, Issue 8-9, Ramadan 1419 H. (1998-99), পৃ. ৪৩।

[22]. ইসলামী অর্থনীতি, প্রাগুক্ত, পৃ. ২২৯।

[23]. প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩০।

[24]. আবুল ফাতাহ মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া, ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ণ (ঢাকা: কওমী পাবলিকেশন্স, ২০০১), পৃ. ৫১৮।

[25]. ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫১।

[26]. ইসলামী অর্থনীতি, প্রাগুক্ত,পৃ. ২৩২।

[27]. প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩৩।

[28]. প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩৩।

[29]. প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩৩।

[30]. ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৪।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button