মিনা ট্রাজেডি ও শিয়া চক্রান্ত
প্রকাশ্য শত্রু সম্পর্কে সবাই সজাগ থাকে৷ আড়ালের শত্রু থেকে অসতর্ক থাকে অধিকাংশ মানুষ৷ তাই পৃথিবীর তাবৎ মুসলিম ইহুদিদের শত্রু জানলেও শিয়াদের সেভাবে দুশমন জ্ঞান করে না সাধারণ মুসলিমগণ৷ বাংলার অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ অজ্ঞতাবশত শিয়াদের ভিত্তিভূমি ইরানকে তো ইসলামের প্রকৃত ধারক-বাহকই মনে করে৷ অথচ ঐতিহাসিকভাবেই শিয়ারা ইসলামের চিরদুশমন ইহুদিদের মাসতুতো ভাইয়ের ভূমিকা পালন করেছে৷ রাসূল (সা) এর মাদানিজীবনে যে ইহুদিরা বারবার আঘাত করেছে সত্য ধর্ম ইসলামকে, তাদের ঔরসে জন্মনেয়া শিয়ারা খেলাফতে রাশেদার সময় ঠিক একই কাজ করেছে নিজেদের ইসলামের সবচেয়ে বড় দরদি দাবি করে৷
ইরানি পুরুষদের মুখে চাপ দাড়ি, গায়ে লম্বা জুব্বা আর নারীদের দীঘল কালো বোরকা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসরাইল-আমেরিকাকে কদিন পরপর দেয়া লোক দেখানো হুঁংকার আমমুসলিমকে ধোঁকায় ফেলে৷ অথচ তারা জানে না আজ ইসলামের প্রথম কিবলা ও কুরআনে উল্লেখিত মহানবী (সা) এর মেরাজের পুণ্যস্মৃতির ধারক আকসা মসজিদ জবরদখল করেছে ইহুদিরা৷ ঠিক একইভাবে তাদের মাতুলগোষ্ঠী শিয়াদের সাধনা বিশ্বমুসলিমের শ্বাশত কিবলা পবিত্র মসজিদ হারাম দখল করা৷ সে লক্ষ্যে তারা ইতোমধ্যে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে৷ ইসলামের ভিত্তিভূমি সৌদি আরবকে শিয়ারা এরইমধ্যে চারদিক থেকে বেষ্টন করার তৎপরতা জোরদার করেছে৷
সহিহ হাদিস বলে, কিয়ামতের আগ দিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মুসলিম উম্মাহকে বাঁচাতে ঈসা (আ) আসমান থেকে অবতীর্ণ হবেন৷ রাসূল (সা) বলেছেন, আকাশ থেকে ফেরেশতারা ঈসা (আ)কে রেখে যাবেন ঐতিহাসিক দামেস্ক জামে মসজিদের সাদা মিনারায়৷ সেই দামেস্ক আজ আলাওয়ি শিয়াদের দখলে৷ শিয়া নেতা বাশারই আজ কুরআন-হাদিসের অসংখ্য স্মৃতিপূর্ণ সিরিয়াকে দখলে রেখেছে৷ আরেক পুণ্যস্মৃতিময় ইয়ামান দখল করেছে শিয়া হাওছিরা৷ লেবাননেও আরেক শিয়াগোষ্ঠী হিজবুল্লাহদের উৎপাত অব্যাহত৷ এদের সবার নেতৃত্ব দানকারী ইরান শুধু এতেই থেমে নেই৷ মক্কা-মদিনার দেশ সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় স্থানীয় শিয়াদের নানাভাবে মদদ যোগাচ্ছে সুন্নিদের বিপক্ষে৷ আরববসন্তের ঢেউ সেসব এলাকায় যেন আছড়ে পড়ে এর জন্য হেন কাজ নেই ইরান করেনি৷
পূর্ববর্তী সরকার শিয়া ও সেকুলারদের প্রতি কিছুটা নরম ছিল৷ সালমান ক্ষমতা গ্রহণের পর বছর না পেরোতেই অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে৷ ঘরে-বাইরে শিয়াদের বিরুদ্ধে তিনি সজাগ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন৷ সিরিয়ায় বছরের পর ধরে শিয়া বাশারের নির্যাতনে অতিষ্ঠ সুন্নিদের সাহায্যে এগিয়ে যান৷ ইয়ামানে সংখ্যালঘু হয়েও বৈধ সুন্নি সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাতের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেন৷ শিয়া নেতাদের ডেকে নিয়ে তিনি বৈধ সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া অথবা কঠিন পরিণতির কথা বলেন৷ ইরানের প্রত্যক্ষ আস্কারায় তারা সালমানকে বুড়ো আঙুল দেখায়৷ মিত্রদেশ ও আলেমদের পরামর্শের ভিত্তিতে তিনি ইয়ামানে শিয়াবিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন৷ তিনি ইরানের এক নম্বর শত্রুতে পরিণত হন৷
খাদেমুল হারামাইন নিযুক্ত হবার পর তাঁর নেতৃত্বে প্রথম হজ অনুষ্ঠিত হলো৷ অনভিজ্ঞতাবশত ক্রেন দুর্ঘটনার পর সুযোগ নেয় ইরান৷ মিনাট্রাজেডিতে ইরান তার রাজনৈনিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে৷ যারা ইরানের বাহ্যিক কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ তারা শিয়াদের প্রকৃত চেহারা মিনাতেই দেখে নিতে পারেন৷ ইরান যদি মুসলিমউম্মাহর এত বড় মাতবর হত এর প্রতিকার তারা বিজাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ ফোরাম জাতিসংঘে চাইত না৷ মুসলমান তাদের ধর্মীয় অনুষঙ্গে প্রতিকার এভাবে বিজাতির কাছে চাইতে পারে তা অবিশ্বাস্য৷ আর মিনাট্রাজেডি যে সর্বশেষ শিয়াচক্রান্ত তা প্রমাণে ঘটনার পূর্বাপর কিছু তথ্যই যথেষ্ট৷ হজ শুরুর প্রাক্কালে মক্কায় এক ট্রাক জাল কুরআন শরিফ জব্দ করে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা৷ (ইনকিলাব) এটা তাদেরই কাজ বলে প্রতীয়মান৷ ঘটনার পর শিয়াদের ধর্মীয় নেতা খামেনি কালবিলম্ব না করে সৌদি সরকারকে এর জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেন৷ প্রেসিডেন্ট রুহানি এর জন্য সালমানকে অপরাধী করেন৷ তেহরানে শিয়ারা বিক্ষোভে রাজপরিবারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়৷ তেহরান তিনবার সৌদি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে৷ জাতিসংঘে দুর্ঘটনার তদন্ত দাবি করে ইরান৷ (প্রথম আলো) ইরানি মিডিয়া ঘটনা নিয়ে একাধিক গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে৷
জানা দরকার, সালমান হলেন কুরআনের হাফেজ৷ তাঁর সন্তানরা কেউ পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বড় হয়নি৷ মেয়েও কুরআনে হাফেজা৷ তিনি বিশ্বমোড়ল ওবামাকে রেখে আজান শুনে মসজিদে চলে যান৷ সদ্যবিদায়ী রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করেন মসজিদে হারামে৷
সৌদি সরকার সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়৷ যেমন ঊর্ধ্বে নয় পৃথিবীর কোনো সরকারই৷ সৌদি সরকার কখনো খেলাফত দাবি করেনি৷ তাই তাদের সঙ্গত সমালোচনায় দোষের কিছু নেই৷ তাদের রাজনৈতিক সমালোচনা মানে ধর্মের সমালোচনাও নয়৷ কিন্তু সৌদি সরকারের খাদেমুল হারামাইন ভূমিকার প্রশ্ন তুললে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেটা ছদ্মবেশি ইহুদিশক্তি তথা শিয়াদের সহযোগিতা করা হবে৷ এটা বোঝার জন্য জরুরি ইসলামের বিশুদ্ধ আকিদা এবং ইসলামের চির শত্রু ইহুদিদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা৷ পশ্চিয়া মিডিয়া যাদের চোখে পর্দা টেনে দিয়েছে, তাদের মাথায় এসব ঢোকার কথা নয়৷
পরিতাপের বিষয়, মুসলিমরা কখনোই মিডিয়ার গুরুত্ব বোঝেনি, নিজেদের মিডিয়া থাকলে তথ্যসন্ত্রাসীরা সুযোগ পেত না…
– আলী হাসান তৈয়ব
সৌদি ও ইরানি উভয় পক্ষই আজ নিজ নিজ পক্ষকে ইসলামের সেবক ও নিষ্পাপ ফেরেশতা হিসেবে তুলে ধরছে এবং অপর পক্ষকে ইবলীস হিসেবে প্রমাণ করছে। কিন্তু তাদের কারো বকবক শুনে আমরা আর বিভ্রান্ত হই না। তাদের সবাইকে আমাদের চেনা হয়ে গেছে।
আমরা এই উপসংহারে এসেছি যে-
সৌদি = ইহুদী
শিয়া = রাশিয়া
আইএস = ইসরাইলী সার্ভেন্ট
এরা কেউই ইসলামের রক্ষক নয়, ইসলামের প্রতিনিধি নয়। তারা কেউ আল্লাহর বান্দা নয়, তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ প্রভুর একনিষ্ঠ সেবাদাস মাত্র।
শিয়ারা হারাম শরীফ দখলের চক্রান্ত করছে- বেশ ভাল কথা। কিন্তু সৌদি রাজপরিবার কি মক্কা ও মদীনার নিয়ন্ত্রণ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে? তারা কি হারাম শরীফ যুদ্ধ করে দখল করেনি? তারা কি নবীজীর পবিত্র ভূমিকে কুক্ষিগত করে নিজেদের বংশ ও পরিবারের নামে নামকরণ করেনি? এমন তো নয় যে, একপক্ষ আল্লাহ ও নবীর মনোনীত প্রতিনিধি এবং কাবাঘরের বৈধ খাদেম ও রক্ষক, আরেকপক্ষ জবরদখলকারী বা জবরদখলের ইচ্ছা পোষণকারী। তবে ইসলামের প্রকাশ্য শত্রু ইহুদী বা নাস্তিকরা যদি কাবাঘরের দিকে কুদৃষ্টি দেয়, তাহলে অবশ্যই আমরা সেটাকে চক্রান্ত বা আগ্রাসন বলব এবং তার চাইতে বরং মুসলিম শাসকরাই এর হেফাজতে থাকুক এটাই চাইব। অবশ্য দুর্ভাগ্যক্রমে সৌদি ও ইরানী উভয় শাসকগোষ্ঠীই যথাক্রমে ইসরাইল ও রাশিয়ার সেবাদাসের ভূমিকায় আছে। সুতরাং আমাদের উচিত হবে না কোন পক্ষেরই সাফাই গাওয়া।
আর ইরান ও ইরানপন্থী শিয়া দলগুলোর সম্পর্কে আপনি এ প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, তাদের ইসরাইলবিরোধী সংগ্রাম ইসলামের জন্য, নাকি নিছক আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। কিন্তু ইসরাইল ও ইরান আসলে একে অপরের বন্ধু, তাদের পরস্পরের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই, সবই লোক দেখানো পাতানো খেলা- এমন ধারণা ভিত্তিহীন। কারণ, বাস্তবেই তারা একে অপরের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে লিপ্ত এবং উভয় পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বরং ইসরাইলের দালালির দিক থেকে সৌদিদেরকেই প্রথম মনে হবে এবং রাশিয়ার দালালিতে ইরান প্রথম হবে।
সৌদি রাজপরিবার যদি ইসলামের সেবকই হয়ে থাকে, তাহলে বলুন, ইসরাইলের গাজা অভিযানের খরচ কে বহন করেছে? আচ্ছা ধরে নিলাম, এটা না হয় গুজব। কিন্তু বিশাল সম্পদের অধিকারী সৌদি আরবের সম্মতি ছাড়া ইসরাইলের টিকে থাকা সম্ভব কিনা। ইসরাইলের মোকাবেলায় ফিলিস্তিনীদেরকে অর্থ দিয়েও কি সাহায্য করতে পারে না সৌদিরা? কিংবা পয়সা খরচ করে আমেরিকায় লবি করেও কি ফিলিস্তিনের অনুকূলে কোন সিদ্ধান্ত নেয়াতে পারে না?
ইসরাইলের নেতানিয়াহুর প্রতি সৌদি সহায়তার ব্যাপারটা নাহয় অসমর্থিত ও প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু মিশরের সিসির প্রতি সৌদি সহায়তা তো ওপেন সিক্রেট। ইসরাইলের প্রকাশ্য ও সক্রিয় দোসর সিসি তো সৌদিদের প্রকাশ্য মিত্র। গাজার টানেলগুলো কারা বন্ধ করে দিচ্ছে, আহত ফিলিস্তিনীদের চিকিৎসা আটকে রেখে কারা গোয়েন্দা তথ্য আদায় করছে, সেগুলো আর নতুন করে না বললেও চলে।
অতএব, ইহুদীবাদের এই একনিষ্ঠ সেবকদের পক্ষে উকালতি করতে গিয়ে ইহুদীবিরোধী জজবা প্রদর্শনের এ দৃষ্টিকটু প্রহসন না করাই ভাল।
যা রটে, তার কিছু তো ঘটে। শুধু কোন বিদেশী পত্রিকা থেকে কোন খবর এলে সেটাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করা যাবে না- একথা ঠিক। কিন্তু আপনার পরিচিত হাজী কেউ থেকে থাকলে জিজ্ঞেস করে দেখুন, ঘটনা সত্য নাকি গুজব। ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী হাজীদের সাথে আলাপ করলে জানতে পারবেন লোমহর্ষক তথ্য। যুবরাজের ভ্রমণের কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, এটা মিথ্যা বা গুজব নয়। এমনকি নিহত-আহত নির্বিশেষে বহু মানুষকে বিগলন করে গায়েব করা হয়েছে।