মক্কা ট্রাজেডিতে দায় কার?
১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পবিত্র মক্কা নগরীর মসজিদুল হারামের আঙিনায় নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ক্রেন ভেঙে পড়ে শতাধিক লোক নিহত হওয়ার ঘটনা যথারীতি মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র আলোচনার ঝড় তুলেছে। কেউ কেউ আলোচিত ‘নাইন ইলেভেন’ তারিখে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিখ্যাত রিয়েল এস্টেট ও কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি ‘বিন লাদেন গ্রুপ’-এর ক্রেন হওয়ায় টুইন টাওয়ার হামলার সঙ্গে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টাও করেছেন! ডেইলি মেইলও এদিকেই ইঙ্গিত করে রিপোর্ট করেছে! অনেকে বলছেন, অন্য ১০টি নির্মাণের মতো কাজের এরিয়া ঘিরে রাখলে আর এমনটি হতো না। কিন্তু যে কথাটি সবচেয়ে জোরালোভাবে উঠেছে সেটা হলো, সৌদি সরকার তথা হারাম কর্তৃপক্ষ হজের সময় কাজ বন্ধ রাখলে আর এমন অনভিপ্রেত দুর্ঘটনা নাও ঘটতে পারত।
প্রথমোক্ত মন্তব্য সম্পর্কে তেমন কিছু বলা প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয় মন্তব্যটি নিশ্চয়ই এমন লোকেরা করছেন, যারা মক্কার হারামের কাজের ক্ষেত্র নিজের চোখে দেখেননি বা এ সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। হারাম শরিফে এখন কাবার চত্বর প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ চলছে। যার চারদিক থেকে মসজিদুল হারামের বিশাল ভবনে ঘেরা। এখানে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় বড় প্রায় দুই ডজন ক্রেন সেই কাবার আঙিনা ঘিরেই কাজ করছে। যদি কাজের এরিয়ায় মানুষের চলাচল বন্ধ করতে হয়, তবে হজ ও ওমরার মৌলিক কাজ তাওয়াফ বন্ধ করে ফেলতে হবে!, যা অসম্ভব।
আর দ্বিতীয় মন্তব্যটি যারা করেছেন, সেটা আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা যুক্তিসঙ্গত মনে হলেও অবাস্তব। কেননা হারাম শরিফ সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন, তারা বলতে পারবেন, মক্কার মাতাফ (তাওয়াফের ক্ষেত্র) সারা বছরই লোকে পরিপূর্ণ থাকে। যে ভিড়টা অন্য সময় দিনে দুই-চারটা টাইমে বেশি হয়, সেটা হজের সময় হয়তো সারা দিন থাকে। এই যা পার্থক্য। কিন্তু হাজার হাজার লোক ২৪ ঘণ্টাই থাকে। তাহলে হজের সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে অন্য সময় করলে যে হতাহতের সংখ্যা আরও কম হতো, তা কি করে নিশ্চিত করা যাবে? বরং স্বাভাবিকভাবে হজের সিজনে সবসময় কাবার আঙিনা কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকে। সেখানে ৫ ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা থাকে না। শুক্রবার মাগরিবের আগ মুহূর্তের ভিড় থাকে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে (১ লাখ ৫ হাজার লোক ধারণে সক্ষম চত্বর যখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ, তখন) এত বিশাল ক্রেন পতিত হওয়ার ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি হওয়ার কথা থাকলেও আল্লাহর মেহেরবানিতে সেটা হয়নি। সুতরাং হজের মৌসুমে কাজ বন্ধ রাখলে যে খুব বেশি উপকার হতো ব্যাপারটি তেমন নয়।
প্রকৃতপক্ষে আরবে ঝড়-বৃষ্টি হয় খুবই কম। কিন্তু নানা কারণে সামান্য ঝড় বা বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ২০০৯ সালে জেদ্দায় শুধু বৃষ্টির পানিতে ১০৩ জন লোক মারা যায়! রিয়াদে গেল বছর সামান্য কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, আমাদের দেশে টানা দুই সপ্তাহ বৃষ্টি হলেও ততটা হতো না। আর মক্কার দুর্ঘটনার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রচন্ড ঝড় বইছিল। একটু পর শুরু হয় বৃষ্টি, যা সচরাচর সেখানে দেখা যায় না। এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছিল ক্রেনটি।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, সৌদি সরকারের সমালোচনার অনেক পয়েন্ট থাকতে পারে। কিন্তু হাজীদের নিরাপত্তা ও সার্বিক সেবায় তারা কতটা আন্তরিক ও সিরিয়াস তা একান্ত অন্ধ সৌদি সমালোচক ছাড়া যে কোনো হাজীই অকপটে স্বীকার করবেন। সুতরাং ওই দুর্ঘটনায় তাদের কোনো অবহেলা বা আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল- এ দাবি অবাস্তব।
আহমাদ উল্লাহ