ইমাম মালিক (রহঃ)
নাম, উপনাম ও বংশ :
নাম মালিক, উপনাম আবূ আব্দুল্লাহ। বংশনামা : মালিক বিন আনাস বিন আবূ আমির বিন আমর বিন হারিস আল-আসবাহী। তিনি আরবের প্রসিদ্ধ গোত্র কাহ্ত্বান এর উপগোত্র আসবাহ্ অন্তর্ভূক্ত, এজন্য ‘আল-আসবাহী’ বলে পরিচিত।[1]
জন্ম ও প্রতিপালন :
ইমাম মালিক (রহ.) পবিত্র মদীনা নগরীতে এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষানুরাগী মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেন। জন্মের সন নিয়ে কিছু মতামত থাকায় ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন : বিশুদ্ধ মতে ইমাম মালিক (রহ.)-এর জন্ম সন হল ৯৩ হিজরী, যে সনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খাদেম আনাস বিন মালিক < মৃত্যুবরণ করেনই।[2]
তিনি পিতা আনাস বিন মালিকের কাছে মদীনায় প্রতিপালিত হন। তাঁর পিতা তাবে-তাবেঈ ও হাদীস বর্ণনাকারী ছিলেন, যার কাছ থেকে ইমাম যুহুরীসহ অনেকেই হাদীস বর্ণনা করেন। খুদ ইমাম মালিকও পিতার নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেন।[3] তাঁর দাদা আবূ আনাস মালিক (রহ.) প্রসিদ্ধ তাবেঈ ছিলেন, যিনি ওমার, আয়িশা ও আবু হুরায়রা < হতে হাদীস বর্ণনা করেন।[4] তাঁর পিতামহ আমির বিন আমর < প্রসিদ্ধ সাহাবী ছিলেন।[5] এ সম্ভ্রান্ত দ্বীনী পরিবেশে জ্ঞানপিপাসা নিয়েই তিনি প্রতিপালিত হন।
শিক্ষা জীবন :
রাসূল (ছাঃ)-এর হিজরতের পর হতে আজও পর্যন্ত দ্বীনী জ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্র হলো মদীনা। সে মদীনাতে জন্মলাভ করার অর্থ হল দ্বীনী জ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্রেই জন্ম লাভ করা। বিশেষ করে বংশীয়ভাবে তাঁদের পরিবার ছিল দ্বীনী জ্ঞানচর্চায় অগ্রগামী। এজন্য তিনি শৈশবকাল হতেই শিক্ষা শুরু করেন। বিশেষ করে তাঁর মাতা তাকে শিক্ষার প্রেরণা যোগান। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন : আমি একদিন মাকে বললাম, ‘‘আমি পড়ালিখা করতে যাব! মা বললেন : আস শিক্ষার লেবাস পড়, অতঃপর আমাকে ভাল পোষাক পড়ালেন, মাথায় টুঁপি দিলেন এবং তার উপর পাগড়ী পড়িয়ে দিলেন, এরপর বললেন : এখন পড়া লিখার জন্য যাও।
তিনি বলেন : মা আমাকে ভালভাবে কাপড় পড়িয়ে দিয়ে বলতেন : যাও মদীনার প্রসিদ্ধ আলিম রাবিয়াহর কাছে এবং তাঁর জ্ঞান শিক্ষার আগে তাঁর আদব আখ্লাক শিক্ষা কর।[6] এভাবে তিনি মদীনার প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস, ফকীহদের নিকট হতে শিক্ষালাভ করেন।
ইমাম মালিকের (রহ.) শিক্ষক বৃন্দ : ইমাম মালিক (রহ.) অসংখ্য বিদ্যানের নিকট শিক্ষালাভ করেন। ইমাম যুরকানী (রহ.) বলেন : ‘‘ইমাম মালিক (রহ.) নয়শতর অধিক শিক্ষকের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বিশেষ করে ইমাম মালিক স্বীয় গ্রন্থ মুয়াত্ত্বায় যে সব শিক্ষক হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাদেরই সংখ্যা হল ১৩৫ জন, যাদের নাম ইমাম যাহাবী ‘‘সিয়ার’’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।[7] তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন নিম্নরূপ :
১. ইমাম রাবীয়া বিন আবূ আবদুর রহমান (রহ.)।
২. ইমাম মুহাম্মদ বিন মুসলিম আয্যুহুরী (রহ.)।
৩. ইমাম নাফি মাওলা ইবনু ওমার (রহ.)।
৪. ইব্রাহীম বিন উক্বাহ (রহ.)।
৫. ইসমাঈল বিন মুহাম্মদ বিন সা’দ (রহ.)।
৬. হুমাইদ বিন কায়স আল ‘আরজ (রহ.)।
৭. আইয়ূব বিন আবী তামীমাহ আস্সাখতিয়ানী (রহ.) ইত্যাদি।[8]
ইমাম মালিক (রহ.)-এর ছাত্র বৃন্দ : ইমাম মালিক (রহ.) হলেন ইমামু দারিল হিজরাহ, অর্থাৎ মদীনার ইমাম। অতএব মদীনার ইমামের ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য কে না চায়। তাই তাঁর ছাত্র অগণিত। ইমাম যাহাবী উল্লেখযোগ্য ১৬৬ জনের নাম বর্ণনা করেছেন। ইমাম খাতীব বাগদাদী ৯৯৩ জন উল্লেখ করেন।[9] ইমামের প্রসিদ্ধ কয়েকজন ছাত্রের নাম নিম্নে প্রদত্ত্ব হল :
১. ইমাম মুহাম্মদ বিন ইদ্রীস আশ্শাফেঈ (রহ.)।
২. ইমাম সুফাইয়ান বিন উয়ায়নাহ (রহ.)।
৩. ইমাম আব্দুল্লাহ বিন মুবারক (রহ.)।
৪. ইমাম আবু দাউদ আত্তায়ালিসী (রহ.)।
৫. হাম্মাদ বিন যায়দ (রহ.)।
৬. ইসমাঈল বিন জাফর (রহ.)।
৭. ইবনু আবী আযযিনাদ (রহ.) ইত্যাদি।[10]
জ্ঞান গবেষণায় ইমাম মালিক (রহ.) :
ইমাম মালিক (রহ.) জন্মগতভাবেই অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। মেধা শক্তি ছিল খুবই প্রখর। আবূ কুদামাহ বলেন : ‘‘ইমাম মালিক স্বীয় যুগে সর্বাধিক মেধা শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন।[11]
হুসাইন বিন উরওয়াহ হতে বর্ণিত : তিনি বলেন : ‘‘ইমাম মালিক বলেন : একদা ইমাম যুহুরী (রহ.) আমাদের মাঝে আসলেন, আমাদের সাথে ছিলেন রাবীয়াহ। তখন ইমাম যুহুরী (রহ.) আমাদেরকে চল্লিশের কিছু অধিক হাদীস শুনালেন। অতঃপর পরেরদিন আমরা ইমাম যুহুরীর কাছে আসলাম, তিনি বললেন : কিতাবে দেখ আমরা কি পরিমান হাদীস পড়েছি, আরো বললেন, গতকাল আমরা যে হাদীস বর্ণনা করেছি, তোমরা কি কিছু পড়েছ? তখন রাবীয়া বললেন : হ্যাঁ, আমাদের মাঝে এমনও ব্যক্তি আছেন যিনি গতকাল আপনার বর্ণনাকৃত সব হাদীস মুখস্ত শুনাতে পারবেন। ইমাম যুহুরী বললেন : কে তিনি? রাবিয়া বললেন : তিনি ইবনু আবী আমীর অর্থাৎ ইমাম মালিক। ইমাম যুহুরী বললেন : হাদীস শুনাও, ইমাম মালিক বলেন : আমি তখন গতকালের চল্লিশটি হাদীস মুখস্ত শুনালাম। ইমাম যুহুরী বলেন : আমার ধারণা ছিল না যে, আমি ছাড়া এ হাদীসগুলো এভাবে আর দ্বিতীয় কেউ মুখস্ত করেছে।
অতএব ইমাম মালিক (রহ.)-এর অসাধারণ পান্ডিত্বের সাথে গভীরভাবে জ্ঞান গবেষণা ও সংরক্ষণ সম্পর্কে আর বেশী কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।
হাদীস শাস্ত্রে ইমাম মালিক (রহ.) : হাদীস শাস্ত্রে ইমাম মালিক (রহ.) এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, হাদীস সংকলনে অগ্রনায়ক। যদিও তাঁর পূর্বে কেউ কেউ হাদীস সংকলন করেন, যেমন ইমাম যুহুরী, কিন্তু ইমাম মালিক (রহ.)-এর হাদীসের সাধনা, সংগ্রহ ও সংকলন ছিল বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এজন্যই তাঁর সংকলিত গ্রন্থকে বলা হয়, ‘‘আল্লাহর কিতাব কুরআনের পর সর্ববিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ ইমাম মালিকের মুয়াত্ত্বা গ্রন্থ।’’[12]
তিনি হাদীস শিক্ষায় পারিবারিকভাবে উৎসাহী হলেও তাঁর অসাধ্য সাধন এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অনেক অগ্রসর হয়েছেন। শয়নে স্বপনে সব সময় একই চিন্তা, কিভাবে তিনি হাদীস শিক্ষালাভ করবেন। মানুষ যখন অবসরে তখন তিনি হাদীসের সন্ধানে। ইমাম মালিক একদা ঈদের সালাতে ইমাম যুহুরীকে পেয়ে মনে করলেন, আজ মানুষ ঈদের আনন্দে ব্যস্ত, হয়ত ইমাম যুহুরীর কাছে একাকী হাদীস শিক্ষার সুযোগ পাওয়া যাবে। ঈদের ময়দান হতে চললেন ইমাম যুহুরীর বাসায়, দরজার সামনে বসলেন, ইমাম ভিতর থেকে লোক পাঠালেন গেটে দেখার জন্য, ইমামকে জানানো হল যে, গেটে আপনার ছাত্র মালিক, ইমাম বললেন : ভিতরে আসতে বল। ইমাম মালিক বলেন, আমি ©র্ভতরে গেলাম। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মনে হয় তুমি সালাতের পর বাড়ীতে যাওনি? আমি বললাম : হ্যাঁ যাইনি, জিজ্ঞাসা করলেন, কিছু খেয়েছ কি? আমি বললাম : না, তিনি বললেন : খাও, আমি বললাম : খাওয়ার চাহিদা নেই। তিনি বললেন, তাহলে তুমি কি চাও? আমি বললাম : আমাকে হাদীস শিখান, অতঃপর তিনি আমাকে সতেরটি হাদীস শিখালেন।[13]
ইমাম মালিক (রহ.) বেশীভাগ সময় একাকী থাকা পছন্দ করতেন, তাঁর বোন পিতার কাছে অভিযোগ করলেন, আমাদের ভাই মানুষের সাথে চলাফিরা করে না। পিতা জবাব দিলেন : মা তোমার ভাই রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীস মুখস্ত করায় ব্যস্ত, তাই একাকী থাকা পছন্দ করে।[14]
হাদীস সংগ্রহে কঠোর সতর্কতা:
ইমাম মালিক (রহ.) হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহে সদা ব্যস্ত হলেও যেখানেই বা যার কাছেই হাদীস পেলে তিনি তা গ্রহণ করতেন না, যতক্ষণ না হাদীস বর্ণনাকারীর ঈমান-আক্বীদাহ ও সততা সম্পর্কে অবগত হতে পারতেন। বিশ্বস্ত প্রমাণিত হলে হাদীস গ্রহন করতেন। ইমাম সুফাইয়ান ইবনু উইয়ায়না (রহ.) বলেন : ‘‘আল্লাহ তা’আলা ইমাম মালিককে রহম করুন, তিনি হাদীসের বর্ণনাকারীর ব্যাপারে খুব কঠিনভাবে যাচাই বাছাই করতেন (সহজেই কারো হাদীস গ্রহণ করতেন না)।’’ আলী বিন মাদীনী (রহ.) বলেন : ‘‘হাদীস গ্রহণে কঠোর নীতি ও সতর্কতায় ইমাম মালিকের ন্যায় আর কেউ আছে বলে আমি জানিনা।’’[15] ইমাম মালিক বিদ’আতীদের থেকে হাদীস গ্রহণ করতেন না।[16] এ সতর্কতা শুধু তিনি নিজেই অবলম্বন করেন নি, বরং তিনি অন্যদেরকেও গুরুত্বারোপের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন :
‘‘হাদীস হল দ্বীনের অন্যতম বিষয়, অতএব ভালভাবে লক্ষ কর তোমরা কার নিকট হতে দ্বীন গ্রহণ করছ। আমি সত্তর জন এমন ব্যক্তি পেয়েছি যারা রাসূল (ছাঃ)-এর নামে হাদীস বর্ণনা করে, কিন্তু আমি তাদের কিছুই গ্রহণ করিনি। যদিও তারা অর্থ সম্পদে আমানতদার হয়, কিন্তু এ বিষয়ে তাদেরকে আমি যোগ্য মনে করিনি। অথচ আমাদের মাঝে ইমাম যুহুরীর আগমন হলে হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহে আমরা তাঁর দরবারে ভীর জমাতাম’’।[17]
সুতরাং ইমামু দারিল হিজরা বা মাদীনার ইমাম মালিক (রহ.) রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহে যেমন জীবন উৎসর্গ করেছেন, তেমনি হাদীস সংরক্ষণে খুব কঠোর ভূমিকা রেখেছেন।
হাদীস পালনে ইমাম মালিক (রহ.):
হাদীস শুধু কিতাবের পাতায় নয়, বরং তা বাস্তবে পালনের অন্যতম দৃষ্টান্ত হলেন ইমাম মালিক (রহ.)। আব্দুল্লাহ বিন বুকাইর বলেনঃ আমি ইমাম মালিককে বলতে শুনেছি তিনি বলেন : ‘‘আমি কোন আলিমের কাছে যখন বসেছি। অতঃপর তার কাছ হতে বাড়ীতে আসলে তার কাছে শুনা সব হাদীস মুখস্ত করে ফেলি এবং ওই হাদীসগুলির মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত বা আমল না করা পর্যন্ত ওই আলিমের বৈঠকে ফিরে যাইনি।’’[18]
হাদীস শিক্ষাদান ও ফতোয়া প্রদান:
ইমাম মালিক (রহ.) শুধু হাদীস শিক্ষা ও আমল করেই ক্ষান্ত হননি, বরং শিক্ষার পাশাপাশি মানুষকে শিক্ষা দান ও ফতোয়া প্রদানে বিড়াট অবদান রেখেছেন। ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেন : ইমাম মালিক (রহ.) ২১ বছর বয়সে হাদীসের পাঠদান ও ফতোয়া প্রদানে পূর্ণ যোগ্যতা লাভ করেন।[19] ইমাম মালিক (রহ.) বলেন : ইচ্ছা করলেই শুধু হাদীস শিক্ষা ও ফতোয়া প্রদানের জন্য মসজিদে বসা যায় না, রবং এ ক্ষেত্রে যোগ্য ও বিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নিতে হবে, তারা যদি উপযুক্ত মনে করেন তাহলে এ কাজের জন্য নিয়োজিত হতে পারে। সত্তর জন বিজ্ঞ পন্ডিত- শাইখের আমার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদানের পর আমি এ কাজে নিয়োজিত হই।[20] মুস্‘আব বিন আব্দুল্লাহ বলেন : ‘‘ইমাম মালিককে কোন হাদীস জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অযূ করে ভাল পোষাক পড়ে সুন্দরভাবে প্রস্ত্ততি নিতেন, তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাবে বলেন : এ হল রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীসের জন্য সম্মান প্রদর্শন।’’[21] সারা মুসলিম বিশ্ব হতে শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র মদীনায় জ্ঞান পিপাসুরা শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান এবং ইমাম মালিকের মত মুহাদ্দিসের নিকট হতে হাদীস শিক্ষালাভ করে ধন্য হতেন।
ইমাম মালিক (রহ.) ফতোয়া প্রদানেও যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করতেন। জটিল বিষয়গুলো দীর্ঘ গবেষণার পর ফতোয়া প্রদান করতেন। ইবনু আব্দুল হাকীম বলেন : ‘‘ইমাম মালিককে (রহ.) কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি প্রশ্নকারীকে বলতেন যাও আমি ওই বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করি।’’ আব্দুর রহমান বিন মাহদী বলেন : ইমাম মালিক বলেন, ‘‘কখনও এমন মাস‘আলা এসেছে যে, চিন্তা-গবেষণা করতে আমার গোটারাত কেটেগেছে।’’[22] ইমাম মালিক (রহ.) কোন বিষয় উত্তর না দেয়া ভাল মনে করলে ‘‘জানি না’’ বলতেও কোন দ্বিধাবোধ করতেন না।[23] কারণ তিনি মনে করতেন প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া মানে জান্নাত ও জাহান্নামের সম্মুখীন হওয়া। প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যেন আখিরাতে জবাব দিহিতার সম্মুখীন হতে না হয়।[24]
সঠিক আক্বীদাহ বিশ্বাসে ইমাম মালিক (রহ.) : আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদাহ-বিশ্বাসের অন্যতম ইমাম হলেন ইমাম মালিক (রহ.)। বিশেষ করে আল্লাহ তা’আলার সিফাত গুণাবলীর প্রতি ঈমানের যে ক্বায়দা বা নীতি ইমাম মালিক (রহ.) মুতাযিলাদের প্রতিবাদে বর্ণনা করেন, সেটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের নীতি। যেমন ইমাম ইবনু আবিল ইয্ আল হানাফী শারহুল আক্বীদাহ আত তাহাবিয়ায় উল্লেখ করেন।[25] কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসের আলোকে ইমাম মালিক (রহ.) ঈমান আক্বীদাহর সকল বিষয়ে হকপন্থীদের সাথে একমত ছিলেন।[26]
ইমাম মালিক (রহ.) সম্পর্কে আলিম সমাজের প্রশংসা :
১. ইমাম শাফেঈ (রহ.) বলেন : ‘‘আলিম সমাজের আলোচনা হলে ইমাম মালিক তাদের মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র, কেউ ইমাম মালিকের স্মৃতিশক্তি, দৃঢ়তা, সংরক্ষণশীলতা ও জ্ঞানের গভীরতার সমপর্যায় নয়। আর যে ব্যক্তি সহীহ হাদীস চায় সে যেন ইমাম মালিকের কাছে যায়।’’[27]
২. ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেন : ‘‘বিদ্যানদের অন্যতম একজন ইমাম মালিক, তিনি হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে একজন অন্যতম ইমাম, জ্ঞান-বুদ্ধি ও আদাব আখলাকসহ হাদীসের প্রকৃত অনুসারী ইমাম মালিকের মত আর কে আছে?’’[28]
৩. ইমাম নাসাঈ (রহ.) বলেন : ‘‘তাবেঈদের পর আমার কাছে ইমাম মালিকের চেয়ে অধিক বিচক্ষণ আর কেউ নেই এবং হাদীসের ক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে অধিক আমানতদার আমার কাছে আর কেউ নেই।’’[29]
ইমাম মালিকের (রহ.) গ্রন্থাবলী:
ইমাম মালিক (রহ.)-এর বেশ কিছু রচনাবলী রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল :
১. আল মুয়াত্ত্বা।[30] হাদীসের জগতে কিছু ছোট ছোট সংকলন শুরু হলেও ইমাম মালিকের ‘মুয়াত্ত্বা’ সর্ব প্রথম হাদীসের উল্লেখযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য সংকলন। এ গ্রন্থে ইমাম মালিক (রহ.) রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীস, সাহাবী ও তাবেঈদের হাদীস এবং মদীনাবাসীর ইজমা সহ অনেক ফিকহী মাসআলা বিশুদ্ধ সনদের আলোকে সংকলন করেন। তিনি দীর্ঘদিন সাধনার পর, কেউ বলেন চল্লিশ বৎসর সাধনার পর এ মূল্যবান গ্রন্থ সংকলন করেন। সে সময় বিশুদ্ধতার দিক দিয়ে হাদীসের গ্রন্থ ‘মুয়াত্ত্বা’ খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন : ‘‘কিতাবুল্লাহ অর্থাৎ কুরআন এর পরই সর্ব বিশুদ্ধ গ্রন্থ হল ইমাম মালিকের ‘‘মুয়াত্ত্বা’’।[31] হ্যাঁ, সহীহ বুখারীর সংকলনের পূর্বে মুয়াত্ত্বাই সর্ব বিশুদ্ধ গ্রন্থ ছিল। অবশ্য এখন সহীহ বুখারী সর্ববিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ।
২. ‘‘কিতাবুল মানাসিক’’,[32]
৩. ‘‘রিসালাতুন ফিল কাদ্র ওয়ার্রাদ আলাল কাদারিয়া’’।[33]
৪. ‘‘কিতাব ফিন্নুজুমি ওয়া হিসাবি মাদারিয্যামানি ওয়া মানাযিলিল কামারি’’।[34]
৫. ‘‘কিতাবুস্সিররি’’।[35]
৬. ‘‘কিতাবুল মাজালাসাত’’।[36] ইত্যাদি সহীহ সনদে প্রমাণিত যে, এ সব ইমাম মালিক (রহ.)-এর সংকলিত ও রচিত গ্রন্থ। ইহা ছাড়াও আরো অনেক গ্রন্থ রয়েছে।[37]
ইমাম মালিক (রহ.)-এর মৃত্যুবরণ : ইমাম মালিক (রহ.) ১৭৯ হিঃ রবিউল আউয়াল মাসে ৮৬ বছর বয়সে মদীনা মুনাওয়ারায় মৃত্যুবরণ করেন। এবং তাকে মদীনার কবরস্থান ‘‘বাকী’’তে দাফন করা হয়।[38] আল্লাহ তাঁকে রহম করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দান করুন। আমীন!
– আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
[1] তারতীবুল মাদারিক, ১/১০২ পৃঃ, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/৪৮ পৃঃ, আল-আনসাব লিস্সাম আনী, ১/২৮৭ পৃঃ, আত্-তামহীদ, ১/৮৯ পৃঃ, মানাকিব মালিক লিয্যাওয়াবী, ১৬০-১৬২ পৃঃ, আল-ইনতিকা, ৯-১১ পৃঃ ইত্যাদি।
[2] তারতীবুল মাদারিক, ১/১১০ পৃঃ, মানাকিব মালিক লিয্যাওয়াবী, ১৫৯ পৃঃ।
[3] মান্হাজু ইমাম মালিক, ২২ পৃঃ।
[4] তারতীবুল মাদারিক, ১/১০৭ পৃঃ।
[5] আল ইসাবাহ ৭/২৯৮ পৃঃ।
[6] তারতীবুল মাদারিক, ১/১১৯ পৃঃ।
[7] সিয়ারা আলামুন্নুবালা, ৮/৪৯ পৃঃ।
[8] সিয়ারু আলামুন্নুবালা, ৮/৪৯-৫১ পৃঃ।
[9] তারতীবুল মাদারিক, ১/২৫৪ পৃঃ। সিয়ারু আলামুন্নুবালা, ৮/৫২ পৃঃ।
[10] সিয়ারু আলামুন্নুবালা, ৮/৫২-৫৪ পৃঃ।
[11] আত্-তামহীদ, ১/৮১ পৃঃ।
[12] আত্তামহীদ, ১/৭৬-৭৯ পৃঃ, আল-হুলিয়াহ, ৬/৩২৯ পৃঃ, অবশ্য এ মন্তব্য সহীহ বুখারীর পূর্বে, সহীহ বুখারী সংকলনের পর বুখারী সর্ববিশুদ্ধ গ্রন্থ।
[13] তারতীবুল মাদারিক, ১/১২১ পৃঃ।
[14] তারতীবুল মাদারিক, ১/১১৯ পৃঃ।
[15] আল ইরশাদ লিল খালিলী, ১/১১০-১১২ পৃঃ।
[16] আল মুহাদ্দিস আল ফাসিল, (৪১৪-৪১৬) পৃঃ, আল ইনতিকা ১৬ পৃঃ, আত্-তামহীদ, ১/৬৭ পৃঃ।
[17] আল মুহাদ্দিস আল ফাসিল, (৪১৪-৪১৬) পৃঃ, আল ইনতিকা ১৬ পৃঃ, আত্-তামহীদ, ১/৬৭ পৃঃ।
[18] ইত্হাফুস সালিক দ্রঃ মানহাজু ইমাম মালিক, ৩৪ পৃঃ।
[19] সিয়ারু আলামিন্নুবালা, ৮/৫৫ পৃঃ।
[20] আল-হুলিইয়্যাহ, ৬/৩১৬ পৃঃ।
[21] তার তীবুল মাদারিক, ১/১৫৪ পৃঃ।
[22] আল ইনতিকা, ৩৭-৩৮ পৃঃ।
[23] তায্ইনুল মামালিক, ১৬-১৭ পৃঃ।
[24] আল ইনতিকা, ৩৭ পৃঃ।
[25] শারহুল আক্বীদাহ আত তাহাবীয়াহ, ১/১৮৮ পৃঃ।
[26] বিস্তারিত দ্রঃ মানহাজুল ইমাম ফি ইছবাতিল আক্বীদাহ- ডঃ সউদ বিন আব্দুল আযীয আদ দা‘জান।
[27] আল ইনতিকা, ২৩, ২৪ পৃঃ।
[28] তারতীবুল মাদারিক, ১/১৩৩ পৃঃ।
[29] আল্ ইনতিকা, ৩১ পৃঃ।
[30] তানাবীরুল হাওয়ালিক, ১/৭ পৃঃ।
[31] তারতীবুল মাদারিক, ১/১৯১-১৯৬ পৃঃ, আত্তামহীদ, ১/৭৬-৭৯ পৃঃ।
[32] তায্ইনুল মামালিক, ৪০ পৃঃ, মালিক লি আমীন আল খাওলী, ৭৪৫ পৃঃ।
[33] তারতীবুল মাদারিক, ১/২০৪ পৃঃ, সিয়ারু আলামুন্নুবালা, ৮/৮৮ পৃঃ।
[34] তারতীবুল মাদারিক, ১/২০ ৫ পৃঃ, সিয়ারু আলামুন্নুবালা, ৮/৮৮ পৃঃ।
[35] তারতীবুল মাদারিক, ১/২০৫ পৃঃ, সিয়ারু আলামুন্নুবালা, ৮/৮৯ পৃঃ।
[36] তাযইনুল মামালিক, ৪০ পৃঃ, মালিক লি আমীন আল খাওলী, ৭৪৬ পৃঃ।
[37] মানহাজু ইমাম মালিক ফি ইছবাতিল আকীদাহ, ৫১-৫৫ পৃঃ।
[38] আত্তামহীদ, ১/৯২ পৃঃ, তারতীবুল মাদারিক, ২/২৩৭-২৪১ পৃঃ, সিয়ারু আলামিন্নুবালা, ৮/১৩০-১৩৫ পৃঃ।
আমার লেখাটি আপনাদের অনলাইনে রাখুন, আব্দুর রউফ,পি-এইচ.ডি,গবেষক ই.বি ০১৭২৯৩১৪১৫৪
ইমাম আল-দারমি রহ.এর জীবনী ও তাঁর ‘সুনান দারমি’ বইয়ের বৈশিষ্ঠ্যসমূহ
তাঁর নাম এবং বংশ: সমরকান্দে ইমাম আল দারিমি আল-হাফিজ শায়খুল ইসলাম, আবু মুহাম্মদ
আবদুল্লাহ বিন আবদুল রহমান বিন ফাদল বিন বাহরাম বিন আবদুল সামাদ আল-তামিমী দার্মী
সমরকান্দি। তিনি ২০০ হিজরি / ৮১৫ খ্রিস্টাব্দে খোরসান হেরাত শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বলা
হয়েছে, যে তাঁর জন্ম-বছরটি ছিল একশত একাশি(১৮১)।
তাঁর শিক্ষা অর্জন:
তিনি ইবন আরাবির নিকট (ভাষাতত্ত্ববিদ ও ব্যাকরণবিদ) আরবি ভাষার বিজ্ঞান লাভ করেছেন,
এবং আবু ইয়াকুব বুইতির হাতে শফি’র মতবাদের উপর আইনশাস্ত্রের বিজ্ঞান এবং ইয়াহিয়া ইবনে
মা’ন ও আলী ইবনে আল-মাদাইনী এবং আহমদ ইবনে হাম্বল কর্তৃক ভবিষ্যদ্বাণীমূলক হাদীসের বিজ্ঞান এবং এই সকল বিজ্ঞানে অগ্রগতি লাভ করেছেন। যার মধ্যে একজন ইমাম । তিনি পুরুষদের বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ইয়াহিয়া ইবনে মু’আন স¤পর্কে অন্যতম বিখ্যাত বর্ণনাকারী ছিলেন।
শিক্ষার্জনের জন্য ভ্রমণ:
তাঁর ভ্রমণের জন্য তিনি বিখ্যাত আর তিনি হিজাজ এবং শাম (যেমন হিশাম বিন আম্মার), মিশর (যেমন নাইম বিন হামাদ), ইরাক এবং আরব উপদ্বীপ এবং আজমের অন্যান্য দেশের পন্ডিতদের কাছ থেকে হাদীস শুনেছিলেন।
দেশগুলিতে ইমাম-দারমী ভ্রমণ:
ইমাম আল-দারমি অঞ্চলগুলি ভ্রমণ করেছেন এবং তথ্যের জন্য অনেক দেশকে উত্তর দিয়েছেন, তিনি খোরসান সফর করেছেন এবং ওসমান ইবনে বাজলা এবং মুহাম্মদ ইবনে সালামের কাছ থেকে শুনেছেন এবং ইরাক সফর করেছেন এবং ওবায়দুল্লাহ ইবনে মুসা এবং আবু নাঈম এবং রুহ ইবন ইবাদা ও আবাদানের নিকট শুনেছেন আর মিশরে গিয়ে শুনেছেন ইবনে আবী মরিয়ম এবং আবু সালেহ এবং অন্যান্যদেও নিকট শুনেছেন, এবং তিনি হিজায গিয়ে মুক্বরি, হামিদী এবং ইবনে আবী ওউস এবং তাদের শ্রেণীর কাছ থেকে শুনেছিলেন, এবং তিনি শামে অবস্থান করে তিনি মোহাম্মদ বিন ইউসুফ আল-ফারিবি এবং আবু মেশার এবং তাদের শ্রেণীর কাছ থেকে শুনেছিলেন।
ইমাম আবু বকর আল-খতিব বলেছেন:
ইমাম দারেমী তিনি হাদীসের জন্য অধিক ভ্রমণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন এবং তাকে সংরক্ষন করে বাঁচাতে ও সংগ্রহ করতে ও আত্মবিশ্বাস, সততা, ধার্মিকতা ও তপস্যা দিয়ে বর্ণনা করেছিলেন । এবং তাকে সুলতানকে তাকে সমরকান্দর জন্য কাজী নিয়োগ করতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করায় তাকে সুলতানের শাস্তি ভোগ করতে হয়। এবং এর কারণে তাকে অনেক কাঠ খড়ি পড়াতে হয়েছিল এবং তারপরে তিনি তা থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন এবং তার এ ধর্যপূর্ণ কাজ ধর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। আর তিনি ছিলেন বিচক্ষন্ন,সংবেদনশীলতা, পরিশ্রম, উপাসনার ক্ষেত্রে অতুলনীয়।
ইমাম আল-দারেমির শায়খগণ:
আধুনিক আহমদ ইবনে হাম্বল ও আলী ইবনুল মাদানি এবং
ইসহাক বিন রাহেওয়াহ এবং ইয়াহিয়া বিন মুইন এবং তার ফেকহ শাস্ত্রে (আইনশাস্ত্রে) তার শায়খ ছিলেন আল বুঈতি ও আবু ইয়ামান এবং ইয়াহিয়া বিন সালেহ আল-ওহাজী, সাঈদ বিন আবী মরিয়ম, মুসলিম বিন ইব্রাহিম ও আবদুল গাফফার বিন দাউদ হারিণী। সুলায়মান ইবনে হারব, আবু সালামা আল তাবুযকি, নাইম বিন হামাদ, আবদুল্লাহ ইবনে সালেহ, লেখক লাইস, মোহাম্মদ বিন কাছির, এবং মোসাদ্দাদ বিন মাসারহাদ, আবু তাওবা হালাবী, আবদুল্লাহ বিন রাজা আল-গাদদানি, আবু জাফর আল-নুফাইলি, আহমেদ বিন হাম্বল, এবং ইয়াহিয়া বিন মইন, এবং আলী ইবনে আল-মাদানী, ইসহাক বিন রাহওয়াহ, ফারওয়াতা বিন আল-মুগারা, আবু বকর ইবনে আবি শায়বাহ, ইয়াহিয়া আল-হামানী, সাহল ইবনে বাক্কার, আবু আল আল রাবী আল যাহরানী, এবং মুহাম্মদ বিন মিনহাল এবং হাইসাম বিন খারিজাসহ হারামাইন, শাম, মিশর, ইরাক, এবং আরব দ্বীপ এবং অনারব দেশগুলোর আরো অনেকে।
ইমাম আল-দারেমির ছাত্রবৃন্দ: আবু আমর আহমেদ বিন মোহাম্মদ আল-হায়ারি, মোহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল-সরম, এবং মোমেল বিন হুসেন, আহমদ বিন মোহাম্মদ বিন আল-আজহার, মোহাম্মদ বিন ইউসুফ হেরাভি, আবু ইসহাক বিন ইয়াসিন, মোহাম্মদ বিন ইসহাক হেরাভি, এবং আহমেদ বিন মোহাম্মদ বিন আবদুস তারাফি, আবুন নাদর মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আল-তুসি আল-ফকিহ, হামেদ আল-রাফা, আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ আল-আনবারি, আবুল-ফাদল ইয়াকুব আল-কিরাব এ ছাড়াও হেরাত ও নিশাপুরের আরও অনেকে।
তিনি আরো যাদের নিকট শুনেছেন:
ইয়াজিদ বিন হারুন ও ইয়া’লা বিন ওবায়েদ এবং জাফর বিন আউন এবং বিশর বিন ওমর আল জহরানী, এবং আবু আলী ওবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল মজিদ আল হানাফি, মোহাম্মদ বিন বাকর আল বারাসানী ও ওহাব বিন জারির, এবং নাদের বিন শামিল ‘তিনি মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে প্রথম এবং আবুন-নাদর হাশিম বিন কাশিম ও ওসমান বিন ওমর বিন ফারিস ও সাঈদ বিন আমের আল দবায়ী এবং কালো বিন আমের, এবং আহমেদ বিন ইসহাক হাদরামী, আবু অসীম, ওবায়দুল্লাহ বিন মুসা এবং আবু মুগিরা খুলানী প্রমুখ।
ইমাম দারেমী নিকট থেকে যারা বর্ণনা করেছেন
ইমাম মুসলিম এবং আবু দাউদ, তিরমিযী ও আবদুল বিন হুমাইদ ‘এর মতো সিনিয়র ইমামদের মত অনেকেই তার থেকে বর্ণনা করেছেন, আর এদের মধ্যে আবদ ইবন হুমাঈদ প্রাচীনতম, এবং রাজা বিন মারজি এবং হাসান বিন সাবাহ আল-বাজ্জার এবং মোহাম্মদ বিন বাশার বান্দার এবং মোহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া’ এবং তারা তাঁর চেয়েও বড় ‘, এবং বাকা বিন মখলেদ, আবু জুরয়াহ এবং আবু হাতিম ও সালেহ বিন মোহাম্মদ জাযরাহ রয়েছেন। ইব্রাহিম বিন আবি তালিব ও জাফর বিন আহমেদ বিন ফারিস এবং জাফর আল-ফারিবি, আবদুল্লাহ বিন আহমেদ এবং ওমর বিন মোহাম্মদ বিন বিজির এবং মোহাম্মদ বিন আল নাদের আল জারোদি এবং ঈসা বিন ওমর সমরকান্দি প্রমুখ।
এটাকে গর্বের কথা যে, ইমাম মুসলিম তাঁর ছহীহ গ্রন্থে তার থেকে বর্ণনা করেছেন এবং সমস্ত দুনিয়ার শায়খ ইমাম বুখারী তার থেকে গাইর সহীহগুলো বর্ণনা করেছেন।
ইমাম আল-দারেমীর রচনা: –
মুসনাদ আল-কবির।
ইমাম আল-দারমি ¯পষ্টত বই ‘মুসনাদ আল-কবির (মুসনাদ আল-দারমী নামে পরিচিত)’ যাতে অনেক হাদীসের সমরহ।
তাঁর গ্রন্থ ‘সুনান:
সুনানে গ্রন্থের সংকলন যা মুহাদ্দিসদের নিকট মুসনাদ হিসেবে পরিচিত যা তাদের পরিভাষার বিপরীতে, যদিও এটি ফিকহী ভাবধারায় সাজানো হয়েছে,
হাফিজ ইবনে হাজার: বলেছেন ‘মুসনাদ আল-দারমি নামে পরিচিত সুনানে গ্রন্থটি যদি (সুনানে) পদমর্যাদায় না থাকে তবে পাঁচটিতে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে এটি ইবনে মাজাহের প্রথম হতে পারত, এটি তাঁর চেয়ে অনেক ভাল।
ইমাম আল দারিমির কালজয়ী কালাম:
‘যিনি শো’বা,সুফিয়ান, মালিক, হামদ বিন যায়েদ, এবং সুফিয়ান বিন উয়ায়না-এদের সংগ্রহ করেননি, তিনি হাদীসের বিষয়ে নিস্ব অর্থাৎ হাদীসের হাফেজদের স্তরে পৌঁছেনি।
জ্ঞানীরা ইমাম আল দারিমির প্রশংসা করেছেন:
আল-খতিব আল-বাগদাদী বলেছেন:
‘তিনি হাদীসের অন্যতম পরিভ্রমনকারী যাযাবর ছিলেন, আর যিনি মুখস্থ করা ও সংগ্রহ করা এবং আত্মবিশ্বাস, নির্ভরশীলতা, সততা, পবিত্রতা এবং তপস্যা আল্লাহভীরু গুণে গুনান্বিত ছিলেন এবং তিনি ধার্মিকতা, সহনশীলতা এবং বিচক্ষনতা ও বিনম্্রতার ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন।’
ইমাম যাহাবী বলেছেন:’তিনি তাঁর সময়ের লোকদের মধ্যে সু পরিচিত বিজ্ঞজন ছিলেন আর সুন্নতের বিষয়ে অতি মান্যবর ও পাবন্দ ছিলেন এবং দূরদর্শী বিতার্কীকও ছিলেন ।
আবু হামেদ আল-আমাশি: বলেন, আমি মোহাম্মদ বিন ইয়াহিয়া, ওসমান বিন সাইদ এবং ইয়াকুব আল-ফাসভির এদের মতো অন্য কাউকে এত বড় হাদীস বিশারদ দেখিনি।
আবু ফাদল আর জারোদি বলেছেন: ‘ওসমান ইবনে সাইদ তাঁর জীবনে অনুসরণ করার ইমাম এবং তাঁর মৃত্যুর পরেও ইমাম ছিলেন।
আল-হাসান ইবনে সাহেব আল-শশী বলেছেন: আমি আবু দাউদ আল-সিজিস্তানিকে ‘উসমান ইবনে সা’দ স¤পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেন, আমরা তার থেকে হাদীস শিখেছি।
ইবনে হিব্বান তাঁর আল-সিকাত গ্রন্থে তাঁর স¤পর্কে বলেছেন: তিনি বিশ্বের হাদীসের ইমামগণের অন্যতম ইমাম ছিলেন এবং ইবনে হিববান তাঁর সহীহে তার থেকে বর্ণনা করেছেন, যেমনটি হাকেম নিসাবুরির তার মুস্তাদরাক’ এ এবং বায়হাকী তাঁর সুনানের বহু হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ইমাম যাহাবি বলেছেন: ‘দারমি ছিলেন ধর্মের ¯¢ম্ভ।
মুহাম্মদ ইবনে বাশার তাঁর স¤পর্কে বলেন: দুনিয়ায় হাদীসে হাফেজ হলেন চারজন: আবু যুরআহ রাই স্থানে এবং ইমাম মুসলিম নিসাপুর, এবং আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান সমারকান্দে, এবং মোহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারায়।
তার ব্যাপারে আলেমদের বক্তব্য:
ইমাম আহমদ বলেছেন: তাকে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রলোভন দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী এবং সমৃদ্ধ ছিলেন। তিনি বলেন, তিনি একজন হাদীস অন্যতম ইমামও ছিলেন।
মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ বিন নামির বলেছেন:
আমাদেরকে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল রহমান হিফজ ও ওয়ার তথা সংরক্ষণ ও নিষ্ঠার-তাক্বওয়া দিয়ে পরাজিত করেছে।
আবু হাতিম আল-রাযী বলেছেন: আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান তার সময়ের মানুষদের ইমাম ছিলেন।
মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আল-শিরাজী বলেন:
আবদুল্লাহ ছিলেন অত্যন্ত বিজ্ঞ ও ধার্মিক, যার উদাহরণ স্থাপন করা যায়: সহিষনতায় বিজ্ঞতায় এবং ধার্মিকতায় ও সংরক্ষণ, উপাসনা ও দুনিয়াত্যাগী হিসেবে।
রাজায়া বিন জাবের বলেন:
আবদুর রহমান দারমীর চেয়ে অন্য কেউই রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীছ সম্পর্কে বেশি জানেন না।
তাঁর বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক অবস্থান:
ইমাম দারেমী উদ্ভাবকের চোখে একটি কান্ড ছিলেন, যা মোহাম্মদ বিন করমের উপর ভিত্তি করে হেরাত থেকে আবিষ্কার হয়েছিল। আর তিনি
মুতাজিলা ও জহমীয়াদের প্রতিক্রিয়া জানাতে বেশ কয়েকটি বই লিপিবদ্ধ করেছিলেন, যদিও তিনি পূর্বসূরীর কাছ থেকে বিরত থাকা কিছু শব্দ চালু না করা পর্যন্ত তিনি প্রমাণকে অতিরঞ্জিত করেছিলেন, তবে তা হ্রাস পায় না তাঁর বই এবং বৈজ্ঞানিক মর্যাদার মূল্য স¤পর্কে, এবং তিনি তার কাজের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন, এবং সকলের কাছে তিনি প্রিয় ইমাম ছিলেন তাঁর জীবনে এবং তার মৃত্যুর পরেও অনুপ্রেরণা জোগায়। তাঁর মহান গ্রন্থ মুসনাদ তার বৈজ্ঞানিক মর্যাদা ও বিজ্ঞানের সাক্ষী ।
মুহাদ্দেসদের নিকট সুনান আল দারেমির মর্যাদা: সুনানে আল দারমি: লেখক: হলেন ইমাম আল-হাফিজ শাইখ ইসলাম আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বিন আবদুল রহমান বিন ফাদল আল-তামিমী দার্মী সমরকান্দি।
সুনান আল-দারমি আধুনিকতাবাদীদের (মুসনাদ) জন্য তাদের পরিভাষার বিপরীতে বিখ্যাত।
আলসুয়ুতি প্রশিক্ষণে বলেছিলেন: ‘মুসনাদ আল-দারামি মুসনাদ নয়, তবে দরজায় সাজানো আছে।’
সাহাবা নামে মুসনাদ সাজানো হয়েছে। মুসনাদকে সুনান আল-দার্মি বলা হয় যার মধ্যে এটি জায়েয এবং প্রথমটি এটিকে সুনান শব্দ বলে, কারণ সুন্নাহ তাদের পরিভাষায় রয়েছে: বিশ্বাস, পবিত্রতা, নামাজ, যাকাত ইত্যাদির মতবাদ সংক্রান্ত বিষয়ভিত্তিক সাজানো বই। আটককৃত ব্যক্তিদের তাদের সুন্নাহ শব্দে ডাকা হয় না, তবে তাকে নতুন বলা হয়।
ইরাকি বলেছিল: ‘বুখারী তাঁর মুসনাদ বইটি বলে মুসনাদ নামেই পরিচিত, কারণ তাঁর কথোপকথন নির্ধারিত হয়েছে’।
শায়খ আল-আলাইয়ী বলেছেন যে, ইবনে মাজাহের পরিবর্তে মুসনাদ আল দারিমি যদি দেওয়া হত, তবে তিনি ষষ্ঠ হয়ে যেতেন।
তাদের মধ্যে কয়েকজন বলেছিলেন: ‘দার্মী গ্রন্থটি বইয়ের ষষ্ঠটি তৈরি করার পক্ষে আরও ভাল এবং উপযুক্ত, কারণ তার লোকেরা কম দুর্বল, এবং এতে মুনকার ও শাস তথা এতে অস্বীকৃতি এবং অস্বাভাবিক হাদীস উপস্থিতি বিরল, এবং এর প্রচুর সমর্থন সুউচ্চ সনদ রয়েছে, এবং বুখারী সুলাসিয়াত চেয়ে তার সুলাসিয়াত বেশি।’
ইমাম আল দারিমির মৃত্যু: ইমাম দারেমী রাহি .তারবিয়াহ দিবসে হিজরতের দু’শ পঁচান্ন (২৫৫) বছর বিকেলে মারা যান পরে শুক্রবার আরাফার দিন সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর বয়স ছিল চুয়াত্তর বছর। যখন ইমামের মৃত্যুর খবর কিতাবটি ইমাম বুখারীর কাছে পৌঁছেছিল, তখন তিনি মাথা নিচু করলেন, তারপরে উঠে পুনরুদ্ধার করলেন আর সে সময় তার অশ্রু গাল বেয়ে পড়ছিল।