মহাবিস্ময়ের মহাকাশ
অনন্ত বিস্তৃত সীমাহীন মহাবিশ্ব বরাবরই রহস্যময়। আর এমন জায়গায় কিছু অদ্ভুত স্থান তো থাকবেই। মহাবিশ্বের বৃহত্তম, শীতলতম, উষ্ণতম, প্রাচীনতম, ভয়ংকরতম, দূরতম, অন্ধকারতম ও সবচেয়ে উজ্জ্বলসহ বিভিন্ন অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থান নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ডিসকভার ম্যাগাজিন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী মহাবিশ্বের ১০টি ব্যতিক্রমী স্থানের কথা তুলে ধরা হলো।
১. দ্য এল গর্দো গ্যালাক্সি ক্লাস্টার
মহাবিশ্বের অদ্ভুত স্থানের তালিকায় প্রথমেই আসে এল গর্দো। স্পানিশ এই নামের অর্থ ‘মোটা ব্যক্তি’। নামেই এই গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায়। এর ভর সূর্যের চেয়ে ৩০০ লাখ কোটি গুণ বেশি। পৃথিবীর থেকে ৯৭০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে এর অবস্থান। এর মানে হলো এল গর্দো গ্যালাক্সি ক্লাস্টার ওই অবস্থায় ছিল যখন মহাবিশ্ব বর্তমানের চেয়ে অর্ধেক বয়স্ক ছিল।
২. দ্য ব্লাক উইডো পালসার ভয়ংকর সঙ্গী নিউট্রন নক্ষত্র পালসার জে১৩১১-৩৪৩০। সূর্যের চেয়ে এর ভর দ্বিগুণ হলেও প্রস্থে ওয়াশিংটন ডিসির সমান। এটি ধীরে ধীরে সঙ্গী নক্ষত্র থেকে সরে যাচ্ছে এবং আকৃতিতে বড় হচ্ছে। নক্ষত্র দুটি প্রতি ৯৩ মিনিট পর পর কাছাকাছি আসে। পালসারটির চারপাশে থাকা রঙিন দাগের মতো অংশ ধীরে ধীরে এর মধ্যে প্রবেশ করে। এটি নক্ষত্রটিকে বাড়তি শক্তি দেয়। ধীরে ধীরে এই নক্ষত্রের সঙ্গীটির শক্তি হ্রাস পেতে পেতে হারিয়ে যাবে।
৩. ৩৭৫৩ ক্রুইথন
পৃথিবীর সমান সময় ৩৬৫ দিনে সূর্যকে ঘুরে আসে ৩৭৫৩ ক্রুইথন গ্রহাণু। ৩ দশমিক ১ মাইল ব্যাসার্ধের গ্রহাণুটির গতিপথও পৃথিবীর কক্ষপথকে দুবার অতিক্রম করেছে। গতিপথে পৃথিবীর এই যমজের কথা জানা যায় ১৯৮৬ সালে। তবে পৃথিবীতে কোনোভাবেই এটি আঘাত করবে না। পৃথিবীর থেকে গ্রহাণুটি সর্বনিম্ন ৭৫ লাখ মাইল দূরত্বে আসে।
৪. রগ প্লানেট যেই তারকা থেকে সৃষ্টি হয়েছে সেই অভিভাবক নক্ষত্র ও স্বজনদের ছেড়ে একাকী ঘুরে বেড়াচ্ছে সিএফবিডিএসআইআর ২১৪৯ গ্রহ। পৃথিবী থেকে ১০০ আলোকবর্ষ দূরে এর অবস্থান। তারকা থেকে গঠন প্রক্রিয়ার শুরুতেই ওই গ্রহ ছিটকে পড়ে। পরে মহাশূন্যে হয়ে পড়ে একাকী। জ্যোতির্বিদদের ধারণা, মহাশূন্যে এমন নিসঙ্গ গ্রহের সংখ্যা শতকোটি।
৫. স্মিথস ক্লাউড আমাদের চোখে যদি বেতার তরঙ্গ দেখা যেত, তাহলে রাতের আকাশে পূর্ণচাঁদের চেয়ে ২০ গুণ হয়ে দেখা দিত ‘স্মিথস ক্লাউড’। হাইড্রোজেন গ্যাসের এই মেঘের ভর ১০ লাখ নক্ষত্রের চেয়ে বেশি। দৈর্ঘ্যে নয় হাজার ৮০০ আলোকবর্ষ আর প্রস্থে তিন হাজার ৩০০ আলোকবর্ষ দূরত্ব জুড়ে ছড়ানো এই মেঘ। এর আকৃতি অনেকটা টর্পেডোর মতো। এটি আমাদের গ্যালাক্সির দিকে এগোচ্ছে। দুই কোটি ৭০ লাখ বছর পর এটি মিল্কিওয়েতে এসে পড়বে। এই উচ্চগতির হাইড্রোজেন মেঘের কারণে নক্ষত্র সৃষ্টির সময়কার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
৬. গ্যালাক্সি এক্স আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে থেকে তিন লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এক স্যাটেলাইট গ্যালাক্সি, যা পুরোটাই কৃষ্ণবস্তু আর গ্যাসে তৈরি। অনেক বছর ধরেই এটি ছিল বলেই ধারণা করেন জ্যোতির্বিদরা। ২০০৯ সালে প্রথম ‘গ্যালাক্সি এক্সে’র অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন জ্যোতির্বিদরা। গ্যালাক্সি এক্সে তেমন কোনো নক্ষত্র নেই বলে ধারণা করা হতো। তবে সম্প্রতি জ্যোতির্বিদরা জানিয়েছেন, এই গ্যালাক্সির দূরতম প্রান্তে শতকোটি বছর বয়সী অনেক নক্ষত্র আছে।
৭. এইচডি ১৮৯৭৩৩বি প্রথম দর্শনে গ্রহটিকে শান্ত সাগরপূর্ণ মনে করলে বোকা বনতে হবে। এটি হলো গ্যাসদানব যা এর সৃষ্টিকারী নক্ষত্রের কাছাকাছিই ঘুরছে। আর এই কারণে এই গ্রহে সাগর হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। এর তাপমাত্রা প্রায় এক হাজার ৭০০ ফারেনহাইট। গ্রহের ওপরের মেঘলা আকাশ মানে হলো এতে চলে গলিত কাচের বৃষ্টি।
৮. সর্ববৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের বয়স যখন ছিল মাত্র ৮৭ কোটি ৫০ লাখ বছর, এক হাজার ২০০ কোটি সূর্যের ভর নিয়ে সৃষ্টি হয় এই সর্ববৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর। জে০১০০+২৮০২ নামের এই কৃষ্ণহ্বরের অবস্থান ‘কুয়াসার’ নামে সক্রিয় গ্যালাক্সির মধ্যে। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব এক হাজার ২৮০ কোটি আলোকবর্ষ। এই কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
৯. আর১৩৬এ১ এই নক্ষত্র সূর্যের চেয়ে ২৫৬ গুণ বড় আর ৭৪ লাখ গুণ উজ্জ্বল। জ্যোতির্বিদদের মতে, অনেকগুলো নক্ষত্র একসঙ্গে হয়ে এমন নক্ষত্র গঠিত হয়। আর নিজেদের জ্বালিয়ে নিঃশ্বেষ হওয়ার আগে এরা মাত্র কয়েক লাখ বছর আলো দেবে।
১০. দ্য বুমেরাং নেবুলা মহাবিশ্বের শীতলতম স্থান বুমেরাং নেবুলা। পৃথিবীর থেকে এর দূরত্ব পাঁচ হাজার আলোকবর্ষ। সূর্যের মতো আকৃতির একটি নক্ষত্রের ধ্বংস থেকে সৃষ্ট গ্যাস আর ধুলোর এই মেঘের তাপমাত্রা ঋণাত্মক দিকে ৪৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রতি ঘণ্টায় তিন লাখ ৬৭ হাজার মাইল গতিতে এই মেঘ ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষের তৈরি যে কোনো যানের চেয়ের ১০ গুণ বেশি এর গতি।
❑ এখানে আমরা সংক্ষিপ্ত তথ্যসহ মহাকাশের কিছু ছবি উপস্থাপন করেছি। আশা করি এই ছবিগুলো আপনাকে এই বিশাল বিস্ময়কর মহাবিশ্ব সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা দেবে…
❑ আমাদের পৃথিবী ও তার প্রতিবেশী গ্রহসমূহ…
❑ নিচে পৃথিবী ও চাঁদের মাঝে দূরত্ব দেখানো হয়েছে। খুব একটা বেশি বলে মনে হচ্ছে না তাই না?
❑ আরেকবার ভেবে দেখুন। পৃথিবী ও চাঁদের মাঝে যে দূরত্ব তাতে সৌরজতের আর সব গ্রহগুলোকে পাশাপাশি সুন্দরভাবে বসিয়ে দেওয়া যাবে…
❑ এখন চলুন সৌরজগতের গ্রহগুলো সম্পর্কে একটু আলাপ করি। নিচের ছবিতে বৃহস্পতি গ্রহের অংশবিশেষ দেখতে পাচ্ছেন। এর উপর যে ছোট সবুজ ছোপ দেখতে পাচ্ছেন তা সমগ্র উত্তর আমেরিকা…
❑ এখানে ছয়টা পৃথিবীকে শনি’র সাথে তুলনা করা হচ্ছে। ছয়টা পৃথিবীও যেন শনির কাছে কিছুই না!
❑ একটা সহজ পরিমাপ করা যাক। শনি’র চারপাশে যে রিং (বলয়) দেখা যায়, তা যদি পৃথিবীর চারপাশে থাকতো তাহলে পৃথিবী থেকে কেমন দেখাতো? ছবিতে দেখুন-
❑ নিচে একটি ধূমকেতু’র ছবি। ধারণার সুবিধার্থে ধূমকেতুটকে আমরা লস এঞ্জেলস শহরের উপর ফেলেছি। ভেবে দেখুন তো ধূমকেতুর আকার-আকৃতি কেমন…
❑ কিন্তু উপরের আকার-আকৃতি গুলো সূর্যের কাছে কিছুেই না!
❑ চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন?
❑ মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? দেখাই যাচ্ছে না যে! একটু জুম করে দেখুন…
❑ শনি’র রিং এর নিচ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন?
❑ নেপচুন গ্রহ থেকে পৃথিবীকে দেখা যায়?
❑ চলুন আবার একটু পিছনে ফিরে যাই। সূর্যের সাথে পৃথিবীর আরেকটু তুলনা করা যাক। কি দেখছেন ছবিতে? আঁতকে উঠলেন নাকি!
❑ আমাদের সূর্য। মঙ্গল গ্রহ থেকে দেখুন কেমন দেখায়…
❑ কিন্তু এগুলো যেন কিছুই না! পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্র সৈকতে যে পরিমাণ বালির দানা আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি (সূর্যের মত বা তার চেয়েও অনেক বড়) নক্ষত্র রয়েছে মহাশূণ্যে… অবস্থা এমন যে, ‘অনেক বেশি’ না বলে ‘অসংখ্য’ বললেও তেমন কোন সমস্যা নেই মনে হয়…
❑ এবার দেখুন আরেক দৃশ্য। এই নক্ষত্র নাকি সূর্যের চেয়েও ১,০০০,০০০,০০০ গুণ বড়!!!
❑ VY Canis Majoris এর তুলনায় সূর্যকে অনেকটা ক্ষুদ্র অর্থহীন বস্তু বলেই মনে হচ্ছে। তাই না?
❑ কিন্তু… গ্যালাক্সি’র (ছায়াপথ) আকারের সাথে উপরের আকারগুলোর তুলনা করাই কষ্ট। এমনকি সূর্যকে যদি একটি রক্ত কণিকার মত ক্ষুদ্র ধরা হয় এবং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি’কেও যদি একই স্কেলে ছোট করে দেখেন, তাহলে মিল্কিওয়ে’র আকার হবে United States এর সমান!
❑ এক কথায় মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বৃহদাকার… Huge… যার অভ্যন্তরেই আপনার বসবাস।
❑ আচ্ছা, রাতে বেলা আকাশে কতগুলো তারা (নক্ষত্র) দেখা যায়? গুণে দেখা সম্ভব? আপনি রাতের আকাশে যে পরিমাণ তারা দেখেন, তা নিচের ছবিতে দেখানো ছোট্ট হলুদ বৃত্তের এতটুকু…
❑ কিন্তু একি! আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি’র চেয়ে IC 1011 গ্যালাক্সি কত বড়!
❑ চলুন আরও একটু বড় করে চিন্তা করা যাক। নিচের ছবিটি হাবল টেলিস্কোপের সাহায্যে তোলা। যেখানে রয়েছে হাজার হাজার গ্যালাক্সি, প্রেত্যেকটি গ্যালাক্সিতে রয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন নক্ষত্র ও তাদের নিজস্ব গ্রহসমূহ…
❑ এটি আরেকটি গ্যালাক্সি। UDF 423। ১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত…
❑ মনে রাখবেন, ছবিতে যা দেখছেন তা এই বিশাল মহাবিশ্বের অতি সামান্য একটা অংশই মাত্র…
❑ এছাড়াও রয়েছে ব্ল্যাক হোল (কালো গহ্বর) সমূহ। নিচে একটি ব্ল্যাক হোলের ছবি দেখতে পাচ্ছেন যেখানে ব্ল্যাক হোলটিকে পৃথিবী ও নেপচুনের কক্ষপথের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ব্ল্যাক হোলের তুলনায় পৃথিবীর সম্পূর্ণ কক্ষপথ যেন একটি বিন্দু –
❑ আমাদের পৃথিবী…
❑ যদি একটু Zoom Out করে দেখা হয়…
❑ আরও একটু Zoom out করে দেখলে যা ঘটবে…
❑ আরও একটু…
❑ আরও একটু….
❑ আরও একটু…
❑ তারপর…
❑ …এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সবটুকু এখানেই… এখানেই আমাদের বসবাস… যেন দৈত্যাকার বয়ামে ক্ষুদ্র পিপিলিকা…
মন্তব্য…
কাজী জাহান মিয়ার আল কুরআন দ্য চ্যেলেঞ্জ নামে একটি অসাধারন বই আছে । দেখুন http://amaderboi.com/al-quran-the-challange-1
সত্যিকার অর্থে অকল্পনীয়……সুবহানাল্লাহ…..!
Subhan Allah My favourite subject very very nice.
Really so good. Only one created by Allah.
অবাক করার মত
Ahallar sristi chomotkar
অনেক অনেক ভালো লাগলো
খুব সুন্দর।
very nice