বাংলাদেশের দারিদ্র্য সমস্যা : কারণ ও প্রতিকার
দারিদ্র্য এক নির্মম অভিশাপ। এ অভিশাপ মানুষকে কুঁরে কুঁরে খায়। সমাজ-সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়ার পরিবর্তে পিছিয়ে দেয়। এটা মানবতাকে পশুত্বের পর্যায়ে নামিয়ে দিতে পারে। দারিদ্রে্যর কশাঘাতে ও ক্ষুধার নির্মম যাতনায় অভাবের অনলে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে ন্যায়-অন্যায় বিস্মৃত বনু আদম পাপ-পঙ্কিলে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে নিজের অজান্তেই আত্মবিধ্বংসী পথে অগ্রসর হয়। দারিদ্রে্যর এ নির্মম কঠোর জ্বালায় মানবতাবোধ লোপ পায়, হিংস্রতার প্রসার ঘটে, অন্যায়-অবিচার বিস্তৃত হয়। নারী তার পরম সযত্নে লালিত সতীত্বকে বিলিয়ে দেয়, মানুষ তার কলিজার টুকরা সন্তান বিক্রি করে, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করতেও দ্বিধা করে না।
দারিদ্র্য হ’ল রক্তশূন্যতা সদৃশ। অর্থ-সম্পদ মানুষের জন্য সে কাজ করে, যা মানুষের দেহের জন্য রক্ত করে। রক্ত মানুষের দেহ ও জীবনের স্থিতির নিয়ামক। রক্তশূন্যতা দেখা দিলে মানুষের দেহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধির আবাসে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে সম্পদের স্বল্পতা থাকলে মানুষের জীবনও অচল হয়ে পড়ে অনিবার্যভাবে।
‘দারিদ্র্য’ ও ‘বাংলাদেশ’ শব্দদ্বয় একত্রে বিসদৃশ লাগে। কারণ বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। সম্পদে ভরপুর দেশটির স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন সময়ে ছুটে আসা পর্যটক, বিশেষজ্ঞ জ্ঞানী-গুণী ও ভূ-তত্ত্ববিদগণ। অথচ বর্তমানে আমাদের দেশে মোট দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৮৯ হাযার ৭৭২ জন। যা শতকরা ৩১ দশমিক ৫ ভাগ এবং অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাযার ১৭১ জন, যা শতকরা ১৭ দশমিক ৬ ভাগ। প্রকৃতপক্ষে আমরা দরিদ্র নই; বরং আমাদেরকে দরিদ্র করে রাখা হয়েছে। আমাদের শাসকবৃন্দ হ’লেন এর প্রধান কুশীলব। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনা পরিপন্থী কর্মনীতি ও কর্মপন্থা তথা ইসলাম পরিপন্থী অর্থব্যবস্থা ও কর্মকান্ডই এ দারিদ্র্য সমস্যার মূল কারণ। কেননা দারিদ্র্য ও ইসলাম শব্দ দু’টি দুই মেরুর শব্দ। সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব যেমন চিরন্তন, ঠিক তেমনি দারিদ্র্য ও ইসলামের দ্বন্দ্বও চিরন্তন। ইসলাম ও দারিদ্রে্যর সহাবস্থান অকল্পনীয়। যে ‘জাযীরাতুল আরবে’র (আরব উপদ্বীপ) মানুষেরা অভাব ও দারিদ্রে্যর যাতাকলে পিষ্ট হয়ে কয়েকদিন পর্যন্ত উপোস থেকে উদরে পাথর বেঁধে দিনাতিপাত করত, সেই আরব জাতি ইসলামের সুমহান আদর্শে বলীয়ান হয়ে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এমন স্বনির্ভর দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত জাতি হ’তে সক্ষম হয়েছিল যে, যাকাত নেওয়ার মতো কোন লোক সেখানে পাওয়া যেত না। ডঃ হাম্মূদাহ আবদালাতি বলেন, It is authentically reported that there were times in the history of the Islamic administration when there was no person eligible to receive Zakah. ‘ইসলামী সোনালী শাসনামলের ইতিহাসে এমন এক সময় ছিল, যখন যাকাত গ্রহণ করার মতো কোন লোক ছিল না’।১
দারিদ্র্যের সংজ্ঞা :
দারিদ্রে্যর অর্থ হচ্ছে- দরিদ্র অবস্থা, অভাব ও দীনতা।২ দারিদ্র্য বলতে এমন ব্যক্তি বা দেশকে বুঝায় যার সামান্য সম্পদ ও অল্প আয় রয়েছে, যা দ্বারা ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন (Basic Needs) মেটাতে ব্যর্থ।৩ ডেলটুসিং বলেন, ‘মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় সম্পদের অপ্রতুলতাই হ’ল দারিদ্র্য’।৪ থিওডরসনের মতে, ‘দারিদ্র্য হ’ল প্রাকৃতিক, সামাজিক ও মানসিক উপোস’।৫ ইসলামের দৃষ্টিতে দারিদ্র্য হচ্ছে এমন এক অবস্থা, যা মানব জীবনের অব্যাহত প্রয়োজনীয় পণ্য বা মাধ্যম উভয়েরই অপর্যাপ্ততা বুঝায়।৬
দারিদ্র্যের কারণ ও প্রতিকার :
দারিদ্র্য সমস্যার কারণের মাঝেই তার প্রতিকার নিহিত আছে। তাই বাংলাদেশের দারিদ্র্য সমস্যার কারণ বিশ্লেষণের সাথে সাথেই তার প্রতিকার বিষয়ে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
১. সম্পদের মালিকানা :
বাংলাদেশ ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ বিত্তশালী নিজেদেরকে তাদের সম্পদের নিরঙ্কুশ মালিক মনে করে সম্পদ নিজ আয়ত্বে কুক্ষিগত করে রাখেন। অভাবগ্রস্ত দারিদ্র্যপীড়িত আর্ত-মানবতার সেবায় তারা কোনই অর্থ ব্যয় করেন না। আর এটা বাংলাদেশের দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম কারণ। মালিকানার ধারণা মানুষের মাঝে স্বেচ্ছাচারিতা ও লাগামহীনতার জন্ম দেয়। শোষণের মূলে রয়েছে মানুষের এ স্বেচ্ছাচারী মানসিকতা। মালিক যখন নিজেকে নিরঙ্কুশ মালিকানার অধিকারী মনে করে, তখন তাকে أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى ‘আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক’ (নাযি‘আত ২৪)-এ ধরনের ফেরাঊনী অলীক ভাবনায় পেয়ে বসে। ইসলাম তাই বান্দার নিরঙ্কুশ মালিকানার ধারণা রহিত করে দিয়ে শুরুতেই শোষণবাদী মানসিকতার মূলোৎপাটন করে দেয়। মূলতঃ সম্পদের নিরঙ্কুশ মালিকানা আল্লাহ্র। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাববুল আলামীনের বাণী- لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ‘আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্র’ (বাক্বারাহ ২৮৪)। সম্পদে আল্লাহ্র মালিকানার বিশ্বাস মানুষকে স্বভাবতই বিনয়ী, জবাবদিহিতার চেতনায় উদ্ভাসিত এবং দারিদ্র্য বিমোচনে অর্থ ব্যয়ে উদ্বুদ্ধ করে।
২. দারিদ্র্য সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদা :
আমাদের দেশের একশ্রেণীর আলেম-ওলামা, শ্রমবিমুখ সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী দারিদ্র্যকে সযত্নে লালন করে চলছেন। তারা الفقر فخري وبه أفتخر ‘দারিদ্র্য আমার অহংকার। এর দ্বারাই আমি গর্ববোধ করি’ মর্মে একটি জাল হাদীছ৭ উদ্ধৃত করে নিজেদের দারিদ্র্য সম্পর্কিত ভ্রান্ত আক্বীদার সাফাই গেয়ে থাকেন। অথচ তারা জানেন না যে, যারা আল্লাহ্র বিধানাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, মূলতঃ তারাই দারিদ্র্য ও দুঃখ-কষ্টে নিপাতিত হয়। এ প্রসঙ্গে রাববুল আলামীনের বাণী, وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنْكاً. ‘যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবিকা হবে সংকুচিত’ (ত্ব-হা ১২৪)। রাসূল (ছাঃ) সর্বদা দো‘আয় বলতেন, اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ النَّارِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْغِنَى وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْفَقْرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ- ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের শাস্তি ও ফিতনা, কবরের ফিতনা ও আযাব, প্রাচুর্য, দারিদ্র্য ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি’।৮ তিনি আরো বলতেন, اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُوْعِ فَإِنَّهُ بِئْسَ الضَّجِيْعُ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخِيَانَةِ فَإِنَّهَا بِئْسَتِ الْبِطَانَةُ. ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষুধা থেকে পানাহ চাচ্ছি। কেননা তা সবচেয়ে নিকৃষ্ট সঙ্গী এবং তোমার নিকট খিয়ানত থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। কেননা তা সবচেয়ে নিকৃষ্ট সঙ্গী’।৯
৩. শ্রমবিমুখতা :
ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, Diligence is the key to success. ‘পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি’। পক্ষান্তরে শ্রমবিমুখতাই দারিদ্রে্যর মূল কারণ। শ্রমই দারিদ্র্য বিমোচনের প্রথম হাতিয়ার এবং ভাগ্যোন্নয়নের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু আমাদের এ দেশের অধিকাংশ মানুষ শ্রমবিমুখ, আরামপ্রিয়, অলস। তারা নিম্ন পেশার কাজ করতে লজ্জাবোধ করে। তাই দারিদ্রে্যর যাতাকলে আমরা আজও নিষ্পেষিত। শ্রমবিমুখতাকে ইসলাম পসন্দ করে না। ছালাত শেষে অলসভাবে মসজিদে বসে না থেকে রিযিক অন্বেষণের লক্ষ্যে যমীনে ছড়িয়ে পড়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে- فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ- ‘ছালাত সমাপ্ত হ’লে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ্র অনুগ্রহ (রিযিক) অন্বেষণ কর’ (জুম‘আ ১০)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَاماً قَطُّ خَيْراً مِّنْ أَنْ يَّأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدَيْهِ. ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্য অপেক্ষা অধিক উত্তম খাদ্য আর কিছুই নেই’।১০ যদি আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর উপরোক্ত দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হ’তাম, তবে এ দেশে দারিদ্র্য সমস্যা থাকত না।
৪. মালিক ও শ্রমিকের দায়িত্বহীনতা :
মালিক-শ্রমিকের দায়িত্বহীনতাও দারিদ্র্য সমস্যার জন্য কম দায়ী নয়। কারণ এ দেশের মালিক-শ্রমিকের কেউ নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন নয়। এ ব্যাপারে তারা একেবারেই উদাসীন বললেও অত্যুক্তি হবে না। শ্রমিকের কর্তব্য হ’ল তার উপর আরোপিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে আঞ্জাম দেয়া আর মালিকের কর্তব্য হ’ল শ্রমিকের যথার্থ মজুরী নির্ধারণ করা, সময়মত তা পরিশোধ করা এবং অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে না দেয়া।
আদর্শ শ্রমিকের পরিচয় সম্পর্কে রাববুল আলামীনের বাণী- إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِيْنُ- ‘শ্রমিক হিসাবে সেই উত্তম যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত’ (ক্বাছাছ ২৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ ছওয়াব রয়েছে। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হ’ল, وَالْعَبْدُ الْمَمْلُوْكُ إِذَا أَدَّى حَقَّ اللهِ وَحَقَّ مَوَالِيْهِ، ‘যে ক্রীতদাস আল্লাহ্র হক আদায় করে এবং স্বীয় মালিকের হকও যথার্থভাবে আদায় করে’।১১ অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মালিকদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, أَعْطُوا الْأَجِيْرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَّجِفَّ عَرَقُهُ. ‘শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকাবার আগেই তার প্রাপ্য মজুরী দিয়ে দাও’।১২ হাদীছে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হ’ল, وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيْراً، فَاسْتَوْفَى مِنْهُ، وَلَمْ يُعْطِهِ أجْرَهُ. ‘যে ব্যক্তি মজুরীতে মজুর রেখে তার কাছ থেকে পূর্ণ শ্রম গ্রহণ করেছে, অথচ তার ন্যায্য মজুরী প্রদান করেনি’।১৩
উপরোক্ত ইসলামী দিকনির্দেশনা না মানার কারণেই মালিক-শ্রমিক অসন্তোষ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ফলশ্রুতিতে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কর্মহীন বেকার হয়ে দারিদ্রে্যর অতলতলে তলিয়ে যাচ্ছে হাযারো পরিবার, যার বাস্তব দৃষ্টান্ত হ’ল দেশের গার্মেন্টস শিল্প।
৫. সুষম বণ্টন ব্যবস্থার অভাব :
ধন-সম্পদে ভরপুর আমাদের এ বাংলাদেশ। তাই এ দেশকে বলা হয় সোনার বাংলাদেশ। তদুপরি এ দেশের প্রায় ৩১ দশমিক ৫ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ইসলামের দৃষ্টিতে দারিদ্র্য সমস্যার মূল কারণ এই নয় যে, পৃথিবীতে সম্পদের অভাব। বরং আসল কারণ হচ্ছে সুষ্ঠু ব্যয় ও বণ্টনের অভাব। ইসলাম সম্পদ বণ্টনের মূলনীতি হিসাবে নির্দেশ দিয়েছে, كَيْ لاَ يَكُوْنَ دُوْلَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ- ‘ধন-সম্পদ যেন শুধু তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই আবর্তিত হ’তে না থাকে’ (হাশর ৭)। অর্থাৎ ইসলাম চায় ধন-সম্পদ শুধু সমাজের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণীর মাঝে আবর্তিত না হয়ে গোটা সমাজে আবর্তিত হোক। সমাজের প্রত্যেকটি সদস্য ধন-সম্পদ দ্বারা উপকৃত হোক। এজন্য ইসলাম ইনছাফভিত্তিক শ্রমনীতির ব্যবস্থা করেছে। ধন অর্জনের শোষণমূলক ও অনৈতিক পন্থা যেমন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, জুয়া, সূদ, ঘুষ, মজুদদারী, প্রতারণা, ওযনে কম দেয়া, ভেজাল ইত্যাদি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। ধন-সম্পদ বংশানুক্রমিক মুষ্টিমেয় লোকদের হাতে কুক্ষিগত হওয়া বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রবর্তন করেছে ব্যাপকভিত্তিক উত্তরাধিকার আইন। চালু করেছে নফল দান-ছাদাক্বাহ ও সহযোগিতার ব্যবস্থা। রয়েছে করযে হাসানার মতো মানবহিতৈষী নিঃস্বার্থ ঋণদান ব্যবস্থাও।
৬. যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থার অনুপস্থিতি :
আমাদের এ দেশ ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তি পর্যায়ে কিছুটা যাকাত দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে বটে, কিন্তু যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু নেই। আর এটা দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম কারণ। যাকাতের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার দারিদ্র্য বিমোচন, যা সামাজিক নিরাপত্তার মূল চালিকাশক্তি। যাকাত বণ্টনের ৮টি খাতের মধ্যে ৪টি খাতই (ফকীর, মিসকীন, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত) অসহায় অভাবগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য নিবেদিত। এছাড়া নব মুসলিমের ভাগটাও বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে এর মধ্যে আসতে পারে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি যাকাত। এতে কোন সন্দেহ ও সংশয়ের অবকাশ নেই। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অর্থ ক্ষুধা-দারিদ্র্য, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, হতাশা, শ্রেণীবৈষম্য, অসহনশীলতা, অনৈক্য, দুশ্চিন্তামুক্ত পারস্পরিক সহযোগিতা-সহমর্মিতা এবং কল্যাণ কামনার বুনিয়াদে সকল সামাজিক শ্রেণীবৈষম্য দূর হয়ে সাম্য-মৈত্রী-ভ্রাতৃত্ব ও কল্যাণময়তা বিরাজ করা। পরস্পর এগিয়ে এসে একে অপরের দুঃখ-দুর্দশা মোচন করা। যে সমাজ আমাদের কাছে স্বপ্নের সোনার হরিণ, আজকের আধুনিক ধনতান্ত্রিক বিশ্ব যে সমাজের কথা কল্পনাও করতে পারে না, সে সমাজ উপহার দিয়েছে ইসলাম এখন থেকে প্রায় পনেরশত বছর আগে। যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা ছিল যে সমাজের সকল আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। যাকাত দুস্থ-দরিদ্রদের প্রতি বিত্তশালীদের দয়া বা অনুকম্পা নয় বরং অধিকার। এ প্রসঙ্গে রাববুল আলামীনের বাণী, وَفِيْ أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُوْمِ ‘আর তাদের (বিত্তশালীদের) সম্পদে রয়েছে দরিদ্র ও বঞ্চিতের অধিকার’ (যারিয়াত ১৯)।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ব্যাংক, বীমা, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ থেকে এবং বিত্তশালীদের থেকে যদি বাধ্যতামূলকভাবে যাকাত আদায় করা হয় তাহ’লে বার্ষিক ৩,০০০ কোটি টাকা যাকাত আদায় করা সম্ভব, যা প্রায় জাতীয় বাজেটের সমপরিমাণ।১৪ এ অর্থ দিয়ে মাত্র পাঁচ বছরেই বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা সম্ভব। শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী তাইতো বলেছেন, ‘যাকাত দু’টি লক্ষ্যে নিবেদিত- আত্মশুদ্ধি অর্জন (تهذيب النفس) ও সামাজিক দারিদ্র্য নিরসন’।১৫
৭. সূদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা :
দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম কারণ হ’ল সূদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা। সূদ মানব সভ্যতার সবচেয়ে নিষ্ঠুর শত্রু। সূদ মানুষকে শোষণের অর্থনৈতিক হাতিয়ার। সূদের প্রভাবে মানুষের শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিপর্যয়ই দেখা দেয় তা নয়, বরং নৈতিক ও চারিত্রিক সর্বোপরি মানবিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি হয়। একদিকে সূদের নিষ্পেষণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ক্রমেই দরিদ্র থেকে আরও দরিদ্র হ’তে থাকে। অপরদিকে পুঁজিপতি বিত্তশালীরা সূদ গ্রহণ করে আরও ধনী হ’তে হ’তে নৈতিক, চারিত্রিক ও মানবিক গুণশূন্য অর্থগৃধুণতে পরিণত হয়। তাই রাববুল আলামীন সূদকে চিরতরে হারাম ঘোষণার সাথে ব্যবসাভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালুর তাকীদ দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে, أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا. ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল ও সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২৭৫)। সূদভিত্তিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে দারিদ্র্য সৃষ্টি হয়, পক্ষান্তরে যাকাত, দান-ছাদাক্বা ভিত্তিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,يَمْحَقُ اللهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ. ‘আল্লাহ তা‘আলা সূদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-ছাদাক্বাকে বর্ধিত করেন’ (বাক্বারাহ ২৭৬)।
৮. দারিদ্র্যকে লালন করা হচ্ছে :
বাংলাদেশের দারিদ্র্য সমস্যার আর এক বিশেষ কারণ হচ্ছে- এ দেশের শাসকগোষ্ঠী, রাজনৈতিক নেতা, ক্যাডার, সরকারী আমলা, এনজিও, বিদেশী দাতা সংস্থা কর্তৃক দারিদ্র্যকে লালন করা হচ্ছে। সরকার থেকে শুরু করে এনজিও পর্যন্ত সকলেরই কথার ফুলঝুরি হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন। এজন্য প্রতিবছর ‘দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র’ (PRSP)-এর আওতায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও ও অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর নিকট থেকে এ দেশে প্রতিবছর আসছে হাযার হাযার কোটি টাকা। সরকারী বাজেটের এক বৃহদংশ বরাদ্দ থাকছে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। ব্যাংকগুলোও যথেষ্ট না হ’লেও দরিদ্রদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করছে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে সকলেরই লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন। তারপরেও কেন দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে না?
অভিযোগ রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রাপ্ত অর্থের অধিকাংশই চলে যায় মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারী আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিও মালিক-কর্মকর্তাদের পকেটে। আর বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীও কি আদতে চায় যে, এদেশের দরিদ্রতা দূর হোক? সুশাসন ও সুষ্ঠু আইন-শৃংখলা কায়েম হোক? এ দেশ স্বনির্ভর হোক? নাকি মুখে মুখে সুবচন ঝাড়লেও তারাও মনে মনে চায়, দুর্নীতিবাজ, দেশপ্রেমহীন, মূল্যবোধহীন, চরিত্রহীন রাজনীতিবিদ, আমলা, এনজিও মালিক ও তথাকথিত ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাই বহাল থেকে তাদের তল্পিবহন করুক? তাদের দাস্যবৃত্তি করুক? এদেশে মওজুদ থাকুক সাম্রাজ্যবাদের পদলেহী দেশপ্রেমহীন চরিত্রহীন অথচ শক্তিশালী ও ধনবান একটি দালাল শ্রেণী?১৬ মূলতঃ পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় না থাকলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন, اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ- ‘আমি আজ তাদের মুখে মোহর এঁটে দিব। তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা সমূহ তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিবে’ (ইয়াসীন ৬৫)।
৯. এনজিও কর্তৃক দারিদ্র্য চাষ :
এদেশের এনজিওগুলি- যাদের ঘোষিত লক্ষ্য হ’ল দারিদ্র্য বিমোচন, তারাই দারিদ্র্য চাষ করছে বলে ঘোরতর ও প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে। বস্ত্ততঃ এনজিওগুলো যে ক্ষুদ্রঋণ দেয় এবং তার জন্য যে পরিমাণ সূদ শেষাবধি গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয়, তাতে ‘লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায় না; বরং মূল উপার্জনেরই একটা অংশ তুলে দিতে হয় নতুন এই বেনিয়াদের হাতে।১৭
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান গত ১৮ অক্টোবর এক সেমিনারে বলেছেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ ঔপনিবেশিক অর্থনৈতিক চিন্তার আধুনিক সংস্করণ মাত্র। প্রতিবছর দেশের প্রায় ১ কোটি জনগোষ্ঠী ক্ষুদ্রঋণের প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। এ ধরনের কোন প্রকল্পের মাধ্যমে কখনোই দেশকে দারিদ্রে্যর অভিশাপ থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়’।১৮ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহীত এনজিও ঋণের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘চোরাবালিতে আটকা পড়ে যাচ্ছেন ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা’। বর্তমানে দেশে ক্ষুদ্রঋণ নিচ্ছেন ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ। এত ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার পরও কেন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বছরে প্রায় ১২ হাযার কোটি টাকা লেনদেন হয়। বর্তমানে প্রায় ২০ হাযার প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণের সূদের হার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।১৯ অথচ রপ্তানী খাতে শিল্পপতিদের ঋণ দেয়া হচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ সূদে। যেখানে দরিদ্রদেরকে বিনা সূদে ঋণ দেয়া উচিত ছিল, সেখানে শিল্পপতি কোটিপতিদের চেয়ে দরিদ্রদের নিকট থেকে নেয়া হচ্ছে ৪ গুণ বেশী সূদ! এটা দারিদ্র্য চাষ নয় তো কি?
ইসলাম অতি দরিদ্রদের মাঝে ‘করযে হাসানা’ তথা সূদমুক্ত ঋণ প্রদানের তাক�দ দিয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, إِنْ تُقْرِضُوا اللهَ قَرْضاً حَسَناً يُضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ. ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তবে তিনি তা তোমাদের জন্য বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, ধৈর্যশীল’ (তাগাবুন ১৭)।
১০. মাদকাসক্তি :
মাদকাসক্তির সাথে দারিদ্রে্যর রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এর ফলে জনগণের একটি বিরাট অংশ অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার পরিবর্তে পিছনের দিকে টেনে ধরছে। এতে দরিদ্রের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। মাদকাসক্তি ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক দিককে ক্রমঅবনতির দিকে নিয়ে যায় এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়েও পঙ্গু করে দেয়। মদখোর যখন সব সম্পত্তি হারিয়ে ফেলে, তখন তার জীবন পর্যুদস্ত দরিদ্র ও রাস্তায় পড়ে থাকা ভিক্ষুকের ন্যায় হয়ে যায়। তার পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিজন মাদকাসক্ত গড়ে মাসে প্রায় ৪,০০০ টাকা খরচ করে।২০
বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এক ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। ইউএনডিপি’র দেয়া ১৯৯৯ সালের এক তথ্যে জানা যায়, সারা পৃথিবীতে মাদকাসক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ২ ভাগ। কিন্তু বাংলাদেশে এ হার প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩.৮ ভাগ। এ হিসাবে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি।২১
মাদকাসক্তি শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। দেশে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার রোধ করা গেলে প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে সাশ্রয় হবে প্রায় ৩০ হাযার কোটি টাকা। মাদকাসক্তির ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, মাদকাসক্তি রোধ করা গেলে বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারা। পুনর্জীবন দান করতে পারে বিপর্যস্ত ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতিকে।২২ তাই ইসলাম দারিদ্রে্যর হাতিয়ার মাদকতাকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এরশাদ হচ্ছে, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ- ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণকামী হও’ (মায়েদা ৯০)।
১১. শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ববোধের অভাব :
শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ববোধের অভাব দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম একটি কারণ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে অনেক বার ক্ষমতার হাত বদল হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যেক সরকার কমবেশী দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কর্মসূচী গ্রহণ করার পরেও দারিদ্র্য হরাস তো দূরের কথা বরং দারিদ্র্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ওমর (রাঃ)-এর মত দায়িত্বসচেতন শাসক হ’লে অবশ্যই দারিদ্র্য বিমোচন হ’ত। ওমর (রাঃ) বলেছিলেন, ‘ফোরাতের তীরে যদি একটি কুকুরও ভুখা অবস্থায় মারা যায়, তার জন্য ওমরকেই আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে’।২৩
ভাগ্যবিড়ম্বিত, বঞ্চিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন তাদের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করা দেশের শাসক তথা সরকারেরই অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেননা দারিদ্রে্যর মূলোৎপাটন, সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং প্রবৃদ্ধির কাম্য হার অর্জনের লক্ষ্য কেবল সরকারের কার্যকর ও সক্রিয় অংশ গ্রহণের মাধ্যমেই অর্জিত হ’তে পারে। মোটকথা, সরকারের দায়িত্বসচেতনতাই দারিদ্র্য বিমোচনের কার্যকর হাতিয়ার। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ. ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর প্রত্যেকেই স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।২৪
১২. সীমাহীন দুর্নীতি :
দুর্নীতি ও দারিদ্র্য যমজ ভাইয়ের ন্যায়। যে দেশে যত বেশী দুর্নীতি থাকবে সেদেশে তত বেশী দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাবে। এদেশের প্রতিটি সেক্টরে সীমাহীন দুর্নীতিতে এক মহাবিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এ জঘন্য ব্যাধির করালগ্রাসে অমিত সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ক্রমশঃ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বড়ই লজ্জার কথা যে, Transparency International-এর রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০০১, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৫ এ পাঁচ বছরে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।২৫
ইসলামের দৃষ্টিতে নীতিবিরুদ্ধ যে কোন কাজই দুর্নীতি এবং মারাত্মক অপরাধ। ঘুষ, জুয়া, মওজুদদারী, চোরাচালানী, ফটকাবাজারী, কালোবাজারী, মুনাফাখোরী, চাঁদাবাজী, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতী, আত্মসাৎ, জবরদখল, লুণ্ঠন, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, খেয়ানত, ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বিপণন, প্রতারণা, ওযনে কম দেয়া, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি ইত্যাদি সবই দুর্নীতির আওতাভুক্ত।
পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় ও ঈমানী চেতনাই কেবলমাত্র মানুষকে দুর্নীতি থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলার বাণী, هَذَا كِتَابُنَا يَنْطِقُ عَلَيْكُمْ بِالْحَقِّ إِنَّا كُنَّا نَسْتَنْسِخُ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ- ‘এটা আমার কিতাব (রেকর্ড), যা তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে সত্যতা সহকারে। তোমরা যা করতে তা আমি লিপিবদ্ধ করতাম’ (জাছিয়া ২৯)।
১৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগ :
সাগরবেষ্টিত নদীমাতৃক আমাদের এদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায় লেগেই থাকে। ঘূর্ণিঝড়, হ্যারিকেন, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘর-বাড়ী, গাছ-পালা, ফসলাদি, গবাদীপশু ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যের অকাল মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে দারিদ্রে্যর নিকষকালো অাঁধার। নদী ভাঙ্গনে প্রতি বছর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় হাযার হাযার হেক্টর জমি, ভূমিহীন নিঃস্ব দরিদ্র হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে অসংখ্য বনু আদম। মুহূর্তেই নিঃস্ব হয়ে পথের ভিখেরী হয়ে পড়ে অনেক বিত্তশালী পরিবার। এ সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপলক্ষে দেশ-বিদেশ থেকে যে সাহায্য আসে তার অর্ধেকও পায় না ক্ষতিগ্রস্তরা। সিংহভাগই চলে যায় সরকারী আমলা, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পকেটে।
মূলতঃ ইসলামী অনুশাসন না মানায়, অন্যায়-অবিচার, ব্যভিচার, অশ্লীলতা-বেহায়াপনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আল্লাহ বান্দাকে সতর্ক করার জন্যই মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে থাকেন। এ সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِيْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ- ‘জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে’ (রূম ৪১)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَى دُوْنَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ ‘গুরু শাস্তির পূর্বে তাদেরকে আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে’ (সাজদাহ ২১)।
১৪. বেকারত্ব :
দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম কারণ বেকারত্ব। কোন সমাজেই বেকারত্ব থাকাবস্থায় দারিদ্র্য নিরসন সম্ভব নয়। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকল মানুষের কর্মসংস্থানের অধিকারের কেবল স্বীকৃতিই দেননি; বরং তা নিশ্চিতও করেছেন। বস্ত্তত এ অধিকারের ক্ষেত্রে সকল মানুষই সমান এবং এটি একটি মানবাধিকারও বটে।
মদীনার কল্যাণ রাষ্ট্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ অধিকার লাভের সুযোগ সকলের জন্য সমানভাবে অবারিত করেছিলেন। এর সকল মানুষই দক্ষতা বলে উপার্জন করে বিত্তবান হ’তে পারত। অবশ্য নিজের অক্ষমতার কারণে অনেকে সচ্ছলতা হারাত। কিন্তু তাই বলে কোন লোককেই তার মৌলিক প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত করা হ’ত না। স্বীয় দক্ষতার পরীক্ষায় কেউ ব্যর্থ হ’লে সে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থাদি পাকাপোক্ত দেখতে পেত। ফলে কারুরই দারিদ্রে্যর কষাঘাতে জর্জরিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।
১৫. অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী :
ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে, Education is the backbone of a nation. অর্থাৎ ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। মেরুদন্ডহীন প্রাণী যেমন মাথা উঁচু করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি দারিদ্র্যমুক্ত তথা স্বাবলম্বী হ’তে পারে না। যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশী উন্নত। আর যে জাতি যত বেশী অশিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি দরিদ্র। আর অশিক্ষা দারিদ্র্য সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণও বটে।
ইসলাম যেহেতু স্বাবলম্বী, স্বনির্ভর, উন্নতজাতি হ’তে অনুপ্রেরণা যোগায়, তাই ইসলামের সর্বপ্রথম নির্দেশ হ’ল, اِقْرأْ ‘পড়’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ‘শিক্ষার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয’।২৬ ইসলামের বিধান মেনে ১০০% নাগরিক শিক্ষিত হ’লে বাংলাদেশ ১০০% দারিদ্র্যমুক্ত স্বাবলম্বী উন্নত জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে ইনশাআল্লাহ।
১৬. অপচয়, অপব্যয় ও বিলাসিতা :
অপচয়-অপব্যয়, বিলাসিতা এগুলো দারিদ্র্য সমস্যার কারণ। এদেশের বিত্তশালীগণ অপচয়-অপব্যয় ও বিলাসিতায় যে অর্থ ব্যয় করে তা দিয়ে হাযার হাযার ভুখা-নাঙ্গা বনু আদমের দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। ইসলাম মানুষকে মিতব্যয়ী হ’তে শিক্ষা দেয়। অপচয়-অপব্যয় ও বিলাসিতায় অর্থ ব্যয় না করে নিকটাত্মীয়, ফকীর-মিসকীন ও মুসাফিরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে নির্দেশ দিয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَلاَ تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا- إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْا إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْرًا- ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রভুর অবাধ্য’ (বনী ইসরাঈল ২৬-২৭)। ইসলামের উক্ত বিধান মেনে চললে অবশ্যই দারিদ্র্য বিদূরিত হবে ইনশাআল্লাহ।
১৭. খনিজ সম্পদ আহরণে ব্যর্থতা :
নানাবিধ খনিজ সম্পদে ভরপুর আমাদের এ বাংলাদেশ। তেল, গ্যাস, কয়লা, ইউরেনিয়াম সহ প্রায় সকল ধরনের খনিজ সম্পদ রয়েছে এ দেশে। কিন্তু দুঃখজনক হ’লেও সত্য যে, এগুলো উত্তোলনের জন্য আমাদের নিজস্ব কোন প্রযুক্তি নেই। দেশের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো বিদেশী কোম্পানীর কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। এখন তাদের কাছ থেকে নিজেদের গ্যাস আন্তর্জাতিক বাজার দরে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে লাভ তো দূরে থাক, প্রতি বছরে ২৫০০ কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এমন অসম চুক্তিতে গ্যাস-কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে, যাতে এদেশের লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। উদাহরণ স্বরূপ ফুলবাড়ী কয়লাখনি। চুক্তি মোতাবেক এ খনি থেকে বাংলাদেশ পাবে মাত্র ৬% আর বৃটিশ কোম্পানী এশিয়া এনার্জি পাবে ৯৪%। ৬% গ্যাস বাবদ বাংলাদেশ বছরে পাবে ১৫০০ কোটি টাকা। বিপরীতে বছরে ক্ষতি হবে ১৮০০ কোটি টাকা। ফলে ৩০ বছরে ক্ষতি হবে ৯ হাযার কোটি টাকা।২৭
ইসলাম মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, উন্নত প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছে এবং দেশের শাসকগোষ্ঠীকে দেশের অভিভাবক হিসাবে তার সমস্ত সম্পদ হেফাযত করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে। যদি ইসলামের উক্ত বিধান পরিপূর্ণভাবে মানা হ’ত তবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হ’ত না এবং অপরিমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দারিদ্রে্যর নির্মম কশাঘাতে নিষ্পেষিত হ’তে হ’ত না।
১৮. স্বার্থান্ধ প্রতিবেশী :
বাংলাদেশের দারিদ্র্য সমস্যার জন্য স্বার্থান্ধ প্রতিবেশী কম দায়ী নয়। বাংলাদেশকে তিন দিক দিয়ে বেষ্টন করে আছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। এ দেশটি মরণফাঁদ ফারাক্কা, গজলডোবা ব্যারেজ, টিপাইমুখ বাঁধ, সারি নদীর উজানে বাঁধ ও অন্যান্য সকল নদীতে বাঁধ দিয়ে ভাটির দেশ হিসাবে এ দেশকে শুকনো মৌসুমে শুকিয়ে ও বর্ষা মৌসুমে ডুবিয়ে মারার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হ’তে যাচ্ছে। প্রক্রিয়াধীন টিপাইমুখ বাঁধ এটাকে আরও ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া দক্ষিণ তালপট্টি, বেরুবাড়ী, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল, মহুরীর চর প্রভৃতি দখল করে নিয়েছে। প্রতিদিন বিএসএফ-এর মাধ্যমে গড়ে ১ জন করে নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করার ফলে প্রতিদিন একটি করে পরিবার অভিভাবকহীন নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সীমানায় ভারতীয় নাগরিকরা ঢুকে মূল্যবান সম্পদ পাচার ও চুরি করে নিয়ে গেলেও সীমান্তের অতন্দ্রপ্রহরী বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) গুলি করার অনুমতি পর্যন্ত নেই। তারা যেন সীমান্তের সাক্ষী গোপাল।
ইসলাম উদারতা, পরমতসহিষ্ণুতার ধর্ম। অন্যের অধিকার যথাযথ সংরক্ষণের গ্যারান্টি একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ, দখল, চুরি ইত্যাদির বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে। অপরের ১ ইঞ্চি ভূমি দখল করে নিলেও সাত স্তবক জমি হাশরের মাঠে দখলকারীর গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে।২৮ ইসলাম এ অনুশাসন মানলে কিছুতেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হ’ত না।
উপসংহার :
আলোচিত দারিদ্র্য সমস্যার কারণ ও তার প্রতিকার বিষয়ক পর্যালোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, দারিদ্রে্যর অভিশাপ থেকে মুক্তির গ্যারান্টি একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। ইসলামের প্রতিটি বিধান যথার্থভাবে মেনে চললে কিছুতেই দারিদ্র্য থাকবে না এবং বাংলাদেশ স্বনির্ভর সমৃদ্ধশালী, উন্নত জাতি হিসাবে বিশ্বের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
– ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী