সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

ইসলামের দৃষ্টিতে সফল সংলাপের শর্তাবলী: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

সংলাপ একটি বহুল প্রচলিত কল্যাণকর শব্দ। পৃথিবীর আদিকাল থেকে মানুষ নিজেদের মাঝে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সংলাপে বসে তার সমাধান বের করার চেষ্টা করতেন। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগেও আজ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংলাপের বিকল্প নেই। মহা গ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ প্রতিষ্ঠায়, রাসূলদের সত্যতা প্রমাণে ও যুগে যুগে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শতাধিক বার সংলাপের প্রতি মানুষকে আহ্বান করা হয়েছে।

এরই ফলস্বরূপ মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) নমরুদের সাথে, মূসা (আলাইহিস সালাম) ফির‘আউন ও তার জাতির সাথে, ঈসা (আলাইহিস সালাম) অভিশপ্ত ইয়াহূদীও হাওয়ারীদের (ঈসা আলাইহিস সালামের  অনুসারীগণ) সাথে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার কুরাইশদের সাথে এবং অন্যান্য নবী-রাসূলগণ তাদের নিজ নিজ জাতির সাথে সংলাপ করে সফলকাম হয়েছেন। সংলাপের মাধ্যমেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় একটি শান্তিময় সুখ-সমৃদ্ধ সোনালী রাষ্ট্রের গোঁড়া পত্তন করেছিলেন, যার শান্তির ছায়া আজও বিশ্ববাসী উপভোগ করছে।

আজকের বিশ্ব নতুন করে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। তাইতো জাতিসংঘ বার বার ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ইসরাইল, ও আমেরিকা সহ সকলের প্রতি সংলাপের জোর আহবান জানাচ্ছে। আজ যদি ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ইসরাইল ও অন্যান্য দেশগুলোর সমস্যাবলী “অস্ত্র নয় সংলাপ” এ নীতি দ্বারা সমাধান করা যেত তবে আর কোনো রক্তপাত হতো না, অবুঝ শিশুগুলো মা-বাবা হারাতো না, আকাশে বাতাসে শোনা যেতো না কান্নার আহাজারি, হিরোশিমা আর নাগাসাকির মতো এত পঙ্গু মানুষ পৃথিবীতে জন্মাতো না। সংলাপের গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০০৮ সালের জুন মাসে মক্কায় বাদশাহ আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দুই দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক মহা সম্মেলন। এতে ইসলামে সংলাপের গুরুত্ব ও শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়। একই বছর নভেম্বর মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আরেকটি সেমিনার। বর্তমানেও জাতিসংঘ নানা ইস্যু সমাধানে সব জাতি ও দেশের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানান। সিরিয়াতে দীর্ঘ দিন চলমান সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো সংলাপ।

আমাদের বাংলাদেশেও সরকার দল অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সংলাপের ডাক দিচ্ছে। দেশের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মোকাবেলায় সংলাপ হয়ে উঠেছে এক অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার। বর্তমানে সংলাপ শুধু রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে হচ্ছে না, অর্থনীতি, কূটনীতি, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ে সংলাপ হচ্ছে। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে স্পেনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল “আন্তর্জাতিক আসমানি ধর্ম বিষয়ক সংলাপ”। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মান, আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে সকলে সুখ-শান্তিতে বসবাসের নিমিত্তে ধর্ম প্রধানদের সাথে সংলাপ হচ্ছে।

তাইতো বিশ্ববিখ্যাত আল আযহারের সাবেক শায়খুল আযহার, মিশরের গ্র্যান্ড ইমাম “মরহুম ডঃ সাইয়্যেদ তনতাবী” (রহ.) তার শেষ জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন সংলাপের উপর সভা-সেমিনার করে। আল-কুরআনের “মধ্যপন্থা অবলম্বন ও কট্টরতা পরিহার” নীতি বাস্তবায়নে সংলাপ হয়ে উঠছে  এক জনপ্রিয় মাধ্যম।

কিন্তু সংলাপের গুরুত্ব অনুধাবনের পরে ও আমরা কেন সফলকাম হতে পারছি না? সংলাপের দ্বারা যদি সব সমস্যার সমাধান করা যায় তবে আমাদের দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি অস্থিতিশীলতা নিরসনে সংলাপ কি সফল হবে? আমি বলব হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আলোচনার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের সমস্যাবলীর সমাধান করে সোনার বাংলা গড়তে পারি। তবে সবকিছুর আগে আমাদেরকে গভীরভাবে জানতে ও বুঝতে হবে সংলাপ কি? এর শর্তাবলীই বা কি? কিভাবে একটি সংলাপ সফল হবে? আমাদের যদি এ বিষয়ে পূর্ণ ধারণা না থাকে তবে সংলাপ কোনো ফল দিবে না, বরং সংলাপের নামে আমরা জাতির সাথে বারবার বেঈমানি করব। তাই নিচে সংলাপের পরিচিতি ও তার শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করব, যাতে আমরা বুঝতে পারি আমাদের দেশের মহান রাজনীতিবিদরা কতটুকু স্বচ্ছ মন নিয়ে অন্যান্য দলের সাথে সংলাপ করতে চান।

এবার আসা যাক সংলাপ কি? “দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা দলের মাঝে কোনো নির্দিষ্ট ইস্যু বা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, যার দ্বারা সঠিক, বাস্তব, কল্যাণকর ও উন্নয়ন মূলক সিদ্ধান্তে পৌছা যায়”। সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যেখানে দু’দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকবে।

সংলাপ যেহেতু দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা দলের মাঝে হয় তাই তাদের মধ্যে কিছু সাধারণ শর্তাবলী পাওয়া যেতে হবে, যাতে উভয়েরই স্বচ্ছ মন-প্রাণ থাকে এবং বাস্তব ও সঠিকটা মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন। একটি সফল ও ফলদায়ক সংলাপের জন্য নিম্নের শর্তাবলী পাওয়া যেতে হবে:

সত্য অনুসন্ধান: সংলাপ হতে হবে উভয়ের সততার সাথে। সত্য ও বাস্তব অনুসন্ধান এবং মিথ্যা ও অসত্য পরিত্যাগ করাই সংলাপের প্রথম ও প্রধান শর্ত।

বিষয় নির্ধারণ: সংলাপের বিষয় হতে হবে সূক্ষ্ম ও নির্দিষ্ট। একাধিক বিষয়ে একত্রে আলোচনা করলে কোনটাই ফলদায়ক হয়না। আমাদের দেশের মহান রাজনীতিবিদদেরকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় ওনাদেরকে প্রশ্ন করা হয়েছে এক বিষয় আর ওনারা উত্তর দিচ্ছেন অন্য বিষয়ের।
সঠিক ও বাস্তবমুখী যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং অন্যের মতামতকে যুক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে খণ্ডন করতে হবে।

বিনয়ী, ভদ্র ও নম্র হওয়া: আলোচনার টেবিলে নিজেকে বিনয়ী, ভদ্র ও নম্র হতে হবে। ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে অন্যের মতামতকে খণ্ডন করতে হবে। আমাদের দেশে সংসদে যেভাবে গলা উঁচিয়ে টেবিল থাপড়িয়ে আলোচনা করা হয়, কোনো ভদ্র সমাজ এটা মনে নিতে পারে না। আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে সংসদে সবাই জনগণের প্রতিনিধি, একে অন্যে সম্মান প্রদর্শন করা কর্তব্য। অন্য দলের অনর্থক সমালোচনা না করে গঠনমূলক আলোচনাই আমাদের সাংসদদের নিকট কাম্য। যেদিন এ অনুভূতি আমাদের মাঝে জাগ্রত হবে সেদিনই দেশে সঠিক ও ফলপ্রসূ গণতন্ত্র চর্চা হবে।

বাক স্বাধীনতা: আলোচনা সভায় নিজের মত পেশ করার যেমন অধিকার আছে তেমনি অন্যের মতামত পেশ করারও সমাধিকার রয়েছে। অন্যের কথাগুলো গভীর আগ্রহ ও শ্রদ্ধার সাথে শুনতে হবে, তাকে মত পেশ করতে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় সাংসদকে বেশী সময় দেয়া আর বিরোধী দলীয় সাংসদকে কম সময় দেয়ার যে অঘোষিত আইন চালু হয়ে গেছে তা সঠিক গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। আসলে পরস্পর ভালবাসা, সহযোগিতা, সহানুভূতি ও অন্যকে শ্রদ্ধা করা ছাড়া দেশ উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।
অন্যের রায় মেনে নেওয়ার মানসিকতা: সংলাপে আমাদের মানসিকতা হবে “আমার রায় সঠিক তবে ভুলের সম্ভাবনা আছে, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের রায় ভুল তবে সঠিক হওয়ারও সম্ভাবনা আছে”। যদি দলীর-প্রমাণাদি বা যুক্তি তর্কে অন্যের রায় সঠিক বলে বিবেচিত হয় তবে তা বিনা দ্বিধায় মেনে নেওয়া উচিত।

সংলাপের বিষয়টি ব্যাপক না হওয়া: সমস্যাবলী নির্ধারণ করে তা সরল-সাবলীল ভাষায় পেশ করা যাতে সবাই বিষয়টি অনায়াসে বুঝতে পারেন।

সংলাপ-কারী পারদর্শী হওয়া: যারা সংলাপে অংশ গ্রহণ করবেন তারা বিষয়টি পরিপূর্ণ ভাবে আয়ত্ত করবেন, পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। যেমন: অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হলে সেখানে কেবল অর্থিনীতিবিদ্গনই অংশ গ্রহণ করবেন তা বলাই বাহুল্য। আমাদের দেশে দলীয় প্রভাবে যেসব রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয়া হয় তাদের অধিকাংশই এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন। এমনকি যে দেশে তাদের নিয়োগ দেয়া হয় সে দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি পর্যন্ত জানেন না। ফলে বহির্বিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক নাজুক।

পূর্ব শর্ত বর্জন: সংলাপের পূর্বে কোনো শর্ত জুড়ে না দেওয়া। যেমন: আমাদের অমুক নেতাকে মুক্তি দিলে আমরা সংলাপে বসতে রাজি। এটার অর্থ হচ্ছে: “বিচার মানি, তবে বড় তাল গাছটা আমার”। মুল কথা হল আলোচনার উদ্দেশ্যই হচ্ছে সমাধান, কিন্তু পূর্ব শর্ত জুড়ে দিলে অনেক সময় আলোচনাই সম্ভবপর হয়ে উঠে না।

সর্বোপরি দেশকে ভালবেসে, লাখ লাখ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তাদের অবদানের কথা স্মরণে রেখে সরল মন-প্রাণ নিয়ে যখন আমরা সংলাপে বসব তখন সে সংলাপ হবে সফল ও সার্থক।

আমরা সাধারণ জনগণ হরতাল, অবরোধ, ভাংচুরের রাজনীতি আর চাইনা। আপনার হরতাল, ভাংচুরের রাজনীতি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি, মহামূল্যবান সময়ের অপচয় আর কতিপয় নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া ছাড়া কি আর কিছু দিতে পেরেছে? সভ্যসমাজ কি আমাদের মত পাগলের ন্যায় দেশের সম্পদ রেললাইন উপড়ে ফেলে, গাড়ি ভাংচুর করে, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাসের পর মাস বন্ধ রেখে দেশ পরিচালনা করতে পারে? রাজনীতির নামে দেশের সম্পদ লুট করা আমাদের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্র রাজনীতির নামে দেশে চাঁদাবাজি আর কতকাল হবে? ছাত্র রাজনীতি কি আমাদের মত গরিব দেশে খুবই জরুরী? তাহলে ছাত্র নামের দলীয় ক্যাডারদের হাতে যেসব নিরীহ ছাত্র অকালে প্রাণ দিচ্ছে তাদেরকে কি জবাব দিবেন? মানুষ যখন ভাবছে ২০৫০ সালে আমরা কি কি করতে পারি, তখন মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা কি হবে? ২১০০ সালে বিশ্ব কি কি আবিষ্কার করবে? তখন আমাদের মহান নেতার ভাবছেন কিভাবে পিছনে ফিরে যাওয়া যায়। কিভাবে এ জাতিকে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে বোকা বানিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা যায়। কেন? আমরা কি বর্তমান যুগোপযোগী সংবিধান রচনা করতে পারিনা? কেন আমাদেরকে পিছে ফিরে যেতে হবে?

সরকার আসে সরকার যায়, দিন আসে দিন যায়। আমরা যে গরিব সে গরিবই রয়ে গেলাম। তাহলে দেশের সম্পদ কি ওদের দু’দলেরই যে ওরাই সব সময় ভোগ করবে আর আমরা গাধার মত প্রতিবার ওদেরকে একটা সিগারেটের বিনিময়ে ভোট দিব? ক্ষমতায় কে গেলো সেটা বিষয় না, তারা কি করলো সেটাই আমাদের বিষয়। কিন্তু বিগত বছরগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে দেখুন আমরা ওদের থেকে কি পেলাম? স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের মাথা পিছু আয় কতটুকু বেড়েছে বা কমেছে? আগের তুলনায় আমরা বিদ্যুৎ কতটুকু পাই? কয়টি কলকারখানা তৈরি হয়েছে? প্রতিদিন কয়টি লাশ আমরা ওদের থেকে উপহার পাই!!! তাহলে আমাদের মনে হয় আরেকটি স্বাধীনতা লাগবে। আর সেটা হবে বিবেকের স্বাধীনতা। আমরা গতানুগতিকভাবে সরকার পাল্টাই আবার সরকার আসে, জনগণকে নিয়ে বার বার হরতাল করি, মানুষ মরে, কিন্তু ওদের কি হয়? ওরা তো এবার না পারলে আগামীতে ক্ষমতায় গিয়ে দেশের সম্পদ লুট করবে, আপনি কি পেলেন? আমার দেশ কি পেল?
আসুন আমরা নিজেরা আর বোকার স্বর্গে বাস না করে নিজেদের সম্পর্কে ভাবি, নিজের দেশ সম্পর্কে ভাবি, দেশের যাবতীয় সম্পদের হেফাজতের ব্যাপারে ভাবি, আগামী দিনের সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচন সম্পর্কে ভাবি। সুশিক্ষিত, দক্ষ, ন্যায়নিষ্ঠ, তরুণ প্রজন্মের কথা ভাবেন, এমন প্রতিনিধির কথা ভাবেন যারা শক্ত হাতে হাল ধরে আমাদের সোনার বাংলাকে নিয়ে যাবে উন্নতির দিকে, যারা নিজেদের পেটের কথা না ভেবে জনগণের কথা ভাববে এমন লোক নির্বাচন করুন। যারা “ভাংচুর নয় সংলাপ” এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করবে। আমরা যদি সংলাপের শর্তাবলী মেনে আলোচনায় বসি তবে তা অবশ্যই সফল, সার্থক ও ফলদায়ক হবে।

————-
– আব্দুল্লাহ আল মামুন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

মন্তব্য করুন

Back to top button