মুসলিম জাহান

মদিনায় ম্যাগনেটিক ল্যান্ড

সৌদি আরবের মদিনা-মোনাওয়ারায় পবিত্র মসজিদুন নববী থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ছোট-বড় অনেক পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে যাওয়া একটি পথে, একটা অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য জায়গা রয়েছে, যাকে ‘ভূতের উপত্যকা’ বলা হয়। বাংলা ভাষাভাষীরা কেউ বলে জিনের পাহাড়, কেউ বলে জাদুর পাহাড়। এর বাইরে বলা হয়- ওয়াদি-ই-বাজা, ওয়াদি-ই-জিন, ঘোস্ট ভ্যালি, তারিক-ই-জিন, তারিক-ই-বেদ ইত্যাদি যে যা বোঝে।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো সেখানে গাড়ি অটোমেটিক ঢালু থেকে উঁচুর দিকে চলে। মসজিদুন নববীর দিক থেকে গাড়ি যখন সেখান দিয়ে গমন করে, তখন (ঢালু পথে) গাড়ি ভারী হয়ে যায়, আপনা থেকেই গতিবেগ কমে যায় এবং সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে (হালকা গাড়ি) যেতে পারে, তা-ও প্রথম গিয়ারের মতো শব্দ হয়।

ঠিক উল্টোভাবে ফিরে আসতে চাইলে গাড়ি আপনা থেকেই উঁচুর দিকে দ্রুত ছুটে চলে, শুধু গিয়ার নিউট্রাল রেখে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্টিয়ারিং ধরে পা তুলে বসে থাকলেই চলে, গাড়ি ছুটে যায় আপন গতিতে ১০০-১৪০ কিলোমিটার বেগে। হয়তো তার চেয়েও বেশি গতিতে চলে, কিন্তু আমরা টেস্ট করে দেখেছি ১০০-১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত, কার্যত ব্রেক কষে জরুরি ইন্ডিকেটর লাগিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, অন্যথায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

জায়গায় না গেলে বিশ্বাসই করা যায় না যে, এমন অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক একটি জায়গা, পৃথিবীর বুকে একটাই রয়েছে, তা-ও মদিনায়। ইউটিউবে অনেক ভিডিওচিত্র রয়েছে। প্রতিদিন দেশী-বিদেশী শত শত পর্যটক সেখানে যায়, রাস্তায় পানি ঢেলে দেখে, পানির বোতল অটোমেটিক গড়িয়ে যায়, গাড়ি নিয়ে খেলা করে, নিজেই গাড়ি চালিয়ে দেখে। প্রশস্ত ও বিস্তৃত পথ, খালি চোখে জায়গাটি সমতল মনে হতে পারে।

ধরে নেয়া যাক জায়গাটি সমতল কিংবা ঢালুর দিকে গাড়ি অনায়াসে ছুটে চলে; যদি তা-ই হয় তবে গাড়ি বিনা গিয়ারে, বিনা এস্কেলেটরে এত স্পিডে কখনোই ছুটে যাবে না। জায়গাটি খাড়া হলে হয়তো যেতে পারে, তা-ও এত দ্রুত নয়, ইঞ্জিনের সাহায্য নিতেই হবে। সুতরাং ঘটনাটি একদম সত্য এবং পরীক্ষিত।

জায়গাটি সম্পর্কে সঠিক কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বহু ভূতত্ত্ববিদ জায়গাটির প্রকৃত রহস্য উদ্ভাবন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। তবে দায়সারা একটা তথ্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা গেছে।

ভূতত্ত্ববিদেরা বলেছেন, পাহাড়ে ঘেরা এই জায়গার ভূগর্ভে অনেক খনিজসম্পদ রয়েছে, ফলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তীব্র প্রভাব রয়েছে এবং ‘ম্যাগনেটিক পাওয়ার’ বা ‘চুম্বক শক্তি’ সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে গাড়ি আপনা থেকেই ছুটে চলে। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘ম্যাগনেটিক ল্যান্ড’।

————–
– আইয়ুব আহমেদ দুলাল
(নয়া দিগন্ত)

মন্তব্য করুন

Back to top button