মুসলিম জাহান

হৃদয় জয় করেছে গাম্বিয়া

গাম্বিয়া এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে আলোচিত এক নাম। এই দেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ সবার। কারণ রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার যে গণহত্যা চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে মামলা করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করেছে এই দেশটি। আর এই কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষেরও হৃদয় জয় করেছে তারা।
রোহিঙ্গাদের গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে(আইসিজে) গেল নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে গাম্বিয়া। মূলত এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারো দেশটির প্রসঙ্গ চলে আসে। ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডের দ্য হেগ শহরে চলছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম।

বিচার কার্যক্রমে মামলায় বাদি গাম্বিয়া, আসামি মিয়ানমার ছাড়াও ওআইসিসহ বেশ কিছু দেশ ও সংস্থা অংশ নিয়েছে। আদালতে অং সান সু চি মিয়ানমারের পক্ষে হাজির হয়েছেন। গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।
পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট্ট একটি দেশ গাম্বিয়া। রাষ্ট্রীয় নাম গাম্বিয়া ইসলামি প্রজাতন্ত্র। এটি আফ্রিকা মহাদেশের মূল ভূখন্ডের ক্ষুদ্রতম দেশ। দেশটির উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সেনেগাল দ্বারা পরিবেষ্টিত। আর পশ্চিমে রয়েছে মহাসাগর। অথৈই নীল জলরাশির আটলান্টিক মহাসাগর।

গাম্বিয়া নদী থেকেই দেশটির নামকরণ। নদীটির দেশের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে। আর এই নদীতে কেন্দ্র করেই মূলত গাম্বিয়া। সাগর উপকূল থেকে প্রায় মহাদেশের প্রায় ৩২০ কিলোমিটার অভ্যন্তর পর্যন্ত চলে গেছে। তবে এর সর্বোচ্চ প্রস্থ মাত্র ৫০ কিলোমিটার। বন্দর শহর বাঞ্জুল দেশটির রাজধানী। সেরেকুন্দা দেশের বৃহত্তম শহর।


গাম্বিয়া একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্র। চীনাবাদাম এখানকার প্রধান উৎপাদিত শস্য এবং প্রধান রপ্তানি দ্রব্য। পর্যটন শিল্প থেকেও আয় হয়। আটলান্টিক সাগরের উপকূলের সমুদ্রসৈকতগুলিতে ঘুরতে এবং গাম্বিয়া নদীর বিচিত্র পাখপাখালি দেখতে পর্যটকেরা দেশটিতে আসেন। গাম্বিয়াকে শুধু পাখির দেশ বললেও ভুল হবে না।

গাম্বিয়া ১৯ শতকে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়। ১৯৬৫ সালে দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর দেশটি একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্র হিসেবে গণ্য হয়। ১৯৯৪ সালে একটি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা হয় এবং সামরিক নেতা ইয়াহিয়া জাম্মেহ তার স্থান নেন। জাম্মেহ পরবর্তীকালে গাম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী হন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জামমেহকে পরাজিত করার পরে জানুয়ারী ২০১৭ সালে অ্যাডামা ব্যারো গাম্বিয়ার তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হন।

কয়েক বছর আগে গাম্বিয়া উপনিবেশিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছে। গাম্বিয়ার ৯৫ ভাগ মানুষ মুসলিম, বাকি ৫ ভাগ খ্রিস্টান বা অন্যান্য। তবে সংখ্যালঘুরা তাদের ধর্ম বাধাহীনভাবে পালন করতে পারে।

ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাম্মেহ রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায় গাম্বিয়ায় নাচ-গান এবং ড্রামসহ সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষিদ্ধ করেছিলেন।

জানা যায়, নবম ও দশম শতাব্দীতে গাম্বিয়া অঞ্চলে আরব ব্যবসায়ীদের আগমণ ঘটে। দশম শতাব্দীতে, মুসলিম বণিক এবং আলেমগণ পশ্চিম আফ্রিকায় বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তারা ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্য রুট স্থাপন করেছিলেন, যার ফলে এ অঞ্চল থেকে সোনা ও হাতির দাঁতের রফতানি করা হতো। পাশাপাশি বিভিন্ন তৈরি পণ্য আমদানি করা হত।

আর এভাবেই এক সময় ইসলামের ছায়াতলে আসে গাম্বিয়া। দেশটির অধিকাংশ মানুষ সুন্নী মুসলমান। তারা মূলত মালেকী মাযহাবের অনুসারী। তবে কিছু শিয়া মতালম্বীও রয়েছে।

গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশেষত পশ্চিম আফ্রিকান এবং ইসলামিক বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। যদিও বিদেশে দেশটির সীমাবদ্ধ প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এর আগে লাইবেরিয়া এবং সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধের সমাধানে গাম্বিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।

সবার কাছে সুপরিচিত ইসলামী ব্যক্তিত্ব ড. বিলাল ফিলিপস কতৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইইউ) মূল ক্যাম্পাস গাম্বিয়ার কানিফিং শহরে। এই অনলাইন ভিত্তিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বিশ্বের ২৫০টির মতো দেশে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চার লাখ ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।

শিক্ষার ক্ষেত্রে গাম্বিয়া খুব এগিয়ে না থাকলে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও আরবী ভাষা ও কুরআন শিক্ষা দেয়া হয়।

মন্তব্য করুন

Back to top button