মুসলিম জাহান

রাজপ্রাসাদের জৌলুসও ম্লান আমির আবদুল কাদের মসজিদের কাছে

আমির আবদুল কাদের মসজিদ। অবস্থান আলজেরিয়ার কনস্টানটাইন শহরে। গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স নির্মাণের আগ পর্যন্ত এটাই ছিল আলজেরিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ। তবে সেটি এ মসজিদের জন্য আদৌ কোনো আলোচনার বিষয় নয়। কারণ এ মসজিদে প্রবেশ করলে যে কেউ কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলে যাবে চাকচিক্যময় বাইরের পৃথিবীর জীবনাচার।

এর ভেতরে প্রবেশ করে চারদিকে তাকালে প্রথমেই কিছুক্ষণের জন্য নির্বাক হয়ে যায় দর্শক। পৃথিবীর অনেক রাজ প্রাসাদের জৌলুস যেন ম্লান এই সৌন্দর্য গরিমাময় মাধুর্যের কাছে। মসজিদের দেয়াল, খুঁটি, খিলান, গম্বুজ, ছাদ কোথাও এক ইঞ্চি স্থান নেই যেখানে মোহনীয় কারুকাজের বিস্তারিত ছোঁয়া নেই। একদিকে এর জৌলুসপূর্ণ কারুকাজ, মার্বেল টাইলস, রঙের ব্যবহার আর তার সাথে যুক্ত হয়েছে এর বিশালত্ব। সব মিলিয়ে এক কথায় অবিশ্বাস্য। চোখে মুখে অজানা বিস্ময় প্রকাশ করা ছাড়া কোনো সাধারণ দর্শকের পক্ষে এর সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করা এক প্রকার অসম্ভব। তাই এ মসজিদের ভেতরের সৌন্দর্য দেখার পর দর্শকদের মুখ থেকে আপনা আপনি বেরিয়ে আসে একটিই শব্দ ‘অবিশ্বাস্য’, ‘সুবহানাল্লাহ’। অনেকে তাই এ মসজিদ দেখার পর তেমন কোনো বিবরণ ছাড়া শুধু লিখেছেন, আমি অসম্ভব সুন্দর একটা কিছু দেখেছি। কেউ লিখেছেন আমি মনে হয় আধুনিক পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থাপনা দেখেছি।

এ মসজিদ ভ্রমণ করার পর দর্শক এতই মুগ্ধ হয় যে, সে তার পরিচিত জনের কাছে এ সম্পর্কে না বলে থাকতে পারে না। আর তাদেরও এটা দেখতে আসার জন্য অনুরোধ করে। আর কেউ যদি এ শহরে যায় তাহলে তাকে অনুরোধ করব আবদুল কাদের মসজিদ না দেখে যেন কেউ বাড়ি না ফেরে। কনস্টানটাইন যেমন আলজেরিয়ার সুন্দর একটি শহর, তেমনি এ শহর স্মৃতি বহন করছে সা¤্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ের। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর আমির আবদুল কাদেরের নামে এ মসজিদ। মসজিদেরই সংলগ্ন ইসলামী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। নির্মাণ শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। প্রথমে ১০ হাজার মুসল্লি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন মসজিদের মূল স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। পরে তখনকার রাষ্ট্রপতি হাওয়ারি বৌমাডিন এ প্রকল্পের সাথে যুক্ত হন এবং একে আলজেরিয়ার অন্যতম বড় মসজিদ ও আলজেরিয়ার প্রথম আধুনিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেন।

আন্দালুসিয়া স্টাইলের কারুকাজের জন্য মিসর, মরক্কো এবং আলজেরিয়ান সবচেয়ে নামীদামি প্রকৌশলী এবং কারিগরদের কাজে লাগানো হয়েছে এ মসজিদে।

এ মসজিদের যে স্থাপত্যশৈলী, নান্দনিকতা, মেধা মনন এবং হাতের কাজের দক্ষতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তাতে একে আধুনিক ইসলামী স্থাপত্য শিল্পের শুধু মাস্টারপিস নয় বরং অন্যতম একটি নমুনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে বোদ্ধা মহল থেকে।

বর্তমানে মূল কক্ষে একসাথে ১৫ হাজার মুসল্লি সালাত আদায় করতে পারেন এ মসজিদে। মূল প্রার্থনাকক্ষের সাথে নারীদের জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে। মসজিদের ফ্লোর থেকে গম্বুজের উচ্চতা ২০৯ ফুট। মসজিদের উঁচু সিলিংয়ের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে করেছে আরো মোহময়। মসজিদের চার দিকে রয়েছে খোলামেলা পরিবেশ আর পাহাড়শ্রেণী।

মন্তব্য করুন

Back to top button