অর্থনীতি/ব্যবসা-বাণিজ্য

ইসলামে হালাল ব্যবসা-বাণিজ্যের রূপরেখা – ২

পরিমাপে কম-বেশী করা  নিষিদ্ধ :

পণ্য সামগ্রী  ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতাকে পরিমাপে কম দেয়া কিংবা মেপে নেয়ার সময় বেশী নেয়াকে  ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। কুরআন-হাদীছে এহেন কর্মকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও পরকালীন  দুর্ভোগের কারণ বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَيْلٌ  لِّلْمُطَفِّفِيْنَ، الَّذِيْنَ  إِذَا اكْتَالُواْ عَلَى النَّاسِ  يَسْتَوْفُوْنَ، وَإِذَا كَالُوْهُمْ  أَو وَّزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ، أَلَا يَظُنُّ  أُولَئِكَ أَنَّهُم مَّبْعُوْثُوْنَ، لِيَوْمٍ  عَظِيْمٍ،  يَوْمَ يَقُوْمُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ- ‘দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার  সময় পূর্ণমাত্রায় নেয়। আর যখন লোকদের মেপে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না  যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? সেই মহা দিবসে। যেদিন মানুষ দন্ডায়মান হবে বিশ্বপালকের সম্মুখে’ (মুতাফফিফীন ৮৩/১-৬)। তিনি আরও বলেন, وَالسَّمَاءَ رَفَعَهَا  وَوَضَعَ الْمِيْزَانَ،  أَلَّا تَطْغَوْا فِي الْمِيْزَانِ،  وَأَقِيْمُوا الْوَزْنَ بِالْقِسْطِ  وَلاَ تُخْسِرُوا الْمِيْزَانَ- ‘তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদন্ড (দাঁড়িপাল্লা)।  যাতে তোমরা সীমালংঘন না কর তুলাদন্ডে। তোমরা ন্যায্য ওযন কায়েম কর এবং ওযনে কম দিও  না’ (রহমান ৫৫/৭-৯)। অন্যত্র তিনি আরও বলেন, وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيْزَانَ بِالْقِسْطِ  لاَ نُكَلِّفُ نَفْساً إِلاَّ  وُسْعَهَا ‘তোমরা মাপ ও  ওযন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেই  না’ (আন‘আম ৫/১৫২)

তিনি আরও বলেন, وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُواْ بِالقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيْمِ ذَلِكَ خَيْرٌ  وَأَحْسَنُ تَأْوِيْلاً ‘তোমরা মেপে দেয়ার সময় মাপ পূর্ণ করে দাও এবং সঠিক  দাঁড়িপাল্লায় ওযন কর। এটাই উত্তম ও পরিণামের দিক দিয়ে শুভ’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৩৫)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

خَمْسٌ بِخَمْسٍ: مَا نَقَضَ قَوْمٌ الْعَهْدَ  إِلاَّ سَلَّطَ اللهُ عَلَيْهِمْ عَدُوَّهُمْ  وَمَا حَكَمُوْا بِغَيْرِ مَا أَنْزَلَ  اللهُ إِلاَّ فَشَا فِيْهِمُ الْفَقْرُ  وَمَا ظَهَرَتْ فِيْهِمُ الْفَاحِشَةُ إِلاَّ فَشَا فِيْهِمُ الْمَوْتُ  (أَوْ إِلاَّ ظَهَرَ فِيْهِمُ الطَّاعُوْنُ) ولا طَفَّفُوا  المِكْيالَ إلا مُنِعُوا النَّباتَ وأُخِذُوا بالسِّنِينَ ولا مَنَعُوا الزَّكاةَ إلا  حُبِسَ عَنْهُمُ  الْمَطَرُ

*  প্রধান মুহাদ্দিছ, বেলটিয়া কামিল মাদরাসা, জামালপুর।

‘পাঁচটি বস্ত্ত পাঁচটি  বস্ত্তর কারণে হয়ে থাকে- (১) কোন কওম চুক্তিভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের উপর তাদের  শত্রুকে বিজয়ী করে দেন। (২) কেউ আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের বাইরে ফায়ছালা দিলে  তাদের মধ্যে দারিদ্র্য ছড়িয়ে পড়ে। (৩) কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীল কাজ বিস্তৃত হ’লে  তাদের মধ্যে মৃত্যু অর্থাৎ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। (৪) কেউ মাপে বা ওযনে কম দিলে তাদের  জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে। (৫) কেউ  যাকাত দেয়া বন্ধ করলে তাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হয়’।[1]

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর  (রাঃ) যখন বাজারে যেতেন, তখন বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলতেন, اِتَّقِ اللهَ وَأَوْفِ الْكَيْلَ وَالْوَزْنَ بِالْقِسْطِ فَاِنَّ الْمُطَفِّفِيْنَ يَوْمَ  الْقِيَامَةِ يُوْقَفُوْنَ  حَتَّى إِنَّ الْعَرَقَ لَيُلْجِمُهُمْ  إِلَى أَنْصَافِ آذَانِهِمْ ‘আল্লাহকে ভয় কর। মাপ ও ওযন ন্যায্যভাবে কর। কেননা মাপে কম দানকারীরা  ক্বিয়ামতের দিন দন্ডায়মান থাকবে এমন অবস্থায় যে, ঘামে তাদের কানের অর্ধেক পর্যন্ত  ডুবে যাবে’।[2]

প্রতারণা বা ধোঁকা  নিষিদ্ধ :

মানুষ মানুষকে ঠকানোর  জন্য যেসব পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করে থাকে তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল প্রতারণা-ধোঁকা।  এটি একটি জঘন্য অপরাধ। এর দ্বারা মানব সমাজে সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। ইসলাম  ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ধোঁকা দিয়ে অর্থোপার্জন নিষিদ্ধ করেছে। আবু হুরায়রা  (রাঃ) বলেন,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ  فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيْهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلاً فَقَالَ: مَا هَذَا يَا صَاحِبَ  الطَّعَامِ. قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ أَفَلاَ جَعَلْتَهُ  فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّىْ.

‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি খাদ্য স্তূপের পাশ দিয়ে  যাচ্ছিলেন। তিনি খাদ্য স্তূপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে তাঁর হাত ভিজা পেলেন। তখন  তিনি বললেন, হে খাদ্যের মালিক! ব্যাপার কি? উত্তরে খাদ্যের মালিক বললেন, হে  আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তাহ’লে ভিজা  অংশটা শস্যের উপরে রাখলে না কেন? যাতে ক্রেতা তা দেখে ক্রয় করতে পারে। যে প্রতারণা  করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[3]

সুতরাং ধোঁকা-প্রতারণা  বর্জন করা শুধু ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেই ফরয নয়, বরং প্রত্যেক কারবারে এবং  শিল্পকর্মের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। কারণ ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা সর্বাবস্থায় ও  সর্বক্ষেত্রেই হারাম।

উল্লেখ্য, যেসব পণ্যে  বিভিন্ন কারণে দোষ-ত্রুটি থেকে যায় সেগুলো গোপন রেখে বা কৌশলে তা বিক্রি করা  ইসলামে নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হচ্ছে ক্রেতাকে উক্ত দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে  জানাতে হবে। বিক্রয়ের সময় পণ্যের দোষ-ত্রুটি বলে দেয়া না হ’লে তা হালাল হবে না। আর  জানা সত্ত্বেও বিক্রেতা যদি না বলে তাহ’লে তা তার জন্য হালাল নয়।[4]

এ ব্যাপারে হাসান ইবনে  ছালেহ এর ক্রীতদাসী বিক্রয়ের ঘটনাটি একটি অনন্য উদাহরণ। তিনি একটি ক্রীতদাসী  বিক্রয় করলেন। ক্রেতাকে বললেন, মেয়েটি একবার থুথুর সাথে রক্ত ফেলেছিল। তা ছিল  মাত্র একবারের ঘটনা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার ঈমানী হৃদয় তা উল্লেখ না করে চুপ  থাকতে পারল না, যদিও তাতে মূল্য কম হওয়ার আশংকা ছিল।[5]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  বলেছেন,

اَلْبَيِّعَانِ  بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا، فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُوْرِكَ لَهُمَا فِىْ  بَيْعِهِمَا، وَإِنْ كَذَبَا وَكَتَمَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا-

‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ  বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়, ততক্ষণ তাদের চুক্তি ভঙ্গ করার এখতিয়ার থাকবে। যদি তারা  উভয়েই সততা অবলম্বন করে এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে, তাহ’লে তাদের  ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে এবং পণ্যের দোষ গোপন  করে, তাহ’লে তাদের এ ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দূর হয়ে যাবে’।[6]

পশুর স্তনে দুধ জমিয়ে রেখে ক্রেতাকে অধিক দুধাল গাভী হিসাবে বুঝিয়ে বিক্রি  করা প্রতারণার শামিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنِ ابْتَاعَ شَاةً مُصَرَّاةً فَهُوَ  فِيْهَا بِالْخِيَارِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ إِنْ شَاءَ أَمْسَكَهَا وَإِنْ شَاءَ رَدَّهَا  وَرَدَّ مَعَهَا صَاعًا مِنْ تَمْرٍ  ‘যে ব্যক্তি দুধ আটকে রাখা বকরী ক্রয় করেছে সে তিন দিনের মধ্যে এটির  ব্যাপারে (সিদ্ধান্ত গ্রহণের) এখতিয়ার রাখে। আর তা হচ্ছে যদি সে চায় তো সেটিকে  রেখে দিবে, অথবা ফিরিয়ে দিবে এক ছা‘ পরিমাণ খেজুরসহ।[7]

একুশ শতকের প্রতারণার এক  নতুন ফাঁদ হ’ল মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এম.এল.এম ব্যবসা)। এম.এল.এম ব্যবসার  সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, MLM is  like a train with no brakes and no engineer headed full throttle towards a  termial. অর্থাৎ ‘সর্বোচ্চ গতিতে স্টেশনমুখী একটি ট্রেনের মত যার  কোন ব্রেক নেই, নেই কোন চালক’।[8]

ব্রেকবিহীন গাড়ী যেমন যে  কোন মুহূর্তে এ্যাকসিডেন্ট করতে পারে, মাঝিবিহীন নৌকা যেমন অপ্রত্যাশিত স্থানে চলে  যেতে পারে, মাল্টি লেভেল ব্যবসাও ঠিক তদ্রূপ। যা তার সংজ্ঞা থেকেই জানা যায়। আর  বাস্তবতাও তাই। এ প্রতারণার জাজবল্যমান উদাহরণ হ’ল ‘ডেসটিনি-২০০০ প্রাইভেট লিঃ’ ও ‘যুবক’  যা অগণিত মানুষের শেষ সম্বলটুকুও চুষে নিয়ে নিঃস্ব করে ছেড়েছে।

সঊদী আরবের জাতীয় গবেষণা  ও ফৎওয়া বিভাগের স্থায়ী কমিটি (লাজনা দায়েমাহ) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে যে,  পিরামিড স্কীম, নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এমএলএম যে নামেই হোক না কেন এ ধরনের সকল  প্রকার লেনদেন নিষিদ্ধ। কেননা এর উদ্দেশ্য হ’ল কোম্পানীর জন্য নতুন নতুন সদস্য  সৃষ্টির মাধ্যমে কমিশন লাভ করা, পণ্যটি বিক্রি করে লভ্যাংশ গ্রহণ করা নয়। এ কারবার  থেকে বহুগুণ কমিশন লাভের প্রলোভন দেখানো হয়। স্বল্পমূল্যের একটি পণ্যের বিনিময়ে  এরূপ অস্বাভাবিক লাভ যে কোন মানুষকে প্ররোচিত করবে। আর এতে ক্রেতা-পরিবেশকদের  মাধ্যমে কোম্পানী এক বিরাট লাভের দেখা পায়। মূলতঃ পণ্যটি হ’ল কোম্পানীর কমিশন  লাভের হাতিয়ার মাত্র।[9]

একেক ব্যবসার প্রতারণার  কৌশল একেক রকম। যেমন পাট ব্যবসায়ীরা শুকনা পাটে পানি দিয়ে ওযন বাড়ায় ও নিম্নমানের  পাটে রং মিশিয়ে গুণগত মান বাড়ায়। চাউল ব্যবসায়ীরা মোটা চাউল মেশিনে সরু বানিয়ে  তাতে সেন্ট মিশিয়ে নামিদামী চিকন আতপ চাউল বানায়। ফল ব্যবসায়ীরা উপরে ভাল ফল  সাজিয়ে রেখে নীচ থেকে খারাপ ও পচা ফল ক্রেতাকে দিয়ে প্রতারণা করে।

ব্যবসায় দালালী :

ব্যবসা-বাণিজ্যে  প্রতারণার আরেক নাম হ’ল দালালী। দালালীর ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত  হয়। দালালীর মাধ্যমে কোন জিনিসের দাম ন্যায্য মূল্যের চেয়ে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেয়া  হয়। এমনও দেখা যায় যে, একই ব্যক্তি বিক্রেতার পক্ষেও দালালী করে আবার ক্রেতার  পক্ষেও দালালী করে এবং উভয়ের নিকট থেকেই কমিশন গ্রহণ করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  দালালীকে নিষিদ্ধ করে বলেছেন, وَلاَ تَنَاجَشُوْا ‘তোমরা দালালী কর না’।[10] জমি, ঘর-বাড়ী, গরু-ছাগল, পাইকারী দ্রব্যসামগ্রী বেচা-কেনায় দালালীর আধিক্য  লক্ষ্য করা যায়।

মওজুদদারী :

মওজুদদারী, কালোবাজারী,  মুনাফাখোরী ইত্যাদি অত্যন্ত ঘৃণিত ও পাপ কাজ। এগুলোর মাধ্যমে বাজারে পণ্যের  কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়, হঠাৎ দ্রব্যের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে যায়, ক্রয়মূল্য  মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যায়। ফলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। তাই  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ ‘যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত  করে, সে পাপিষ্ঠ’।[11] অন্যত্র তিনি বলেন, لاَ يَحْتَكِرُ إِلاَّ خَاطِئٌ ‘অপরাধী (পাপিষ্ঠ) ব্যক্তি ছাড়া  কেউ মওজুদদারী করে না’।[12]

মিথ্যা কসম :

ক্রয়-বিক্রয়ে মিথ্যা কসম  অত্যন্ত ঘৃণিত একটি কাজ। তাই মিথ্যা কসম পরিহার করা উচিত। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,  আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,اَلْحَلِفُ مُنَفِّقَةٌ لِلسِّلْعَةِ  مُمْحِقَةٌ لِلْبَرَكَةِ   ‘কসম খাওয়ায়  মালের কাটতি বাড়ায়, কিন্তু বরকত কমে যায়’।[13] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেছেন,إِيَّاكُمْ وَكَثْرَةَ الْحَلِفِ فِى  الْبَيْعِ فَإِنَّهُ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ ‘ব্যবসায় অধিক কসম খাওয়া থেকে বিরত থাক। এর দ্বারা মাল বিক্রি বেশী হয়,  কিন্তু বরকত কমে যায়’।[14]

মিথ্যা কসমকারী ব্যবসায়ীর প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী প্রদান পূর্বক রাসূলুল্লাহ  (ছাঃ) বলেছেন,

ثَلاَثَةٌ  لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكِّيْهِمْ  وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ، قَالَ أَبُو ذَرٍّ خَابُوْا وَخَسِرُوْا مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ  اللهِ قَالَ الْمُسْبِلُ وَالْمَنَّانُ وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.

‘তিন শ্রেণীর লোকের সাথে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের  প্রতি দৃষ্টি দিবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে  যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আবু যার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কারা ধ্বংসপ্রাপ্ত  ও ক্ষতিগ্রস্ত? তিনি বললেন, টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানকারী, উপকার করে খোটা  প্রদানকারী এবং ঐ ব্যবসায়ী যে মিথ্যা কসম করে তার পণ্য বিক্রি করে’।[15]

খাদ্য ও ঔষধে ভেজাল :

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি  খাদ্যদ্রব্য ও ঔষধে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। মাছ-গোশত, শাক-সবজি, ফলমূল থেকে শুরু করে  মানুষের জীবন রক্ষাকারী ঔষধ পর্যন্ত ভেজালে সয়লাভ হয়ে গেছে। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে  ‘রিড ফার্মা’ নামের একটি ঔষধ কোম্পানীর ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৭টি শিশু  মারা যায়। এছাড়া অনেক কোম্পানীর ট্যাবলেট, ক্যাপসুল তৈরী হচ্ছে আটা-ময়দা বা  খড়িমাটি দিয়ে। সিরাপে দেয়া হচ্ছে কেমিক্যাল মিশানো রঙ। এমনকি ‘ভল্টারিন’-এর মত  নামকরা ব্যথানাশক ইনজেকশনের অ্যাম্পুলে ভরে দেয়া হচ্ছে স্রেফ ডিস্টিল্ড ওয়াটার।  বিভিন্ন নামি-দামী দেশী কোম্পানী এমনকি বিদেশী কোম্পানীর ঔষধও নকল করে চলছে অনেক  ঔষধ কোম্পানী লেভেল ও বোতল ঠিক রেখে! এভাবে বর্তমানে প্রায় ৪০০০ রকম নকল ঔষধ  বাজারে চলছে। সরল মনে এসব ঔষধ সেবন করে শরীরে দেখা দিচ্ছে উল্টো প্রতিক্রিয়া।  এভাবে অকালে ঝরে পড়ছে অনেক তরতাজা প্রাণ। ৯ জুলাই’১২ পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট  মোতাবেক দেশে বর্তমানে ২৫৮টি এলোপ্যাথিক, ২২৪টি আয়ুর্বেদিক, ২৯৫টি ইউনানী ও ৭৭টি  হোমিওপ্যাথিসহ মোট ৮৫৪টি ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে’।[16]

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য  অধিদফতর প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিন ২০১১-তে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী গত এক দশক  ধরে বাজারে যেসব ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে তার শতকরা ৫০ ভাগই ভেজাল মিশ্রিত। মহাখালী  জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরীতে ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল  পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ভোগ্যপণ্যের  শতকরা ৪৮ ভাগই ভেজাল এবং ২০১০ সালে এর হার ছিল ৫২ ভাগ। উক্ত ল্যাবরেটরীর রিপোর্ট  মোতাবেক দেশের বিভিন্ন কোম্পানীর ঘি ও বাজারের মিষ্টির শতকরা ৯০ ভাগই ভেজাল যুক্ত।  তারা বলেন, মাছে ফরমালিন ও ফলমূলে হরহামেশা কার্বাইড, ইথাইনিল ও এথ্রিল মিশানো  হচ্ছে। কাঁঠাল, লিচু, আপেল, ডালিম, বেদানা, তরমুজ ইত্যাদি বিষাক্ত কেমিকেলে চুবিয়ে  উঠিয়ে সপ্তাহকাল তাযা রেখে বিক্রি করা হয়। আম, আনারস, লিচু, পেয়ারা, কলা ইত্যাদিতে  মুকুল আসার পর থেকে শুরু করে ৮/১০ বার বিষাক্ত কেমিক্যাল স্প্রে করা হয়। যা মানব  স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অনেক ব্যবসায়ী শূকরের চর্বি দিয়ে সেমাই ভেজে ঘিয়ে  ভাজা টাটকা সেমাই বলে চালিয়ে দেয়। অনেক বেকারীতে পচা আটা, ময়দা, ডিম ব্যবহার করা  হয়। অনেক হোটেলে মরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, কুকুরের গোশত ইত্যাদি বিক্রি করা হয়।  অনেক ফার্মেসীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করা হয়। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য দারুণ  ক্ষতিকর।[17]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  বলেছেন, لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ ‘ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং কারো ক্ষতি করো না’।[18]

কাছে না থাকা পণ্য  বিক্রয় না করা :

কোন পণ্য ক্রয় করার পর  নিজ আয়ত্বে আসার পূর্বে বিক্রি করতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, مَنِ اشْتَرَى طَعَامًا فَلاَ  يَبِعْهُ حَتَّى يَسْتَوْفِيَهُ وَيَقْبِضَهُ ‘যে ব্যক্তি খাদ্যশস্য ক্রয় করেছে সে যেন তা  গ্রহণ ও তার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পূর্বে বিক্রয় না করে’।[19]

গাছে থাকা অপরিপক্ক ফল  বা শস্য বিক্রয় না করা :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গাছে থাকা অপরিপক্ক ফল বা ফসল পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত  বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, أَنَّ رِسُوْلَ اللهِ صلى  الله عليه وسلم نَهَى عَنْ بَيْعِ النَّخْلِ حَتَّى يَزْهُوَ وَعَنِ السُّنْبُلِ حَتَّى  يَبْيَضَّ وَيَأْمَنَ الْعَاهَةَ نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُشْتَرِىَ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খেজুর গাছের ফল না পাকা  পর্যন্ত এবং দানা জাতীয় শস্যের ছড়া পেকে সাদা না হওয়া ও পোকা লাগা থেকে নিরাপদ না  হওয়া পর্যন্ত বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই নিষেধ  করেছেন’।[20]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, نَهَى عَنْ بَيْعِ الثِّمَارِ  حَتَّى يَبْدُوَ صَلاَحُهَا، نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُبْتَاعَ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফল পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।  তিনি বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়কেই নিষেধ করেছেন।[21] ইবনুল আরাবী বলেন, পরিপক্ক হওয়া মানে তার লাল বা হলুদ রং ধারণ করা’।[22]

একজনের দামের উপর আরেকজন  দাম না করা :

ইসলাম সম্প্রীতি ও  ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। তাই এক মুসলমানের সাথে অপর মুসলমানের সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও  সৌহার্দ্যের ক্ষেত্রে যাতে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।  বিধায় এক মুসলিমের দর-দামের উপর অপর মুসলমানকে দর-দাম করতে নিষেধ করা হয়েছে।  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ  يَسُمِ الْمُسْلِمُ عَلَى سَوْمِ أَخِيهِ ‘কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের দর-দামের উপরে  দর-দাম করবে না’।[23]

তিনি আরও বলেছেন, لاَ يَبِعِ الرَّجُلُ عَلَى بَيْعِ أَخِيْهِ  وَلاَ يَخْطُبْ عَلَى خِطْبَةِ أَخِيْهِ إِلاَّ أَنْ يَأْذَنَ لَهُ
‘কোন ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপরে ক্রয়-বিক্রয়ের কথা বলবে না এবং  মুসলিম ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর নিজের প্রস্তাব দিবে না। হ্যাঁ, যদি ঐ ভাই  অনুমতি প্রদান করে তবে পারবে’।[24]

অনুমানভিত্তিক  ক্রয়-বিক্রয় না করা :

অনুমানের উপর নির্ভর করে  ক্রয়-বিক্রয় করলে ক্রেতা বা বিক্রেতা যে কোন একজন ক্ষতিগ্রস্ত হ’তে পারে। তাই  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অনুমানভিত্তিক বা স্তূপ আকারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ  করেছেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, نَهَى عَنْ بَيْعِ الصُّبْرَةِ مِنَ التَّمْرِ  لاَ يُعْلَمُ مَكِيْلَتُهَا بِالْكَيْلِ الْمُسَمَّى مِنَ التَّمْرِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খেজুর মাপার জন্য প্রচলিত  পরিমাপক দ্বারা না মেপে স্তূপ আকারে খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।[25]

অগ্রগামী হয়ে  ক্রয়-বিক্রয় না করা :

বিক্রেতা বাজারে পেঁŠছতে না  পারলে সে বাজার দর সম্পর্কে অবগত হ’তে পারে না। এমতাবস্থায় পথিমধ্যে ক্রয়-বিক্রয়  করলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই ক্রেতাকে বাজারে পৌঁছার পূর্বে  অগ্রগামী হয়ে পণ্য ক্রয় করতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  বলেছেন, وَلاَ  تَلَقَّوُا السِّلَعَ حَتَّى يُهْبَطَ بِهَا إِلَى السُّوْقِ ‘বিক্রির বস্ত্ত বাজারে উপস্থিত করার পূর্বে অগ্রগামী হয়ে তা ক্রয়ের জন্য  যাবে না’।[26] তিনি আরও বলেন,لاَ  تَلَقَّوُا الْجَلَبَ، فَمَنْ تَلَقَّاهُ فَاشْتَرَى مِنْهُ فَإِذَا أَتَى سَيِّدُهُ  السُّوْقَ فَهُوَ بِالْخِيَارِ. ‘যারা পণ্যদ্রব্য বাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছে, এগিয়ে গিয়ে তাদের  সাথে মিলিত হবে না। যদি কেউ এমন করে এবং কোন বস্ত্ত ক্রয় করে, তবে ঐ বিক্রেতা  বাজারে পৌঁছার পর (উক্ত বিক্রয়কে বহাল রাখা বা ভঙ্গ করার) অবকাশ পাবে’।[27]

একই জাতীয় বস্ত্ত কমবেশী  করে বিনিময় করা নিষিদ্ধ :

একই জাতীয় বস্ত্ত কম-বেশী  করে বিক্রি করা নিষিদ্ধ, যা সূদের নামান্তর। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

اَلذَّهَبُ بِالذَّهَبِ مِثْلاً بِمِثْلٍ  وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ مِثْلاً بِمِثْلٍ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ مِثْلاً بِمِثْلٍ  وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ مِثْلاً بِمِثْلٍ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلاً بِمِثْلٍ  وَالشَّعِيرُ بِالشَّعِيرِ مِثْلاً بِمِثْلٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ ازْدَادَ فَقَدْ أَرْبَى  بِيعُوا الذَّهَبَ بِالْفِضَّةِ كَيْفَ شِئْتُمْ يَدًا بِيَدٍ وَبِيعُوا الْبُرَّ بِالتَّمْرِ  كَيْفَ شِئْتُمْ يَدًا بِيَدٍ وَبِيعُوا الشَّعِيرَ بِالتَّمْرِ كَيْفَ شِئْتُمْ يَدًا  بِيَدٍ

‘স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান  সমান, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য সমান সমান, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর সমান সমান, গমের  বিনিময়ে গম সমান সমান, লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান, যবের বিনিময়ে যব সমান সমান  বিনিময় করা যাবে। এগুলো লেনদেনে যে ব্যক্তি বেশী দিল অথবা বেশী গ্রহণ করল, সে সূদে  লিপ্ত হ’ল। রুপার বিনিময়ে স্বর্ণ যেভাবে ইচ্ছা নগদে বিক্রি করতে পার। খেজুরের  বিনিময়ে গম যেভাবে ইচ্ছে নগদে বিক্রি করতে পার। খেজুরের বিনিময়ে যব যেভাবে ইচ্ছে  নগদে বিক্রি করতে পার’।[28]

বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট  হয়েছে নিম্নোক্ত হাদীছে- আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বেলাল  (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট উন্নতমানের কিছু খেজুর নিয়ে এলেন। তখন নবী করীম  (ছাঃ) তাকে বললেন, এগুলো কোথা থেকে এনেছ? বেলাল (রাঃ) জবাবে বললেন, আমাদের কিছু  নিম্নমানের খেজুর ছিল, সেগুলোর দুই ছা‘ দিয়ে এক ছা‘ ক্রয় করেছি। এটা করেছি নবী  করীম (ছাঃ)-কে খাওয়ানোর জন্য। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন,

أَوَّهْ أَوَّهْ عَيْنُ الرِّبَا عَيْنُ  الرِّبَا، لاَ تَفْعَلْ، وَلَكِنْ إِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَشْتَرِىَ فَبِعِ التَّمْرَ  بِبَيْعٍ آخَرَ ثُمَّ اشْتَرِهِ  

‘ওহ! এটাই স্পষ্ট সূদ,  এটাই স্পষ্ট সূদ, এটা করো না। যদি উন্নত মানের খেজুর ক্রয় করতে চাও, তাহ’লে তোমার  কাছে যে খেজুর আছে তা প্রথমে বিক্রি করে দিবে। অতঃপর প্রাপ্ত মূল্য দিয়ে উন্নত  মানের খেজুর ক্রয় করবে’।[29]

মুযাবানা পদ্ধতিতে  ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  মুযাবানা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন,

نَهَى  رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْمُزَابَنَةِ أَنْ يَبِيعَ ثَمَرَ حَائِطِهِ  إِنْ كَانَ نَخْلاً بِتَمْرٍ كَيْلاً، وَإِنْ كَانَ كَرْمًا أَنْ يَبِيْعَهُ بِزَبِيْبٍ  كَيْلاً وَإِنْ كَانَ زَرْعًا أَنْ يَبِيعَهُ بِكَيْلِ طَعَامٍ، وَنَهَى عَنْ ذَلِكَ  كُلِّهِ

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুযাবানা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। আর তা হ’ল  বাগানের ফল বিক্রয় করা। খেজুর হ’লে মেপে শুকনো খেজুরের বদলে, আঙ্গুর হ’লে মেপে  কিসমিসের বদলে, আর ফসল হলে মেপে খাদ্যের বদলে বিক্রি করা। তিনি এসব বিক্রি নিষেধ  করেছেন।[30]

পরিশেষে বলব, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা বৈধ ও উত্তম,  যদি সেটা হালাল উপায়ে সম্পন্ন হয়। হালাল ব্যবসার পদ্ধতি সম্যক অবগত হয়ে সে মোতাবেক  সকল কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তাছাড়া যেসব কারণে ব্যবসা হারাম হ’তে পারে সেগুলি সর্বতোভাবে  বর্জন করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

– কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী


  [1]. কুরতুবী হা/৬২৬৫; ত্বাবারাণী কাবীর হা/১০৯৯২;  ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৪০, সনদ হাসান।

  [2]. বুখারী হা/৪৯৩৮; মুসলিম হা/২৮৬২; কুরতুবী  হা/৬২৬৮।

  [3]. মুসলিম হা/১০২; তিরমিযী হা/১৩১৫; মিশকাত  হা/২৮৬০।

  [4]. ইউসুফ  আল-কারযাভী, ইসলামে হালাল-হারামের বিধান, অনুবাদ: মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম,  (ঢাকা : খায়রুন প্রকাশনী, ১৯৮৪ইং), পৃঃ ৩৬০।

  [5]. ঐ, পৃঃ ৩৪০।

  [6]. বুখারী হা/২০৭৯; মুসলিম হা/১৫৩২।

  [7]. মুসলিম হা/১৫২৪।

  [8]. WWW.  Vandruff. com/mlm.html

  [9]. মাসিক আত-তাহরীক, মার্চ’১২, ১/২০১ নং ফৎওয়া।

  [10]. বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/১৫৮১।

  [11]. মুসলিম হা/৪২০৬; মিশকাত হা/২৮৯২।

  [12]. মুসলিম হা/১৬০৫।

  [13]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, আবু দাঊদ হা/৩৩০২; মিশকাত  হা/২৭৯৪।

  [14]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৯৩।

  [15]. মুসলিম হা/১০৫; মিশকাত হা/২৭৯৫।

  [16]. মাসিক আত-তাহরীক, আগস্ট ২০১২, পৃঃ ৭-৮।

  [17]. প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮-৯।

  [18]. আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০, ছহীহাহ হা/২৫০।

  [19]. মুসলিম হা/১৫২৬।

  [20]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৮৩৯।

  [21]. বুখারী হা/২১৯৪।

  [22]. মুসলিম হা/১৫৩৫-এর আলোচনা দ্রঃ।

  [23]. মুসলিম হা/২৭২৭।

  [24]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৫০।

  [25]. মুসলিম হা/১৫৩০।

  [26]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৮৪৯।

  [27]. মুসলিম হা/২৭২৪।

  [28]. তিরমিযী হা/১২৪০; ইবনু মাজাহ হা/২২৫৪।

  [29]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৬৯১।

  [30]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৭১১।

মন্তব্য করুন

Back to top button