সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

নমরূদী হুংকার!

‘তুই জঙ্গী। এখন তোর আল্লাহ কোথায়? তোকে বাঁচালে  আমরা বাঁচাবো। তাছাড়া কেউ তোকে বাঁচাতে পারবে না’। দূর অতীতে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর  তাওহীদী দাওয়াতের মুকাবিলায় ইরাকের অহংকারী সম্রাট নমরূদ বলেছিল ‘আমিও বাঁচাতে  পারি ও মারতে পারি’ (বাক্বারাহ ২/২৫৮)। আজ সেকথাগুলিই শুনছি ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার দলীয় ছাত্রী ক্যাডারদের মুখে। যেদেশের মহিলা প্রধানমন্ত্রী  বলেন, আমি আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় পাইনা। সেদেশে তাঁর দলীয় ছাত্রীরা আল্লাহকেও ভয়  পায় না। যারা একটি মেয়েকে তার রূম থেকে ধরে এনে পিটিয়েছে। কারণ তার কাছে  ‘নারী-পুরুষের পর্দা’ নামে একটা বই পাওয়া গেছে। হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঐ  নির্যাতিত ছাত্রীর কোন কথাই শোনেনি। বরং সরকার দলীয় ক্যাডারদের কথা মেনে নিয়েছে।  শারীরিক ও মানসিক সব ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে ঐ দ্বীনদার ছাত্রীটির উপর এবং  তার মত আরও বহু ছাত্রীর উপর। অবশেষে অনেককে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে তারা। আর  পুলিশ যথারীতি মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছে কারাগারে এ ধরনের  বহু নিরপরাধ ছাত্রীকে। ‘আসুন সঠিকভাবে রোজা পালন করি’ ‘বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোরআন  শিক্ষা’ প্রভৃতি বইগুলোও এখন জঙ্গী বা জিহাদী বইয়ের তালিকায় চলে এসেছে।

এভাবে কোন ছাত্র বা ছাত্রী নিয়মিত ছালাত-ছিয়াম  পালন করলে, কুরআন-হাদীছ, তাফসীর বা ইসলামী বই-পত্রিকা রাখলেই তাকে বলা হচ্ছে  জঙ্গী। বোরক্বা পরা মেয়ে বা শিক্ষিকা, দাড়ি-টুপী পরা ছাত্র বা শিক্ষকরাও এখন জঙ্গী  সন্দেহযুক্ত। হলের মসজিদগুলির সামনে সরকার দলীয় ছাত্র-ক্যাডারদের মাধ্যমে পাহারা  বসানো হচ্ছে, কে নিয়মিত ছালাত আদায় করে তার রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য। তারা রুমে রুমে  তল্লাশি চালাচ্ছে কার রুমে ইসলামী বই বা পত্রিকা আছে। অতঃপর ধরে এনে মারপিট, গালি-গালাজ  ও নানাভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। অতঃপর সরকার যাদের পসন্দ করেনা, এমন কোন একটি  ইসলামী দলের তকমা লাগিয়ে দিয়ে তাকে পুলিশে দেওয়া হচ্ছে বা হল থেকে বের করে দেওয়া  হচ্ছে। ইসলাম বিরোধী মিডিয়াগুলি এ ধরনের  খবরগুলি লুফে নিয়ে প্রচার করে দিচ্ছে কোনরূপ বাছ-বিচার ছাড়াই। সরকারী দলের ছাত্র  বা ছাত্রী ক্যাডারদের অত্যাচার থেকে সরকারী দলের ছেলে-মেয়েরাও নিরাপদ নয়  যদি তারা দ্বীনদার হয়। যেমন পত্রিকার রিপোর্ট মতে ঢাবির শামসুন্নাহার হলের এক লাঞ্ছিত ছাত্রীর অভিভাবক নেত্রকোনা যেলার  একটি অঞ্চলের যুবলীগ সভাপতি তার মেয়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে ‘দুঃখজনক’  বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা সবাই নিয়মিত  ছালাত আদায় করি। আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। অথচ আমার  মেয়ের নামে হিযবুত তাহরীর বা ছাত্রীসংস্থার রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা  হয়েছে, যা একেবারেই ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, কেবল ছালাত আদায়ের কারণেই আমার মেয়ের  বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে তার ও তার মেয়ের মর্যাদা সামাজিকভাবে  ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে’।

কেবল ইসলামী বই, ইসলামী পোষাক ও শরী‘আত পালনের  কারণে নয়, বরং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও রেষারেষির কারণেও সরকার দলীয়রা এটা করে যাচ্ছে  এবং ফ্রি স্টাইলে যাকে-তাকে জঙ্গী ও জঙ্গীদলের সদস্য বানাচ্ছে। আর তাদের লাই  দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ এর ফলে তাঁরা তাদের অবাঞ্ছিত দলগুলির জনপ্রিয়তা  আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অবস্থাও  কমবেশী একই রূপ। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় সবার। এখানে শিক্ষা গ্রহণের অধিকার সবার।  ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ছাত্র-ছাত্রী জ্ঞান চর্চার উদ্দেশ্যে যেকোন বই বা  পত্রিকা পড়বে, সকল ধর্মের ছাত্র-ছাত্রী স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করবে, এতে বাধা দেওয়ার অধিকার কারু নেই। দেশের সংবিধানেও  সেকথা লেখা আছে। এইসব বিদ্বানরা ভুলে গেছেন যে, যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে মোকাবেলা  করতে হয়, শক্তি দিয়ে নয়। আদর্শকে আদর্শ দিয়েই মোকাবিলা করতে হয়, অন্য কিছু দিয়ে  নয়। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা ও অশান্তিই কেবল বৃদ্ধি পাবে। এটি আদৌ  কোন প্রশাসনিক বিজ্ঞতা ও দক্ষতার পরিচায়ক নয়।

ভাবতেও অবাক লাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সর্বোচ্চ  বিদ্যাপীঠের ছাত্র ও শিক্ষক নেতৃবৃন্দ কত বড় অদূরদর্শী হ’লে তারা একটি মুসলিম দেশে  বসে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন! রাজনৈতিক দলবাজি তাদেরকে কত নীচে নিয়ে গেছে ও  তাদেরকে কিরূপ অন্ধ বানিয়েছে, এগুলিই তার প্রমাণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল  উদ্দেশ্যই নষ্ট করে দিচ্ছে এইসব নোংরা দলবাজি। অতএব সর্বাগ্রে শিক্ষক ও ছাত্রদের  রাজনৈতিক দলবাজি বন্ধ করতে হবে। সেইসাথে ইসলাম বিদ্বেষী সকল অপতৎপরতা বন্ধ করতে  হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটা না  করে পরিবেশ শান্ত ও সুন্দর করার আশা করা পচা বিড়াল রেখে কূয়ার পানি সেচার মত হবে।  আর সেটা করার দায়িত্ব প্রধানতঃ সরকারের। অতএব কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের  ছাত্র-শিক্ষকদের দায়ী করলে চলবে না, সরকারকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। নইলে আমাদের  ভবিষ্যৎ বংশধররা ধ্বংস হবে এবং সেই সাথে ধ্বংস হবে সমাজ ও রাষ্ট্র। আল্লাহ আমাদের  সুপথ প্রদর্শন করুন- আমীন!

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button