সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

মালালার নোবেল প্রাইজ ও পশ্চিমা-মুখোশ প্রসঙ্গে

পশ্চিমা গণমাধ্যমের বদৌলতে পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানের কিশোরী মালালা ইউসুফ জাই বর্তমান বিশ্বে একটি অতি পরিচিত নাম। গত ১০ অক্টোবর ২০১৪ সুইডেনের নোবেল কমিটি মালালাকে শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে সে পরিচয়কে চূড়ান্ত ধাপে এগিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য মালালা ২০১৩ সালের নোবেল বিজয়ীর তালিকায় মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু সেবার এ পুরস্কারটি জিততে ব্যর্থ হলেও ২০১৪ সালে ঠিকই সফল হলেন। এ বছর অবশ্য মালালাকে নোবেল পুরস্কারটি আরেক ভারতীয় কৈলাস সত্যার্থির সাথে ভাগ করে নিতে হয়েছে। মালালাকে নোবেল পুরস্কার দিতে গিয়ে নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ‘বয়সে তরুণ হলেও গত কয়েক বছর ধরে তিনি নারী শিক্ষার অধিকার আদায়ে লড়াই চালিয়ে আসছেন। শিশু ও তরুণদের সামনে তিনি এই নজির গড়েছেন যে, নিজেদের অবস্থার উন্নয়নের চেষ্টায় তারাও অবদান রাখতে পারে। আর এই লড়াই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির মধ্যে থেকে।’ মালালাই সবচেয়ে কম বয়সী নোবলে শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও প্রথম পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী। এর আগে নোবেল জয়ী পাকিস্তানের পদার্থ বিজ্ঞানী আবদুস সালামের জন্ম ভারতে। নোবেল কমিটি যাই বলুক, মালালার বয়স ও অবদান নিয়ে তার নিজের দেশ তো বটেই সমগ্র বিশ্বেই ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছিল খোদ নোবেল কমিটির প্রেস ব্রিফিয়েও। নরওয়ের নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান থরবিয়ন জাগল্যান্ডের সামনে যখন জনৈক সাংবাদিক মন্তব্য করেন, ‘aspirations but hasn\ actually done anything.’ তখন থরবিয়নের আহত বোধ করা ছাড়া আর কোনো উত্তর ছিল না। সভাপতির সেই ফ্যাকাসে মুখের ছবি বিশ্বের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মালালা ইউসুফজাইয়ের জন্ম ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই পাকিস্তানের সোয়াত ভ্যালীর মিঙ্গোরায়। মালালার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবে। ২০০৯ সালে আমান টেলিভিশনের সাথে সাক্ষাৎকালেও তাই জানিয়েছে মালালা। কিন্তু ২০০৯ সালের শেষদিকে মালালার বাবা প্রচার করেন মালালা পলিটিশিয়ান হবে। ২০০৭ সালে মালালার বয়স যখন ১০ বছর, মালালার বাবা জিয়াউদ্দিনের নিউইয়র্ক টাইমসের ডিজিটাল ইউনিটের এক সাংবাদিক ইরফান আশরাফের সাথে সখ্য গড়ে ওঠে। আশরাফ ২০০৯ সালের শেষ অবধি সোয়াতে ছিলেন। তিনি জিয়াউদ্দিনের মধ্যে উচ্চাশা এবং ভোকাল মাইন্ড দেখতে পেয়েছিলেন। ২০০৭ সালে সোয়াত উপত্যকা তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে আসে। পশ্চিমা মিডিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, ভয়ঙ্করভাবে আফগানকেন্দ্রিক তালেবান-নিয়ন্ত্রিত এই এলাকার পরিবেশ মেয়েদের লেখাপড়ার উপযোগী নয়। স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোরদের অনেক প্রতিকূল অবস্থায় যাতায়াত করতে হয়। হুমকি-ধমকি তো ছিলই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নাকি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে একাধিকবার। এ সময় বিবিসি উর্দু বিভাগের কর্তৃপক্ষ ঠিক করল, এই সংঘর্ষ সোয়াত উপত্যকার শিশুদের পড়াশোনা এবং তাদের ভবিষ্যতের ওপর কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে খবর প্রচার করবে। তারা সেখানে বহু স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এদের মধ্যে ছিলেন মালালার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই। তিনি মিঙ্গোরায় একটি স্কুল চালাতেন। জিয়াউদ্দিন বললেন, তার মেয়ে নিয়মিত ডায়েরি লিখতে পারে। ডায়েরিটির শিরোনাম ছিল ‘লাইফ আন্ডার দ্য তালেবান’। তবে মালালার ঝুঁকি এড়াতে বিবিসি কর্তারা ঠিক করে সে লিখবে ছদ্মনামে, গুল মাকাই। তার ব্লগটি চালু হলো ২০০৮ সালের শেষ দিকে। তার লেখা যে হিট হয়েছিল তার প্রমাণ হলো, সেগুলো ইংরেজিতেও অনুবাদ হয়েছিল। এতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে মালালার কথা, চিন্তা ও তৎপরতার মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মালালার ডায়েরি ১০ সপ্তাহ ধরে প্রকাশ হয়েছিল। ২০০৯ সালে সোয়াত উপত্যকায় সেনাবাহিনী একটি অভিযান শুরু করে। এর আগেই মালালা ও তার পরিবার তাদের গ্রাম ছেড়ে যায়। তখন থেকে তার ডায়েরি প্রকাশ বন্ধ হয়। বিবিসির সঙ্গেও মালালার সম্পর্ক ওখানেই শেষ। ২০০৯ সালের শেষ দিকে মালালারা সোয়াতে ফিরে আসে। তারপর এক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর সময় তার আসল নাম প্রকাশ করেন তার বাবা। এরপর থেকে মালালা পাকিস্তানের বিভিন্ন টেলিভিশন সংবাদে উপস্থিত হতে থাকে তার আসল পরিচয়ে। আসল পরিচয়ে ফেরামাত্রই দৈবপরিবর্তন ঘটে মালালার কথায় ও আচরণে শুধু শিক্ষা আর বিদ্যালয় নিয়েই নয়; মানবাধিকার, গণতন্ত্র, রাজনীতি, সমাজ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়েও তৎপর হয়ে ওঠে মালালা। মানবাধিকার সংগঠন, মিশনারি, কমিউনিস্ট পার্টি ইত্যাকার সংগঠনের ডাকে নিয়মিত বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতে থাকে মালালা। ২০০৯ সালের শরৎকালে প্রচারিত হয় মালালাকে নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমেসের ডকুমেন্টারি যা জিয়াউদ্দিনের স্কুলে শুটিং করা হয়েছিল। এটি প্রচার হবার পরে জিয়াউদ্দিন পরিবারের নিরাপত্তা সমস্যায় পড়ে। নিউইয়র্ক টাইমস ডকুমেন্টারিতে দেখা যায়, মালালা সহপাঠীদের নিয়ে স্কুলে শ্লোগান দিচ্ছে, ক্লাসে যাওয়া আসা করছে, এমনকি সেনাদের হামলায় বিধ্বস্ত স্কুলের ধ্বংসাবশেষ সরাচ্ছে মেয়েকে নিয়ে, ইত্যকার বহু বিষয় শুটিং করে সেনসেটাইজ করা হয়েছে পশ্চিমাদের। এসব অস্বাভাবিক শুটিং করা হয় জিয়াউদ্দিনের স্কুলে।এরপর তালেবানদের বিরুদ্ধে আস্তে আস্তে মুখ খুলতে থাকেন জিয়াউদ্দিন আর সামনে এগিয়ে দেন মালালাকে। চোখ পড়ে যায় বিশ্বমিডিয়ার, বিশেষ করে নিউইয়র্ক টাইমসের। আশরাফের ভাষায়, ‘Do you really think she is a 15-year-old girl? She’s an icon. We had made her into an icon.’ ৩/৪ বছর ধরে জিয়াউদ্দিনকে নার্সিং করে আশরাফ ও তার টিম এক সাহসী শক্তিশালী ব্যক্তিতে পরিণত করে। আশরাফের ভাষায় ‘manufactured boldness.’ বিবিসির সূচনা আর নিউইয়র্ক টাইমসের আলোকপাতে ফুলেফেঁপে উঠে মালালা নামটি। এরপর ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর পকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় ১৫ বছর বয়সী মালালাকে মুখে এবং মাথায় তালেবানরা গুলি করেছে বলে এ বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। ওই হামলার পর বিশ্বব্যাপী তালেবানের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠে। খবরটি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করা হয়। প্রথমে পাকিস্তান এবং এরপর ইংল্যান্ডের কতিপয় ডাক্তারের আপ্রাণ চেষ্টার পর মালালা কোনোমতে বেঁচে যান। ডাক্তাররা মালালার মুখ ও মাথায় বেশ কয়েকটি সার্জারির মাধ্যমে তার প্রাণ রক্ষা করেন। বর্তমানে মালালা যুক্তরাজ্যে বাস করছেন। পাকিস্তানের নারীদের শিক্ষার অধিকারের জন্য তিনি আমৃত্যু লড়াই করবেন বলে বারবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে পাকিস্তানের যে এলাকাগুলোতে তালেবান বিদ্যালয়গুলোকে বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে পাকিস্তানের একটি কিশোরীর জন্য বিশ্বময় আর্তনাদ দেখে অবচেতন মনেই মনে হয়, বিশ্বটা সত্যি সত্যিই মানবতার চরম উৎকর্ষে দাঁড়িয়ে আছে! জাতিসংঘ, হোয়াইট হাউস, হলিউড, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সবাই মালালার জন্য এগিয়ে এসেছে। বিশ্বশিক্ষার জন্য জাতিসংঘের দূতিয়ালি কার্যক্রম ‘এডুকেশন এনভয়’ তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মূল শ্লোগান করল : ‘আই অ্যাম মালালা’, যে প্রজেক্টের বিশেষ দূত হচ্ছেন ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন। সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী ম্যাডোনাও লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি কনসার্টে মালালার জন্য কেঁদেছেন এবং তাকে উৎসর্গ করে ‘হিউম্যান নেচার’ গানটি গেয়ে শোনান। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন মালালার ব্যাপারে সমবেদনা প্রকাশ করেন। আর হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তো বলেই বসলেন- ‘মালালাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া উচিত’ এবং সঙ্গে এটাও বললেন, ‘উই অল আর মালালা’।২০১৪ সালে মালালা নোবেল পুরস্কার পেলেও এরই মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছে। জাতিসংঘ ২০১২-এর ১০ নভেম্বরকে ‘মালালা দিবস’ ঘোষণা করেছে। আয়ারল্যান্ডের ‘টিপারারি ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যাওয়ার্ড ২০১২’, নেদারল্যান্ডের কিডস রাইট ফাউন্ডেশন ২০১১-এর ২৫ অক্টোবর মালালাকে রানারআপ হিসেবে ‘ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স পিস প্রাইজ’ প্রদান করে। আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার, মাদার তেরেসা এওয়ার্ড, টাইম ম্যাগাজিন ‘পার্সন অব দ্য ইয়ার’, রোম পিস প্রাইজও জয় করেছেন তিনি। ২০১১-এর ১৯ ডিসেম্বর পাকিস্তান সরকার তাকে ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ পিস প্রাইজ’ প্রদান করে। শুধু তাই নয়, মালালার সম্মানে এখন পুরস্কারটির নামে পরিবর্তন আনা হয় ‘ন্যাশনাল মালালা পিস প্রাইজ’। ২০১২-এর ৩ জানুয়ারি করাচির মিশন রোডে অবস্থিত ‘গভর্নমেন্ট গার্ল সেকেন্ডারি স্কুল’-এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘মালালা ইউসুফজাই গভর্নমেন্ট গার্ল সেকেন্ডারি স্কুল’। জাতীয় যুব পুরস্কার, আজমী আলীশান পুরস্কার ও ২০১২-এর ১৫ অক্টোবর পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘সিতারা-ই-সুজাত’-এ ভূষিত করা হয় মালালাকে। জিও টিভি, এটিভি, আওয়াজ টিভি, সামআ টিভি, সিএনএন, বিবিসিসহ বিশ্বের নাম করা সব টিভি চ্যানেল এরই মধ্যে মালালার সাক্ষাৎকার নেয়া শেষ করে ফেলেছে।এত প্রশংসা ও পুরস্কারের মাঝে ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় একটি ভিন্নধর্মী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘Malala: The real story (with evidence)’ শিরোনামের ওই রিপোর্টে মালালা সম্পর্কে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ডন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, মালালার বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে ২০১৩ বছরের এপ্রিল মাসে তাদের একটি দক্ষ টিম পাকিস্তানের সোয়াত এলাকায় পাঁচ মাসের অনুসন্ধানী কর্মকা- চালিয়েছে। তাদের প্রতিবেদক দলটি পাঁচ মাস ধরে ঘটনাটির একটি গভীর তদন্ত করে। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধারাবাহিকভাবে অসংখ্য চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। এসব তথ্য-উপাত্ত মালালা সম্পর্কে মূলধারার গণমাধ্যমে যেসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে তা চ্যালেঞ্জ করে বসে। ওই অনুসন্ধানে প্রাপ্ত প্রধান তথ্যগুলো হলো: মালালার জন্ম পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় হয়নি। এমনকি তিনি ধমনীতে পশতুন উপজাতির রক্তও বহন করেন না। পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার এক প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের মালিক ইমতিয়াজ আলী খানজাই নামের এক সম্মানিত ডাক্তার ডনের প্রতিবেদকদের জানান, তার কাছে মালালার একটি ডিএনএ রিপোর্ট রয়েছে তাতে প্রমাণিত হয়, মালালা পশতুন উপজাতি বংশীয় নন। তিনি জানান, মালালা ছোটবেলায় একবার কানের অসুখ নিয়ে তার কাছে এসেছিলেন। আর সে সময়ই তিনি মালালার ডিএনএ সংগ্রহ করে রাখেন। ওই ডাক্তার বলেন, ‘গত বছর মালালাকে গুলি করার পর আমার মনে পড়ে যে একটি বোতলে আমি মালালার কানের ময়লা ভরে রেখেছিলাম। আর রোগীদের কানের ময়লা সংগ্রহ করে রাখাটা আমার একটা শখ ছিল।’ তিনি দাবি করেন, মালালার ডিএনএ রিপোর্ট থেকে প্রমাণিত হয়, মালালা ককেশীয় নৃগোষ্ঠীর বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করছেন। সম্ভবত ইউরোপের পোল্যান্ডের কোনো পিতা-মাতার বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করছেন তিনি। ডাক্তার জানান, এই আবিষ্কারের পর তিনি মালালার বাবাকে ডেকে পাঠান এবং তাকে জানান, তিনি মালালার আসল বংশগত পরিচয় জানেন। ‘এ কথা শুনে মালালার বাবা থতমত খেয়ে যান এবং আমাকে অনুরোধ করেন যেন আমি জনসম্মুখে এ তথ্য ফাঁস না করি। আমি তখন তাকে কথা দেই যে, আমি তা করবো না। তবে শর্ত হল : আমাকে পুরো কাহিনী খুলে বলতে হবে, যোগ করেন ডাক্তার। মালালার বাবা তখন ডাক্তারকে জানান, মালালার প্রকৃত নাম হল জেন এবং ১৯৯৭ সালে পূর্ব ইউরোপের হাঙ্গেরিতে তার জন্ম হয়। তারা প্রকৃত বাবা-মা ছিল দুজন খ্রিস্টান মিশনারির লোক। তারা ২০০২ সালে পাকিস্তানের সোয়াত ভ্রমণে উপত্যকায় আসেন। সে সময় মালালার বর্তমান বাবা- মা গোপনে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। আর এর পুরস্কার হিসেবেই তাদেরকে ওই মিশনারির পক্ষ থেকে মালালাকে দান করা হয়। ডন-এর প্রতিবেদকরা ওই ডাক্তারকে প্রশ্ন করেন, তিনি এতদিন পরে এসে কেন মালালার এই গোপন কাহিনী প্রকাশ করলেন। জবাবে তিনি বলেন, তিনি এ বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হন যে, পাকিস্তান-বিরোধী উপাদানই মালালাকে সোয়াতে বীজ হিসেবে রোপণ করেছে। এরপর ওই ডাক্তার আরো দাবি করেন, কথিত মালালাকে যে যুবকটি গুলি করে সে পশতুন উপজাতির সদস্য নয়। তিনি বলেন, ওই শুটারের ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তিনি সম্ভবত ইতালির লোক ছিলেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালালাকে গুলি করার ঘটনাটি একটি সাজানো নাটক। কয়েকটি গোয়েন্দা এজেন্সি এ নাটকটি মঞ্চস্থ করেছে। পাকিস্তানি এবং মার্কিন গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো যৌথভাবে নাটকটির মঞ্চায়ন করে। মালালা সম্পর্কে ডনের এই রিপোর্টটি বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করলেও পশ্চিমা গণমাধ্যম এ বিষয়ে নীরব থাকে। এমনকি তার নোবেল পুরস্কার পেতে এ রিপোর্টটি কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। তবে মালালা যে পশ্চিমাদের তৈরি প্লান্ট সেটা বুঝতে আজ আর কারো বাকি নেই। যেমন পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য জামশেদ দাস্তি বলেছেন, মালালা ইউসুফজাইয়ের রাতারাতি আকাশচুম্বি খ্যাতি অর্জন একটি নাটক ছাড়া আর কিছু নয়। আর এ নাটক তৈরি করেছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জামশেদ দাস্তি মুলতানের একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মালালাকে মূলত ইসলাম ও তালেবানের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার জন্য ব্যবহার করছে। দেশে ও বিদেশে এমন প্রশ্নে বিদ্ধ হয়ে খোদ মালালাও এক সময় বিবিসির কাছে বলতে বাধ্য হন, তিনি পশ্চিমাদের পুতুল নয়; বরং পাকিস্তানের মেয়ে। আর এ জন্য গর্বিত সে। কিন্তু মালালার এই জবাবও তাকে নিয়ে সৃষ্ট প্রশ্নের সমাধান দিতে সক্ষম হয়নি। বিশেষ করে মালালার প্রদেশের আরেক শিশু নাবিলা এই জ্বলন্ত প্রশ্ন দাবানলে পরিণত করেছেন। মালালা গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২০১২ সালের ২৪ অক্টোবর একই এলাকা পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে ৯ বছরের শিশু নাবিলা ৬৭ বছর বয়সী দাদী মোমিনার সাথে সবজি তুলছিলেন নিজের ক্ষেতে। হঠাৎ মার্কিন ড্রোন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র এসে বিস্ফোরিত হয় তাদের ওপর। ড্রোনের হামলায় দাদী শহীদ হন ঘটনাস্থলেই। চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলেও প্রাণে বেঁচে যান নাবিলা। তার চোখ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু নাবিলা মোমিনার মত ‘তালিবানদের আক্রমণে আহত’ হয়নি বলে দেশে বিদেশে মিডিয়া কাভারেজ ও চিকিৎসা পায়নি। কিছুটা সুস্থ হয়ে নাবিলা পিতার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে আসে তার দাদীর হত্যার বিচার চাইতে। মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে প্রায় ৪৩০ জন সদস্যের মধ্য থেকে মাত্র ৫ জন আসে নাবিলার কথা শুনতে। নাবিলার পিতা সেই ৫ জন উপস্থিত সদস্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমার ‘মেয়ে’র চেহারা ‘সন্ত্রাসী’দের মত না আর না আমার ‘মা’-এর চেহারা ‘সন্ত্রাসী’দের মত ছিল। আর এটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না যে, এই বিষয়টা কিভাবে ঘটে গেলো.. একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমেরিকানদের ‘শিক্ষাদান’ করতে চাই এবং ‘উপলব্ধি’ করাতে চাই যে আমার সন্তানরা কতটাইনা ‘ক্ষত-বিক্ষত’।” একজন দোভাষী যখন এই ঘটনা (আদালতে) বলছিলেন তখন তার দু’চোখ বেয়ে ‘অশ্রু নামছিলো’, কিন্তু সরকারপক্ষ এবং তাদের (সমর্থনদুষ্ট) আদালত এই বিষয়টাকে ‘চরম অবজ্ঞা’ করে এবং তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটিকেও। কিশোরী নাবিলা তার সাক্ষ্য প্রদানের সময় শুধুমাত্র একটি ছোট্ট প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘আমার দাদী কি দোষ করেছিল?’ পিনপতন ‘নীরবতায়’ সেদিন এই প্রশ্নের উত্তর কেউই দিতে পারেনি। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই বারাক ওবামা মিটিং করছিল লকহিড মারটিনের সাথে- যাদের তৈরি বিমান থেকে অহরহ বোমা ফেলা হয় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে। শুধু তাই নয়, নাবিলার পরিবারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয় এবং তারা যেন গণমাধ্যমের সংশ্রবে না আসতে পারে সেদিকেও খেয়াল রাখা হয়। এমনকি নাবিলার যুক্তরাষ্ট্রে আগমনকে পশ্চিমা গণমাধ্যম পর্যন্ত ‘আন ওয়েলকামড’ বলে শিরোনাম করে। মালালা ইউসুফ জাই ও নাবিলা রেহমান ১৫ দিনের ব্যবধানে একই স্থানে একই রকম দুর্ঘটনার শিকার। কিন্তু বিশ্বব্যাপী তার প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক বৈষম্য দেখা যায়। এর একমাত্র কারণ : মালালা কথিত তালেবান আক্রমণের শিকার। যাকে প্রতীক করে বিশ্বব্যাপী পাশ্চাত্যের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধের’ বৈধতা দেয়া যায়। আর নাবিলা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধের স্বরূপ বিশ্বের সামনে উন্মোচন করে দিয়েছে যা পাশ্চাত্য সবসময় কোথাও সযতেœ আবার কোথাও গায়ের জোরে চেপে রাখতে, ঢেকে রাখতে মরিয়া। এক মালালাকে পুরস্কার ধরিয়ে পাশ্চাত্য বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল ও আফগানিস্তানে সংঘটিত গণহত্যাকে আড়াল করতে চায়। মালালার নোবেল প্রাপ্তির ৭ দিনের মাথায় পশ্চিম তীরে ইসরাইলী সেনাবাহিনী ১৩ বছরের এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে। এমনকি সর্বশেষ ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে ইসরাইলী হানাদার বাহিনী ৫ শতাধিক নিরাপরাধ শিশুকে হত্যা করেছে বলে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে। এসব নিয়ে মালালা কোনোদিনই মুখ খোলেনি। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোনের হামলায় নিহত, আহত হাজার হাজার শিশুর কথা একটি দিনের জন্যও মালালার মুখে শোনা যায়নি। ড্রোনের আঘাতে বাস্তচ্যুত হয়ে, অভিভাবক হারিয়ে, আহত হয়ে যেসব শিশুর শিক্ষা জীবন হারিয়ে গেছে মালালা তাদের কথা কোনদিনই বলেননি। কারণ মালালা পশ্চিমাদের রচিত একটি নাটকের নাম কিংবা তাদের রোপিত একটি গাছের নাম। এক গাছের কাছে অন্য ফল প্রত্যাশা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

(ইনকিলাব)

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

১টি মন্তব্য

  1. এই ‘ডন’ পত্রিকার কাহিটা ভুল।আরেকটু ভালো করে আপনার পড়া উচিত ছিল আগে।অখানে বলেই দেওয়া হইসে “Its a fiction and satire story”. পুরো আর্টিকেল টা পড়লে বুঝতে পারবেন এটা একটা কমেডি টাইপ লিখা।লিংক দিচ্ছি মেইন পত্রিকার আর্টিকেল এর

    https://www.dawn.com/news/1048776

    https://www.google.com/amp/s/www.washingtonpost.com/news/worldviews/wp/2013/10/12/pakistani-satire-of-malala-conspiracy-theories-taken-as-real-conspiracy-theory/%3foutputType=amp

মন্তব্য করুন

Back to top button