গাযায় গণহত্যা ইহূদীবাদীদের পতনঘণ্টা
মিথ্যা অজুহাতে গত ৮ই জুলাই থেকে গাযায় ইস্রাঈলের একতরফা গণহত্যা চলছে। সারা বিশ্ব চেয়ে চেয়ে দেখছে। যাদের ক্ষমতা নেই, তারা চোখের পানি ফেলছে, প্রতিবাদ করছে, মিছিল-মিটিং করছে ও আল্লাহর কাছে প্রাণভরে দো‘আ করছে। পক্ষান্তরে যাদের ক্ষমতা আছে, তারা নিজেদের মধ্যকার অনৈক্য ও রাজনৈতিক স্বার্থদ্বন্দ্বের কারণে চুপ করে আছে। অন্যদিকে ইস্রাঈলের অবৈধ জন্মদাতাদের বর্তমান নেতা বিশ্ব শান্তিতে নোবেল পুরস্কারধারী কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রকাশ্যভাবে এই গণহত্যার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, ইস্রাঈলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’। অতএব এজন্য তিনি ২২ কোটি ডলারের অস্ত্র সাহায্য প্রেরণ করেছেন ইস্রাঈলের নিকট।
সাম্প্রতিক এ জঘন্যতম হামলা হঠাৎ করে হয়নি। বরং দীর্ঘ পরিকল্পনার মঞ্চায়ন মাত্র। ১৯৪৮ সালে পাশ্চাত্য বলয়ের সরাসরি মদদে ফিলিস্তীনীদেরকে তাদের হাযার বছরের আবাসভূমি থেকে হটিয়ে সেখানে হিটলারের হাতে বিতাড়িত ইহূদীদের সারা দুনিয়া থেকে এনে জড়ো করা হয় এবং ‘ইস্রাঈল’ নামে একটি অবৈধ রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া হয়। কথিত আছে যে, ৬০ লাখ ইহূদীকে গ্যাস চেম্বার ঢুকিয়ে হত্যা করার পরে হিটলার নাকি বলেছিলেন, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কিছু ইহূদী এখনো বেঁচে থাকল। এরা যে কত নিকৃষ্ট, এদের আচরণেই লোকেরা টের পাবে। আর তখনই লোকেরা বলবে, কেন আমি ওদেরকে এভাবে হত্যা করেছি’। বর্তমান পৃথিবীতে ইহূদীদের মোট জনসংখ্যা মাত্র ০.১৯% (২০০৯)। অথচ তারাই এখন বিশ্বকে হুমকি দিচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদের মাত্র ৩টি প্রস্তাব অমান্য করায় আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো জোট ইরাককে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করল। অথচ ৬৭টি প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলেও ইস্রাঈলের বিরুদ্ধে বিশ্বসংস্থা কিছুই করতে পারল না। উল্টা ভেটো ক্ষমতার অধিকারী বৃটেন-আমেরিকা সর্বদা তাদের পাশে থাকছে। কারণ এটা তাদেরই সৃষ্ট একাট সামরিক কলোনী মাত্র। যার উদ্দেশ্য হ’ল, ইস্রাঈলকে লেলিয়ে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে কবজায় রাখা। আর মধ্যপ্রাচ্যকে কবজায় রাখার অর্থ হ’ল মুসলিম দুনিয়াকে কবজায় রাখা। আল্লাহর রহমতে বিশ্বের সকল সম্পদের সিংহ ভাগের মালিক হ’ল মুসলিম বিশ্ব। এরা যদি কখনো ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহ’লে খ্রিষ্টান বিশ্ব চোখে অন্ধকার দেখবে। যদিও প্রকৃত ইসলামী শাসন কখনো কারু জন্য হুমকি নয়। তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ বিগত ইসলামী খেলাফত সমূহ।
১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তীনীরা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রে উদ্বাস্ত্ত হিসাবে বসবাস করছে। আর যারা ভূমি কামড়ে পড়ে আছে, তারা ইস্রাঈলী বর্বরতার শিকার হয়ে সর্বদা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাস করছে। মুসলিম রাষ্ট্রনেতারা হৃদয়ে দরদ অনুভব করলেও তারা কার্যত নীরব। তার কারণ একাধিক। যেমন (১) তারা তাওহীদ ছেড়ে শিরকী মতবাদ সমূহকে লালন করছে। ফলে তারা আল্লাহর উপর ভরসা ছেড়ে মানুষের উপর ভরসা করছে। যারা এক সময় ঐক্যবদ্ধভাবে চালকের ভূমিকায় ছিল, তারাই এখন বিভক্ত হয়ে চালিতের কাতারে এসে গেছে। ফলে তারা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
(২) পারস্পরিক স্বার্থদ্বন্দ্ব। সব দেশেই এগুলি থাকে। কিন্তু এগুলি বড় ক্ষতি ডেকে আনে তখনই, যখন তার দ্বারা বৃহত্তর স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্বে যেকোন স্থানে কোন মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হ’লে সব স্বার্থ ভুলে সবাইকে তার পাশে দাঁড়ানো মুসলিম রাষ্ট্রনায়কদের কর্তব্য ছিল। যেমন ইরাকের ৭ লাখ খ্রিষ্টানকে বাঁচানোর অজুহাতে আমেরিকা সেখানে ইসলামিক স্টেট যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে একটানা কয়েকদিন বিমান হামলা চালালো। অথচ ফিলিস্তীনের নির্যাতিত ১৮ লাখ মুসলিম নর-নারীকে লক্ষাধিক বর্বর ইহূদী সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচানোর জন্য কোন মুসলিম রাষ্ট্র প্রকাশ্যে এগিয়ে যায়নি। কারণ তারা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে বৃহৎ ইসলামী স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে পারেনি।
ইহূদীরা আল্লাহর অভিশপ্ত জাতি। আল্লাহ বলেন, তাদের উপর আরোপ করা হ’ল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। … কারণ তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী’ (বাক্বারাহ ২/৬১)। তিনি বলেন, আল্লাহ প্রদত্ত ও মানুষ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ব্যতীত ওরা যেখানেই অবস্থান করবে, সেখানেই ওদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/১১৩)। ইহূদী-নাছারাদের পথে না যাওয়ার জন্য মুসলমান দেরকে প্রতি রাক‘আত ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা অপরিহার্য করে দেওয়া হয়েছে।
এক্ষণে এদের দুষ্কর্ম থেকে বাঁচার একটাই পথ এদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক জিহাদ করা। এখন হামাস রকেট হামলার মাধ্যমে সীমিতভাবে যে সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। সাধারণ মানুষকে নয়, স্রেফ যুদ্ধের টার্গেটে মারতে হবে। তাহ’লে সাধারণ ইস্রাঈলীরা হামাসের পক্ষে থাকবে। আর মুসলিম রাষ্ট্রগুলি সরকারী ও বেসরকারীভাবে ইস্রাঈলের সাথে সকল ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করুক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করুক। মুসলিম রাষ্ট্রগুলির পানিসীমা ও আকাশসীমা দিয়ে ইস্রাঈলের ও তাকে সাহায্যকারীদের জাহায ও বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করুক। সেই সাথে জাতিসংঘে ও নিরাপত্তা পরিষদে কূটনৈতিক ভূমিকা যোরদার করুক। আশার কথা এই যে, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলি এখন ইস্রাঈলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। ইতিমধ্যে বলিভিয়া ইস্রাঈলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। অতএব যে আমেরিকা ও বৃটেনের প্রতিশ্রুতির উপর ইস্রাঈল টিকে আছে, আশা করি তারা নিজেদের বাঁচার স্বার্থে ঐ প্রতিশ্রুতির বন্ধন ছিন্ন করবে। সাথে সাথে ইস্রাঈল রাষ্ট্র পৃথিবী থেকে হাওয়া হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, কিছু কষ্ট দেওয়া ব্যতীত ওরা তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। যদি তারা তোমাদের সাথে লড়াই করে, তবে তারা অবশ্যই পশ্চাদপসরণ করবে। অতঃপর তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না’ (আলে ইমরান ৩/১১২)। তখন ইনশাআল্লাহ ইস্রাঈলের সৎকর্মশীল লোকেরা মুসলমান হয়ে যাবে। অথবা মুসলমানদের অনুগত হবে। যেমন ইতিমধ্যেই শান্তিপ্রিয় ইস্রাঈলীরা রাজধানী তেলআবিবে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এবং ফিলিস্তীনীদের উপর হামলা বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে।
অতএব যদি হামাস ইস্রাঈলের সাথে সন্ধিচুক্তি না করে এবং তাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ অব্যাহত রাখে। আর যদি তারা স্রেফ আল্লাহর উপর ভরসা করে, তাহ’লে সেদিন বেশী দূরে নয়, যেদিন সন্ত্রাসীনেতা বেনিয়ামীন নেতানিয়াহু ও তার দোসরদের পতন হবে এবং ইহূদীবাদী ইস্রাঈল ইসলামী ফিলিস্তীনে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ।