নষ্ট রাজনীতির শিকার তরুণ প্রজন্ম
যুবক ও তরুণ ছাত্র সমাজ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তারা সমাজের ভূষণ ও শক্তিশালী কাঠামো। তরুণ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো জাতি ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বড় পরিতাপের বিষয় হল- পাশ্চাত্য মতবাদের ধ্বজাধারী প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো তরুণ সমাজকে নষ্ট করার জন্য ধ্বংসস্তূপের ব্যবস্থা করেছে। তারা দলীয় ক্যাডারের নামে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেছে। ফলে তরুণরা সমাজে সন্ত্রাসের প্রতিভূতে পরিণত হয়েছে। তাদের মর্মান্তিক প্রভাবে সমাজ দুর্নীতির ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এই ভাইরাসের শেষ ঠিকানা যেন নির্ঘাত মৃত্যু।
মিথ্যা রাজনীতির স্বরূপ ফুটে উঠে প্রথমতঃ সর্বোচ্চ জ্ঞানকেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কথিত দলীয় ক্যাডার হওয়ার কারণে তারা জ্ঞান চর্চা না করে নোংরামির চর্চা করে। টেন্ডারবাজী আর দলবাজী হয়ে পড়ে তাদের মূল উদ্দেশ্য। কতিপয় দলীয় সন্ত্রাসীর কারণে হাযার হাযার শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বঞ্চিত হয় শিক্ষার আলো থেকে। কারণ হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ, মিছিল, অনশন ও নানা কর্মসূচী শিক্ষাঙ্গনকে অচল করে দেয়। বিদ্যাপীঠগুলোকে তারা ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করে, যেন গোলাগুলি, বোমাবাজি, অস্ত্রবাজি, মাদকদ্রব্য আর লাশের কারখানা।
জাহেলী রাজনীতির ফসল হিসাবে সন্ত্রাসের ন্যায় ওয়ারিছসূত্রে মাদকতা তরুণ প্রজন্মকে ঘুণপোকার মত নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এই মাদক ক্যান্সার শুধু মেধাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং পরিবারের অর্থনৈতিক ভিত্তি, সন্তান-সন্ততি, সমাজ ও রাষ্ট্রকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক আমলা এবং ক্যাডাররা মাদকতার মূল উৎস হওয়ার কারণে মাদক বিরোধী আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। তাছাড়া যারা আইন প্রয়োগ করবে তারাই মাদকদ্রব্যের শিখন্ডী। ফলে তাদেরই ছত্রছায়ায় পার্শ্ব রাষ্ট্র থেকে হাযার হাযার টন মাদকদ্রব্য বন্যার স্রোতের মত দেশে আসছে। এ কারণেই সমাজের সর্বত্র যাবতীয় নষ্টামি ছড়িয়ে পড়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মাদকদ্রব্য যাবতীয় নোংরামির মুকুট’ (আহমাদ হা/২২১২৮; মিশকাত হা/৬১, সনদ হাসান)।
দলীয় ক্যান্সারের কারণে মেধাশূন্য সন্ত্রাসীগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বড় বড় পদে জেঁকে বসে। মেধা নয় দলীয় বিবেচনায় সর্বত্র নিয়োগ হয়। বিসিএস ও নিবন্ধন পরীক্ষা পর্যন্ত দুর্নীতির শিকার। জনসেবার নামে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য অস্ত্রের মহড়া দেখিয়ে সংসদ সদস্য হয়। তারাই দেশের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এমনকি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত এর করালগ্রাসে নিপতিত হয়েছে। সেখানে আর আইন অনুযায়ী বিচার হয় না; বরং দলীয় বিবেচনায় রায় দেয়া হয়। পদোন্নতি দেয়া হয় সময়ের তাকীদে দলীয় বিবেচনায়। ফলে রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের সবকিছুই মেধাশূন্য উন্মাদদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তাছাড়া যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের সংসদীয় এজেন্ডা হয়ে যায় বিরোধী দলকে শায়েস্তা করা এবং সেভাবেই আইন তৈরি করা। এটাই নষ্ট রাজনীতির ফসল। এ ধরনের রাষ্ট্রে মানুষ বাস করবে কিভাবে?
এই অধঃপতিত সমাজের সংস্কার কিভাবে সম্ভব? এর জবাব একটাই- রাসূল (ছাঃ) যার মাধ্যমে এবং যে পদ্ধতিতে সহস্র বছরের প্রতিষ্ঠিত জাহেলী সমাজকে সোনালী সমাজে পরিণত করেছিলেন, আমাদেরকেও সেই মাধ্যম এবং সেই পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। মাধ্যম আমাদের কাছে বিদ্যমান। কিন্তু পদ্ধতি অনুযায়ী তার প্রয়োগ নেই। সমাজে ইসলামের নামে যা চালু আছে তা শিরক ও বিদ‘আত মিশ্রিত পীর-ফকীরী প্রতারণা এবং বিভিন্ন তরীক্বার মিথ্যা দর্শন। আর রাজনীতির নামে যা চালু আছে তা পাশ্চাত্যের বিধর্মীয় মতবাদ। অথচ পৃথিবীতে রাসূল (ছাঃ)-কে পাঠানোর মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল সমাজে প্রতিষ্ঠিত যাবতীয় ধর্ম ও মতবাদের উপর ইসলামকে বিজয়ী করা (ছফ্ফ ৯; তওবা ৩৩; ফাতহ ২৮)। আর এই মিশনকে বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি নির্ভেজাল আক্বীদাপুষ্ট দৃঢ়চেতা আপোসহীন একঝাঁক তরুণ দাঈ তৈরি করেছিলেন। তাদেরকে সাথে নিয়ে নীতি ও আদর্শের সংগ্রাম করে দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে জাহেলী সমাজের ভিত্তি গুঁড়িয়ে দিয়ে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমান বাংলাদেশের দুর্গন্ধময় পতিত সমাজকে সোনালী সমাজে পরিণত করতে চাইলে প্রয়োজন নির্ভেজাল তাওহীদের আহবায়ক একদল প্রশিক্ষিত দূরদর্শী তরুণ। তারা বিশুদ্ধ আক্বীদার বিপ্লব ঘটাবে এবং সৎ কাজ ও সচ্চরিত্রের বাস্তব রূপ প্রদর্শন করবে। মনে রাখতে হবে বিজয়ের জন্য বিদ‘আতী সংখ্যা ও জোট শর্ত নয়; বরং শর্ত হল- বিশুদ্ধ আক্বীদা ও সৎ আমলের পরিশীলনকারী একশ্রেণীর মানুষের কবুলিয়াত, যা স্বয়ং আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত এবং তাঁরই পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ সাহায্য ও বিজয় (সূরা নূর ৫৫; ছফ্ফ ১২)।
বর্তমান তরুণ প্রজন্মের জন্য দুর্ভোগ। কারণ তারা সর্বাধিক প্রশংসিত কাফেলা হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের বৈশিষ্ট্য, স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। তারা জ্ঞান চর্চা ছেড়ে সন্ত্রাস চর্চা করছে; প্রতিভার সাধনা না করে মাদক সেবন করে উন্মত্ত হচ্ছে; গবেষণা ও লাইব্রেরী ছেড়ে মিথ্যা রাজনীতি ও দলীয় নষ্টামির লেজুড়বৃত্তি করছে। মানব সেবা ছেড়ে দুর্নীতির সেবা করছে; সামাজিক উন্নয়ন না করে সমাজে ত্রাসের রাজ্য কায়েম করছে; আল্লাহ প্রেরিত অভ্রান্ত ও মহা পবিত্র বিধান ছেড়ে ইহুদী-খ্রীস্টান বিধর্মীদের সৃষ্ট অপবিত্র বাতিল মতবাদের পিছনে ছুটছে। দেশ ও জনগণের সম্পদ সংরক্ষণ না করে লুট করছে। জনগণকে নিরাপত্তা না দিয়ে তাদের ইযযত, সম্মান হরণ করছে, তাদেরকে প্রতিনিয়ত হত্যা করছে। তাদের সোনালী ইতিহাসকে এভাবেই কলঙ্কিত করছে। তরুণ আলীর মূর্তি ও মাযার ভাঙ্গার হুংকার তারা আর শুনতে পায় না। ইসলামের প্রথম বিপ্লবের অগ্রসেনানী মুছ‘আব বিন উমায়েরর ত্যাগ তারা ভুলে গেছে। খুবাইবের আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কথা তাদের আর স্মরণ নেই। উছামা বিন যায়েদ, মুহাম্মাদ বিন কাসেম, তারিক বিন যিয়াদ, ওমর বিন আব্দুল আযীয, শাহ ইসমাঈল শহীদ, তিতুমীর এমন লক্ষ লক্ষ তরুণ সিপাহসালারদের সংগ্রামের কথা তারা আর মনে করে না। যারা অসত্যের হিমাদ্রিপ্রাচীর ভেঙ্গে বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আমাদের তরুণ ছাত্ররা কখন তাঁদের পথে পরিচালত হবে সেই অপেক্ষায় প্রহর গুণছে সর্বস্ব হারা দারিদ্র্য পীড়িত অসহায় মানুষগুলো।
আল্লাহ তা‘আলা তরুণ প্রজন্মের চৈতন্যোদয় করুন এবং চির সত্যের পথে তাদেরকে পরিচালতি করুন- আমীন!!
– সংগৃহীত ও পরিবর্তিত