আমি ক্রুদ্ধ … কেন আল্লাহ্ আমার দু’আ শুনছেন না?
কিছুদিন আগে একটা চিঠি পেলাম। লেখক চিঠিতে নিজের জীবনে যেসব দুঃখ-দুর্দশার মুখোমুখি হচ্ছেন, এবং যেগুলো তার কাছে মনে হচ্ছে অন্তহীন, সেগুলো নিয়ে তার অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন। চিঠিতে একটা লাইন ছিলোঃ
“আমি ক্রুদ্ধ … কেন আল্লাহ্ আমার দু’আ শুনছেন না? কেন?”
তার চিঠিটা পড়ার পর, সিদ্ধান্ত নিলাম তার জবাব হিসেবে এই লেখাটা লেখার। দুঃখজনক হলেও সত্যি এধরনের প্রতিক্রিয়া আমাদের মধ্যে খুবই প্রচলিত। এবং এরকম হওয়ার কারণ হলো, দু’আ (আল্লাহ্র কাছে কোন কিছু চাওয়া) কীভাবে কাজ করে সেই সম্পর্কে আমাদের মারাত্মক ভুল ধারণা রয়েছে।
আমরা দু’আকে যেকোন বিপদের সময়, কঠিন মূহুর্তে প্যানিক বাটনের মতো ব্যবহার করার চেষ্টা করি। আপনি একটা কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, আল্লাহ্ বারবার কুরআনে বলেছেন যে দরকারের সময় তাঁকে ডাকবে তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দেবেন। সুতরাং, আপনি মনে করলেন যদি ঠিকঠাক মতো দু’আ করতে পারেন (রাতের শেষ তৃতীয়াংশে, মনোযোগের সাথে ইত্যাদি) তাহলে ঠিক পরদিন সকালেই আপনি আপনার দু’আর “জবাব” পেয়ে যাবেন। আর যদি না পান, তাহলেই আপনি ভিতরে ভিতরে আল্লাহ্র অঙ্গীকারকে সন্দেহ করা শুরু করবেন!
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) একটি হাদীসে এই বিষয়ে বলেছেন। যদিও বুখারী ও মুসলিম – দু জায়গাতেই এই হাদীসটি আছে, তবে আমাদের আলোচনার জন্য মুসলিমের বর্ণনাটি অধিকতর উপযুক্তঃ
“একজন ব্যক্তির দু’আর জবাব দেওয়া হতে থাকে – যদি সে অন্যায় অথবা হারাম কিছুর জন্য দু’আ না করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করে – এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাড়াহুড়া না করে এবং অধৈর্য না হয়”।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো -“কিসের দ্বারা ব্যক্তি অধৈর্য হয়ে যাবে?”
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জবাব দিলেন – “সে বলবে আমি দু’আ করছি এবং করতেই থাকছি কিন্তু আমি দেখছি আমার দু’আর কোন জবাব দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে সে আশা হারিয়ে ফেলবে এবং আল্লাহ্-কে স্মরণ করা ছেড়ে দেবে”।
এই হাদীসটি বেশ কৌতূহলজনক এবং আমরা যদি গভীরভাবে হাদীসটি বুঝার চেষ্টা করি, তাহলে কীভাবে দু’আ কাজ করে এবং কীভাবে কাজ করে না – সে বিষয়ে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারবো। একটু খেয়াল করুন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কি ধরনের শব্দ এখানে ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “… তাঁর দু’আর জবাব দেওয়া হতে থাকবে”। একবার অধৈর্য ব্যক্তির অভিযোগের সাথে তুলনা করুন তো “আমি দেখছি আমার দু’আর কোন জবাব দেওয়া হচ্ছে না”। আপাত দৃষ্টিতে এই ব্যাপার দু’টো পরস্পর সাংঘর্ষিক মনে হতে পারে। এটা কীভাবে সম্ভব যে একজন ব্যক্তির দু’আর জবাব দেওয়া হতে থাকছে কিন্তু তাঁর কাছে মনে হচ্ছে সে কোন ফল পাচ্ছে না? দু’আর উত্তর কোথায়?
ব্যাপারটা হলো, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দু’আর জবাব একসাথে না এসে, ধাপে ধাপে আমাদের কাছে আসে। যেমন এমন কিছু হয়তো ঘটবে যার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে যাবেন । কিন্তু আপনার কাছে মনে হচ্ছে আপনার দু’আর জবাব আসছে না।
মনে করুন আপনি একটা কক্ষে বন্দী। মুক্তির একমাত্র উপায় জানালা ভেঙ্গে বের হওয়া, কিন্তু আপনার সম্বল শুধুমাত্র ছোট কিছু পাথরের টুকরো। আপনি জানালায় একটা ছোট পাথর ছুড়লেন। তাতে জানাল ভাঙ্গলো না, কিন্তু খুব সুক্ষ্ম একটা ফাটল ধরলো। আপনি আরেকটা পাথর ছুড়লেন। আরেকটা ছোট ফাটল। আপনি আবার একটা পাথর ছুড়ে দিলেন, তারপর আরেকটি। তারপর আরেকটি। যতক্ষণ না পর্যন্ত পুরো জানালা অসংখ্য সুক্ষ্ম ফাটলে ভরে গেছে।
শেষবারের মতো আপনি একটা পাথর ছুড়ে দিলেন এবং জানালার কাঁচ ভেঙ্গে গেলো। এবং আপনি বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেলেন। দু’আও এভাবেই কাজ করে। আপনি প্রতিটি দু’আর মাধ্যমে আংশিক জবাব পেতে থাকেন এবং আপনি ধৈর্য ও অবিচলতার সাথে একই দু’আ বারবার করার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে শেষ পর্যন্ত দু’আর পরিপূর্ণ জবাব পাবেন।
এজন্যই গুহায় আটকে পড়া তিনজন ব্যক্তিকে নিয়ে যে অতি পরিচিত হাদীসটি আছে, সেখানে আমরা দেখতে পাই যে, প্রথম ব্যক্তির দু’আর ফলে গুহামুখের পাথরটি সামান্যই সরেছিলো। দ্বিতীয় ব্যক্তির দু’আর পর পাথরটি আর একটু সরলো। এবং তৃতীয় ব্যক্তির দু’আর পরই তাঁরা তিনজন তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ফল পেলেন – পাথরটি ওই পরিমাণে সরলো যার ফলে তাঁরা গুহা থেকে মুক্তি পেলেন।
মনে রাখবেন প্রথম পাথরটি শুধু একটি ফাটলই ধরাবে। কিন্তু যদি আপনি পাথর ছুড়তে থাকেন তাহলে এক সময় জানাল ভেঙ্গে যাবে এবং আপনি মুক্ত হবেন। এর জন্য সময়ের প্রয়োজন। এই জন্যই হাদিসটিতে আমাদের বলা হচ্ছে – “…যতক্ষণ পর্যন্ত সে অধৈর্য না হচ্ছে”
আপনি যখন কোন চারাগাছে পানি দেন, তখন নিশ্চয় আপনি একসাথে ত্রিশ গ্যালন পানি ঢেলে দিয়ে, কেন মাটি থেকে বিশাল মহীরুহ বের হচ্ছে না, সেটা নিয়ে চিন্তা করে বসেন না। বরং আপনি ধৈর্য সহকারে প্রতিদিন একটু একটু করে পানি দিতে থাকেন এটা জেনে যে, যত সময়ই লাগুক না কেন, শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফুলটি পাবেন।
একইভাবে আপনি জানেন, আল্লাহ্ আপনার প্রতি তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করবেন এবং আপনার দু’আর জবাব দেবেন – এটা সত্য। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে অলৌকিকভাবে দু’আর উত্তর পাওয়া নিয়মের ব্যাতিক্রম, নিয়ম না। নিয়ম হলো আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাওয়া এবং তাঁর কাছ থেকে এর উত্তর পাওয়ার প্রক্রিয়া সময় ও ধৈর্যের উপর নির্ভরশীল।
যেমনটি ইবনে আল জাওযী, সায়দ আল খাতির – এ বলেছেনঃ
“কষ্ট-দুঃখ-দুর্দশা শেষ হবার একটি নির্ধারিত সময় আছে যা শুধু আল্লাহ্ জানেন। তাই যে ব্যক্তি দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। আল্লাহ্র নির্ধারিত সময় আসার আগে ধৈর্য হারিয়ে ফেলা, কোন কাজে লাগবে না। ধৈর্য আবশ্যক কিন্তু দু’আ ছাড়া ধৈর্য অর্থহীন। যেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দু’আ কছে তাঁর কাছে সাহায্য চাইছে তাঁর উচিত না অধৈর্য হওয়া। বরং তাঁর উচিত, ধৈর্য, সালাহ এবং দু’আর মাধ্যমে সর্বজ্ঞানী আল্লাহর ইবাদাতে নিয়োজিত হওয়া।
অধৈর্য ব্যক্তি তাঁর ধৈর্য হারানোর মাধ্যমে আল্লাহ্র পরিকল্পনা লঙ্ঘন করার চেষ্টা করছে এবং এটা আল্লাহ্র সামনে একজন গোলাম ও বান্দার উপযুক্ত আচরণ কিংবা অবস্থান নয়। আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ অবস্থান হলো, আল্লাহর কাছ থেকে আসা তাকদীরকে মেনে নেওয়া। এবং এজন্য প্রয়োজন ধৈর্য। এবং এর সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হলো সালাহর মাধ্যমে ক্রমাগত আল্লাহ্-র কাছে ভিক্ষা চাওয়া।
আল্লাহর কাছ থেকে আসা তাকদীরের বিরোধিতা করা হারাম এবং এটা আল্লাহর পরিকল্পনা লঙ্ঘনের চেষ্টার মধ্যে পরে। তাই এই বিষয়গুলো অনুধাবন করো এবং তোমার জন্য তোমার দুঃখ-কষ্ট-দুর্দশা সহ্য করা অনেক সহজ হবে।”
কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, আল্লাহ্ যদি মুহূর্তের মাঝেই যেকোন কিছু পরিবর্তন করতে পারেন, তাহলে আমাদের দু’আর জবাব দেওয়ার সময় কেন তিনি অপেক্ষা করেন?
এর কারন হলো, একমাত্র প্রতিকূলতার সাথে দীর্ঘদিনের সংগ্রামের মাধ্যমেই আমরা আমাদের দুর্বলতাগুলো চিনতে পারি এবং সেগুলোকে উপড়ে ফেলে সেখানে আমাদের শক্তি সামর্থ প্রতিস্থাপিত করতে পারি। ব্যাপারটা তেতো ওষুধের মতো। একারণেই মক্কায় নিদারুন অত্যাচারের শিকার সাহাবা (রাঃ) যখন কা’বার পাশে উপবিষ্ট রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে আবেদন করেছিলেন –
“ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ), আপনি কি আমাদের বিজয়ের জন্য দু’আ করবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবে না?”
রাসূলুল্লাহ [সাঃ] জবাব দিয়েছিলেন – “...কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছো”।
ব্যাপারটা কিন্তু এমন ছিলো না যে আল্লাহ্ ঐ মুহূর্তেই পৃথিবী থেকে কুরাইশদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে সক্ষম ছিলেন না বরং ওই মুহূর্তে যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দু’আ করতেন এবং আল্লাহ্ সেটা কবুল করতেন তাহলে যে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেকে সাহাবা (রাঃ) বঞ্চিত হতেন, সেটা সম্পর্কে প্রশ্নকর্তা ছিলেন অজ্ঞ।
শেষ পর্যন্ত মক্কায় তের বছর, অতঃপর মদীনায় দশ বছর – মোট তেইশ বছরের সংগ্রামের পরই আল্লাহ্ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় উম্মাহর প্রতি তাঁর অঙ্গীকার পূরণ করেছিলেন এবং এই সুদীর্ঘ তেইশ বছরে সাহাবারাও (রাঃ) উপলব্ধি করলেন, যে অন্য কোন উপায়ে এই বিজয় আসা বাঞ্ছনীয় ছিল না। মনে রাখবেন ফুল ফুটবেই, কিন্তু সেটা একরাতে না। দিনের পর দিন আপনাকে পানি দিয়েই যেতে হবে। অবশেষে এই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করুন যে, আপনার দু’আর উত্তর আল্লাহ্র তৈরি প্রাকৃতিক নিয়মের কাঠামোর ভেতর থেকেই আসবে। এই কাঠামোর ভেতর যা ঘটে আল্লাহ্ সেটা নিয়ন্ত্রন করেন এবং এই কাঠামোর মাধ্যমেই তিনি আপনার দু’আর উত্তর দেন। আবারো বলছি, অবশ্যই আলৌকিক ঘটনা, কারামাহ ঘটে, কিন্তু সেগুলো হলো নিয়মের ব্যতিক্রম।
একজন কুমারী নারী, যিনি সন্তানের জন্য দু’আ করছেন তিনি আলৌকিকভাবে মারিয়াম (আঃ) – এর মতো কুমারী অবস্থাতেই গর্ভবতী হয়ে পড়বেন, আর সম্ভাবনা খুবই কম! আবার একজন শতবর্ষী নারী, ইব্রাহীম [আঃ] – এর স্ত্রী সারাহ – এর মতো একশো বছর বয়সে গর্ভবতী হবেন সে সম্ভাবনাও কম। বরং দু’আ করার সময়ই আপনি জানেন, আপনি যখন সন্তান চেয়ে আল্লাহ-র কাছে দু’আ করছেন তখন সন্তান জন্মের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই আপনার দু’আর উত্তর আসবে। বিয়ে – স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক – গর্ভধারণ এবং তারপরেই সন্তানপ্রসব। শেষ পর্যন্ত আপনার দু’আর উত্তর এসেছে, কিন্তু তা এসেছে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই। এমন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেটা শুধু আল্লাহ্ নিয়ন্ত্রণ করেন এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একমাত্র তিনিই আপনার দু’আর উত্তর দিয়েছেন এবং দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
ইউসুফ (আঃ) তাঁর শৈশবে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে আল্লাহ্ অঙ্গীকার করেছিলেন, তিনি ইউসুফ (আঃ) কে মিশরের উপর ক্ষমতাসীন করবেন এবং আল্লাহ্ তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করেছিলেন। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট ঘটনাবলী ও ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমেই বিন্দু “ক” থেকে বিন্দু “খ” তে যাওয়া সম্ভব হয়েছিলো।
প্রথমে তাঁর ভাইয়েরা তাদের সাথে তাঁকে নিয়ে গেলো – তাঁকে কূয়ায় নিঃক্ষেপ করা হলো – তাকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হলো – তিনি অন্যান্য বন্দীদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলেন – বাদশা তাঁর ব্যাখ্যা শুনে চমৎকৃত হলেন – এবং অতঃপর ইউসুফ (আঃ) মিশরের অর্থমন্ত্রী পদে আসীন হলেন। শৈশবে তাঁর কাছে করা অঙ্গীকার পূর্ণ করা হল, কিন্তু সেটা হল আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে। মিশরের আরেকটি গল্প দিয়ে শেষ করছি।
ষাটের দশকের শেষ দিকে যখন সাইদ কুতুব (রঃ) কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো, সেই একই সময় তাঁর ভাই মুহাম্মাদ ও বোন হামিদা কুতুবও একই জেলে বন্দী ছিলেন। কিন্তু একই কারাগারে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কোন উপায় ছিলো না একে অপরের সাথে দেখা করার। কারন কারাকর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী এটা ছিল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শারাওয়ী জুমা আরেকটি আইন করেছিলেন যে, কোন ইসলামপন্থী কয়েদীকে তাঁদের দর্শনার্থীর কাছ থেকে কোন ফল বা খাবার নিতে দেওয়া হবে না। বেশ কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর মুহাম্মাদ কুতুব তাঁর বোনের সাথে দেখা করার সু্যোগ চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানালেন।
শারাওয়ী জুমা উত্তর পাঠালোঃ “জীবিত বা মৃত কোন অবস্থাতেই তুমি তোমার বোনকে দেখতে পাবে না”।
এক বছরের মতো পার হবার পর নতুন এক সরকার ক্ষমতায় এলো এবং ক্ষমতাসীন হওয়া মাত্র তাঁরা পূর্ববর্তী সরকারের সব সদস্যকে জেলে ছুড়ে দিলো। হঠাৎ করেই মুহাম্মাদ এবং হামিদা কুতুব আবিষ্কার করলেন তারা এখন মুক্ত। আর শারাওয়ী জুমা নিজেকে আবিস্কার করলো চার দেওয়ালের মাঝে বন্দী। সেই একই কারাগারে।
এরই মাঝে একদিন তাঁর স্ত্রী এক ঝুড়ি ফল নিয়ে তাকে দেখতে আসলো। কারারক্ষী নিয়ম মতো তাঁর তল্লাশী করলো এবং ঝুড়ি ভর্তি ফলও দেখতে পেলো। কারারক্ষী জিজ্ঞেস করলো এই ফল কার জন্য? জবাবে মহিলা বললেনঃ “শারাওয়ী জুমা, আমার স্বামী – তার জন্য”। মুচকি হেসে প্রহরী জবাব দিলোঃ “দুঃখিত, আমি নিয়ম মানতে বাধ্য। দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ফল নেওয়ার অনুমতি নেই”।
এভাবে দু’আ কাজ করে। দু’আ কোন প্যানিক বাটন না যা মুহূর্তের মধ্যে আলৌকিক সমাধানের গ্যারান্টি দেবে। বরং এর জন্য প্রয়োজন সময় ও গভীরতা। এই জন্য দরকার অবিচলতা, অধ্যবসায়, ধৈর্য, পুনরাবৃত্তি এবং অন্তর্দৃষ্টির।
সর্বোপরি এটি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার কেন্দ্রে আছে এই সত্যটিই যে – প্রতি দিনের, প্রতিটি মুহূর্তে এই দুনিয়া এবং এর মাঝে সবকিছু ও সবার উপর আল্লাহ্-র আছে একচ্ছত্র আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রন।
Collected From Facebook Page: তারিক মেহান্না – Tarik Mehanna