ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ)
জন্ম ও পরিচয়:
তাকিউদ্দিন আহমদ ইবনে তাইমিয়া। জন্ম:২২ জানুয়ারি ১২৬৩ খ্রিষ্টাব্দে হাররান শহরে, যা এখন তুরষ্কের অন্তর্ভুক্ত। পূর্ণ নাম: তাকিউদ্দিন আবুল আব্বাস ইবনে আবদুল হালিম ইবনে আবদুস সালাম ইবনে তাইমিয়া আল হারানি। তিনি ছিলেন একজন ইসলামি পন্ডিত, দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক ও যুক্তিবিদ। মঙ্গোল আক্রমণের সময় তিনি জীবিত ছিলেন। তিনি ইসলামি আইনের ক্ষেত্রে হাম্বলি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। ইবনে কুদামার পাশাপাশি তার অনুসারীরা তাকে হাম্বলি মাজহাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তা হিসেবে গণ্য করে। তাদের দুজনকে একত্রে “দুই শাইখ” ও ইবনে তাইমিয়াকে আলাদাভাবে শাইখুল ইসলাম বলে সম্বোধন করা হয়। ইবনে তাইমিয়া কুরআন ও সুন্নাহর প্রাথমিক যুগের ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করার পক্ষাপাতি ছিলেন। মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে জিহাদের ফতোয়ার কারণে তিনি বেশি আলোচিত। মোঙ্গলরা এসময় ইসলাম গ্রহণ করলেও শরিয়ার অনুসরণ না করায় তিনি তাদের অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সদাজাগ্রত এই মানুষটিকে জীবনে অনেকবার বঞ্চনা-গঞ্জনার সহ্য হতে হয়েছে, এমনকি উনার মৃত্যুও হয়েছে জালিম শাসকের কারাগারে। কুরআন, সুন্নাহ সম্পর্কিত তার জ্ঞানের অপার গভীরতা, ইসলামের খুব সঙ্কটময় সময়ে তার অপরিসীম অবদানের কারণে তিনি পৃথিবীতে মুসলিম উম্মাহর কাছে “শাইখ-উল-ইসলাম” হিসেবে পরিচিত।
ইবনে তাইমিয়্যা জন্মেছিলেন এমন পরিবারে যেখানে তার পিতা এবং দাদা সবাই ছিলেন আলেমে দ্বীন। ইমাম তাইমিয়্যা ছিলেন অসাধারণ মেধাবী, পান্ডিত্যসম্পন্ন মানুষ। তৎকালীন শাসকদের অনাচারে তিনি কখনই প্রতিবাদ করতে পিছপা হননি। তাকে একাধিকবার জেলখানায় বন্দী করা হয়। তিনি আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাবার আগের বছরটায় তার কারাগারে কোন বই, কাগজ, কলম নিতে দেয়া হয়নি।
রচনা:
তিনি ৫০০ এর অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তবে ড. সিরাজুল হক তাঁর ২৫৬টি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে “আল-জাওয়াবুস সহীহ লিমান বাদালা দ্বীনিল মাসীহ” অন্যতম।
মৃত্যু:
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা মৃত্যুর আগে কারাগারে অন্তরীণ থাকার এ সময়টাতে কেবলমাত্র কুরআন তিলাওয়াত আর ইবাদাতে মশগুল ছিলেন। ২২ যুলক্কাদা ৭২৮ হিজরীতে (২০ সেপ্টেম্বর ১৩২৮ খ্রিষ্টাব্দ) সিরিয়ার রাজধানী দামেশকের কারাগারে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন।
ইমাম তাইমিয়্যার একজন উল্লেখযোগ্য উত্তরসূরী হলেন হাফিজ ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইসলামের জ্ঞানের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।
তাঁর কিছু উক্তি:
“কারো উপরে বেশি নির্ভরশীল হয়ে যেয়ো না। মনে রেখো, অন্ধকারে তোমার নিজের ছায়াও তোমাকে ছেড়ে চলে যায়।”
“ঈমানদারদের জীবন ক্রমাগত বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করানো হয় তাদের ঈমানকে বিশুদ্ধ এবং তাদের পাপকে মোচন করানোর জন্য। কারণ, ঈমানদারগণ তাদের জীবনের প্রতিটি কাজ করেন কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য; আর তাই জীবনে সহ্য করা এই দুঃখ-কষ্টগুলোর জন্য তাদের পুরষ্কার দেয়া আল্লাহর জন্য অপরিহার্য হয়ে যায়”