বিপদ!
অতএব, আপনি সবর করুন নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আপনি আপনার গোনাহের
জন্যে ক্ষমা প্রর্থনা করুন এবং সকাল-সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার প্রশংসাসহ
পবিত্রতা বর্ণনা করুন। [সুরা গাফির (৪০), ৫৫]
দুর্ভাগ্য, কষ্ট, পরীক্ষা এবং বিপদের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য
উপকারিতা। মানুষে মানুষে পরিস্থিতির তারতম্য অনুযায়ী যা বিভিন্ন রকম হতে
পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,
- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রভুত্বকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করা এবং
তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা লাভ। “যেহেতু তিনিই এত বড় বিপদ দিয়েছেন সেহেতু
কেবলমাত্র তিনিই এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম”-এই উপলব্ধির ফলে মানুষ
নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পেরে এক আল্লাহতালার কাছে নিজেকে সমর্পন করতে বাধ্য
হয়।
আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী কেউ নেই। [সুরা আল আন’আম (৬), ১৭]
যখন মানুষকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে,তখন সে একাগ্রচিত্তে তার পালনকর্তাকে ডাকে … [সুরা যুমার (৩৯), ৮]
- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি বান্দার আনুগত্যের
ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহ উপলব্ধি করা এবং এর ফলে আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির
অভিমূখী হওয়া।
যখন তারা বিপদে পতিত হয়,তখন বলে,নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং
আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। [সুরা আল বাকারাহ (২), ১৫৬]
- দু’আ হচ্ছে বান্দার আনুগত্যের স্মারক। কষ্ট,বিপদ ইত্যাদি আল্লাহকে বাদ
দিয়ে মানুষ অন্য যা কিছুর আনুগত্য করে সব কিছুকে ভুলে গিয়ে কেবলমাত্র
আল্লাহ তা’আলার মুখাপেক্ষী করে তোলে। গান-বাজনা, মদ, সুদ ইত্যাদি ঘৃণ্য
বস্তুর প্রতি যখন অন্তরে আসক্তি সৃষ্টি হয়, কেবল বিপদই পারে সব কিছু বাদ
দিয়ে এক আল্লাহ তা’আলার প্রতি ভালবাসা অন্তরে প্রতিষ্ঠিত করতে।
মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে,তখন সে আমাকে ডাকতে শুরু করে,… [সুরা যুমার (৩৯), ৪৯]
যখন সমুদ্রে তোমাদের উপর বিপদ আসে,তখন শুধু আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে
তোমরা আহবান করে থাক তাদেরকে তোমরা বিস্মৃত হয়ে যাও। [সুরা আল ইসরা (১৭),
৬৭]
… অতঃপর যে বিপদের জন্যে তাঁকে ডাকবে,তিনি ইচ্ছা করলে তা দুরও করে
দেন। যাদেরকে অংশীদার করছ, তখন তাদেরকে ভুলে যাবে। [সুরা আল আন’আম (৬),
৪১]
- দুর্ভাগ্য, কষ্ট, বিপদ ইত্যাদি মানুষকে সহনশীল করে তোলে। ফলে পরবর্তীতে
ছোটখাট সমস্যাতে ঘাবড়ে যেতে হয় না বরং এর চাইতেও কঠিন বিপদে ধৈর্য্যধারন
করা সহজ হয়।
নিঃসন্দেহে ইব্রাহীম ছিলেন বড় কোমল হৃদয়,সহনশীল। [সুরা আত তাওবাহ (৯), ১১৪]
- যদি কোন মানুষের কারনে এই বিপদের উদ্ভব হয়ে থাকে তবে তাকে ক্ষমা করার মাধ্যমে আল্লাহ তা’লার কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ সম্ভব হয়।
… যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন
করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। [সুরা আলে ইমরান (৩), ১৩৪]
যে ক্ষমা করে ও মীমাংসা করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। [সুরা আশ শুরা (৪২), ৪০]
- দুর্ভাগ্য, কষ্ট ইত্যাদি মানুষকে অহংকার, ঔদ্ধত্য, অবাধ্যতা থেকে দূরে
রাখে। নমরুদ, ফির’আউনরা আল্লাহ তা’আলার প্রেরিত বান্দাদের সাথে
ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন করতে পেরেছিল তাদের উপর আল্লাহতা’আলার দেয়া সুখ, সম্পদ,
প্রতিপত্তি ইত্যাদি নিয়ামতের কারনেই।
তুমি কি সে লোককে দেখনি,যে পালনকর্তার ব্যাপারে বাদানুবাদ করেছিল
ইব্রাহীমের সাথে এ কারণে যে,আল্লাহ সে ব্যাক্তিকে রাজ্য দান করেছিলেন?
[সুরা আল বাকারাহ (২), ২৫৮]
সত্যি সত্যি মানুষ সীমালংঘন করে,এ কারণে যে,সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। [সুরা আলাক (৯৬), ৬-৭]
অথচ নিঃসন্দেহে তারা বলেছে কুফরী বাক্য এবং মুসলমান হবার পর
অস্বীকৃতিজ্ঞাপনকারী হয়েছে। আর তারা কামনা করেছিল এমন বস্তুর যা তারা
প্রাপ্ত হয়নি। আর এসব তারই পরিণতি ছিল যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদেরকে
সম্পদশালী করে দিয়েছিলেন নিজের অনুগ্রহের মাধ্যমে। [সুরা আত তাওবাহ (৯),
৭৪]
বর্তমান পৃথিবীতেও আমরা দেখতে পাই আমেরিকা, ব্রিটেন, ইসরাইল ইত্যাদিসহ
অত্যাচারী কাফির-মুশরিক পরাশক্তিগুলো আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন,
কাশ্মির, চেচনিয়া, বসনিয়ার দুর্বল মুসলিমদের ওপর অসহনীয় অত্যাচার করে
যাচ্ছে তাদের আল্লাহ প্রদত্ত বিত্ত-বৈভবের কারনেই। ঠিক একই কারনে ক্ষমতায়
থাকা শোষকেরা নীরিহ জনগনের আমানত আত্নসাৎ করে করে দিনে দিনে তাদের
অবাধ্যতার চরম সীমানায় পৌছাচ্ছে।
যদি আল্লাহ তাঁর সকল বান্দাকে প্রচুর রিযিক দিতেন,তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। [সুরা আশ শুরা (৪২), ২৭]
- কঠিন মুহুর্তে ধৈর্য্যশীল, সহনশীলদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরষ্কার।
আর যারা সবর করে,আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। [সুরা আলে ইমরান (৩), ১৪৬]
যারা সবরকারী,তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত। [সুরা আল যুমার (৩৯), ১০]
- সুস্থ স্বাভাবিক জীবন আল্লাহতা’আলার এক বিশাল নিয়ামত। অন্ধকার না থাকলে
যেমন আলোর গুরুত্ব বোঝা যেত না তেমনি বিপদ না থাকলে এই বিরাট নিয়ামতের
মূল্য অনুধাবন করা যেত না।