কুরআন

আল কুরআন – The book of SIGNS to explore SCIENCE

Nazmus Sakib

যখন থেকে আল কুরআন অর্থসহ বোঝার চেষ্টা করা শুরু করেছি, তখন আমার একটিই উপলব্ধি লাভ হয়। তা হল, আল কুরআন একটি বিস্ময়কর বই। যদিও এই কথাটা হরহমেশাই যে কেউ বলেন। কিন্তু কে কতটা বুঝে বলেন, তা আমি জানিনা। তবে আল কুরআনকে যখন আমি “স্টাডি” করা শুরু করলাম, তখন থেকেই এটি আমাকে একের পর এক বিস্ময় উপহার দিয়ে চলছে। আল কুরআনের একটি সুপরিচিত আয়াত হল সূরা আলাকের প্রথম ২ আয়াত।

“পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন
মানুষকে আলাক থেকে।”

এই আয়াতের বহুল প্রচলিত বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ হল – “সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট বাধা রক্ত থেকে।” আর এই অনুবাদের কারণেই যারা ইসলামের ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত, তারা লাফিয়ে ওঠেন, যে আল কুরআনে ভুল আছে। Mother womb এ মানুষ কখনই জমাট বাধা রক্ত থাকেনা। কথা সত্য। থাকেনা। কিন্তু এই misunderstanding এর কারণ হল এই আলাক শব্দের অনুবাদের অসম্পূর্ণতা। আসুন আমরা এই বিষয়টা কিছুটা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। সাধারন ধারণা আল কুরআনে আলাক শব্দটি আরো একবার পাওয়া যায় সূরা মুমিনুন এর ১৪ নাম্বার আয়াতে।

“এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে আলাক রূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তাকে মুদগাহ
পরিণত করেছি”

এই আয়াতের সাধারণ অনুবাদেও আলাক এর অনুবাদ করা হয় জমাট বাধা রক্ত এবং মুদগাহ এর অনুবাদ হয় মাংসপিণ্ড। এখানেও কিন্তু দুটি শব্দের সম্পূর্ণ অনুবাদ করা হয়নি। প্রকৃত ঘটনা আরবী ভাষায়, আলাক শব্দের তিনটি অর্থ রয়েছে:

(১) রক্ত চোষা জোঁক
(২) মুক্তভাবে ঝুলন্ত বস্তু
(৩) জমাট বাধা রক্ত।

আসুন দেখি এই তিনটি অর্থ কুরআনের ব্যবহৃত আলাক শব্দের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

(১) রক্ত চোষা জোঁক

চিত্রে দেখা যাচ্ছে MOTHER WOMB এর আলাক স্টেজের একটি নিষিক্ত মানব ডিম্বানু। বাহ্যিক গঠন যদি আমরা খেয়াল করি, তবে তা অবিকল জোঁকের মতই দেখায়। আবার, আমরা যদি মানব ভ্রুনের পরিক্রমার দিকে নজর দিই, তবে দেখা যায় এটি মায়ের রক্ত থেকেই নিজের পুষ্টি লাভ করে, যা অবিকল একটি রক্তচোষা জোঁকের জীবনের ন্যায়। রক্তচোষা জোঁক তার পোষক দেহের রক্ত চুষে বেঁচে থাকে।

(২) মুক্তভাবে ঝুলন্ত বস্তু

এটির অর্থ কোন বস্তুর এমন অবস্থা, যা কোন কিছু থেকে এমনভাবে ঝুলে থাকে, দেখে মনে হয় এটি বাতাসেই ভেসে আছে। নিচের চিত্রটি একটি ফটোমাইক্রগ্রাফ, যা একটি MOTHER WOMB এর ভেতর তোলা। এটিও ভ্রুনের আলাক স্টেজের একটি ছবি। এতে স্পস্ট দেখা যাচ্ছে, এটি MOTHER WOMB এর গাত্র থেকে প্রায় কিছুর সংযোগ ছাড়াই ঝুলে আছে বলে মনে হচ্ছে। ( B লেটার দাঁরা ভ্রূণকে চিহ্নিত করা হল)

(৩) জমাট বাধা রক্ত

এটি হল সেই বহুল প্রচলিত অনুবাদের অংশ। এটি কেন অসম্পূর্ণ তা একটি মানব ভ্রুনের কার্ডিও-ভাসকুলার সিস্টেম দেখলেই বোঝা যায়। নিচের চিত্রটি একটি ভ্রুনের থলের কার্ডিও-ভাসকুলার সিস্টেমের অঙ্কিত চিত্র। ভ্রুনের এই স্টেজে (তৃতীয় সপ্তাহের আগ পর্যন্ত) এতে এত বেশি রক্ত উপস্থিত থাকে, যে এটি দেখতে প্রায় লাল মনে হয়। আর এই বিপুল পরিমাণ রক্ত ভ্রুনের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত Circulate বা সঞ্চালিত হয়না। ফলে তা এক জায়গায় জমাট বাধা অবস্থায় থাকে। ফলে দেখতে অনেকটাই জমাট বাধা রক্তের মত দেখায়।

এবার আসুন আমরা নজর দিই দ্বিতীয় শব্দ মুদগাহ এর দিকে। আরবী ভাষায় এই শব্দটির অর্থ চাবানো বস্তু বা চিবিয়ে ফেলা বস্তু । এটি হল কোন কিছুকে চাবানোর পর যদি বের করা হয়, তবে তাতে দাঁতের যে দাগ বসে যায়, সেই দাগ সহ যেই Appearance সেটাকেই নির্দেশ করা হয়। ধরুন আমি একটি চিউংগাম চাবালাম। তারপর তা বের করে রাখলাম। এরপর সেখানে আমার দাঁতের যা দাগ পড়বে, সেই দাগ সহ গামটার যে Appearance, সেটিকেই নির্দেশ করা হয়। নিচের চিত্রে একটি ২৮ দিন বয়সী মানব ভ্রুন দেখানো হয়েছে।

এবার একটি ভ্রুনের একটি অঙ্কিত চিত্র ও তার সাথে একটি চাবানো চিউংগাম এর
তুলনা করা হল।


এতে স্পষ্ট দৃশ্যমান, যে ২৮ দিন বয়সী (যেটি আলাকের পরবর্তী স্টেজ) ভ্রূণটির পেছনের খাঁজ কাটা অংশটি চাবানো গামে দাঁতের ছাপ (Teeth mark) এর সাথে হুবহু মিলে যায়।

অনুবাদের ব্যাপারে:

এমন নয় যে কুরআনের অনুবাদকরা ভুল করেছেন। সমস্যাটা সৃষ্টি হয় যখন তারা অনুবাদটি সম্পূর্ণ করেন না, বা কোন linguistic টিকা উল্লেখ করেন না। ফলে যারা কুরআনের অনুবাদ পড়েই “ভুল হয়েছে, ভুল হয়েছে” করে নিজেদের ইসলাম বিরোধিতা জাস্টিফাইড করতে চান, তারা আনন্দে বগল বাজান। যেমন যদি সূরা আলাকের প্রথম দুই আয়াতের অনুবাদ এভাবে করা হত, তাহলে অনেকাংশেই এই সংশয়ের সৃষ্টি হত না।

“পড় তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট বাধা রক্ত পর্যায়/ঝুলন্ত অবস্থা/জোকের মত রক্তচোষা পর্যায় থেকে।”

তাহলেই যারা কুরআনকে অনুধাবন করতে চান, তারা এটা নিয়ে কিছুটা স্টাডি করার প্রয়াস পেত।

শেষ কথা

এই যে এত বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স পাওয়া গেল, তা তো চিকিৎসা বিজ্ঞানের অতি নতুন আবিষ্কার। কেউ কি একবারো ভেবে দেখেছেন, ১৪০০ বছর আগে একজন লেখাপড়া না জানা মানুষ, যিনি লিখতে পড়তে পারতেন না, কি করে এত জটিল গাইনোকলজিকাল বিষয় গুলো প্রচার করতে পারেন? নিশ্চই তিনি পারেন না। তিনি তাই প্রচার করতেন যা এই বিশ্বের স্রষ্টা তাঁর কাছে প্রেরণ করতেন। আরো একটি কথা। নাস্তিকরা বলেন যে কুরআনে যদি এতই সাইন্স থাকে, তবে দুনিয়াতে এত বড় বড় সাইন্সের বই না পড়ে সরাসরি কুরআন পড়লেই তো হল। নাহ। কুরআন মোটেই কোন বিজ্ঞান বই নয়। এটি হল নির্দেশনার বই। এটি সব দিকেই নির্দেশনা দেয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানীক সব। তার মানে এই নয়, যে এটি এইসব বিদ্যার টেক্সট বই। বরং এটি হল প্রতিটি বিদ্যার প্রতি ইঙ্গিত প্রদানকারী বই।
তাই এটাকে BOOK OF SCIENCE না বলে BOOK OF SIGNS বলা চলে।
তাই মুসলিম, অমুসলিম এবং মুসলিম বিদ্বেষী সকলকেই আমার আহ্বান, একটু সময় বের করে আল কুরআনকে বোঝার চেষ্টা করুন। এর বিশ্বাসযোগ্যতা আপনাকে বিস্ময়ের অতল সাগরে নিক্ষেপ করবে।

আল্লাহ সর্বজ্ঞানী

চিত্র সংগ্রহঃ The Developing Human, 5th edition (Moore and Persaud) লেখাটি A brief illustrated guide to understanding Islam বই এর Scientific Miracles in the Holy Quran অধ্যায় থেকে অনুপ্রাণিত।

মন্তব্য করুন

Back to top button