মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন : ইসলাম কী বলে?
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের একজন তরুণ তার বাবার মৃত্যুর দুই বছর পর মায়ের বিয়ের জন্য পাত্র চেয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছে। এ ঘটনা গণমাধ্যমে আসার পর অনেকে এ নিয়ে প্রশংসা করলেও কেউ কেউ ট্রোলও করেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, নানা কারণে এ ঘটনা খুবই গুরুত্ব এবং তাৎপর্যপূর্ণ। সেজন্য এটা সামনে রেখেই কয়েকটি কথা বলছি।
শুরুতে আমি সেই তরুণকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে অভিনন্দন এবং মোবারকবাদ জানাতে চাই, যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য। কারণ আমাদের সমাজের সাধারণ চিত্র হলো, বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্তদের বিয়ের বিষয়টি সমাজ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। সমাজের অন্যান্য মানুষ তো বটেই; নিজ সন্তানরা নিজেদের স্বার্থের কারণে বাবা-মাকে অন্যত্র বিয়ের ব্যাপারে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখে। নিরুৎসাহিত করা বা এই ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সেটাকে নিয়ে সমালোচনা করা, এটা সাংঘাতিকভাবে আমাদের মূর্খতা এবং অজ্ঞানতা ছাড়া কিছু নয়।
একজন বিবাহিত মানুষ— বয়সের যেকোনো পর্যায়ে এসে যখন সঙ্গী হারা হয়ে যান, তার অবশিষ্ট জীবনের সবটুকু সময় একাকী এবং নিঃসঙ্গ কাটানো তার জন্য যে কত যন্ত্রণার ও কষ্টের, সেটি আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষ বোঝার চেষ্টা করেন না। সন্তানদের উচিত বাবা কিংবা মা বিয়ে করতে চাইলে এ ব্যাপারে তাদের অনাগ্রহ না থাকলে, তাদের আপত্তি না থাকলে, নিজেরা তাদের বিয়ের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
অতএব, কেরানীগঞ্জের এই যুবক আমাদের জন্য এক্ষেত্রে আদর্শ হতে পারে। তবে আমি এক্ষেত্রে অবশ্য বলব যে, মা কিংবা বাবার বিয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে এমন কোনো কাজ আমাদের করা উচিত নয়, যা আমাদের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় না। এবং শরিয়া আমাদের সমর্থন করে না। যেমন, মায়ের ছবি দিয়ে বিয়ের জন্য পাত্র চেয়ে পোস্ট করে পাবলিকলি প্রচার করা অনুচিত। কিন্তু মূল যে এপ্রোচ সেটিকে অবশ্যই আমরা প্রশংসাযোগ্য বলব।
আমাদের সমাজে বিধবা হোক বা তালাকপ্রাপ্ত হোক কিংবা কোনো পুরুষ যদি স্ত্রী হারা হয়ে যান, তাদের বিয়ের যে উদ্যোগ এ উদ্যোগকে আমাদের স্বাগত জানানো উচিত। এবং এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। নবী (সা.) বিধবা বিয়ে করেছেন। তিনি তালাকপ্রাপ্ত বিয়ে করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তদের বিয়ের ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতেন। এবং তারা স্ত্রী হারা হয়ে গেলে পরবর্তীতে বিয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বিষয়টাকে আমাদের সমাজে যত বাজেভাবে দেখে, সেটি রীতিমতো আমাদের অন্ধত্ব এবং মূর্খতাকে প্রকট ও পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে।
আসুন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাই। পুরুষ হোক বা নারী হোক— তিনি সঙ্গী হারা হয়ে গেলে তার পরবর্তী বিয়ের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বিশেষ করে তালাকপ্রাপ্ত এবং বিধবা নারীদের যারা বিয়ে করে তাদেরকে যেরকম এপ্রিশিয়েট করা উচিত। এবং কোনো নারী যদি বিয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তার উদ্যোগকে আমাদের সাধুবাদ জানানো উচিত। সহযোগিতার সঙ্গে দেখা উচিত। এবং তাদের বিয়ের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায় সমাজ নানারকম ফেতনা-ফ্যাসাদে পরিপূর্ণ হবে। এবং কিছু মানুষ তাদের কষ্ট বুকে চেপে রেখে দুনিয়া থেকে চলে যাবেন, যা আমাদের কারো কাম্য হতে পারে না।
– শায়খ আহমদুল্লাহ
শ্রুতিলিখন: ফরহাদ বিন মোস্তফা