সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

বাংলাদেশে হিন্দুরা বৈষম্যের শিকার?

বাংলাদেশে হিন্দুরা বৈষম্যের শিকার? আসলেই?

নবম দশম শ্রেণির রসায়ন পাঠ্যবই এর লেখক বিদ্যুৎ কুমার রায়, সহযোগী অধ্যাপক, রসায়ন, কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি), শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বলছেন অন্য রকম:

নিশ্চয়ই হিন্দুরা আমার উপর ক্ষেপে যাচ্ছেন। অবশ্য এতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। সত্য কথা বলতে আমার দ্বিধা নেই। আমি অবশ্য গণধোলাই থেকে বেচে গিয়েছিলাম গতকাল ঢাকা মহানগর কেন্দ্রীয় শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসবে অর্থাৎ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে।

আমার কথা কেবল শুরু হয়েছিল। দু চারজন হিন্দু মানুষ আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়েছিল। তারা জড়ো হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে কিছু একটা করবে তার পরিকল্পনা তারা হয়ত করছিল। কিন্তু আমি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে মার খাওয়ার আগেই ওখান থেকে চলে এসেছিলাম।
আপনারা দেখছেন গতকাল আমি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলাম। আমি ফেসবুকে লাইভ দিচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি এক জায়গায় কিছু হিন্দু মানুষ গণ স্বাক্ষর নিচ্ছেন। সেখানে একটি ব্যানারে লেখা ছিল এরকম যে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের বৈষম্য রোধকরণের জন্য গণস্বাক্ষর দিন। এই গণস্বাক্ষর তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন।

আমি ভীষণ কস্ট পেলাম এই ব্যানার দেখে। কারণ আমি আমার জীবনে ওয়ান থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ালেখা করে আজ পর্যন্ত দেখি নাই যে বাংলাদেশের কোথাও হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য হয়েছে।

যদি কোন হিন্দু মানুষ একথা বলে তাহলে এটা সম্পুর্ন মিথ্যা। যদি হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য থাকত এবং বাংলাদেশে মুসলমানরা বেশি সুবিধা পেত তাহলে আমি মাস্টার্সে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট আর বাবলু হিরা মন্ডল অনার্সে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হতো না।
আমাদের বাড়িতে আমরা তিনভাই সরকারি চাকুরীজীবী। যদি হিন্দুরা কম সুবিধা পেত তাহলে আমরা একবাড়ি থেকেই সবাই সরকারি চাকুরী পেতাম না।

আমাকে অনেক হিন্দু বলেছেন যে মুসলমানরা আমাদের অনেক প্রতিমা ভেঙ্গেছে। আমি বললাম এটা কি সরকার ভেঙ্গেছে? এটা যে মুসলমানরা ভেঙ্গেছেন তাকি আপনারা দেখেছেন? তারা কোন উত্তর দিতে পারে নাই।

আমি তাদেরকে বলেছিলাম মানুষকে ভালোবাসুন। নিজে নিজে ভাব নেওয়া বাদ দেন। আপনার এলাকায় আপনি স্বর্গ তৈরি করতে পারবেন। যাই হোক সর্বোপরি বাংলাদেশে হিন্দু হিসেবে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

আমি সেন্ট যোসেফে স্কুলে হিন্দু সহপাঠীদের সাথে পড়েছি। ঢাবিতে আমাদের অনেক ব্যাচমেট হিন্দু ছিল। আমি কারো কাছ থেকে হিন্দুরা বৈষম্যের শিকার – এমনটা শুনিনি।

তবে আমি শুনিনি মানে যে বাংলাদেশের কোথাও কোনো হিন্দু বৈষম্যের বা আক্রমণের শিকার হয়নি তা না।

যেমন খুলনার দাকোপে লবন উপদ্রুত এলাকায় একবার একটা পানির প্রজেক্টের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে মাইলের পর মাইল জমি কিনে/ দখল করে চিংড়ির ঘের দেখেছি।

এই ঘেরের মালিক আওয়ামী লীগের মাহবুবুল আলম হানিফ। তিনি কুষ্টিয়ার এমপি, তবে ব্যবসা বাড়িয়েছেন দাকোপে। ব্যবসা বাড়াতে গিয়ে বহু হিন্দু গরীব মানুষের জমি দখল বা নামমাত্র মূল্যে কিনে নেওয়ার ইতিহাস আমি নিজের কানে শুনেছি।

তবে এটা ধর্মের ব্যাপার না, ক্ষমতার ব্যাপার। শুধু হিন্দুরা না, মুসলিম বেশ কিছু কৃষকের জমি বেহাত হয়ে গেছে। ঘেরের কারণে অতিরিক্ত লবনে জমির ধান উৎপাদন ক্ষমতা মরে গেছে। কৃষকরা না পেরে জমি বেচে দিয়ে চলে গেছেন শহরের কোনো বস্তিতে, হয়েছেন রিকশাওয়ালা।
এখন কেউ যদি মাহবুবুল আলম হানিফকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার এই জিগির তোলে – এটা হাস্যকর।

ক্ষমতাসীনদের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারছেন না, কিছু বলতে পারছেন না – ঠিক আছে। কিন্তু যেখানে ধর্ম কোনো কারণ না সেখানে ধর্মের পরিচয় বড় করে তুলে প্লেয়িং ভিকটিম – একটা নিচু মানসিকতা।

একটা জিনিস মনে রাখবেন, পৃথিবীতে মুসলিমরা অনেক অন্যায় করে, নিজেদের নফসের বিরুদ্ধে করে, অন্য মানুষের বিপক্ষে করে। কিন্তু সবগুলো অন্যায় যখন সে করে তখন সে মুসলিম হিসেবে না, মানুষ হিসেবে করে।

মুসলিম হিসেবে অমুসলিমদের প্রতি অন্যায় করাটাকে যদি ইসলাম সমর্থন করত তাহলে এত বছর পাক-ভারত উপমহাদেশ মুসলিম শাসনাধীন থাকার পরে বৈষম্য করার মতো হিন্দু এখানে খুঁজে পাওয়া যেত না।

এই ২০২১ সালে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে হিন্দু নেতাদের কেউ কেউ ইসকনের জোরে জোর উস্কানি দেয়, দিয়েও বহাল তবিয়তে টিকে আছে।
কিন্তু মুসলিম দাঈ জাকির নায়েক মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, ভারতে টিকতে পারেননি। মাওলানা কালিম সিদ্দিকি ভারতীয় পুলিশের হাতে বন্দী হয়েছেন – হিন্দু থেকে মুসলিম হতে চাওয়া যে কোনো মানুষকে তিনি কালিমা পড়াতেন এই অপরাধে। এটাই বাস্তবতা।
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা মানুষের চোখটা খুলে দিন। সত্যটা বোঝার তাওফিক দিন। দুনিয়াতে সবাইকে তিনি নিরাপদে রাখুন।

– Sharif Abu Hayat Opu

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button