সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

স্ত্রীর সঙ্গে কয়েদীদের একান্ত সাক্ষাৎ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

সম্প্রতি হলমার্ক কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা তুষারের ঘুষের বিনিময়ে কারাগারে নারীসঙ্গ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া শুরু হয়েছে।

অনৈতিক লেনদেনের বিনিময়ে প্রচলিত আইন অমান্য করে নারীসঙ্গ নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে তা যথার্থ।

তবে একজন বন্দির এ সংশ্লিষ্ট অধিকার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও দুটি প্রস্তাব তুলে ধরতে চাই।

বন্দি অভিযুক্ত কিংবা দোষী সাব্যস্ত যা-ই হোন না কেন, মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ নিয়ে কারো দ্বিমত নাই।

ইসলামিক স্কলাররা মনে করেন, বিবাহিত বন্দির নৈতিক ও চারিত্রিক অধপতন রোধ এবং মানসিক বিকাশের প্রয়োজনে, স্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে, সংশ্লিষ্ট জেলকোড ও শর্তাবলী অনুসরণ করে, নির্ধারিত বিরতিতে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ থাকা উচিত।

এর অন্যতম একটি কারণ হলো, স্বামীর অপরাধের কারণে স্ত্রীকে জৈবিক প্রয়োজন মেটানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ন্যয়সঙ্গত হতে পারে না।

ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা, মানব ইতিহাসের অন্যতম ন্যয়বিচারক ও আদর্শ শাসক উমর (রা.) বন্দিদের স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাতের সুযোগ দিতেন।

ইসলামের ইতিহাসের বেশিরভাগ ইমাম ও স্কলাররা যেমন ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম শাফেয়ীর (রাহিমাহুমুল্লাহ) এক বর্ণনা অনুযায়ী বন্দিকে নির্দিষ্ট শর্ত ও জেলকোড এবং স্ত্রীর সম্মতিসাপেক্ষে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া উচিত। বন্দি যদি নারী হন তবে সেক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

সৌদি আরবসহ পৃথিবীর বহু দেশে এ নিয়ম পুরোপুরী প্রচলিত আছে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, স্পেনসহ অনেক দেশে এ নিয়ম আছে।

ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানার হাইকোর্টের ২০১৫ সালের একটি রায়ের পর থেকে এ নিয়ম চালু আছে।

তুরস্কে কোনো কয়েদীর সুন্দর আচরণ, শৃঙ্খলা ও সার্বিকভাবে ভালো পারফরমেন্স হলে তাদের এ সুযোগ দেওয়া হয়।

এতে বন্দির মানসিক বিকাশ ও চিন্তাগত সুস্থতার পথ সুগম হয় এবং চারিত্রিক স্খলনের পথ রুদ্ধ হয়।

কেউ বলতে পারেন, জেলে এ সুবিধা থাকলে আর বন্দিত্বের মানে কি থাকে? এর উত্তর হলো, বন্দিত্ব একটি সাজা। একজন বন্দির সাজাভোগের পাশাপাশি মৌলিক মানবিক প্রয়োজনগুলো পূরণের সুযোগ যেমন দূষণীয় নয় এটিও দোষের নয়।

বিশেষ করে এর সঙ্গে যেহেতু অন্যের অধিকার সংশ্লিষ্ট। জেলে সন্তানাদি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ যেমন ন্যায্য এটিও তেমন ন্যায্য।

সেই সঙ্গে বন্দিদের মানসিক ও আদর্শিক পরিচর্যার প্রয়োজনে প্রতিটি জেলে ধর্মীয় আলোচনা ও মোটিভেশনার স্পিচের ব্যবস্থা থাকা উচিত।

কারণ বন্দিজীবনের অবসরে মানুষ সবচেয়ে বেশি চিন্তা-ভাবনা ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ পায়।

সৌদি আরবের প্রতিটি জেলে ‘শুঊনুদ্দীনিয়্যাহ’ বা ধর্মীয় অ্যাফেয়ার্স বিভাগ আছে। এ বিভাগ কয়েদিদের প্রাত্যহিক, সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বাৎসরিক আলোচনা ও ধর্মীয় বই পুস্তক বিতরণসহ নানা ধরণের আয়োজন করে থাকে।

আমি যখন সৌদি আরবে ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রিচার ও ট্রান্সলেটর হিসেবে কর্মরত ছিলাম তখন সেখানকার বিভিন্ন জেলে বাংলাদেশি কয়েদিদের সপ্তাহে ন্যূনতম একবার ধর্মীয় আলোচনা ও কাউন্সেলিং করা আমার দায়িত্বের মধ্যে ছিল।

ইংল্যান্ডসহ অনেক অমুসলিম প্রধান দেশেও এ নিয়ম আছে।

বাংলাদেশে এ নিয়ম যথাযথভাবে করা হলে বন্দিদের মানসিক বিকাশ ও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথ সুগম হবে এবং দেশে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে ইনশাআল্লাহ।

– শায়খ আহমাদুল্লাহ 

মন্তব্য করুন

Back to top button