ছোটগল্প/উপন্যাস

ভাইয়ের বউ অভিজান (শেষ পর্ব)

শাদীর পহেলা রাতে মারিবে বিড়াল/না হলে বরবাদ সব তাবত পয়মাল”-এটার মানে না বের করা পর্যন্ত শান্তি হচ্ছে না? জানো, ছোটবেলা থেকে অভ্যাস কোনো কোয়েশ্চেন সলভ না করা পর্যন্ত আমার কিচ্ছু ভাল লাগে না। আমতা আমতা করছি। আর বলছি আপুর এই প্রশ্নের উত্তরও না খোজা পর্যন্ত শান্তি পাব না।

এতক্ষণ ওকে আমার একদম চুপচাপ আর শান্তশিষ্ট মনে হচ্ছিল। বাবার বাড়ি ছেড়ে আসবার পর যেমন সব মেয়েরা থাকে। কিন্ত তারপর…

বউ আমার মনে হয় এর থেকে হাস্যকর কথা পৃথিবীতে বুঝি আর শোনে নাই!! মনে হচ্ছিল হাসতে হাসতে পড়েই গেল নাকি! আমি বললাম কি হয়েছে? উত্তরে-

হাসির তুবড়ি ছুটিয়ে বলে…

“বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।”

আমি ভাবলাম গোটা মেয়েজাত একি নাকি রে বাবা..! কেউ প্রশ্নের উত্তরে প্রবাদ বলে কেউ কবিতা! কী জ্বালা…

রবীন্দ্রনাথের স্ফুলিঙ্গ থেকে আবৃত্তি করল। সুন্দর আবৃত্তি করে মেয়েটা।

করবার পর সে বলে আমার নাকি তাই অবস্থা..আবার হাসি। এবার খানিক রাগ হলো, এত হাসি কেন! উফ!!! বললেই তো হয়..হাসলে আবার মেয়েটাকে সুন্দরও লাগে। হাওয়াই মিঠাই মনে হয়।

-বউয়ের প্রশংসা ছেড়ে কথাটা বল…হাসি বেশিক্ষণ আটকাতে পারব না। পেট ফেটে যাচ্ছে। আমি বললাম..

তারপর সাদাত আবার শুরু করল

-আপু ও বলল “শুনুন এতো জ্ঞান অর্জন করেছেন। ইংরেজি আরবি সব পড়েছেন, সব দেখেছেন পড়েছেন। বই এর সমাহার আছে শুনেছি। তা গ্রাম বাংলার কেবল এই বাঙালিয়ানা প্রবাদটাই কখনো শুনেননি? আমি বাংলা পাচের মতো মুখ করে বললাম-নাআআ!!”

তারপর সে যা বলল আপু..!! লজ্জায় নাক খসে যেন । বলল-“First impression is the last impression!!

শুনেছেন? বললাম হু! ও বলল- জ্বী, এটার মানে ওটাই,সিম্পল। আপু সেটাই বুঝিয়েছে। আপনি আমার কাছে আজ প্রথমদিন যে ইম্প্রেশন দেখাবেন সারাজীবন আপনার সম্বন্ধে সেই ধারণা নিয়েই আমি চলব। মানে ইম্প্রেশন যতো উত্তম ধারণা ততই ভাল!! বুঝেছেন এইবার নিন পানি খান। আপনার সমস্যা তো সলভ!!

পানি খেতে খেতে গালে হাত দিয়ে ভাবুক হয়ে গেলাম। এই লজ্জা কই রাখি?? বউয়ের সামনে এভাবে…ছিহঃ! ভাবলাম- বিড়াল মরল ঠিকই তবে বউয়ের টা না আমারটা!

তারপর আমাকে এই প্রবাদ নিয়ে একটা হাসির গল্পও ফের শোনালো রে আপু।

-কী সেই গল্প?

-এক বড়লোকের নাকি দুটো সুন্দরী মেয়ে ছিল। যথাসময়ে তাদের বিয়ের উপযুক্ত বয়স হলো। পত্রিকায় বড় বড় অক্ষরে বিজ্ঞাপন ছাপানো হল যে বড়লোক বাবুর দুইজন মেয়ের জন্য বিয়ের উপযুক্ত পাত্র খোজা হচ্ছে শর্ত কেবল একটাই; তাকে ঘরজামাই হয়ে থাকতে হবে আর রোজ মাথায় ১০টা করে জুতোর বাড়ি খেতে হবে।

এই অদ্ভুদ শর্তে কেউ রাজি হলো না। সবাই সেটাকে এড়িয়ে গেল। তো হঠাৎ একদিন এই বিজ্ঞাপন নজরে আসল দুই বেকার বন্ধুর। তারা দুজনেই মহাখুশি এত বড়লোকের মেয়ে!! তো তারা ভাবলো ঘর জামাই হয়ে থাকাই যাচ্ছে, আর রোজ নাহয় জুতোর ১০টা বাড়িই খেলাম।

এ আবার এমন কী! বুদ্ধি করে নিস্তার পাওয়া যাবে। তো দুই বন্ধুরই তাদের সাথে বিয়ে হয়ে গেল ধুমধামে। তো বিয়ের ৭ বছর পর দুই বন্ধুর একে অপরের সাথে দেখা হল। একজনের মাথায় সব চুল পড়ে গেছে আরেকজনের মাথায় বেশখানিক চুল, চেহারার প্রাচুর্য।

তো ১ম বন্ধু অবাক হয়ে মনের কষ্টে ২য় বন্ধুকে জিজ্ঞেস করে বলে “বন্ধু দেখো দেখো যেদিন থেকে প্রথম বিয়ে হয়েছে রোজ জুতোর বাড়ি খেতে খেতে মাথায় টাক পড়েছে শরীরেও শ্রী আর নেই। কিন্তু বন্ধু তুমি তো অপরিবর্তিত। কীভাবে? তোমাকে কী জুতোর বাড়ি খেতে হয় না??!

২য় বন্ধু হাসতে হাসতে বলে শাদির পহেলা রাতে মারিবে বিড়াল/নাহলে বরবাদ সব তাবৎ পয়মাল। আসলে আমি বুদ্ধি করে এর বন্দোবস্ত করেছিলাম বন্ধু। আমাদের বিয়ের প্রথম রাতে আমাকে এক ঘরে নিয়ে যাওয়া হল।

সে ঘরে বউয়ের পোষা বিড়াল ছিল একটা। তো কিছুক্ষণ পরে বউ ট্রেতে খাবার আর জুতোসহ চাকর সমেত ঘরে ঢুকল বিড়ালটা মিয়্যাও মিয়্যাও করে যাচ্ছিল। মাথায় খেলে গেল বুদ্ধি। বিড়ালকে মিছামিছি মারার ভান করে তাগাদা দিতে গিয়ে সাজিয়ে রাখা মাটির হাড়িতে এক ঘা বসিয়ে খান খান করে দিলাম। আর বিড়াল গেল পালিয়ে।

তারপর বললাম-” আমার আবার ক্রোধ বেশি। ক্রোধের মাথায় কখন কী করি ঠিক থাকে না” বউ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। সেদিন আমাকে মারবার সাহস হয় নাই। আর তারপর আমি তাকে এত ভালবাসা দিয়েছি আমাদের সে শর্ত সে মাফ করে দিয়েছি। তাই আমার এই অবস্থা বন্ধু!!”

ফোনের ওপাশে আমি হাসতে হাসতে যেন নেই আর! কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললাম

-সাদাত তোর চেয়ে জ্ঞানী বউ চেয়েছিলিস না! ঠিকঠাক পেয়েছিস তো…

বলে আমি আবার হাসি…

-আপুউউ…

সাদাত ওপাশ থেকে বেদনার করুন সুরে আবার বলল-
আপু সাজানো ক্রেস্টগুলো ধীঃক্কার দিচ্ছিল জানিস। এত সোজা সাপটা মানে বুঝতে পেলাম না। বউ আমার কি ভাববে বল? বিয়ের প্রথম এই রাতের কথা। সারাজীবন এত এত বই পড়ে আর ক্রেস্ট নিয়ে কীহলো। আপুরে তুই ঠিকই বলেছিস
“শাদির পহেলা রাতে মারিবে বিড়াল/না হলে বরবাদ সব তাবত পয়মাল”, এটাই কাল হলো।

আমি কেবল হাসতে হাসতে বললাম,,”সাদাত একটি দূর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না! মনে রাখিস…ভালো থাকিস। হাহাহা…”

তারপর কাঙ্ক্ষিত প্রতিশোধের বিজয়ী হাসি হেসে আমি ফোন কুট করে কেটে দিলাম।

অনেকদিন আর মায়ের বাড়ি যাওয়া হয়ে ওঠে না। অতঃপর একদিন সাদাতের বাড়ি বেড়াতে যাই। সুন্দর সংসার করছে দুজনে। ভাইয়ের বউ ভীষণ মিষ্টি। তো আমি আর ও কেবল সাদাতকে ওইদিনের কথা মনে করিয়ে দিলেই হলো!! ব্যাস..লজ্জায় লাল হয়ে যায় সাদাত। আর আমরা হাসতে হাসতে…

– আনান বিনতে আলম

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button