সাঊদি আরবে কনসার্ট
ইনবক্সে হোক বা বাইরে, সাঊদী আরবে অনুষ্ঠিতব্য মেগা মিউজিক ইভেন্ট নিয়ে আমার কাছে অনেকে জিজ্ঞেস করছেন আমার প্রতিক্রিয়া কি। আমি বলেছি, মহানবী (সা) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, “যদি তোমরা কোন অন্যায় অশ্লীল বা মুনকার দেখ, তা হলে হাত দিয়ে তা পরিবর্তন কর, না পারলে মুখ দিয়ে, তা না পারলে অন্তর দিয়ে পরিবর্তন করো। আর এটা ঈমানের দূর্বলতম দিক”।
১- আমি প্রথমে বিভিন্ন সুত্রের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেছি এই খবর সত্য কিনা। আন্তর্জাতিক মিডীয়া, সাঊদী খবর পোর্টাল এবং আমার শহরে থাকা প্রায় ৫০ জন সাঊদী নাগরিকদের কাছে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। জেনে রাখা ভালো আমার এই ছোট্ট শহরে আরব দেশ সমূহ থেকে আসা প্রায় ৩ হাজার আরব বসবাস করেন। এর মধ্যে সাঊদী থেকে যারা এসেছেন তারা সবাই সাঊদীর বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক বড় বড় পদে কাজ করেন। ন্যুনতম যিনি আছেন তিনিও এক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার। আমি নিশ্চিত হয়েছি এমন একটা কনসার্ট হতে যাচ্ছে।
২- ঘটনা সত্যতা যাচায়ের পর ঐ দেশে আল্লাহর গযব যেন না আসে এই জন্য দুয়া করেছি। যেমন ভাবে আমি দুয়া করি বাংলাদেশের জন্য প্রতিটা দিন বরং প্রতিটা ক্ষণ। মনে আছে বাংলাদেশে শাহরুখ খানকে নিয়ে একটা কনসার্ট হয়েছিল। ঐ দিন আমি সারা রাত আল্লাহর কাছে কেঁদেছি দুই কারণে। এক হলো এর কারণে বাংলাদেশের মত গরিব দেশকে কোটি কোটি টাকা দিতে হচ্ছিলো। আরেকটা কারণ হলো বাংলাদেশের আলিম সমাজ হলো সারা দুনিয়ার আলিম সমাজের সংখ্যার চেয়ে প্রায় দশগুণ। এরা যদি কনসার্টটা বাতিল করতে একটা করে হুঙ্কার দিতো তাহলে তা বন্ধ হয়ে যেতো। কিন্তু তাদের অনৈক্যের কারণে তখন কনসার্ট বন্ধ করা যায়নি। সাঊদী আরবের জন্য আমারো ঠিক একই কান্না থাকবে। এবং ঐখানে আলিমগণের জন্য একই অনুভুতি থাকবে।
৩- আমি খুব ক্ষুদ্র মানুষ। আমার হাতে এমন কোন ক্ষমতা নেই যাতে সাঊদিকে হাতের জোরে এই ন্যাক্কারজনক কাজ থেকে বাঁধা দিতে পারবো। তবে আমার মুখ সচল আছে। আমি আরবী, ইংরেজী ও বাংলাতে এর বিরুদ্ধে কথা বলেছি, বলতেছি এবং বলে যাবো। এমনকি আলহামদুলিল্লাহ এখানকার সাঊদিদের একটা ক্লাব আছে। যাদের মাধ্যমে এহেন কাজ থেকে বিরত থাকা যায় কিনা সে ব্যপারে পরামর্শ দিয়ে সাঊদির বিভিন্ন দায়িত্বশীল লেভেলে চিঠি দিয়েছি। আর মনের মাধ্যমে ঘৃণা করা, পরিবর্তনের চেষ্টা করা, আল্লাহর কাছে ধর্ণা দেয়া এবং পরিকল্পনার কাজ করে যাচ্ছি।
৪- আমি অন্ততঃ ৫০ জন সাঊদির সাথে কথা বলেছি, এবং বুঝেছি তারা এই কাজ পছন্দ করছেনা, বরং কেও কেও কষ্টে কেঁদে ফেলেছেন। আমি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়েছি তাদের দেখে ও তাদের কথা শুনে। আমার কাছে মনে হয়েছে, শাহরুখ খানের কনসার্টে যেমন আমাদের দেশের সে সময়ের এক ইডীয়ট মন্ত্রী যায়গা না পেয়েও ফ্লোরে বসে গিয়েছিলো সাঊদিতেও এমন কিছু লোক একটু মওকা পেয়েছে। যেহেতু সাঊদি করছে, কাজেই তাদের যত পারো গালাগালি দাও বলে আমাদের যাদের ঘুম হারাম হয়েছে তাদের বলেছি, একটু তাওবাহটা বাড়াতে। সাঊদীর সাধারণ মানুষ আপনাদের মত ভাই। বাংলাদেশে যেখানে গণতন্ত্রের এতো চর্চা সেখানে আমরা কিছুই করতে পারিনি, আর ওরা কি করতে পারে?!!
৫- একজন ভাই আমাকে বলেছেন সাঊদিতে আগের কোন বাদশাহের আমলে এই ধরণের কাজ হয়নি। এখন হয় কেন? আমি বলেছি একটা দেশে নানা ধরণের রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে। ঐখানেও একটা পরিবর্তন এসেছে। আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ হারামাইনকে ধ্বংশ হতে দেবেন না। তখন ভাই রেগে গেলেন। বললেন, ভাই আজ যদি মাহাদিরের মত একটা লীডার সাঊদীতে হতো দেখতে পেতেন। আমি বললাম, ভাইরে, মাহাদির ও কিন্তু কিং শাহরুখকে নিয়ে কুয়ালালামপুরে দক্ষিণএশিয়ার সব চেয়ে বড় কনসার্ট করেছিলেন। বাদ আর কে আছেরে ভাই। এরদোয়ানের দেশেও হয়ে গেলো এই ক’দিন আগে বেশ বড় কনসার্ট।
৬- একটা কাজ আমি করছিনা বলে কিছু ভাই অসন্তুষ্ট। তা হলো আমি কেন এই ব্যাপারে সাঊদীর পক্ষে কিছু বলছিনা। আমার বক্তব্য হলো আমি নিজে দেখেছি সাঊদীর অভ্যন্তরে বেশ কিছু ব্যাপারে আমাদের শায়খ ইবন বায (র) শাসক শ্রেনীর কথা মানেন নি। কাজেই এমন বড় একটা নোংরা কনসার্টের পক্ষে আমি কেন কথা বলবো। তবে আমি আমার সাঊদি বন্ধু ও শায়খগণের মত খুব কষ্ট পাচ্ছি, এবং আল্লাহর কাছে কাঁদছি আল্লাহ তুমি সংগঠকদের সুমতি দাও। তাদের ও আমাদের ভুলের কারণে আমাদের উপর গযব দিওনা। আমি যতটুকু নিশ্চিত হয়েছি তা হলো এটা কোন সরকারি উদ্যোগে হচ্ছেনা, হচ্ছে প্রাইভেট উদ্যোগে, তবে অনুমতি নিয়েছে সংগঠকরা।
আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন। তবে আমি বিশ্বাস করি যদি কেউ শক্তি রাখে সাঊদি বাদশাহের কাছে যেয়ে তাকে এইটা না করার নির্দেশ বা পরামর্শ দিতে, তা হলে তা খাওয়ারিজ এটিচিয়ড হবেনা। বরং নাসীহাহ হিসেবে গণ্য করা হবে। আমাদের সালাফগণ তা করতে কখনো পিছপা হতেন না। এমনকি আমার দেখা সালাফী আলিমগণ ও নাসীহা করতেন ও করেছেন।
اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، اللهم لا تؤاخذنا بما فعل السفهاء منا ، اللهم لا تسلط علينا بذنوبنا من لا يخافك و لا يرحمنا
Abdus Salam Azadi
ধীরে ধীরে ঈমান ও পৃথিবীর বয়স বৃদ্ধ হচ্ছে মানে কিয়ামত নিকটবর্তী হচ্ছে।